বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ

শিখ ধর্ম

শিখ মূলত হিন্দু ধর্ম, যা হিজরি নবম তথা (খ্রীস্ট ১৫শতাব্দীতে) আত্মপ্রকাশ করে নানক নামক জনৈক ব্যক্তির হাতে। সে ছিল হিন্দু ক্ষত্রিয় শ্রেণিভুক্ত। তার জীবনের একটা অংশ সে চিন্তা ও ধ্যানে ব্যয় করে। তার সৃষ্টিগত স্বভাব মূর্তি পূজা ও ভাস্কর্যকে প্রত্যাখ্যান করে, যার সংখ্যা হিন্দুদের নিকট অনেক। অনুরূপ সে ত্যাগ করে বিভিন্ন শ্রেণি বিন্যাস। অতঃপর সে হাকিকত অন্বেষণে জমিনে বিচরণ করে, এক সময় ইসলাম শিক্ষার ইচ্ছা করে, কিন্তু পাঞ্জাবের মুসলিমরা তখন ওলিদের ইবাদত ও মাজারকে পবিত্র জানার নামে পূজা দিত, যেমন হিন্দুরা মূর্তি নিয়ে করে। নানক হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে তেমন ব্যবধান দেখলেন না। তখন সে এমন লোকের সাক্ষাতও পায় নি যে তাকে সঠিক ইসলাম শিক্ষা দিবে।

অতঃপর সে ওহদাতুল ওজুদ তথা সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এক সূফীর সাক্ষাত লাভ করে, যার নাম (সায়্যেদ হুসাইন দরবেশ)। তার নিকট সে দীক্ষা লাভ করে যে, প্রত্যেক দীনই সত্য, কারণ মূর্তিগুলো প্রকৃতপক্ষে মহা সত্যের বহিঃপ্রকাশ ও জ্যোতি। যে তার ইবাদত করে বস্তুত সে আল্লাহর ইবাদত করে। (আল্লাহ এসব থেকে পবিত্র)।

এ আকিদা উদ্ভ্রান্ত ভবগুরে নানকের খুব পছন্দ হয়, তার উপর সে ঈমান আনে এবং নতুন এক দিনের দিকে দাওয়াত দেওয়া শুরু করে, যা হিন্দুও নয় আবার ইসলামও নয়। সে হিন্দুদের ইবাদতগৃহ ও ওলিদের কবর গিয়ে গণক ও পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং তার আকিদার দিকে তাদেরকে আহ্বান করে, বলা হয় সে মক্কায় হজ ও ইরাক সফর করেছে।

নানক ও তার পশ্চাতে তার উত্তরসূরিগণ সূফী ছিল, সেখান থেকে তাদেরকে শিখ বলা হয়, শিখ অর্থ সায়্যেদ অথবা ফারুক (অর্থাৎ পৃথককারী)। শিখরা এগারো হিজরি শতাব্দীতে নানকের জনৈক নাতির আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সূফীবাদ তরিকা প্রতিপালন করছিল, কিন্তু সে তাদেরকে সুগঠিত যুদ্ধবাজ সংগঠনে রূপ দেয় এবং শিখ নাম পরিবর্তন করেন সিং গ্রহণ করে, যার অর্থ সিংহ, তবে তাদের পুরনো নামই অধিক প্রসিদ্ধ। তখন থেকে শিখরা আক্রমণাত্মক ও যুদ্ধংদেহী জাতিতে পরিণত হয়। তারা তাদের প্রতিবেশী হিন্দু ও মুসলিমদের সাথে বিরতিহীন যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

ইংরেজরা যখন ভারত দখল করে শিখরা তাদের আনুগত্য মেনে নেয় ও তাদের খাঁটি বন্ধু হয়। হিন্দু ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইংরেজরা তাদেরকে খুব ব্যবহার করে।

যখন হিন্দুস্থান দু’টি ভাগে ভাগ হয়: ভারত ও পাকিস্তান, তখন শিখরা ভারতের অধীন ছিল, বিশেষ করে স্বর্ণখচিত ইবাদতগৃহ সমৃদ্ধ তাদের পবিত্র শহরটি। ভারতে তারা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বড় করণ হয়। অনুরূপ মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর শত্রুতার কারণে তারা ইয়াহূদীদের মতই তাদের শত্রু বিবেচিত হয়।

শিখদের বিশ্বাস:

নানক যার বিধান দিয়েছে তার সাথে তার উত্তরসূরিগণ অনেক আকিদা ও ইবাদত যোগ করেছে। তন্মধ্যে কিছু হিন্দু ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যশীল, কিছু ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যশীল। তারা শিখকে আলাদা জাতিতে রূপ দেয়, এমনকি প্রতীক ও পোশাকেও তারা আলাদা। তাদের গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় আকিদা:

১. সৃষ্টিকারী এক রবের ইবাদত করা ও মূর্তিপূজা অস্বীকার করা।

২. তারা বিশ্বাস করে, তাদের ইমাম (যাদেরকে তারা গুরু বলে), রব ও সৃষ্টির মাঝে মধ্যস্থতাকারী।

৩. তাদের পবিত্র কিতাব বিশ্বাস করা, যার নাম (গ্রন্থ)।

৪. পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা, যেমন হিন্দুদের নিকট প্রসিদ্ধ।

৫. স্বর্ণখচিত ইবাদত গৃহের (অমৃতসর শহরের) হজ করা, তার হাউজে গোসল করা। হাউজ সম্পর্কে তারা সে আকিদা পোষণ করে যেরূপ পোষণ করে হিন্দুরা গঙ্গা সম্পর্কে।

মন্তব্য করুন

Back to top button