বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ

ইয়াহূদী ধর্ম

ইয়াহূদী ধর্ম হচ্ছে বনু ইসরাইলের (তৈরী করা) দীন, যাদের মাঝে আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করেন এবং তাকে তাওরাত প্রদান করেন।

মূসা ‘আলাইহিস সালাম বনু ইসরাইলকে তাওহীদ ও ইসলামের দিকে আহ্বান করেন ও তার উপর তাদের প্রতিপালন করেন, কিন্তু তারা তার থেকে বিচ্যুত হয় ও তাদের রবের প্রকৃত কিতাব পরিবর্তন করে, ফলে তাদের ধর্মকে ইয়াহূদী ধর্ম বলা হয়।

অতএব ইয়াহূদী ধর্মের সংজ্ঞা হচ্ছে, “বিকৃত দীন, নবী মূসা আলাইহিস সালাম যে ইসলাম নিয়ে এসেছেন তা ত্যাগ করে বনু ইসরাইল যা মেনে আসছে তাই ইয়াহূদী ধর্ম”।

মূসা ‘আলাইহিস সালামের যুগে ইয়াহূদী ধর্ম:

মূসা আলাইহিস সালামের কওমের একটি সম্প্রদায় মুমিন ছিল, তবে বনু ইসরাইলের অনেকের মাঝে তার যুগেই বিচ্যুতি ও প্রবৃত্তি পূজা দেখা যায়, যেমন:

১. আল্লাহ তা‘আলা ফিরআউন ও তার কওমের দাসত্ব থেকে বনু ইসরাইলকে মুক্তি দেন, তাদের জন্য তিনি নদীতে রাস্তা তৈরি করেন, অতঃপর সে রাস্তা দু দিক থেকে মিলিয়ে দিয়ে তিনি তাদের শত্রুদেরকে ডুবিয়ে মারেন, এতদসত্ত্বেও তারা নিজেদের উপর আল্লাহর তাওহীদ ও স্বাধীনতার নিয়ামতের সম্মান করে নি, বরং অতিদ্রুত শির্কে প্রত্যাবর্তন করতে চাইল একটি মুশরিক জাতিকে দেখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَجَٰوَزۡنَا بِبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱلۡبَحۡرَ فَأَتَوۡاْ عَلَىٰ قَوۡمٖ يَعۡكُفُونَ عَلَىٰٓ أَصۡنَامٖ لَّهُمۡۚ قَالُواْ يَٰمُوسَى ٱجۡعَل لَّنَآ إِلَٰهٗا كَمَا لَهُمۡ ءَالِهَةٞۚ قَالَ إِنَّكُمۡ قَوۡمٞ تَجۡهَلُونَ ١٣٨ ﴾ [الاعراف: ١٣٧]

“আর আমি বনী ইসরাইলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম। অতঃপর তারা আসল এমন এক কওমের কাছে যারা নিজেদের মূর্তিগুলোর পূজায় রত ছিল। তারা বলল, ‘হে মূসা, তাদের যেমন উপাস্য আছে আমাদের জন্য তেমনি উপাস্য নির্ধারণ করে দিন। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমরা এমন এক কওম যারা মূর্খ”।[1]

২. বনু ইসরাইল মূসা আলাইহিস সালামকে বলেছে:

﴿ وَإِذۡ قُلۡتُمۡ يَٰمُوسَىٰ لَن نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡكُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ ٥٥ ﴾ [البقرة: ٥٥]

“আর যখন তোমরা বললে, ‘হে মূসা, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখি’। ফলে বজ্র তোমাদেরকে পাকড়াও করল আর তোমরা তা দেখছিলে”।[2] বস্তুত তাদেরকে বিকট শব্দ আক্রমণ করেছিল যা তারা প্রত্যক্ষ করছিল।

৩. আল্লাহ তা‘আলা তাদের নবী মূসা আলাইহিস সালামের জবানে তাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন, কিন্তু তারা আল্লাহর নির্দেশকে ছুড়ে মারে ও বলে:

﴿ فَٱذۡهَبۡ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَٰتِلَآ إِنَّا هَٰهُنَا قَٰعِدُونَ ٢٤ ﴾ [المائ‍دة: ٢٤]

“সুতরাং তুমি ও তোমার রব যাও এবং লড়াই কর, আমরা তো এখানেই বসে রইলাম”।[3]

৪. আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে সুস্বাদু ও পবিত্র খাবার মান্না ও সালওয়া তাদের দান করেন, কিন্তু তারা মূসা আলাইহিস সালামের নিকট তার রবকে আহ্বান করার অনুরোধ করেন, যেন তিনি তাদের জন্য জমিনে উৎপাদিত শস্য বের করেন, যেমন তরকারি, কাঁকড়ি, গম, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ।

৫. মূসা আলাইহিস সালাম তাওরাত গ্রহণ করার জন্যে তার রবের নিকট গমন করেন, তাদের থেকে মাত্র চল্লিশ রাত তিনি অনুপস্থিত থাকেন, তিনি ফিরে এসে দেখেন তারা স্বর্ণের তৈরি গো বৎসের পূজা করছে। তারা বলত: এটা আমাদের ও মূসার ইলাহ, তারা হারুনকে প্রত্যাখ্যান করে গো বৎসের মালিক সামেরির অনুসরণ করে।

মূসা আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পর তাদের নিকট ক্রমান্বয়ে নবীগণ আগমন করেন তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা ও তাদের মাঝে তাওরাত কায়েম করার নিমিত্তে, কিন্তু তারা নবীদের অস্বীকার করে, বরং তাদেরকে জেদ এতটা উগ্র করেছে যে, তারা কতক নবীকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ أَفَكُلَّمَا جَآءَكُمۡ رَسُولُۢ بِمَا لَا تَهۡوَىٰٓ أَنفُسُكُمُ ٱسۡتَكۡبَرۡتُمۡ فَفَرِيقٗا كَذَّبۡتُمۡ وَفَرِيقٗا تَقۡتُلُونَ ٨٧ ﴾ [البقرة: ٨٧]

“তবে কি তোমাদের নিকট যখনই কোনো রাসূল এমন কিছু নিয়ে এসেছে, যা তোমাদের মনঃপূত নয়, তখন তোমরা অহংকার করেছ, অতঃপর (নবীদের) একদলের উপর তোমরা মিথ্যারোপ করেছ আর একদলকে হত্যা করেছ”।[4]

আর তাদের হাত আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত করে, এমন কি তাতে শির্ক ও কুফর পর্যন্ত দাখিল করে।

তাওরাত:

তাওরাত সে কিতাবের নাম, যা আল্লাহ তার নবী মূসা আলাইহিস সালামের উপর নাযিল করেন। এটা আসমান থেকে নাযিলকৃত অন্যান্য কিতাবের মত তাওহীদ, আহকাম ও আখলাক সমৃদ্ধ ছিল, যার উপর মানুষের জীবন নির্ভরশীল, যার অনুসরণ ও যা আঁকড়ে থাকার উপর তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা ও কামিয়াবি নির্ভরশীল ছিল।

কিন্তু ইয়াহূদীরা তাওরাত ও তার অর্থ বিকৃত করে, তাওহীদ ও ঈমানকে পরিবর্তন করে, যেমন পরিবর্তন করে শরীয়ত ও বিধানকে এবং তাতে তাদের ইতিহাস ও দীর্ঘ যুগের বৃত্তান্ত দাখিল করে তারা, ফলে বর্তমান তাওরাত বনু ইসরাইলের অবস্থা, যুদ্ধবিগ্রহ ও তাদের শাসনের ইতিহাস গ্রন্থে পরিণত হয়, যাতে রয়েছে প্রচুর বাতুলতা, অপছন্দ ঘটনা, বিকৃতি ও ব্যাপক বাগড়ম্বর।

তাওরাতে তাদের বিকৃতি ও পরিবর্তনের নমুনা:

১. শব্দ বিকৃত করা, অর্থাৎ আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তাতে পরিবর্তন করা, অথবা তাতে বর্ধিত করা, অথবা তাতে হ্রাস করা। আল্লাহ তা‘আলা তাদের যাজকদের সম্পর্কে বলেন:

﴿ فَوَيۡلٞ لِّلَّذِينَ يَكۡتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَوَيۡلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكۡسِبُونَ ٧٩ ﴾ [البقرة: ٧٩]

“সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস”।[5]

২. অর্থ বিকৃত করা, অর্থাৎ বাক্যকে তার প্রকৃত অর্থ থেকে অন্য অর্থে ব্যবহার করা তাদের স্বভাব ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ ١٣ ﴾ [المائ‍دة: ١٣]

“তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে”।[6] অপর স্থানে তিনি বলেন:

﴿ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ مِنۢ بَعۡدِ مَوَاضِعِهِۦۖ ٤١ ﴾ [المائ‍دة: ٤١]

“তারা শব্দগুলোকে যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও আপন স্থান থেকে বিকৃত করে”।[7]

এর একটি উদাহরণ হচ্ছে, বর্তমান তাওরাতে রয়েছে চুরি, সুদ, যিনা ও ধোঁকা শুধু ইয়াহূদীদের মাঝে হারাম, তবে অন্যদের সাথে তাদের জন্য এসব কর্ম হালাল।

৩. তাদের স্বভাব ছিল কতক অংশ প্রকাশ করা ও কতক অংশ গোপন করা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ قُلۡ مَنۡ أَنزَلَ ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِي جَآءَ بِهِۦ مُوسَىٰ نُورٗا وَهُدٗى لِّلنَّاسِۖ تَجۡعَلُونَهُۥ قَرَاطِيسَ تُبۡدُونَهَا وَتُخۡفُونَ كَثِيرٗاۖ وَعُلِّمۡتُم مَّا لَمۡ تَعۡلَمُوٓاْ أَنتُمۡ وَلَآ ءَابَآؤُكُمۡۖ ٩١ ﴾ [الانعام: ٩١]

“বল, ‘কে নাযিল করেছে সে কিতাব, যা মূসা নিয়ে এসেছে মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশস্বরূপ, তোমরা তা বিভিন্ন কাগজে লিখে রাখতে, তোমরা তা প্রকাশ করতে আর অনেক অংশ গোপন রাখতে, আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যা জানতে না তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষ”?[8]

তাওরাতে তারা যেসব বিষয় গোপন ও আড়াল করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের নিদর্শন, তাকে সত্যারোপ করা ও তার প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত।

তাওহীদ ও আকিদার ক্ষেত্রে কতক বিকৃতি:

প্রথমত: আল্লাহর জন্য উপমা ও সাদৃশ্য নির্ধারণ করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]

“তার মত কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”।[9]

সকল আসমানি কিতাব, সুস্থ বিবেক ও মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি বা ফিতরাত এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহর সৃষ্টিজীব থেকে কোনো বস্তু তার মত ও তার সাথে সদৃশ নেই। কিন্তু ইয়াহূদীরা তাদের বিকৃত তওরাতকে এ জাতীয় অনেক কুফরি দ্বারা ভরে ফেলেছে, এখানে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করছি:

১. তারা লিখেছে আল্লাহ তা‘আলা সাত দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন, অতঃপর সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নেন।

২. তাওরাতে তারা লিখেছে, আল্লাহ যখন মানুষ সৃষ্টি করলেন এবং দেখলেন যে, তার অনিষ্ট জমিনে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তখন তিনি মানুষ সৃষ্টির জন্য দুঃখিত হন এবং অন্তরে আফসোস করেন।

৩. তারা আরো লিখেছে, আল্লাহ তা‘আলা জমিনে অবতরণ করেন এবং ইয়াকুবের সাথে সন্ধ্যা থেকে ফজর পর্যন্ত কুস্তি লড়েন। (আল্লাহ তাদের এ সব কথা থেকে অনেক উর্ধ্বে)

দ্বিতীয়ত: নবীদের কলঙ্কিত করা:

ইয়াহূদীদের নাপাক প্রকৃতি নবীদের সাথে কালিমা ও অশ্লীলতা লেপন করতে কুণ্ঠাবোধ করে নি, এভাবে তারা নিজেদের অশ্লীলতা ও ধ্বংসাত্মক কাজগুলোকে বৈধতা দিতে চায়, বিকৃত তাওরাতে এরূপ অনেক কিছু রয়েছে, যেমন:

১. নূহ মদ পান করেন, মাতাল হন ও বস্ত্রহীন হয়ে পড়েন।

২. লুতের দুই মেয়ে তার বাবাকে মদ পান করান, তার সাথে শয়ন করেন এবং তার থেকে তারা গর্ভ ধারণ করেন।

৩. দাউদ তার ঘরের ছাদ থেকে একজন সুন্দরী নারী দেখেন, তাকে ধরে আনেন ও তার সাথে যিনা করেন এবং নারীটি তার থেকে গর্ভবতী হয়। তিনি তার স্বামীকে মৃত্যুর জন্য যুদ্ধে প্রেরণ করেন, যখন তার স্বামী মারা যায়, দাউদ তাকে বিয়ে করেন। অতঃপর তিনি তওবা করেন ও লজ্জিত হন, কিন্তু নারীকে নিজের কাছেই রাখেন এবং তার থেকেই সুলাইমানের জন্ম হয়।

৪. সুলাইমান তার মুশরিক নারীদের প্রতি ঝুঁকে যান, তিনি তাদের মূর্তির ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, যেন তারা তার ইবাদত করে। সুলাইমান নিজেও তাতে কুরবানি পেশ করে তার নৈকট্য হাসিল করে।

তৃতীয়ত: ইয়াহূদীরা তাওরাত থেকে আখিরাত, পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের সকল বর্ণনা মুছে ফেলে, বিকৃত তাওরাত থেকে:

মূসার মৃত্যু ও সেদিন তিনি বনি ইসরাইলকে যা বলেছেন:

বিকৃত তাওরাত বলে: “সেদিন মূসাকে রব বলেন: আবারীম মাউন্টে চড়, এ হচ্ছে মোয়াব দেশের নবো মাউন্ট, যা জেরিকোর সম্মুখে অবস্থিত। কিনানের জমিন দেখ, বনু ইসরাইলকে তা আমি রাষ্ট্র হিসেবে দান করব, তুমি যে পাহাড়ে চড়ছ তাতে মৃত্যু বরণ কর এবং তোমার কওমের সাথে মিল, যেমন তোমার ভাই হারুন হোর মাউন্টে মরে তার কওমের সাথে মিলেছে”।

অতঃপর তাওরাত বলে: “অতএব রবের কথানুসারে আব্দুর রব মূসা মোয়াব ভূমিতে মারা যান এবং তাকে পিয়োরের ঘরের সামনে মোয়াব ভূ-খণ্ডের প্রশস্ত জায়গায় দাফন করা হয়। কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত তার কবরের সন্ধান পায় নি, মূসা যখন মারা যান তখন তার বয়স হয়েছিল এক শো বিশ বছর। তার চোখ বন্ধ হয় নি এবং তার সজীবতাও ম্লান হয় নি। মূসার জন্য বনু ইসরাইল ত্রিশ দিন ক্রন্দন করে। অতঃপর মূসার মত কোনো নবী বনু ইসরাইলে আসে নি”।[10]

প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ জানে আল্লাহ মূসার উপর যে কিতাব নাযিল করেছেন তার অংশ এসব বিষয় নয়, বরং এগুলো কোনো ঐতিহাসিক মূসার মৃত্যুর অনেক পরে লিখেছে।

তালমুদ:

তালমুদ হচ্ছে ইয়াহূদীদের বিপজ্জনক কিতাব, যার থেকে তারা তাদের শিক্ষা ও আদর্শকে গ্রহণ করে। আধুনিক ক্রুসেডের চিন্তা ও মতবাদের উৎস এ কিতাব। তাদের পাদরি ও পণ্ডিতগণ পালাক্রমে বিভিন্ন যুগে এ কিতাব লিখেন, তার কতক শিক্ষা খুব রহস্যাবৃত ও প্রতীকসর্বস্ব, যা তাদের ব্যতীত কেউ জানে না এবং তারা ছাড়া কেউ তার ব্যাখ্যা করতে সামর্থ্য নয়।

তালমুদ আল্লাহর উপর অপবাদ, তার দীন পরিবর্তন ও তার শরীয়ত বিকৃতিতে ভরপুর। আমরা তার বিকৃতির নমুনাস্বরূপ এখানে কতক মৌলিক নীতি উল্লেখ করব, যা ইয়াহূদী ও অন্যান্য মানুষের সাথে তাদের দ্বৈত নীতির প্রমাণ। একটি প্রতিবেদন:

ক্র. ইয়াহূদী উম্মি বা গায়রে ইয়াহূদী
ইয়াহূদীরা আল্লাহর উপাদান থেকে সৃষ্ট। উম্মিরা পশুদের বীর্য থেকে সৃষ্ট এবং তাদের রূহ শয়তানের পক্ষ থেকে।
তারা আল্লাহর মনোনীত জাতি তারা গাধা, তাদেরকে আল্লাহ মনোনীত জাতির সেবার জন্য সৃষ্টি করেছেন।
তাদের বিবাহ একমাত্র শরয়ী বিবাহ। উম্মিদের বিবাহের কোনো বৈধতা নেই, তাই তারা তাদের মা-বাবার সাথে কোনো মানবিক সম্পর্ক রাখে না।
ইয়াহূদীর সাথে ইয়াহূদী নারীর যিনা হারাম। ইয়াহূদী ব্যতীত সকল নারী নাপাক, তাদের সাথে ইয়াহূদীর যিনা পাপের কোনো অনুভূতি জাগ্রত করে না।
ইয়াহূদীর জন্য ইয়াহূদী নারীর পবিত্রতা নষ্ট করা হারাম। ইয়াহূদীর জন্য উম্মি বা গায়রে ইয়াহূদী নারীর পবিত্রতা নষ্ট করা হারাম নয়, তবে শর্ত হচ্ছে সে নারীর বয়স তিন বছরের চেয়ে একদিন হলেও বেশি হওয়া জরুরি।
অবৈধভাবে তাদের সম্পদ খাওয়া হারাম। যেভাবে এবং যতটুকু সম্ভব গায়রে ইয়াহূদীর সম্পদ দখল কর। এটা ইয়াহূদী ধর্মের দাবিও বটে।
তাদের মাঝে রেবা বা সুদ হারাম, তবে সামান্য হলে বৈধ। ইয়াহূদীর জন্য গায়রে ইয়াহূদীর সুদ হালাল, যত বেশি হোক সমস্যা নেই।
ইয়াহূদীর জন্য ইয়াহূদীকে হত্যা করা হারাম। যে ইয়াহূদী গায়রে ইয়াহূদীকে হত্যা করে, সে মূলত রবের নিকট কুরবানি পেশ করে।
ইয়াহূদীদের জন্য ইয়াহূদীর ওয়াদা ও চুক্তির মেয়াদ পুরো করা ওয়াজিব। গায়রে ইয়াহূদীর সাথে চুক্তি, কসম অথবা অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে ইয়াহূদী সর্বদা স্বাধীন।
১০ তাদের জবাই করা পশু হালাল। উম্মিদের জবাই করা পশু মৃত ও ডাস্টবিনে ফেলার উপযুক্ত, তারা যেভাবে জবাই করুক।

 

লেখক: ড. সফর ইবনে আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালি
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


[1] সূরা আরাফ: (১৩৮)

[2] সূরা বাকারা: (৫৫)

[3] সূরা মায়েদা: (২৪)

[4] সূরা বাকারা: (৮৭)

[5] সূরা বাকারা: (৭৯)

[6] সূরা মায়েদাহ: (১৩)

[7] সূরা মায়েদাহ: (৪১)

[8] সূরা আনআম: (৯১)

[9] সূরা শু‘আরা: (১১)

[10] আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস, সর্বশেষ সফর আত-তাসনিয়াহ।

মন্তব্য করুন

Back to top button