হারাম-হালাল

ছালাতে তাড়াহুড়া করা হারাম

সবচেয়ে বড় চুরি হচ্ছে ছালাতে চুরি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِى يَسْرِقُ مِنْ صَلاَتِهِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ صَلاَتِهِ قَالَ : لاَ يُتِمُّ رُكُوعَهَا وَلاَ سُجُودَهَا

‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সেই ব্যক্তি যে ছালাতে চুরি করে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কিভাবে ছালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, সে রুকূ-সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না’।[1]

আজকাল অধিকাংশ মুছল্লীকে দেখা যায় যে তারা ছালাতে ধীরস্থির ভাব বজায় রাখে না। ধীরে-সুস্থে রুকূ-সিজদা করে না। রুকূ থেকে যখন মাথা তোলে তখন পিঠ সোজা করে দাঁড়ায় না এবং দু’সিজদার মাঝে পিঠ টান করে বসে না। খুব কম মসজিদই এমন পাওয়া যাবে যেখানে এ জাতীয় দু’চারজন পাওয়া যাবে না। অথচ ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা ছালাতের অন্যতম রুকন। স্বেচ্ছায় তা পরিহার করলে কোন মতেই ছালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং বিষয়টি বেশ গুরুতর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

لاَ تُجْزِئُ صَلاَةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيمَ ظَهْرَهُ فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ

‘কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত না রুকূ-সিজদায় তার পৃষ্ঠদেশ সোজা করবে, সে পর্যন্ত তার ছালাত যথার্থ হবে না’।[2]

কাজটি যে অবৈধ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যে মুছল্লী এরূপ করে সে ভৎর্সনার যোগ্য। আবু আব্দুল্লাহ আশ‘আরী (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা ছাহাবীদের সাথে ছালাত আদায়ের পর তাদের একটি দলের সাথে বসেছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে ছালাতে দাঁড়াল। সে রুকূ করছিল আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারছিল। তা দেখে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা কি এই লোকটিকে লক্ষ্য করেছ? এভাবে ছালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, তবে সে মুহাম্মাদের মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে মারা যাবে। কাক যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার ছালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকূ করে আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারে তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশী খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা মিটাতে পারে?’।[3]

যায়েদ বিন ওয়াহাব হতে বর্ণিত আছে, একবার হুযায়ফা (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে রুকূ-সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি ছালাত আদায় করনি। আর এ অবস্থায় যদি তুমি মৃত্যুবরণ কর, তাহলে যে দ্বীন সহ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে’।[4]

যে ব্যক্তি ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখে না, সে যখন উহার বিধান জানতে পারবে তখনকার ওয়াক্তের ফরয ছালাত তাকে আবার পড়তে হবে। আর অতীতে যা ভুল হয়ে গেছে সেজন্য তওবা করবে, সেগুলি আর পুনরায় পড়তে হবে না। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন জনৈক দ্রুত ছালাত আদায়কারীকে লক্ষ্য করে বললেন, اِرْجِعْ فَصَلِّ ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ‘যাও, ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি তো ছালাত আদায় করনি’।[5] এখানে অতীত ছালাত কাযা করার কথা বলা হয়নি।

 

– মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ


[1]. আহমাদ, মিশকাত হা/৮৮৫।

[2]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৭৮।

[3]. ছহীহ ইবনে খুযায়মা হা/৬৬৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১৩১।

[4]. আহমাদ, বুখারী হা/৭৯১, ফাতহুল বারী ২/২৭৪ পৃঃ।

[5]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯০।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button