এ যেন ‘অন্ধ ছেলের নাম পদ্মলোচন’!
চোখে যথেষ্ট পরিমাণ আলো নেই। রাস্তাঘাট ঠিকঠাক দেখতে পায় না। এদিকে যেতে গিয়ে ওদিকে যায়। একটা দেখে আরেকটা বলে। কিন্তু নাম দিয়েছে ‘প্রথম আলো’! এ যেন ‘অন্ধ ছেলের নাম পদ্মলোচন’!
গতকালের সংখ্যায় প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট “এরদোয়ান এ যুগের সুলতান সুলেমান?”
এটি কোনো অনুবাদ নয়, একেবারে স্টাফ রাইটারের দ্বারা ‘পত্রিকার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি’র লেখা। প্রাচ্যের এবং বিশেষ করে মুসলমানদের সবকিছুকে ‘নিচ এবং অচ্ছুৎ’ হিসেবে দেখে এবং দেখিয়ে আসা পশ্চিমা ন্যারেটিভভিত্তিক লেখাটির খুবই নগ্ন নেতিবাচক শিরোনাম এবং ভেতরের সার্বিক কথাবার্তা নিয়ে অনেক কিছু বলা যেত। কিন্তু এখানে ওসব নিয়ে লম্বা গিয়ে সময় নষ্ট করছি না। শুধু একটা প্যারার অংশ বিশেষ তুলে ধরছি–
“আইএসকে তাঁর নীরব সমর্থনের কারণ হিসেবে বলা হয়, সিরিয়া ও ইরাক থেকে লুট করা জ্বালানি প্রচলিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে তুরস্কের কাছে বিক্রি করে আইএস। এতে তুরস্কের অর্থনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল থাকে। নিত্যপণ্যের মূল্য আয়ত্তে থাকায় জনগণও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ওপর বেশ খুশি।
জনগণের এই সন্তুষ্টিকে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে বেশ কৌশলে কাজে লাগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।”
রাতকানা রোগে আক্রান্ত হলে লেখালেখির বা সমসাময়িক দুনিয়ার ঘটনাপ্রবাহের খোঁজ খবর রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয় বলে জানা নেই। তবে ‘তথ্যকানা’ বা এ জাতীয় কোনো রাগাক্রান্ত হলে তেমন সমস্যা হতে পারে। যেমনটা এই লেখকের হয়েছে।
তিনি বলতে চাচ্ছেন, তুরস্কের বর্তমান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পেছনের একমাত্র কারণটি হচ্ছে আইএস’র কাছ থেকে কমদামে তেল কেনা। আর এই কম দামে তেল কেনার উপর নির্ভর করে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে পারায় সেখানকার মানুষ এরদোগানের ওপর খুশি। অর্থাৎ, আইএসের তেল কম দামে কিনতে না পারলে তুরস্কের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসতো না। এবং মানুষ না খেয়ে মরতো!!
বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১২/১৩ সালে আইএস এর উত্থানেরও এক দশক আগে ২০০২ সালে অর্থনৈতিক দন্যতার কারণে “sick man of Europe” খেতাব বহন করা তুরস্কের ক্ষমতায় আসে এরদোগানের দল একে পার্টি। ক্ষমতায় এসে তুরস্কের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে আইএসের কাছ থেকে তেল কেনার ঘটনা শুরু হওয়ার (অভিযোগ হিসেবে) আগেই পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গেছেন এরদোগান। জনপ্রিয়তার চরমে পৌঁছে চতুর্থবার তার দল ক্ষমতায় আসার আগে তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে যখন দেশ পরিচালনা করছেন তখন মধ্যপ্রাচ্যে আইএসর উত্থান ঘটে পুরোদমে এবং এরও অনেক পরে ২০১৫ সালের দিকে জঙ্গি গ্রুপটির কাছ থেকে ব্লাক মার্কেটে তেল কেনার অভিযোগ উঠে।
কিন্তু প্রথম আলো তাদের স্টাফ রাইটারের দ্বারা বাঙালি পাবলিককে শিক্ষা দিচ্ছে- আইএসের ঘাড়ে ভর দিয়ে অবৈধ তেলের কারবার করে জনপ্রিয় হয়েছেন এরদোগান! আর সেই কারসাজির জনপ্রিয়তা দিয়ে ক্যু টেকিয়ে দিয়েছেন! আইএস না থাকলে ক্যু’কারীরা ঢুঁ মেরে ফেলে দিত তাকে! আর তার জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠা হতো না!
রাতকানাকে মলা মাছ খাওয়ালে চোখের আলো বাড়ে। কিন্তু ‘তথ্যকানা’কে কী খাওয়ালে আলোকিত হবে কারো জানা আছে?
– Qadruddin Shishir
প্রথম আলু কে মাইর খাওয়ান !