হারাম-হালাল

গীবত বা পরনিন্দা করা হারাম

মুসলমানদের গীবত ও তাদের মান-ইযযতে অহেতুক নাক গলানো এখন একটি জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ গীবত করতে আল্লাহ তা‘আলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। মানুষ যাতে গীবতকে ঘৃণা করে এবং তাতে নিরুৎসাহ হয় সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যাদেশ করেছেন। সর্বোপরি তিনি গীবতকে এমন ঘৃণ্যভাবে চিত্রিত করেছেন, যে কোন মনই তার প্রতি বিতৃষ্ণ হবে। তিনি বলেছেন,

وَلاَ يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

‘তোমরা একে অপরের যেন গীবত না কর। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ পসন্দ করে? অনন্তর তোমরা তা অপসন্দ কর’ (হুজুরাত ১২)

‘গীবত’-এর পরিচয় প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন,

أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟ قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ : ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ. قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِى أَخِى مَا أَقُولُ؟ قَالَ : إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ

‘তোমরা কি জান ‘গীবত’ কী? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা অপসন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম গীবত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি তার ‘গীবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে’।[1]

সুতরাং মানুষের মধ্যে যে দোষ আছে এবং যার চর্চা সে অপসন্দ করে তা আলোচনা করাই গীবত। চাই সে দোষ তার শরীর সংক্রান্ত হৌক কিংবা দ্বীন ও চরিত্র বিষয়ক হৌক কিংবা আকার-আকৃতি বিষয়ক হৌক। গীবত করার আঙ্গিক বা ধরনও নানারকম রয়েছে। যেমন ব্যক্তির দোষ আলোচনা করা, বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে তার কর্মকান্ড তুলে ধরা ইত্যাদি।

আল্লাহ পাকের নিকটে গীবত বড়ই কদর্য ও খারাপ কাজ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ গীবতের ব্যাপারে খুবই উদাসীনতা দেখিয়ে থাকে। এজন্য গীবতের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,

اَلرِّبَا اثْنَانِ وَسَبْعُونَ بَابًا أَدْنَاهَا مِثْلُ إِتْيَانِ الرَّجُلِ أُمَّهُ وَأَرْبَا الرِّبَا اسْتِطَالَةُ الرَّجُلِ فِيْ عِرْضِ أَخِيهِ

‘সূদের (পাপের) ৭২টি দরজা বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হ’ল কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার এক ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’।[2]

যে মজলিসে কারও গীবত করা হয় সেখানে যে ব্যক্তিই উপস্থিত থাকুক তাকে তা নিষেধ করা ওয়াজিব। যে ভাইয়ের গীবত করা হয় তার পক্ষ নিয়ে সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করাও আবশ্যক। সম্ভব হলে ঐ মজলিসেই গীবতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন’।[3]

মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 


[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৮।

[2]. তাবারাণী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৭১।

[3]. আহমাদ হা/২৭৫৮৩; তিরমিযী হা/১৯৩১।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button