স্বার্থক রোজা পালনের জন্য করণীয়
রমজান মাসে শুধু রোজা পালন করলেই চলবে না। রোজার উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। কীভাবে রোজা পালন স্বার্থক হতে পারে সে নিয়ে থাকছে বিশেষ পরামর্শ।
এক. রমজানের প্রতিটি আমলের সময় সংশ্লিষ্ট আমলের কোরআন-সুন্নাহ বর্ণিত পুরস্কারের কথা স্মরণ করে তা প্রাপ্তির আকাঙ্খা লালন করা। এতে আমলটি পালন অত্যন্ত সহজ ও আনন্দময় হবে, তেমনি আপনি উপযুক্ত হবেন সংশ্লিষ্ট সওয়াব বা পুরস্কারের। কেননা, আমলের সওয়াব নির্ভর করে তার নিয়তের ওপর।
দুই. সাহরি ও ইফতারে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকা। একটা কথা প্রচলিত আছে- রমজানের খাবারের কোনো হিসাব হবে না। এই ভুল ধারণার কারণে অনেকেই এ মাসে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন। এটা ঠিক নয়। অতিরিক্ত খাদ্যায়োজন যেমন আপনার মহামূল্যবান সময় নষ্ট করবে তেমনি অতি ভোজনের ফলে আমল ও ইবাদতের উদ্যম কমে যাবে।
তিন. ইশার নামাজের পর দেরি না করে ঘুমোতে যাওয়া উচিত। হরজত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইশার পর খোশগল্প-আড্ডার বিষয়ে কঠোরভাবে সাবধান করেছেন। -ইবনে মাজা
সাহরির সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন। রাতে দেরিতে ঘুমানোর ফলে শেষ রাতে আর কোনো নফল নামাজ কিংবা দোয়ার উদ্যম থাকে না। এমনকি ফজর পরবর্তী মুহুর্ত দোয়া ও জিকিরের সবচে আদর্শ সময়, রাতে দেরিতে শোয়ার কারণে ঘুমকাতর শরীরে আর সেটাও সম্ভব হয় না। এ সময়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের স্থানে বসেই বিভিন্ন দোয়ায় মশগুল থাকতেন। কোরআনের একাধিক স্থানে এ সময়টিতে আল্লাহকে স্মরণের ব্যপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মাসে এর গুরুত্ব আরও বহুগুণ বেড়ে যায়- তা বলাই বাহুল্য। অথচ বেশিরভাগ লোক এসময় ঘুমে লুটিয়ে পড়েন। এ দুরাবস্থা থেকে রক্ষার উপায় হলো রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া।
চার. এই ফজিলতের মাসে টেলিভিশন, নিউজ পেপার, সামাজিক যোগাযোগের পেজসমূহ ইত্যাদিতে যথাসম্ভব কম সময় ব্যয় করা চাই। পূর্বসূরি মনীষীরা এ মাসে দ্বীনি ইলম ও হাদিসের দরসও বন্ধ করে দিতেন ব্যক্তিগত ইবাদতের জন্য। অথচ আমাদের উল্লেখযোগ্য অংশ কেটে যায় উপরিউক্ত অনর্থক বা রমজানের ইবাদতে বিঘ্নতা ঘটে এমন সব কাজে।
পাঁচ. রমজান হলো ইবাদতের মাস। এ মাসে যথাসম্ভব নির্জনভাবে ইবাদতে কাটানো উচিত। অথচ আমরা রমজান মাসে যে পরিমাণ সময় মার্কেটিং ও কেনাকাটায় ব্যয় করি, অন্য কোনো মাসে এতোটা করা হয় না। রমজানের আহবান যদি কেউ উপলব্ধি করে থাকে, তবে মার্কেটিং ও কেনাকাটায় যথাসম্ভব কম সময় ব্যয় করা উচিত। কারণ, শপিংয়ে বেশি সময় ব্যয় করার ফলে একদিকে আপনার মনে ইবাদতের প্রতি মনোযোগ নষ্ট হবে, অপর দিকে ক্লান্ত শরীর ইবাদতের উপযুক্ত থাকবে না।
ছয়. এমনিতে আমরা সারা বছর নানা কারণে শিশুদের নৈতিক ও দীনি শিক্ষা দানের বিষয়ে খুব বেশি সময় দিতে পারি না। রমজানে তাদেরকে দীনি শিক্ষা ও পরিচর্যা করার ব্যপারে যত্নশীল হওয়া উচিত। কারণ বেশিরভাগ শিশুদের এ মাসে পড়াশুনার চাপ কম থাকে।
সাত. রোজা কেবল উপবাস থাকার নাম নয়। বরং একজন ঈমানদার তার গোটা শরীরের রোজা রাখবে। অনেকেই রোজা রেখে হাতে হারাম উপার্জন, মুখে মিথ্যা, অনর্থকতা ও পরচর্চা, গানবাজনা শ্রবণ এবং নিষিদ্ধ ক্ষেত্রে চোখের ব্যবহার বন্ধ রাখেন না। তাদের রোজা কেবলই উপবাস থাকা ছাড়া আর কিছু নয়। সিয়াম সাধনা স্বার্থক করার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো- এ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা।
আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: আহমাদুল্লাহ (প্রিচার অ্যান্ড ট্রান্সলেটর, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি সেন্টার, সৌদি আরব)।