বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ

হিন্দু শব্দের শাব্দিক, পারিভাষিক ও ঐতিহাসিক স্বরূপ বিশ্লেষণ

হিন্দুস্থানের প্রাচীন ধর্মীয় ইতিহাস ও সাহিত্যে ‘হিন্দুত্ব’ বা হিন্দুধর্ম-এর সমার্থবোধক কোন শব্দ পাওয়া যায় না। সেখানে ‘সনাতন ধর্ম’ ও ‘বৈদিক ধর্ম’ শব্দগুলোর ব্যবহার পাওয়া যায়। বেদ ও উপনিষদসমূহে বর্ণিত সেই ‘সনাতন ধর্ম’ এবং ‘বৈদিক ধর্ম’-এর স্থলে আধুনিক যুগে এই ‘হিন্দু ধর্ম’ শব্দর্টিই স্বীকৃত ও প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। তবে হিন্দু পন্ডিত ও চিন্তাবিদদের আজও এটাই বিশ্বাস যে, এই ধর্মকে ‘সনাতন’ ও ‘বৈদিক’ ধর্ম বলাই যথোপযুক্ত। কারণ এগুলোই এর আসল নাম এবং প্রাচীন হিন্দুস্থানী ধর্মীয় বই-পুস্তকে এই নামগুলোরই ব্যবহার পাওয়া যায়। যেখানে ‘হিন্দু’ শব্দটি একটি নতুন শব্দ। ‘শব্দকল্পদ্রুম’ ছাড়া কোন সংস্কৃত অভিধানেই ‘হিন্দু’ শব্দটি পাওয়া যায় না। আর ‘শব্দকল্পদ্রুম’-এর ভিত্তি হ’ল ‘মেরুতন্ত্র’, যা প্রাচীন হিসাবে সাব্যস্ত নয়।

তবে হ্যাঁ, ফার্সী ভাষায় ‘হিন্দু’ শব্দটি পাওয়া যায়, আর তা থেকে উৎপন্ন হয়েছে নানা শব্দ যেমন- হিন্দুস্থান, হান্দাসা, হিন্দি ও হিন্দু।[1] এমনকি হিন্দু পন্ডিত ও দার্শনিকরা বলেন, যে সকল সংস্কৃত অভিধান ও ধর্মীয় বই-পুস্তকে ‘হিন্দু’ শব্দটি এসেছে সেগুলোকেও নতুনই মনে করা উচিত। কারণ যদি এই শব্দটা পুরনো সংস্কৃত শব্দ হ’ত তবে বেদে না হোক অন্তত স্মৃতি, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত অথবা প্রাচীন অভিধানগুলোতে অবশ্যই পাওয়া যেত। এমনকি আমাদের পুরনো শব্দকোষ ‘অমরকোষে’ও এ শব্দটি অনুপস্থিত।

পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু (১৮৮৯-১৯৬৪)-এর লেখা থেকেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের প্রাচীন ধর্মীয় সাহিত্যে তো ‘হিন্দু’ শব্দটি পাওয়া যায় না। আমাকে বলা হয়েছে যে, এই শব্দটি খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকের হিন্দুস্তানী এক তান্ত্রিক গ্রন্থে পাওয়া যায়। সেখানে হিন্দু দ্বারা নির্দিষ্ট কোন ধর্ম নয় বরং নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে বোঝানো হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে এই শব্দটি অনেক পুরনো এবং এটি আভেস্তা (জরথ্রুস্ট বা পারসিকদের ধর্মীয় গ্রন্থ) ও প্রাচীন ফারসীতেও পাওয়া যায়।[2]

বাস্তবতা হ’ল যে, হিন্দুস্তানী মানুষ এই শব্দ জানতো না। সর্বপ্রথম এর ব্যবহার করেছিল প্রাচীন ইরানী ও আরবরা। তদুপরি  শুধু  ভৌগলিক  কিংবা  একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী ও

জনবসতির পরিচয়বাহী নাম হিসাবে।[3]

বিদ্বানদের পরিভাষায় হিন্দুধর্মের পরিচয়বাহী এবং ‘হিন্দুত্ব’ বা ‘হিন্দুধর্ম’-এর সমার্থক শব্দ হিসাবে ‘হিন্দু’ শব্দের আবির্ভাব ঘটে খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে বা তারও পরে। কেননা আবু রায়হান মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-বিরুনী (৯৭৩-১০৪৮), যিনি হিন্দুধর্ম বিষয়ে সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদ হিসাবে স্বীকৃত এবং যার লিখিত ‘তাহকীক মা লিলহিন্দ’ (ভারততত্ত্ব) হিন্দুধর্মের একটি প্রামাণ্যগ্রন্থ, তিনি তাঁর এই কালজয়ী লেখনীতে কোথাও হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের বোঝাতে ‘হিন্দুধর্ম’, ‘হিন্দু-মতাদর্শ’, ‘হিন্দুত্ব’, ‘হিন্দু’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেননি। অধিকাংশ হিন্দু দার্শনিক ও চিন্তাবিদরাও এদিকে গেছেন। হিন্দী ভাষার প্রসিদ্ধ হিন্দু কবি রামধারি সিং দিনকার (১৯০৮-১৯৭৪) লিখেছেন, ‘হিন্দু শব্দটি আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায় না। ভারতবর্ষে এর সর্বপ্রথম ব্যবহার হয় অষ্টম শতকে লিখিত একটি তন্ত্র গ্রন্থে। যেখানে এ শব্দটি কোন মতাদর্শের নাম হিসাবে নয় বরং একটি গোষ্ঠী বা জাতি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।’

ড. রাঁধাকমল মুখার্জী (১৮৮৯-১৯৬৮)-এর মতে, ভারতের বাইরে এই শব্দের ব্যবহার বহু প্রাচীন আভেস্তা ও খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫২২ থেকে ৪৮৬-এর মধ্যে রচিত পুস্তকাদিতে পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ‘হিন্দু’ শব্দটি বিদেশী শব্দ। সংস্কৃত ও পালিতে কোথাও এর ব্যবহার পাওয়া যায় না। এই শব্দের যে ইতিহাস পাওয়া যায়, তাতে একে কোন ধর্মের নাম বা পরিচয়বাহী শব্দ হিসাবে মানা যায় না। বরং এর আসল অর্থ হ’তে পারে হিন্দুস্তানের যেকোন বাসিন্দা। ভারতবর্ষকে ‘হিন্দ’ নাম দিয়েছে বিদেশীরা। এটি বেশ কয়েকটি দিক থেকে প্রমাণিত। যেমন- সপ্তম শতকে ইৎসিঙ নামীয় এক চাইনিজ পর্যটক ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তিনি লিখেছেন, মধ্যএশিয়ার মানুষ ভারতবর্ষকে ‘হিন্দু’ বলে থাকে। যদিও এখানকার স্থানীয় মানুষ ভারতবর্ষকে আর্যদেশ বলে থাকে।[4]

প্রসিদ্ধ হিন্দু পন্ডিত রজনীকান্ত শাস্ত্রী লিখেছেন, ‘হিন্দু’ শব্দটি ইরানীদের হাযার বছর পুরনো বই ‘শাতির’-এ পাওয়া যায়। সেখানে আমাদের দেশ (ভারতবর্ষ)-কে হিন্দ ও আমাদের (এদেশের বাসিন্দা হিসাবে) হিন্দু বলেছেন। শাতিরে এসেছে, ‘ভারতবর্ষ থেকে ভিয়াস নামের ব্রাহ্মণ আসে, যার বুদ্ধি-জ্ঞান ছিল অতুলনীয়’।

নিঃসন্দেহে এখানে ‘ভিয়াস’ মহাভারত ও অষ্টাদশ মহাপুরাণের লেখক মহাঋষী কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ভিদুভিয়াস (বেদব্যাস)-ই হবেন। তাই তার বুদ্ধিমত্তাকে অনন্য বলা হয়েছে। আবার এই গ্রন্থে হিন্দের অধিবাসী অর্থেও ‘হিন্দি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-

چوں  ویاس  ھندی  بلخ  آمد

گشتا شپ  زبردشت  راو  خواند

‘যখন হিন্দের ভিয়াস বলখে এলো তখন ইরানের বাদশাহ গুসতাশপ (এসফানদিয়ারের পিতা) যাবারদাশ্ত (জরথ্রুষ্ট)-কে আনলেন। এই যাবারদাশ্ত ছিলেন পার্সী ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এতে আরও লেখা রয়েছে যে, ‘হিন্দে জন্মানো এক পুরুষ আমি এবং আবার হিন্দেই ফিরে গেলাম’।[5]

মোটকথা এই শব্দের ইতিহাস অনুযায়ী এটিকে কোন ধর্মের নাম বা পরিচয়বাহী শব্দ মনে করার সুযোগ নেই। ‘হিন্দু’ শব্দটির আসল অর্থ ও ভাব হ’ল- হিন্দুস্তানের যেকোন বাসিন্দা বা ভারতের নিবাসী।

হিন্দু শব্দের আভিধানিক ও শব্দগত বিশ্লেষণ :

হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বিশ্লেষণ বা এ সম্পর্কে কিছু বলার পূর্বে ‘হিন্দু’ শব্দটির সঠিক উৎসমূল এবং এর অর্থ ও ভাব সম্পর্কে জানা যরূরী। এ ব্যাপারে হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুস্থানের ইতিহাস সংক্রান্ত বই-পুস্তকে অনেক উদ্ধৃতি ও প্রমাণ রয়েছে। তবে সেগুলোর সারমর্ম প্রায় একই এবং তা হ’ল- ভারতের এই ‘হিন্দ’ নাম বিদেশীদের দেয়া। হিন্দী ভাষার প্রসিদ্ধ কবি তাঁর ‘সংস্কৃতি কে চার আধ্যায়’ গ্রন্থে লিখেছেন, আসল কথা হ’ল এই যে, মধ্যএশিয়া ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর লোকেরা ভারতে যাতায়াত করত পশ্চিমদিক দিয়ে। সিন্ধু নদ ভারতের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। ফলে এই পথে যাতায়াতকারীরা সিন্ধু নদ দ্বারাই এই দেশের পরিচয় দিত। তাদের মধ্যে ইরান ও তার আশপাশের লোকেরা ‘সা’-এর সঠিক উচ্চারণ না করতে পারায় ‘সিন্ধু’-কে ‘হিন্দু’ বলা শুরু করে। আর পশ্চিমারা ‘সা’ ও ‘দা’-এর সঠিক উচ্চারণ না করতে পারায় ‘হিন্দু’-কে ‘ইন্ডু’ (Indo) বলতো। এভাবেই ভারতের নাম ‘হিন্দু>হিন্দুস্থান’ ও ‘ইন্ডু>ইন্ডিয়া’ হিসাবে প্রচলিত হয়ে যায়।[6]

স্বামী অনন্যানন্দ লিখেছেন, ‘হিন্দু’ শব্দটি ‘সিন্ধু’রই পরিবর্তিত রূপ। সিন্ধু একটি নদের নাম। আগেকার সময়ে ফার্সীভাষী লোকেরা অর্থাৎ ইরানীরা সিন্ধু নদের নিকটবর্তী লোকদের ও দেশগুলোকে ‘হিন্দু’ বলতো। এর কারণ হ’ল তাদের সিন্ধুকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে না পারা। ফলে ‘সিন্ধু’ই ‘হিন্দু’ হয়ে যায় এবং এভাবেই তাদের ধর্মকে ‘হিন্দু’ বলা শুরু হয়।[7]

বিয়োগী হরি (১৮৯৬-১৯৮৮) স্বীয় ‘হিন্দু ধর্ম’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমরা যেটাকে পশ্চিম ভারত বলব, ইরানের লোকদের কাছে সেটাই হবে তাদের দেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী দেশ ভারতবর্ষ বা হিন্দ। এই পূর্বাংশে পড়ে সিন্ধু নদ। এই নদেরই পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের সাথে আরো ছয়টি নদী জুড়ে একে মোট সাত নদী হিসাবে গণ্য করা হয়। একে ফার্সী কাব্যে ‘হাপ্ত হিন্দু’ বা ‘সপ্ত সিন্ধু’ বলা হয়েছে। ফার্সী সাহিত্যে হিন্দু শব্দের সবচেয়ে পুরনো রূপ এটিই। এই সাত নদীসমৃদ্ধ বিদেশী এলাকাকে ‘হাপ্ত হিন্দু’ও বলা হয়েছে। ফার্সী ভাষার উচ্চারণে ‘সোম’-কে ‘হোম’, ‘সাপ্ত’-কে ‘হাপ্ত’ ও ‘আসুর’-কে ‘আহুর’ বলা হয়। ভাষা ও উচ্চারণ তত্ত্বানুসারে ‘সা’ ও ‘হা’ পরস্পর পরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হ’তে পারে। এদ্বারা বোঝা যায় যে, ফার্সী ধর্মের প্রচারকালে এই পূর্বাঞ্চলের নাম ছিল ‘হাপ্ত হিন্দু’ বা শুধু ‘হিন্দু’। কালক্রমে হিন্দু শব্দের হিন্দ থেকে যায় এবং এখানে বসবাসকারীদের নাম ‘হীন্দু’ বা ‘হিন্দু’ হয়ে যায়’।[8]

তিলক লোকমান্য (১৮৫৬-১৯২০)-এর কিছু শ্লোকে এই কথারই ব্যাখ্যা ও সত্যতা খুব সুন্দরভাবে পাওয়া যায়। যেমন তিনি বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমে সমুদ্র, দক্ষিণে সমুদ্র এবং উত্তরে সিন্ধু নদের উৎপত্তিস্থলের মধ্যবর্তী যে ভূখন্ড তাই ভারত। আর এ অঞ্চল যাদের পূর্বপুরুষদের পবিত্রভূমি তারাই ‘হিন্দু’।[9]

হিন্দু ধর্মের প্রসিদ্ধ গবেষক রজনীকান্ত শাস্ত্রীর গবেষণাও এমনই। তিনি তার সমাদৃত পুস্তক ‘হিন্দু জাতি কা উত্থান আওর পাত্তান’-এ বলেন, কতিপয় বিদ্বানের মতে, এদেশের নামকরণ ‘হিন্দ’ হয়েছে বিদেশীদের মাধ্যমে, বিশেষতঃ পারসিকদের মাধ্যমে। আর এ শব্দটি এসেছে ‘সিন্ধু’ শব্দ থেকে যা পাঞ্জাবের একটি নদের নাম। আর সেই ‘হিন্দ’ শব্দ থেকেই পরে ‘হিন্দু’ ও ‘হিন্দি’ শব্দ দু’টির উৎপত্তি হয়েছে। পারসীরা ‘হিন্দ’ শব্দটি দ্বারা সিন্ধু নদের কিনারাবর্তী ভূখন্ডকে বুঝাতো। ‘হিন্দু’ দ্বারা তারা সেই ভূখন্ডের বাসিন্দাদের ও ‘হিন্দি’ দ্বারা সেসব বাসিন্দাদের ভাষাকে বুঝাতো। আমরা যেখানে ‘সা’ বলি পারসিকরা সাধারণত সেখানে ‘হা’ উচ্চারণ করে। যেমন ‘সাপ্ত’ কে ‘হাপ্ত’, ‘আসুর’কে ‘আহুর’, ‘সরস্বতী’কে ‘হরহতী’ এবং ‘সাপ্ত সিন্ধু’-কে ‘হাপ্ত হিন্দু’ বলা ইত্যাদি। এত্থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, ‘সিন্ধু’ থেকে ‘হিন্দু’, ‘হিন্দ’ থেকে ‘হিন্দু’ ও ‘হিন্দি’ শব্দদ্বয়ের জন্ম হয়েছে।[10]

তিনি কয়েক পৃষ্ঠা পরেই লিখেছেন, গ্রিকরা সিন্ধু নদকে ইন্ডাস (Indus), সিন্ধুপাড়ের দেশকে ইন্ডিয়া (India), এবং সেখানকার বাসিন্দাদের ইন্ডিয়ান্স (Indians) বলতো। তাদের সাথে মিল রেখে আমরাও সেই শব্দগুলোকে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। আজও আমরা যখন ইউরোপিয়ানদের আমাদের পরিচয় দেই তখন ইন্ডিয়ান বলেই পরিচয় দেই। ঠিক এভাবেই আমরা অতীতে পারসিকদের সংশ্রবে এসে তাদের হিন্দ, হিন্দু, হিন্দি ইত্যাদি শব্দকে নিজেদের পরিচায়ক করে নিয়েছিলাম।[11]

সংস্কৃত ও বেদের খ্যাতনামা গবেষক ও চিন্তাবিদ ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় (জন্ম : ১৯৪৭)-ও একই কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘পারসিক ও ইরানীরা সিন্ধু নদের তট পর্যন্ত আসতেন। তারা ‘সিন্ধু’-র ‘সা’ কার কে ‘হা’ কারে বদলে দিয়ে ‘হিন্দু’ করে নিয়েছেন এবং ‘স্থান’কে ‘স্তান’ উচ্চারণ করতেন। এভাবে তারা এ ভূখন্ডকে হিন্দুস্তান এবং সেখানকার বাসিন্দাদের ‘হিন্দু’ বলতে শুরু করেন। তাদেরই দেখাদেখি সংস্কৃত না জানা লোকেরাও তাই উচ্চারণ করতে থাকে। আবার ইংরেজরা ‘হিন্দ’ শব্দের ‘হা’-কে লোপ করে ‘ইন্ড’ (Ind) এবং ভূখন্ড বুঝাতে IA যোগ করে ইন্ডিয়া (India) করে নেন। আর ইন্ডিয়ায় বসবাসকারীদের নাম হয় ইন্ডিয়ান। মোটকথা হ’ল, ভারতীয়, হিন্দু ও ইন্ডিয়ান-সবই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়’।[12]

একইভাবে ‘দায়েরায়ে মা‘আরিফ ইসলামিয়্যাহ’তে বলা হয়েছে যে, পারসিকরা যখন এই ভুখন্ডের একাংশ দখল করে নিল তখন আমরা যে দরিয়াকে এখন সিন্ধু বলি তারই নামানুসারে তারা এ ভূখন্ডকে হিন্দু বলত। কারণ প্রাচীন ইরানের প্রাচীন পাহলভী ভাষা ও সংস্কৃতে ‘সা’ ও ‘হা’ পরস্পর বদলে যায়। তাই পারসিকরা ‘হিন্দু’ বলে ডাকত। এছাড়াও হিন্দুস্তানের অন্যান্য এলাকাকে তারা ‘হিন্দ’ বলে ডাকত এবং পরিশেষে এই নামই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই হিন্দ শব্দের ‘হা’ কে ‘আলিফ’ দ্বারা বদলে ফ্রেঞ্চ ভাষায় তা ইন্ড (Ind) ও ইংরেজীতে ইন্ডিয়া (India) প্রচলিত হয়ে যায়। খায়বার দিয়ে প্রবেশকারী অধিকাংশ জাতি এই ভূখন্ডের নাম হিন্দুস্থান রেখেছিল। যাকে ফার্সী উচ্চারণে হিন্দুস্তান বলা হয়।[13]

সুতরাং প্রমাণপঞ্জি, উদ্ধৃতি ও দলীলসমুহ থেকে এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, হিন্দু কোন নির্দিষ্ট ধর্ম বা মতাদর্শের নাম নয় বরং একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী জাতির নাম, যা বিদেশীদের দেয়া।

এই সম্পর্কে RSS-এর অন্যতম পরিচালক ও চিন্তাবিদ গুরু গোলওয়ালকার (১৯০৬-১৯৭৩)-কে যখন বলা হ’ল যে, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বলতেন, ‘হিন্দু’ নামটি বিদেশীদের দেয়া। যার অর্থ হ’ল ডাকাত (কিশওয়ারী অভিধানে এসেছে- হিন্দু প্রসিদ্ধ একটি দেশের নাম। সম্বন্ধবাচক হ’লে এর অর্থ হয় হিন্দুস্তানের বাসিন্দা অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি নির্দেশ করা হয়। কিন্তু ফারসী পরিভাষায় ‘হিন্দু’ শব্দটির অর্থ হ’ল চোর, ডাকাত, দস্যু বা দাস)।[14] এর জবাবে গুরু গোলওয়ালকার বলেন, আমি তো নিজেকে ঐতিহাসিক হিসাবে দাবী করি না। তবে হিন্দু শব্দটিকে শুধু এই কারণেই গ্রহণ করা হয়েছে যে, এটি জনসাধারণ্যে সুপ্রসিদ্ধি লাভ করেছে এবং লোকেরা শব্দটিকে গ্রহণ করে নিয়েছে।[15]

এতদসত্ত্বেও গুরু গোলওয়ালকার শব্দটিকে ভারতীয় উৎস থেকে গৃহীত শব্দ প্রমাণ করার বিফল চেষ্টা করেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, ‘হিমালায়াহ শব্দ থেকে ‘হি’ এসেছে আর ‘ইন্দু’ এসেছে ইন্দোসরোয়ার থেকে। এজন্য হিন্দু দ্বারা হিমালায়াহ ও হিন্দসাগর-এর মধ্যবর্তী ভূখন্ডকে বুঝানো হয়’।[16]

গোলওয়ালকার ছাহেবের এই কথা থেকে বরং এটাই প্রমাণিত হয় যে, ‘হিন্দু’ শব্দটি হিন্দুস্তানের ভৌগলিক অর্থে গৃহীত নাম। এটি কোন ধর্মের নাম নয়।

‘হিন্দু’ শব্দটির পারিভাষিক অর্থ :

পন্ডিতদের গবেষণা অনুযায়ী হিন্দু ধর্ম সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম কোন ধর্ম, যে ধর্ম সম্পর্কে বড় বড় বিদ্বান ও চিন্তাবিদগণও কোন একটি সামষ্টিক ও অর্থবহ সংজ্ঞা বা পারিভাষিক অর্থ দাঁড় করাতে পারেননি, যেখানে প্রত্যেক ধর্মেরই একটি নির্দিষ্ট পরিচয় বা সংজ্ঞা থাকে। যদিও কিছু কিছু হিন্দু পন্ডিত তাদের স্ব স্ব জ্ঞান ও বুঝ থেকে সংজ্ঞা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যখন সেগুলোকে বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে দেখা হবে তখন তার প্রতিটিই অপরিপূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ সাব্যস্ত হবে। এর কারণ প্রতিটি ধর্মের একটি বুনিয়াদী আক্বীদা বা বিশ্বাস থাকে, একটি বিশেষ ধর্মগ্রন্থ থাকে এবং তার একটি বিশেষ বার্তাবাহক বা ধর্মগুরু থাকে। কিন্তু হিন্দুধর্মে আমরা নির্দিষ্টভাবে সেরকম কিছু দেখি না। কেননা হিন্দুধর্মের নির্দিষ্ট কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, একজন নির্দিষ্ট ধর্মগুরু নেই, আর নেই কোন বুনিয়াদী বিশ্বাস। এ ধর্মের নিয়মরীতি, হুকুম-আহকাম বা ধর্মীয় নিয়ম-কানূনে অসংখ্য মতানৈক্য ও পরস্পর বিরোধিতা বিদ্যমান। যেমন এক ঈশ্বরের পূজারীও হিন্দু, আবার ৩৩ কোটি দেব-দেবীর পূজারীও হিন্দু। যে মূর্তিপূজা করে সেও হিন্দু, আবার যে তার বিরোধিতা করে সেও হিন্দু। যেমন সনাতনী ও আর্যসমাজ।

বৈষ্ণবধর্ম (হিন্দুধর্মের প্রধান তিনটি বিভাগ হ’ল বৈষ্ণবধর্ম, শৈবধর্ম এবং শাক্তধর্ম) অনুযায়ী গোশত না খাওয়া শিবপূজারী বা শৈবরাও হিন্দু, আবার শাক্তধর্ম অনুযায়ী গোশত খাওয়া শাক্তরাও হিন্দু। এক ঈশ্বরকে যারা মানে তারাও হিন্দু, আবার ২৪ অবতারকে তাদের খোদার মর্যাদা দিয়ে আনুগত্য যারা করে তারাও হিন্দু। পুরান, মহাভারত, গীতা ও রামায়ণকে মানলেও হিন্দু, আবার এগুলোতে বিশ্বাস না রাখলেও হিন্দু।

আস্তিক তথা স্রষ্টায় বিশ্বাস করলেও হিন্দু, আবার নাস্তিক তথা স্রষ্টায় বিশ্বাস না করলেও হিন্দু। এভাবেই আস্তিক গ্রন্থ বেদ, উপনিষদ ইত্যাদিতে বিশ্বাসীও হিন্দু আবার নাস্তিক গ্রন্থ ‘মীমাংসা’ (Mimansa)-তে বিশ্বাসীও হিন্দু।

মন্দিরে যে সিনা টান করে নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়ে সেও হিন্দু, আবার মন্দির থেকে মেরে যে শুদ্র (অচ্ছুত)-দের বের করে দেয়া হয় তারাও হিন্দু।

রাম ও সীতাকে যারা পূজা করে তারাও হিন্দু, আবার তামিল নাডুসহ বিভিন্ন স্থানে যারা রাবনের পূজা করে তারাও হিন্দু।

অহিংসাই পরম ধর্ম তথা দয়া-মায়াই পরম ধর্ম- এমন শ্লোগান দিয়ে জীব-জন্তু হত্যাকে ঘৃণাকারীও হিন্দু, আবার কালি মন্দির, যোগসমূহে, দূর্গাপূজা ইত্যাদিতে বকরি, মহিষ বলি যারা দেয় তারাও হিন্দু। পীতাম্বর অর্থাৎ হলুদ কাপড় পরা সাধুরাও হিন্দু আবার স্বভাবজাত উলঙ্গ থাকা ধর্মগুরু ও সাধুরাও হিন্দু।

অবতারবাদে ঘোর বিশ্বাসীরাও হিন্দু, আবার অবতারবাদকে নাকচকারীরাও হিন্দু। গাই, নিমগাছ ও নানা ধরনের গাছ, সাপ ইত্যাদির পূজারীও হিন্দু, আবার এগুলোকে হত্যাকারী-নষ্টকারীও হিন্দু। পিঁয়াজ, রসুন না খাওয়া লোকরাও হিন্দু আবার চূড়ান্ত ঘৃণিত সাপ, কুকুর, শূকর, বানর ইত্যাদি যারা ভক্ষণ করে তারাও হিন্দু।

সম্ভবত একারণেই পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু লিখেছেন, হিন্দুধর্ম একটি ধর্ম হিসাবে অত্যন্ত অস্পষ্ট। এর কোন সুনির্দিষ্ট আকার-আকৃতি নেই। এর নানা দিক আছে এবং এটি এমন যে, যে যেভাবে চায় সেভাবেই বিশ্বাস করতে পারে। এর সংজ্ঞা দেয়া বা এর সুনির্দিষ্ট কোন রূপ উপস্থাপন করতে গেলে এতটুকুই বলা যাবে যে, সাধারণ বুঝ অনুযায়ী এটি একটি ধর্ম। এর বর্তমান রূপে বরং এর প্রাচীন রূপেও নানা অভিনব বিশ্বাস ও রীতি-নীতি এসে মিলিত হয়েছে। উচ্চ থেকে উচ্চতর বা নিম্ন থেকে নিম্নতর এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধর্মে স্ববিরোধিতা ও মতানৈক্য চোখে পড়ে। এই ধর্মের বিশেষ উদ্দেশ্য ও চিন্তাধারা যতদূর বোঝা যায় তা এই যে, নিজে ভালোভাবে বেঁচে থাক এবং অন্যকেও বাঁচতে দাও।[17]

এভাবেই ড. রাধাকৃষ্ণান (১৮৮৮-১৯৭৫) লিখেছেন, হিন্দু কোন ধর্মের নাম নয় বরং জীবন পরিচালনা পদ্ধতি। তাই তিনি হিন্দু ধর্ম নিয়ে তাঁর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বলেন, ‘একে বিশেষ কোন ধর্ম বা মতাদর্শ মনে করার চেয়ে জীবনপ্রণালী বা জীবন পরিচালনা পদ্ধতি বলা বেশী উপযুক্ত। যদি এই ধর্ম একদিকে লোকদেরকে তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও কামনা-বাসনা পূরণের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়, তবে অপরদিকে তাদেরকে দেশীয় রসম-রেওয়াজ মেনে নিতে ও পালন করতে বাধ্য করে। স্রষ্টায় বিশ্বাস করুক বা না করুক, যে কেউ নিজেকে হিন্দু বলতে পারে। কিন্তু শর্ত হ’ল তাকে হিন্দুদের সভ্যতা ও রীতি-নীতির অনুসারী হ’তে হবে’।[18]

হিন্দুধর্মের প্রসিদ্ধ বিশ্লেষক ও RSS-এর চিন্তাগুরু (গুরু গোলওয়ালকারকে)-কেও এ বিষয়গুলো স্বীকার করতে দেখা যায়। তার মতে, আসলে হিন্দু কোন ধর্ম বা মত নয়, বরং এটি একটি কালচার বা সংস্কৃতি।[19]

World Civilization-এর লেখকদের বিশ্লেষণও এদিকেই ইংগিত করে। তারা লিখেছেন, পাশ্চাত্যের পরিভাষা অনুযায়ী হিন্দুইজমকে (Hinduism) কোন ধর্ম বলা যাবে না। কারণ এটি সব রকমের বিশ্বাস ও শিক্ষাকে একীভূত করতে চায়। সব রকমের রসম-রেওয়াজ, চাই তা প্রাচীন আমলের জঘন্য রীতি হোক বা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সভ্য রীতি হোক, এটি সবগুলোকে একত্রিত করতে চায়। হিন্দুত্বের কোন স্থির নিয়ম বা বিশ্বাস নেই। কিন্তু এতে সব রকমের লোকদের জন্য দেবতাদের আনুগত্যের চেয়ে বেশী যরূরী হ’ল ব্রাহ্মণদের আনুগত্য করা।[20]

স্বামী অনন্যানন্দ লিখেছেন, ‘হিন্দু ধর্মানুযায়ী ধর্ম হ’ল একটি স্থায়ী সার্বজনীন জীবন-যাপনের পদ্ধতি। ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতি-নীতিকে বৈষয়িক ও ব্যবহারিক জীবনে নিয়ে আসাও এর উদ্দেশ্য। হিন্দুধর্ম সর্বধর্মের একতায় বিশ্বাসী। ধর্মের নামে এর কারো সাথে কোন মতানৈক্য নেই। হিন্দুধর্ম একটি ব্যবহারিক ধর্ম। এটি একটি পরিপূর্ণ ও সুন্দর জীবন পদ্ধতির দর্পণস্বরূপ’।[21] একইভাবে বিয়োগী হরি বলেন, এটা সর্বকালের ধর্ম। এতে সবকিছুই বিদ্যমান। আসলে এটি একটি জীবন-দর্শন।[22]

উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, হিন্দু ধর্ম কোন ধর্ম বা মতাদর্শের নাম নয় বরং একটি জীবন পদ্ধতি ও সংস্কৃতির নাম। আর এর কোন নির্দিষ্ট বিশ্বাস, রীতি-নীতি ও পদ্ধতি নেই। এমতাবস্থায় এর সংজ্ঞা দেওয়া অত্যন্ত জটিল। এতদসত্ত্বেও কিছু হিন্দু পন্ডিত ও বিশ্লেষক নানাভাবে একে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। যেমন- স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, ‘যে নিজেকে হিন্দু মনে করে সেই হিন্দু’। কেউ বলেছেন, ‘যে গরু খায় না সেই হিন্দু। গাভীই ধর্ম গাভীই বেদ’। আবার কেউ বলেছেন, ‘যে গাভীর পূজা করে সেই হিন্দু’। কিছু হিন্দু পন্ডিত হিন্দু ধর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘হিন্দু সেই, যে ব্রাহ্মণ ও গাভীকে ভক্তি করে, জাত-পাতের শৃঙ্খলা মেনে চলে ও পুনর্জন্মে বিশ্বাস রাখে’।[23]

কেউ বলেছেন, ‘যে হিংসা, অত্যাচার, অবিচার দূর করে সেই হিন্দু’। আবার কেউ বলেছেন, ‘যে জাত-পাতের ধর্মীয় শৃঙ্খলাকে অমান্যকারীদের দোষী সাব্যস্ত করে ও স্বীকার করে, সেই হিন্দু’।[24]

মহাত্মা গান্ধীও হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যদি আমাকে হিন্দুত্বের সংজ্ঞা দিতে বলা হয়, তবে আমি শুধু বলব, যে এটি অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি ছেড়ে সত্যের অনুসন্ধান করা। মানুষ যদি খোদাতে (ঈশ্বরে) বিশ্বাস নাও রাখে, তবুও সে নিজেকে হিন্দু বলতে পারে। হিন্দুধর্ম হ’ল সত্যের ধারাবাহিক অনুসন্ধান। হিন্দু ধর্ম সত্যকে মেনে চলার ধর্ম। সত্যই ঈশ্বর। আমার সম্পর্কে অনেকে বলেন যে, আমি ঈশ্বরকে অস্বীকার করি। কিন্তু আমি বলব, আমি কখনো সত্যকে অস্বীকার করিনি’।[25]

এই সংজ্ঞাকেই বিশ্লেষণ করে জওহারলাল নেহেরু লিখেছেন, ‘গান্ধীজি একে অর্থাৎ হিন্দুধর্মকে সত্য ও অহিংসাই বলেছেন। কিন্তু অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যারা কট্টর হিন্দু, তাদের মতে গান্ধীজি যেমন মনে করেন অহিংসা মূলত হিন্দুধর্মের ততটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। আর এমতবস্থায় শুধু সত্যান্বেষণই রয়ে গেল যা মূলতঃ এই ধর্মের কোন সংজ্ঞা হ’তে পারে না’।

সম্ভবত এমন একটা অবস্থা কল্পনা করে লোকমান্য তিলক ধর্মের নতুন সংজ্ঞায়ন করেছেন যা হাসি-ঠাট্টা, বিদ্রূপের ভঙ্গিতে বলা হ’লেও তা সত্য। তিনি লিখেছেন, ‘বেদগুলোকে দলীল হিসাবে মানা, ধর্মীয় রীতি-নীতি ও পদ্ধতির বিভিন্নতায় বিশ্বাস রাখা এবং প্রার্থনা ও বন্দেগীর ক্ষেত্রে কোন এক নির্দিষ্ট দেবতার নিয়ম-রীতিতে অটল না থাকাই এই ধর্মের লক্ষণ’।[26]

 

মূল (উর্দূ) : ড. মাওলানা মুহাম্মাদ আহমাদ নাঈমী (প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, নয়াদিল্লী, ভারত)
অনুবাদ : আবু হিশাম মুহাম্মাদ ফুয়াদ

(সৌজন্যে : মাসিক মা‘আরিফ, আযমগড়, ইউপি, ভারত, ডিসেম্বর ২০১৭, পৃঃ ৪৪০-৫১)।


[1]স্বামী আনন্যানন্দ, হিন্দু ধার্ম কা সাওয়ারভুম তত্তব, (কলকাতা : আধ্যিয়াত আশ্রম, ১৯৯৭ইং, পৃ. ১।

[2]. রজনীকান্ত শাস্ত্রী, হিন্দু জাতি কা উত্থান আওর পাত্তান, (নয়াদিল্লি : কিতাব মহল, ২০০৮ইং)।

[3]. তারিখে ত্বাবারী, য় খন্ড, পৃঃ ১৬৫; ত্ববাক্বাত ইবনে সা‘দ, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৯; সীরাত ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৯৩

[4]. সাংস্কৃতি কে চার অধ্যায়, পৃঃ ৩৫

[5]. হিন্দু জাতি কা উত্থান আওর পাত্তান, পৃঃ ৩-৪

[6]সাংস্কৃতি কে চার অআধ্যায়, পৃঃ ২৫-২৬

[7]. হিন্দু ধর্ম কা সাওয়ারভূম তত্ত্ব, পৃঃ ৩

[8]. বিয়োগী হরি, হিন্দু ধর্ম, পৃঃ ৭-৮; সাহিত্য মন্ডল, দিল্লি, ২০০১ ইং।

[9]. হিন্দু ধর্ম, পৃঃ ৮

[10]. হিন্দুস্তানি কা উত্থান আওর পাত্তান, পৃঃ ১।

[11]. ঐ, পৃঃ ২

[12]. কালকি অবতার আওর মুহাম্মাদ, পৃঃ ২৩

[13]উর্দূ দায়েরায়ে মা‘আরিফ ইসলামিয়্যাহ, ১৩তম খন্ড, পৃঃ ১৭৩; আরাব ওয়া হিন্দ কে তা‘আল্লুক্বাত, পৃঃ ১২-১৩

[14]লুগাত কিশওয়ারী, সাইয়্যেদ তাসদিক হুসাইন রেযাওয়ি, (লাখনৌ : মুন্সি নাওল কিশোর, ১৯৯৪ ইং)।

[15]শ্রী গুরুজি সামাগ্র দর্শন গ্রন্থ, পৃঃ ১০০

[16]. Bunch of thought, p: 130.

[17]. পান্ডিত জওহার লাল নেহেরু, হিন্দুস্তান কি কাহানী, পৃঃ ৭৯-৮০

[18]The Hindu View of Life, p. 70.

[19]Hindu Phenomenon, p.14.

[20]. যিয়াউন নাবী, খন্ড, পৃঃ ১৮০; World Civilization, p: 188.

[21]. হিন্দু ধারাম কা সাওয়ারভূম তত্ত্ব, পৃঃ ১১-১৩

[22]. হিন্দু ধারাম, পৃঃ ১০-১১

[23]. যিয়াউন নাবী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৮১

[24]. হিন্দু জাতি কা উত্থান আওর পাতান, পৃঃ ৭।

[25]হিন্দুস্তান কি কাহানী, পৃঃ ৮০

[26]সাংস্কৃতি কে চার অধ্যায়, পৃঃ ৭৫।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button