স্বামীর হাতে স্ত্রী ধর্ষণ: বিবিসি বাংলার রিপোর্ট ও একটি পর্যালোচনা
বিবিসি বাংলা সম্প্রতি ‘স্বামীর হাতে ধর্ষণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। (লিংক কমেন্টে) তাতে স্ত্রীর অনিচ্ছায় স্বামীর সহবাসকে ‘ধর্ষণ’ আখ্যায়িত করে স্বামীদের বিরোদ্ধে স্ত্রীদেরকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার পুরাতন মোড়কে প্রচারিত এ ধরণের প্রতিবেদন দিনদিন ভঙ্গুর হতে থাকা দাম্পত্য সম্পর্কগুলোর ধ্বংসকে আরো ত্বরাণ্বিত করবে।
সাধারণ দাম্পত্য জীবনে জোরপূর্বক সহবাসের ঘটনা কতো পার্সেন্ট ঘটে থাকে? যে দুচারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, তা বন্ধু ও সঙ্গীসূলভ আব্দার এবং বোঝাপড়া থেকেই হয়, যা দাম্পত্য জীবনেরই অংশ। দাম্পত্য সম্পর্কগুলো টিকে থাকে বোঝাপড়ার ওপর। স্ত্রীও অনেক বিষয়ে স্বামীর কাছে বায়না ধরেন এবং কিছুটা জোর করে আদায় করেন। যৌথজীবনে এগুলো উভয়পক্ষের কাছেই সহনীয়, বরং কখনো কখনো এনজয়ের। এটাকে স্বাধীনতাখর্ব বলে দাবি করা মূর্খতা কিংবা ধূর্ততা।
হাজারে একটি দম্পতিও এটাকে জুলুম মনে করেন না। এ কারণেই বিবিসির সেই প্রতিবেদনে স্বিকার করা হয়েছে যে, বেশিরভাগ মেয়েরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে বিব্রতবোধ করেছেন। মূলত: বিব্রতবোধ করারই কথা। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া আব্দারমূরক বিষয়গুলোতে আইন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা টেনে আনা বিব্রতকরই বটে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সঙ্গীসূলভ জোর-জবরদস্তির বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে অবৈধ মেলামেশার ফলে নিরব ধর্ষণ থেকে সৃষ্ট ‘মী টু’ সংস্কৃতির রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা এ দেশের সংস্কৃতি ও দাম্পত্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল।
সন্দেহ নাই, কোনো কোনো স্বামী সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর অসুস্থতা কিংবা ইচ্ছাকে মোটেও আমলে নেন না। স্ত্রীকে সম্মত ও প্রস্তুত করে নেওয়ার মতো কমনসেন্স বা সুস্থ মানষিকতার অভাবও আছে। ইসলাম যে কারো প্রতিই জুলুমকে হারাম করেছে। স্ত্রীর প্রতি জুলুম হয়, এমন যেকোনো আচরণও তাই নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই সাথে একথাও মাথায় রাখতে হবে, ইসলাম পুরুষকে যেমন স্ত্রীর ভরণ-পোষণ যোগাড় করতে বাধ্য করেছে তেমনিভাবে স্বামীর চরিত্র হেফাজত তথা সভ্য সমাজ রক্ষার্থে স্ত্রীকেও সর্বোচ্চ আন্তরিক হতে নির্দেশ করেছে। বুখারী ও মুসলিমে একযোগে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- স্ত্রী তাঁর স্বামীর সহবাসের ডাকে (যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া) সাড়া না দিলে ফেরেশতাগন তার প্রতি অভিশাপ করেন।
সুতরাং দাম্পত্য জীবনে একে অন্যের প্রয়োজন ও চাহিদা পুরণে আন্তরিক এবং সহনশীল হওয়ার নির্দেশ করে ইসলাম। স্বামী যেমন ভরণ-পোষণ ও শারিরিক চাহিদা মেটাতো অক্ষম হলে স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইতে পারেন, স্বামীও তার শারিরিক চাহিদা পূরণে স্ত্রীর অযৌক্তিক বাধা মেনে নিতে বাধ্য নন। তিনি চাইলে সহনীয় পর্যায়ের জবরদস্তি করতে পারবেন, অথবা অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারেন।
ইসলামী দাম্পত্য জীবনে পারিবারিক বন্ধনগুলো যতোটা মধুর এবং মজবুত হয়, সেক্যুলাররা পারলে তারচেয়েও উপভোগ্য ও মধুর কোনো দাম্পত্য ব্যবস্থার বাস্তব দৃষ্টান্ত দেখাক! পশ্চিমা বিশ্বে এখনো ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ইসলামের দিকে বেশি দিক্ষীত হচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ হলো তাঁরা ইসলামের সুন্দর পারিবারিক ব্যবস্থাপায় আকৃষ্ট।
অতএব, স্ত্রীদেরকে স্বামীদের মুখোমুখী করার অপচেষ্টা চালাবেন না। অশান্ত এই পৃথিবিতে মুসলিম সমাজের দাম্পত্য জীবনগুলো এখনো একেকটি জান্নাত।
Ahmad Ullah