হারাম-হালাল

ক্যানভাস, প্রাচীর গাত্র, কাগজ ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম

আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ ‘নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহর বিচারে কঠোর শাস্তি প্রাপ্তরা হবে ছবি নির্মাতাগণ’।[1]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِى ، فَلْيَخْلُقُوا حَبَّةً ، وَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً

‘যারা আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে তৎপর হয় তাদের থেকে বড় যালেম আর কে আছে? এতই যদি পারে তো তারা একটা শস্য দানা সৃষ্টি করুক কিংবা অণু সৃষ্টি করুক’।[2]

ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ

‘প্রত্যেক ছবি নির্মাতা জাহান্নামে যাবে। সে যত ছবি অঙ্কন করেছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য একটি করে প্রাণী তৈরী করা হবে। সে জাহান্নামে (তাকে) শাস্তি দেবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘তোমাদেরকে যদি ছবি অাঁকতেই হয় তাহলে বৃক্ষ ও যার ‘রূহ’ নেই তার ছবি অাঁক’।[3]

এ সকল হাদীছ হতে প্রমাণ মেলে যে, মানুষ, পশু ইত্যাকার যে কোন প্রাণীর ছবি অাঁকা হারাম। চাই তার ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা ছাপা হৌক, কিংবা খোদাইকৃত হৌক, কিংবা অঙ্কিত হৌক বা ভাষ্কর্য হৌক কিংবা ছাঁচে ঢালাই করা হৌক। কেননা ছবি হারাম সংক্রান্ত হাদীছের আওতায় এ সবই পড়ে। আর যে ব্যক্তি মুসলমান সে তো শরী‘আতের কথা অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিবে। সে এ বিতর্ক করতে যাবে না যে, আমি তো উহার পূজা করি না বা উহাকে সিজদা করি না। একজন জ্ঞানী লোক যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমাদের যুগে ব্যাপক বিস্তার লাভকারী ছবির মধ্যে নিহিত একটি ক্ষতির কথাও চিন্তা করেন তাহলে শরী‘আতে ছবি হারামের তাৎপর্য তিনি অনুধাবন করতে পারবেন। বর্তমানে এমন অনেক ছবি আছে যার কারণে কুপ্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, কামনার জোয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি ছবির জন্য যিনায় লিপ্ত হওয়াও বিচিত্র নয়।

এছাড়া মুসলমানরা নিজেদের ঘরে প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা প্রাণীর ছবি থাকলে গৃহে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ ‘যে বাড়ীতে কুকুর ও ছবি থাকে সেই বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[4]

কোন কোন বাড়ীতে কাফিরদের দেব-দেবীর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয় যে, এগুলি আমরা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখেছি। অন্যান্য ছবির তুলনায় এগুলি আরও কঠোর হারাম। অনুরূপভাবে প্রাচীর গাত্রে টাঙানো ছবিও বেশী ক্ষতিকারক। এসব ছবি কত যে সম্মান পায়, কত যে দুঃখ জাগরুক করে, কত যে গর্ব বয়ে আনে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

ছবিকে কখনো স্মৃতি বলা যায় না। কেননা, মুসলিম আত্মীয় ও প্রিয়জনের স্মৃতি তো অন্তরে বিরাজ করে। একজন মুসলমান তাদের জন্য রাববুল আলামীনের নিকটে রহমত ও মাগফেরাত কামনা করবে। তাতেই তাদের স্মৃতি জাগরুক থাকবে।

সুতরাং সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি বাড়ী থেকে সরিয়ে দেওয়া ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা আবশ্যক। হ্যাঁ, যেগুলি নিশ্চিহ্ন করা দুষ্কর ও আয়াসসাধ্য সেগুলি ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে। যেমন সাধারণ্যে প্রচলিত কৌটাবদ্ধ খাদ্যদ্রব্য বা টিনজাত খাদ্য সমগ্রী ও অন্যান্য নানা ধরনের বস্ত্ততে অঙ্কিত ছবি, অভিধান, রেফারেন্স বুক ও অন্যান্য পাঠ্য বইয়ের ছবি ইত্যাদি। তবে যথাসম্ভব সেগুলি অপসারিত করা গেলে করবে। বিশেষ করে মন্দ ছবি রাখবে না।

পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত ছবি হারামের আওতাভুক্ত হবে না। কেননা সফরে উহার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া কোন কোন বিদ্বানের মতে, যে সব ছবির ক্বদর নেই; বরং তা পদদলিত করার ন্যায় গণ্য, সে সব ছবি প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেছেন, فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)

 


[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪২৯।

[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯৬।

[3]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯৮।

[4]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৮৯।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button