ইসলামের পরিচয়

ইসলামী শিক্ষা

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তার বান্দাদের অন্তর হতে ইলম টেনে বের করে নেবেন না। বরং আলেমদের উঠিয়ে নেবার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। অবশেষে যখন তিনি কোন আলেমকে অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন লোকেরা মুর্খদের নেতারূপে গ্রহণ করবে। অতঃপর কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হ’লে বিনা ইলমেই তারা ফৎওয়া (সিদ্ধান্ত) দিবে। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করবে’ (বুখারী হা/১০০; মুসলিম হা/২৬৭৩; মিশকাত হা/২০৬ ‘ইলম’ অধ্যায়)

ইল্ম অর্থ জ্ঞান। যা মানুষকে কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত করে। এটি প্রধানতঃ তিন ভাগে বিভক্ত। ১- ইন্দ্রিয় লব্ধ জ্ঞান (علم وهبى)। এই জ্ঞান মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী সবার মধ্যে রয়েছে। যেমন সন্তানের প্রতি স্নেহ ও মমত্ববোধ এবং তাকে লালন-পালনের জ্ঞান, যা আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে প্রয়োজন মোতাবেক প্রদান করেছেন। ২- অর্জিত জ্ঞান (علم كسبى) , যা মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করে। এর মধ্যে ধর্মীয় ও বস্ত্তগত সকল প্রকারের জ্ঞান শামিল রয়েছে। ৩- ইলাহী জ্ঞান (علم وحى) যা ‘অহি’ আকারে নবীগণের নিকটে এবং ‘ইলহাম’ আকারে নবী ও নবী নন এমন সকলের নিকটে আল্লাহর পক্ষ হ’তে নিক্ষেপিত হয়। যুগে যুগে পৃথিবীতে বড় বড় আবিষ্কার ও বড় বড় সৃষ্টির সবই বান্দার কল্যাণের নিমিত্তে আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রদত্ত ইলহামের ফল ব্যতীত কিছুই নয়। নবী ব্যতীত অন্যের ইলহাম শরী‘আতের কোন দলীল নয়। অহি-র জ্ঞান অভ্রান্ত, যা সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত হয়। কুরআন ও সুন্নাহ হ’ল সেই অহি-র জ্ঞানের আধার। মানুষের অর্জিত জ্ঞান যদি অহি-র জ্ঞানের দ্বারা আলোকিত না হয়, তাহ’লে ঐ জ্ঞান তাকে সত্যিকারের কল্যাণের পথ দেখাতে পারে না। বরং সে শয়তানের দ্বারা পরিচালিত হয়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সালাফে ছালেহীন ‘ইল্ম’ বলতে কুরআন ও সুন্নাহর ইল্ম বুঝতেন এবং এই ইলম শিক্ষা করা আল্লাহর রাসূল ‘ফরয’ করেছেন। কুরআনেরও প্রথম ‘অহি’ হ’ল اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ ‘তুমি পড় তোমার প্রভুর নামে’। অর্থাৎ যে ইল্ম তার প্রভুর সন্ধান দেয় না, সেটা প্রকৃত ইল্ম নয়। বরং সেটা হল শয়তানী ইল্ম। যা মানুষের ক্ষতি করে এবং তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ‘নিশ্চয় তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও ক্ষমাশীল’ (ফাত্বের ৩৫/২৮)। কেননা তারাই আল্লাহর সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে গবেষণা করে ও সেখান থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। তারাই আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা উপলব্ধি করে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত হওয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত আনুগত্য করে সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভয় করে থাকে।

আলেম কারা?

এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ- الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-  ‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিবসের আগমন-নির্গমনে জ্ঞানীদের জন্য (আল­াহর) নিদর্শন সমূহ নিহিত রয়েছে’। ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্ল­াহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করোনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও!’ (আলে ইমরান ৩/১৯০-৯১)

প্রতিটি কর্মই তার কর্তার প্রমাণ বহন করে। অমনিভাবে প্রতিটি সৃষ্টিই তার সৃষ্টিকর্তা আল্ল­াহর প্রমাণ ও তাঁর নিদর্শন  হিসাবে গণ্য। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, অত্র আয়াত নাযিল হ’লে রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) ছালাতে দাঁড়িয়ে যান ও কাঁদতে থাকেন। ছালাত শেষে আয়াতটি পাঠ করে তিনি বলেন, আজ রাতে এ আয়াতটি আমার উপর নাযিল হয়েছে। অতএব وَيْلٌ لِمَنْ قَرَأَهَا وَلَمْ يَتَفَكَّرْ فِيهَا ‘দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির জন্য যে এটি পাঠ করে অথচ এতে চিন্তা-গবেষণা করে না’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬২০; আরনাঊত্ব, সনদ ছহীহ)

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড :

শিক্ষা হ’ল জাতির মেরুদন্ড। যা জাতিকে খাড়া রাখে এবং পড়ন্ত অবস্থা থেকে উঠিয়ে দাঁড় করায়। এটা তখনই সম্ভব যখন ঐ শিক্ষা হবে আল্লাহ নির্দেশিত পথে। যদি এর বিপরীত হয়, তাহ’লে ঘুণে ধরা বাঁশের মত জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়বে। আজকের পৃথিবীতে বড় বড় অশান্তির মূল কারণ হ’ল শিক্ষিত নেতৃবৃন্দ। তাদের শিক্ষায় আল্লাহভীরুতা নেই, আখেরাতে জবাবদিহিতা নেই। স্রেফ রয়েছে দুনিয়া সর্বস্বতা। আর তাই দুনিয়া নামক মৃত লাশের উপরে ক্ষুধার্ত শকুনের মত দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকগুলি ভদ্রবেশে সকল প্রকার শয়তানী অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

আল্লাহ নির্দেশিত শিক্ষাকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বলা হয়। যার ভিত্তি হ’ল তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত বিশ্বাসের উপরে। যা উচ্চ নৈতিকতা সম্পন্ন, নির্লোভ, সৎ ও যোগ্য দেশপ্রেমিক জনশক্তি তৈরী করে। এই শিক্ষা মানুষের জীবনকে খন্ডিত নয়, বরং একটি অবিচ্ছিন্ন জীবন হিসাবে গণ্য করে। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনকে আল্লাহর রঙে রঞ্জিত করে। যা মানুষের হাত-পা, মনন ও মস্তিষ্ক সবকিছুকে আল্লাহর অনুগত বানিয়ে থাকে। ফলে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে শয়তানের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ চলে। কেননা শয়তান সর্বদা পৃথিবীতে বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। অথচ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি সর্বদা পৃথিবীকে সুন্দরভাবে আবাদ করতে চায়। অতএব দেশে প্রচলিত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্বিত করে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একক ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করাই হ’ল যেকোন সমাজদরদী সরকারের মৌলিক কর্তব্য। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের সরকার হিসাবে এটি তাদের জন্য অপরিহার্য।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর কারিকুলাম এখন যথেষ্ট উন্নত হ’লেও কওমী মাদ্রাসার অর্থায়ন যেহেতু সরকার করে না, তাই ওগুলোর কারিকুলামের ব্যাপারে কিছু করা যাচ্ছেনা’।

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক অধ্যাপক এতে তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, অর্থমন্ত্রীর স্বীকারোক্তিতে বর্ণিত সরকারের এই অপারগতা একটি দুঃখজনক বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। দেশের সংবিধানের ১৭(ক) ধারায় রাষ্ট্র নাগরিকদের কাছে অঙ্গীকার করেছে যে, রাষ্ট্র সকল শিশুর জন্য একটি একক মানসম্পন্ন, গণমুখী, সার্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত চালু করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে’ (‘কওমি মাদ্রাসা কি আইনের ঊর্ধ্বে?’ দৈনিক প্রথম আলো ৪.০৫. ১৫ইং )

আমাদের প্রশ্ন, ‘সার্বজনীন ও গণমুখী’ ইত্যাদি ভাষার আড়ালে ইসলামী শিক্ষাকে ধ্বংস করাই কি একমাত্র লক্ষ্য? ইসলামী শিক্ষা কি সার্বজনীন ও গণমুখী নয়? ইসলামী শিক্ষাক্রমের মধ্যেই তো অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরকে তাদের শিক্ষকদের মাধ্যমে স্ব স্ব ধর্ম শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। বৃটিশ সরকার নিউ স্কীম মাদরাসা চালু করে ইসলামের বুকে ছুরি মেরেছিল। হাজী মুহাম্মাদ মুহসিনের ওয়াকফকৃত সম্পদের টাকায় পরিচালিত মাদরাসাগুলির সাথেও বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ঐ মাদরাসাগুলির অন্যতম হ’ল রাজশাহী হাই মাদরাসা। মাদরাসা ময়দান নামেই কেবল তার মাদরাসা নামটির অস্তিত্ব রয়েছে। বাকী সবই ধ্বংস করা হয়েছে। কি জবাব দিবেন সরকার কাল ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহর কাছে হাজী মুহসিনের সামনে? অতঃপর বৃটিশ সরকার মুসলমানদের খুশী করার জন্য ‘আলিয়া মাদরাসা’ চালু করল। যেখান থেকে সুকৌশলে তারা ইসলামের রূহ বের করে নিল। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ইসলামী শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে আলিয়া মাদরাসাগুলি থেকে ইসলামের খোলসটুকুও উঠিয়ে নিয়েছে। এবার তাদের নযর পড়েছে কওমী মাদরাসাগুলির দিকে। এটাকে শেষ করতে পারলেই এদেশ থেকে ইসলামী শিক্ষার জানাযা পড়ানো হয়ে যাবে। সরকার যদি নিজেদেরকে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার বলে দাবী করেন, তাহ’লে এদেশের মানুষের আক্বীদা ও আমলের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। আর তাতেই দেশের কাংখিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ

আলিয়া মাদরাসার সিলেবাস :

উক্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ জনৈক আলেম সম্প্রতি যা লিখেছেন তা স্মর্তব্য। যেমন- বর্তমান শিক্ষানীতির আলোকে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর নামে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যসূচীতে মাত্রাতিরিক্ত সাধারণ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। যেমন ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট ৬০০ নম্বরের মধ্যে ইসলামিয়াতের নম্বর মাত্র ২০০। জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ১১০০ নম্বরের মধ্যে ইসলামিয়াতের নম্বর মাত্র ৪০০। এসএসসি মানের দাখিল পরীক্ষায় (সাধারণ বিভাগ) ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ইসলামিয়াতের নম্বর ৫০০ ও দাখিল (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় ১৪০০ নম্বরের মধ্যে ইসলামিয়াতের নম্বর মাত্র ৫০০। এইচএসসি পরীক্ষার সমমানের আলিয়া মাদরাসার আলিম পরীক্ষার নম্বরেও বৈষম্য বিদ্যমান। কেননা এইচএসসি ছাত্রদের ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। অপরদিকে একই মানের আলিম (সাধারণ) ছাত্রদের ১৫০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এর মধ্যে মাত্র ৮০০ নম্বর ইসলামিয়াতের জন্য রাখা হয়েছে। তাছাড়া আলিম (বিজ্ঞান) পরীক্ষার্থীদের ১৭০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এই ১৭০০ নম্বরের মধ্যে ইসলামিয়াতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪০০ নম্বর’ (এগুলি যুলুম ছাড়া কিছুই নয়। যাতে কোন ছাত্র মাদরাসায় না পড়ে)। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, যদি সরকারী নিয়ন্ত্রণভুক্ত করা হয়, তাহ’লে অন্যান্য ধারার সঙ্গে কওমী মাদরাসা শিক্ষাতেও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে।… তাতে কওমী মাদরাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা এবং এর ইসলামী গুণাবলী কওমী মাদরাসা ছাত্রদের কাছ থেকে আশা করা বাতুলতা মাত্র। তাছাড়া সাধারণ শিক্ষার ন্যায় কওমী মাদরাসায়ও পরিচালনা, তদারকি, স্থানীয় জন-তদারকি, পরিবীক্ষণ ও একাডেমিক পরিদর্শনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হ’লে তা ১৯৫৭ সালে মুহসিনিয়া মাদরাসা শিক্ষা বিলুপ্তির ন্যায় অবস্থা ঘটাবে।

কারণ এরই মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আলিয়া মাদরাসা থেকে উত্তীর্ণ দাখিল ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে এবং আলিম পাশ ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে আলিয়া মাদরাসার উচ্চ শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। অথচ একসময় আলিয়া ও কওমী মাদরাসার সিলেবাস প্রায় একই ছিল। কওমী মাদরাসা থেকে পাশ করা আলেমরা আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতাও করতে পারতেন।…

তাছাড়া সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কেউ কেউ কওমী মাদরাসা জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র, ছাত্ররা জঙ্গী ইত্যাদি বলে কওমী শিক্ষার বিরুদ্ধে যেভাবে বিষোদ্গার করছেন, তাতে  এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হ’লে কওমী মাদরাসার স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে না’… (‘মাদরাসা শিক্ষার ভবিষ্যৎ’ দৈনিক ইনকিলাব ৩০.০৪.১৫ইং)

বর্তমান মাদ্রাসা সিলেবাস সম্পর্কে অভিজ্ঞ অন্য একজন লেখকের মূল্যায়ন এখানে প্রযোজ্য। সরকার এ বছর (২০১৫) শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাদরাসার ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) স্তরের বই প্রণয়ন করেছে। এ বৈষম্য দূর করতে গিয়ে এমন কিছু লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে যা মাদরাসা শিক্ষার সাথে মানানসই তো নয়ই বরং সাংঘর্ষিক।

ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণীর-‘আমার বাংলা বই’। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৭২ :

প্রথমে বলতে চাই কোমলমতি শিশুদের জন্য এত বড় বই দেয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি। বইটির পৃষ্ঠা তথা পাঠ্যসূচী আরো কম হলে তাদের বয়স অনুপাতে মানানসই হতো। এবার আসা যাক বইয়ের লেখা সম্পর্কে।

… এ বইটির পাঠ-২ পৃ. ২ ও ৩-য়ে দেয়া হয়েছে ১১টি শিশুর ছবিসহ নাম। এখানে তাদের নামে মুসলিম সংস্কৃতি রক্ষা করা হয়নি। নাম দেয়া হয়েছে অমি, আলো, ইমন, ঈশিতা, উমেদ, উর্মি, এনাম, ঐশী, ওমর ও ঔছন। এখানে এনাম ও ওমর বাদে ৮টি নামই মুসলিম সংস্কৃতির সাথে কোন মিল নেই।

পাঠ-৩ পৃ. ৪-য়ে লেখা হয়েছে, ‘আমরা ভোরে ঘুম থেকে উঠি। দাঁত মাজি। হাত-মুখ ধুই। আমরা খাওয়ার আগে হাত ধুই। খাওয়ার পরে হাত ধুই। আমরা পড়ার সময় পড়ি। খেলার সময় খেলি’। মুসলমানের সন্তান হিসেবে ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক সহ ওযূ করি। ছালাত পড়ি। মক্তবে যাই। মাদরাসায় যাই’ ইত্যাদি কথাগুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আনা উচিত ছিল। কেননা শিশুর এখনই সময় এগুলো শিখার।

পাঠ-৪ পৃ. ৫-য়ে লেখা হয়েছে, ‘আতা গাছে তোতা পাখি/ ডালিম গাছে মউ। এত ডাকি তবু কথা/ কও না কেন বউ’? ৫-৭ বছরের শিশুদের বউ শিখাবার কোন প্রয়োজন আছে কী? না বাল্যবিবাহের প্রতি এটা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা? অথচ ফররূখ আহমদ, আল মাহমূদ প্রমুখের শিশু উপযোগী বহু কবিতা রয়েছে, তা দেয়া যেত।

পাঠ-৭ পৃ. ১১-য়ে -তে শব্দ গঠনে অজ চরে শব্দ আনা হয়েছে। এটা প্রায় বিলুপ্ত ও প্রায় মৃত সংস্কৃত শব্দ। এটি একটি হিন্দুয়ানী শব্দ। যার অধিকাংশ অর্থ হিন্দুদের দেব দেবীকে বুঝায়। অভিধানে অজ অর্থ ঈশ্বর, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, ছাগল, দশরথের পিতা ইত্যাদি। এরূপ একটি হিন্দুয়ানী শব্দ মাদরাসার বইয়ে দেয়ার অর্থ কি? যে শব্দের ব্যবহার হাযারেও একবার হয় না। এভাবে শিশুদের রামায়ন ও গীতার পরিভাষা শেখানোর উদ্দেশ্য কি? এটা মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে গভীর ষড়ন্ত্রের পরিচয় বহন করে।

পাঠ-১১ পৃ. ১৫-য়ে ‘এ’ দিয়ে ‘একতারা’ লেখা হয়েছে। অথচ একতারা গানের বাজনা। বাজনা ইসলামে তথা মাদরাসা শিক্ষায় হারাম। এখানে এ-দিয়ে একতা বা এক আল্লাহকে বুঝানো যেত। পাঠ-১৪ এর ১৮ পৃষ্ঠাতে-কবি সুফিয়া কামালের ‘ইতল বিতল’ নামে একটি ছড়া ছাপা হয়েছে। যার কোন অর্থ নেই। ‘ইতল বিতল গাছের পাতা/ গাছের তলায় ব্যাঙের ছাতা। বৃষ্টি পড়ে ভাঙ্গে ছাতা/ ডোবায় ডুবে ব্যাঙের মাথা’। এ ছড়া থেকে শিশুদের শিক্ষণীয় কিছু নেই। সুফিয়া কামালের শিক্ষণীয় অনেক কবিতা রয়েছে। পাঠ-১৯ পৃ. ২৬-য়ে ‘ন’ দিয়ে ‘নদীর জলে নাও চলে’। পানির বদলে হিন্দুদের ‘জল’ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত কেন? পানির প্রয়োজন হলে মুসলমানগণ কখনো ‘জল’ তো বলে না।… এ বইটিতে ‘বউ’ শিখাতে শিশুদের পিছন ছাড়ছে না। পাঠ-২১ পৃ. ৩০-য়ে রোকনুজ্জামানের- ‘বাক বাকুম পায়রা/ মাথায় দিয়ে টায়রা/ বউ সাজবে কালকি/ চড়বে সোনার পালকি’। এ ছড়া থেকে কোমলতি শিশুদের কি শেখার আছে?… পাঠ-২৭ পৃ. ৩৯-য়ে সুকুমার রায়ের- ‘চলে হন হন ছোটে পনপন’…। এর মধ্যে শিশুদের জন্য কিছুই শিক্ষণীয় নেই।..

পাঠ-৪০ পৃ. ৫২-তে -কার দিয়ে বাক্য গঠন করতে গিয়ে ‘ঢোলে’র ছবি দেয়া হয়েছে। ঢোলের সাথে মাদরাসার শিক্ষার্থী শিশুদের তো কোন সম্পর্ক নেই।… তার মানে কি ভবিষ্যতে মাদরাসায় ঢোল বাজাতে হবে?

পাঠ-৪৬ পৃ. ৫-য়ে ‘শুভ ও দাদিমা’ শিরোনামে দাদীর আশীর্বাদ- ‘বেঁচে থাকো ভাই’। এ ধরনের ডায়ালগ ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে বলা হয়। মুসলমানরা বলেন না। বরং মুসলমানরা দো‘আ করে বলেন, ‘আল্লাহ তোমার উপর রহম করুন ও বরকত দিন’।

পাঠ-৪৯ পৃ. ৬৩-য়ে ‘মুমুর সাত দিন’‘মুমু রোজ মাদরাসায় যায়… বৃহস্পতিবার ছবি আঁকে। শুক্রবার ছুটির দিন। ওইদিন সে খেলাধুলা করে’। শুক্রবার বন্ধ দেয়া হয়েছে শুধু খেলাধুলার জন্য? নাকি এ দিন বন্ধ হলো পবিত্র জুম‘আর ছালাতের জন্য। অথচ সেটা বলা হ’ল না।… আর ছবি আঁকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন (প্রাণীর) ছবি অংকনকারীদের কঠিন আযাব দেয়া হবে’। তাহ’লে মাদরাসায় পড়িয়ে কি আমাদের আযাব অর্জন করতে হবে? আর অর্থপূর্ণ নামটাও পাওয়া গেল না! মুমু একটা নাম হলো? যার কোন অর্থ নেই।…

ইবতেদায়ী তৃতীয় শ্রেণী- ‘আমার বাংলা বই’ :

‘স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে’ পাঠের একটি লাইনে লেখা রয়েছে- ‘আজ বৃহস্পতিবার। এই দিন শেষের দুই পিরিয়ডে অন্য রকম কাজ হয়। আনন্দে ভরে ওঠে ছাত্র-ছাত্রীদের মন। এই দুই পিরিয়ডে কোনো দিন গান শেখানো হয়’

লেখার নীচে রয়েছে ছেলে-মেয়েরা পায়ে পায়ে হাতে হাত রেখে আলাপ-আলোচনা করছে, এমন কয়েক জনের একটি ছবি। মাদরাসায় গান শিখানো হয় এটা কোন ধরনের কথা? আর ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি বসার ছবি দিয়ে কী বুঝানো হচেছ? অথচ এখানে দেয়া যেত কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামী সঙ্গীত বা হামদ-না‘ত শেখানো হয়। (সাবালক) ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি বসা ও গায়ে গা লাগিয়ে বসা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি গুনাহের কাজ।… অথচ ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি বসার ছবি দিয়ে কি বুঝানো হলো? এ শিক্ষা নিঃসন্দেহে অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করার একটি ষড়যন্ত্র। এ পাঠের ৩২ পৃষ্ঠায় রয়েছে, ‘খুশিতে সকলে এক সঙ্গে হাততালি দিল’ (অথচ খুশীতে হাত তালি দেওয়া ইসলামী সংস্কৃতির বিরোধী। বরং এ সময় সে আলহামদুলিল্লাহ বলবে)। (‘মাদরাসা পাঠ্য বইয়ে ইসলাম বিরোধী লেখা’ দৈনিক ইনকিলাব ১১.০৫.১৫ইং)

অন্য একটি জাতীয় দৈনিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ওহাবি আন্দোলনের ঢেউ ভারতে পৌঁছানোর পর ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিহারের দেওবন্দ মাদ্রাসা একদিকে ইসলামের মৌলবাদী চিন্তা-চেতনার প্রসারে নেতৃত্ব প্রদানের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়, অন্যদিকে ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামেও ওহাবি ও ফারায়েজী আন্দোলনের একটা গৌরবময় ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়’।… সাধারণ মানুষের মধ্যে কওমি মাদ্রাসাগুলোর পরিচয় ওহাবি মাদ্রাসা হিসেবে’ (দৈনিক প্রথম আলো ৪.০৫.১৫ইং)

ইসলামী শিক্ষার বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি দেওবন্দী, ওহাবী, ফারায়েযী, মৌলবাদী সবকিছুকে একাকার করে ফেলেছেন। সবজান্তা সাজতে গিয়ে তিনি সববিষয়ে অজ্ঞতার প্রমাণ দিয়েছেন। অতএব জেনে-বুঝে এসব ব্যাপারে কলম ধরা উচিত। দুর্ভাগ্য, এরূপ লোকদের পরামর্শকেই সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান :

বস্ত্ততঃ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম। যা মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে আল্লাহ নির্দেশিত পথে পরিচালিত করে। অতঃপর এ পথেই সে জান্নাতের প্রতি ধাবিত হয়। নিঃসন্দেহে ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহভীরু বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ইমাম, দাঈ, লেখক, খত্বীব, কর্মকর্তা, কর্মচারী প্রভৃতি সৃষ্টি হবে। যারা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে এবং অন্যায় প্রতিরোধ করবে।

ইসলামী শিক্ষার স্বর্ণফসল :

বিগত যুগে ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমেই মুসলমানরা বিশ্ব নেতৃত্বে সমাসীন হয়েছিল। অথচ আজ আধুনিক শিক্ষার নামে তাদেরকে কেবল বিদেশীদের লেজুড় হিসাবে তৈরী করা হচ্ছে। নিজের ঘরে খাঁটি সোনা থাকতে তারা অন্যের মেকী সোনার পিছনে ছুটছে। একটি হিসাবে জানা যায় যে, পবিত্র কুরআনে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহে নিম্নোক্ত আয়াত সমূহ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন, (১) মেডিসিনে ৩৫৫টি, (২) বায়োলজি ও বোটানিতে ১০৯টি, (৩) এ্যাস্ট্রোনমি ও এ্যাস্ট্রোফিজিক্সে ৮২টি, (৪) কেমিস্ট্রিতে ৪৩টি, (৫) মেটেরিওলজিতে ৩৪টি, (৬) জিওলজিতে ৩৩টি, (৭) ওসিয়ানোগ্রাফিতে ৩১টি, (৮) জুলজিতে ২৮টি, (৯) জিওগ্রাফিতে ১৭টি,  (১০) আর্কিওলজিতে ৮টি, (১১) এয়ারোনটিক্সে ৮টি এবং (১২) সোশিওলজিতে ৩০০টি, সর্বমোট ৯৪৮টি।

আরেকটি হিসাবে এসেছে যে, কুরআনের শতকরা ১১টি আয়াত বিজ্ঞান বহন করে। প্রকৃত অর্থে কুরআন ও হাদীছের প্রতিটি শব্দ ও বাক্যই বিজ্ঞান বহন করে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণের নিকটে যা গোপন নয়। কেবল উৎসাহ ও সহযোগিতা দেওয়ার অভাবে এবং যথার্থ গবেষণার অভাবে কুরআন ও হাদীছের কল্যাণ ভান্ডার থেকে মানবজাতি বঞ্চিত রয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলমানগণ দীর্ঘ ১০০০ বছর যাবৎ বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছে। উইলিয়াম ড্রেপার স্বীয় Intellectual development of Europe গ্রন্থে বলেন, খুবই পরিতাপের বিষয় যে, পাশ্চাত্যের জ্ঞানীগণ বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানকে ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের এই বিদ্বেষ বেশীদিন চাপা থাকেনি। নিশ্চিতভাবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আরবদের অবদান আকাশের নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জ্বল’।

বর্তমান পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচিত রজার বেকন (১২১৪-১২৯৪ খৃঃ) বলেন, তিনি আরব বিজ্ঞানীদের দ্বারা লাভবান হয়েছেন’।

মুসলিম বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের তিনটি যুগ :

(১) হিজরী ২য় শতাব্দীর শুরু থেকে ৩য় শতাব্দী পর্যন্ত। এই যুগে বাগদাদের বিজ্ঞানাগারে বিভিন্ন বিদেশী ও ইউনানী বিজ্ঞানের গ্রন্থ সমূহ অনুবাদ করা হয়।

(২) হিজরী ৩য় শতাব্দী হ’তে ৪র্থ শতাব্দী পর্যন্ত। এই যুগে মুসলমানগণ গ্রীক, মিসর, ভারতবর্ষ ও পারস্যের বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণ করে তার উপর গবেষণা মূলক পর্যালোচনা শুরু করেন।

(৩) হিজরী ৫ম শতাব্দী হ’তে। এই যুগে মুসলমানগণ আবিষ্কার কার্য শুরু করেন এবং বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা সৃষ্টি করে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই যুগে   ইমাম রাযী, আবু আলী ইবনে সিনা, ওমর খৈয়াম, ইবনুল হায়ছামী, আবুল কাসেম আয-যাহরাবী প্রমুখ বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়। এরপর থেকে মুসলমানগণ ক্রমে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের স্বর্ণশিখরে উন্নীত হন।

প্রখ্যাত ফরাসী বৈজ্ঞানিক মঁসিয়ে সাদিও History of Arab গ্রন্থে বলেন, বাগদাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান শিক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। যে সমস্ত বিজ্ঞান দ্বারা বর্তমান যুগে নতুন নতুন আবিষ্কারের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে, সে সকল পদ্ধতি আগে থেকেই বাগদাদে প্রচলিত ছিল’।

জর্জ মার্কিন History of Science গ্রন্থে বলেন, খ্রিষ্টিয় ৯ম শতাব্দী ছিল মুসলমানদের গৌরবের যুগ।… সেই যুগের মুসলমানগণ সভ্যতা ও কৃষ্টির ধারক ও বাহক ছিলেন’।

কিমস্টন Medical Science সম্পর্কে বলেন, আরব বিজ্ঞানীগণ শুধু গ্রীক বিজ্ঞানকে জমা করে অনুবাদ করলেই তাদের গৌরবের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তারা এছাড়াও সাহিত্য ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন গ্রন্থাবলী রচনা করে স্মরণীয় কীর্তি সমূহ রেখে গিয়েছেন’। তিনি আরও বলেন, রজার বেকনের বহু পূর্ব থেকেই আরব বিজ্ঞানীগণ অনুসন্ধান পদ্ধতি জানতেন’।

মুসলিম আবিষ্কার সমূহ :

কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আলো নিয়ে মুসলিম বিজ্ঞানীগণ বিশ্ব সভাকে যেসব মূল্যবান আবিষ্কার সমূহ দিয়ে আলোকিত করেছেন, তার কিছু নমুনা আবিষ্কারকের নামসহ আমরা নিম্নে পেশ করলাম।-

(১)ইবনুল হায়ছামী : ইনি প্রথম চোখের দৃষ্টিশক্তি আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম আলোকরশ্মির প্রতিবিম্বের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা ছবি (Photo) আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচন করেন। (২)আল-বেরুনী (৯৭৩-১০৪৮ খৃ.) : তিনি প্রথম স্বর্ণ-রৌপ্য ইত্যাদি ধাতুর ওযন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। (৩)আবুল কাসেম আয-যাহরাবী : ইনি প্রথম স্বীয় আত-ত্বারেক গ্রন্থে ‘শল্যবিদ্যা’ (Surgery) পদ্ধতি বাতলে দেন।

(৪)আবু আলী ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খৃ.) : চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর ‘আল-ক্বানূন’ গ্রন্থটিকে চিকিৎসা শাস্ত্রের বাইবেল বলা হয়।

(৫) ইবনে সীনা ও রাযী : ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে অনন্য অবদানের জন্য ইবনে সীনা ও রাযী-এর আলোকচিত্র আজও প্যারিস ইউনিভার্সিটিতে রক্ষিত আছে।

(৬) ঔষধ প্রস্ত্তত প্রণালীতে আরবদের অবদান অনন্য। যা লিগন ফার্মাকোপিয়া ও জালীনূসী ফার্মাকোপিয়া নামে খ্যাত ছিল। Robert Briklom বলেন, আরবগণ যে সকল ফার্মাকোপিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইউরোপিয় দেশগুলিতে এখনও সেগুলি প্রচলিত আছে। তারাই সর্বপ্রথম হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রুসেডের যুদ্ধে খ্রিষ্টানদের চিকিৎসার জন্য মুসলমান ডাক্তারদের আমন্ত্রণ করা হ’ত। History of the world ৮/২৭৬ পৃষ্ঠায় মি. হাইড বলেন, সমস্ত ইউনানী বিদ্যার এক বিরাট অংশ যা আমাদের নিকটে এসেছে, তার সবটুকুই আরবীয় মুসলমানদের অবদান’।

(৭)আহ্নিক গতি : কুপার নিকারের বহু পূর্বে যুরকানী, আল-বেরুনী, নূরুদ্দীন প্রমুখ বিজ্ঞানী এটি আবিষ্কার করেন। Draper বলেন, যুরকানীর গ্রন্থাবলীর দ্বারাই ইউরোপীয়রা সৌরবিজ্ঞানের সন্ধান পায়’।

(৮)ত্রিকোণমিতি : আবুল ওয়াফা মুহাম্মাদ আল-ক্বাববালী। (৯) এ্যালজাবরা : মূসা আল-খারেযমী। (১০) অংক ও জ্যোতিষ শাস্ত্র : ওমর খৈয়াম। (১১) ঘড়ি : কুত্ববী। (১২) কম্পাস : আবু ছালেহ। আমেরিকা আবিষ্কারকারী বলে খ্যাত ভাস্কো ডা গামার নাবিকের নাম ছিল আহমাদ বিন আব্দুল মাজীদ। (১৩) কামান : সম্রাট বাবর (দিল্লী)। (১৪) চশমা : সম্রাট আওরঙ্গযেব (দিল্লী) এটি প্রথম ব্যবহার করেন। (১৫) উদ্ভিদের প্রাণশক্তি : ইবনুল মাসকাভী। (১৬) বীজগণিত ও পৃথিবীর মানচিত্র : মূসা আল-খারেযমী। (১৭) নক্ষত্রের দূরত্ব পরিমাপক যন্ত্র : মূসা আল-খারেযমী। (১৮) মধ্যাকর্ষণ শক্তি : ছাবেত বিন কুর্রাহ। নিউটনের বহু পূর্বে তিনি স্বীয় ‘শরহ তাজরীদ’ গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোকপাত করেন। (১৯) আকাশে অভিযান : আববাস। হিট্টির মতে তিনি আকাশে অভিযান শেষে নামার সময় আহত হন। ফলে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। (২০) আলোকচিত্র : আবুল হায়ছাম। (২১) জ্যামিতি : আহমাদ, মুহাম্মাদ ও ছাবিত বিন কুর্রাহ নামক বাগদাদের তিন ভাইয়ের লিখিত বই অনুবাদ করেই সর্বপ্রথম এর সন্ধান পাওয়া যায়।

(২২) শূন্য : অংকে শূন্যের আবিষ্কার প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানীরাই করেন। Muslim culture নামক পাশ্চাত্যের একটি বইয়ে স্বীকার করা হয়েছে যে, মুসলমানগণ পাশ্চাত্যের প্রায় আড়াই’শ বছর পূর্বেই শূন্যের ব্যবহার জানতেন।

(২৩) বসন্তের টীকা : ডা. জীন্স নন, যেটা বলা হয়ে থাকে। বরং খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলিম দেশ সমূহে এটি প্রচলিত ছিল। ওছমানীয় খেলাফতের সময় লেডী মেরীর স্বামী তুরষ্কে বৃটেনের প্রতিনিধি ছিলেন। লেডী সেখান থেকে বসন্তের টীকা এনে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে চালু করেন। ১৭১৭ সালের লেডী মেরীর পত্রাদিতে এর প্রমাণ রয়েছে। হাম ও বসন্ত রোগের উপর আবুবকর রাযী (৮৬৪-৯৩২ খৃ.) লিখিত ‘কিতাবুল জুদরী ওয়াল হাছাবাহ’ এবং তাঁর ‘হাভী’ গ্রন্থটি চিকিৎসা শাস্ত্রের অনন্য গ্রন্থ।

(২৪) রক্ত প্রবাহ : আলাউদ্দীন ক্বারশী। (২৫) রসায়ন : জাবের বিন হাইয়ান। (২৬) এলকোহলিক স্পিরিট, তুঁতিয়া ও বরফ : মূহাম্মাদ বিন মূসা, যাকারিয়া ও রাযী। (২৭)সমাজবিজ্ঞান : ইবনু খালদূন। ইনি বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী বাক্লের পথপ্রদর্শক ছিলেন। (২৮) এ্যসিড : উইলিয়াম ড্রেপার বলেন, আরবরাই প্রথম এটি আবিষ্কার করেন। (২৯) বারূদ : জুরজী যায়দান বলেন, বারূদ মুসলমানদেরই আবিষ্কার। (৩০) ইঞ্জিনিয়ারিং : ফরাসী ঐতিহাসিক মঁসিয়ে সাদিও বলেন, মুসলমানগণ ৯০০ খ্রি. হতে ১৫০০ খ্রি. পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বহু প্রয়োজনীয় আবিষ্কার সমূহ করেন। (৩১) দর্শন : আল-কিন্দী। খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক ডিবলমী বলেন, ইউরোপে সর্বপ্রথম মুসলমানরাই এরিস্টটলের দর্শন শিক্ষা দেয়। (৩২)লজিক : ড্রেপার ও মেকলে বলেন, সর্বপ্রথম তর্কশাস্ত্রের বীজ বপন করেন ইমাম গাযযালী। (৩৩) তুলার কাগজ : মঁসিয়ে সাদিও History of the world (৮/২৭৫) গ্রন্থে বলেন, ইউসুফ বিন ওমর সর্বপ্রথম ৭০২ খ্রি. তুলার কাগজ আবিষ্কার করেন।

Encyclopaedia of Universal history ২/২৫ পৃষ্ঠায় জন ক্লার্ক রডপাথ বলেন, কেবলমাত্র আরবরাই ইউরোপকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে’।

এতদ্ব্যতীত যাদের অবদানে মানবেতিহাস সমৃদ্ধ, যেমন আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, মু‘আবিয়া, ওমর বিন আব্দুল আযীয, মানছূর, হারূনুর রশীদ, মূসা বিন নুছাইর, তারেক বিন যিয়াদ, আব্দুর রহমান আদ-দাখিল, মুহাম্মাদ বিন ক্বাসেম, মুহাম্মাদ ঘুরী, সুলতান মাহমূদ, বাবর, আওরঙ্গযেব, উরওয়া বিন যুবায়ের, ইকরিমা, শা‘বী, যুহরী, ইবনু ইসহাক, ওয়াক্বেদী, জারীর, ফারাযদাক্ব, আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, ত্বাবারী, জুরজানী, হারীরী, হামদানী, আল-ফারাবী, আল-ফারগানী, মাওয়ার্দী, মাক্বদেসী, আব্দুল কাহের বাগদাদী, ইবনু বতূতা, ইবনু হিশাম, ইবনু সা‘দ, বালাযুরী, ইয়াকূত হামাভী, ইবনু হাযম, ইবনু রুশ্দ, ইবনুল জাওযী, ইবনু বাজা, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু খালদূন, ইবনু খাল্লেকান, ইবনুল আছীর, ইবনু কাছীর, শেখ সা‘দী, রূমী, হাফেয, গাযালী, আসাদুল্লাহ খান গালিব, ইকবাল, হালী, আলবানী সকলেই ছিলেন মুসলিম উম্মাহর গৌরব রত্ন। সকলেরই ভান্ড ছিল কুরআন ও সুন্নাহর আলোকোৎসারিত জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ। অতএব প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা মানবজাতিকে সর্বদা উন্নতি ও কল্যাণের পথ দেখায়। কেবল প্রয়োজন যথাযথ পরিচর্যা ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা।

ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে আল্লাহর নির্দেশ :

আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ ‘আমরা কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব আছ কি কোন উপদেশ গ্রহণকারী?’ (ক্বামার ৫৪/১৭, ২২, ৩২, ৪০)। তিনি আরও বলেন, أَفَلاَ يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا  ‘তারা কি কুরআন গবেষণা করবে না? নাকি তাদের অন্তর সমূহ তালাবদ্ধ?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)। বস্ত্ততঃ সকল যুগেই শয়তানের কুহকে পড়ে মানুষ আল্লাহ ও আল্লাহর কিতাব থেকে দূরে থেকেছে এবং নানাবিধ যুক্তি দিয়ে নিজেদের ভ্রষ্টতার উপরে যিদ করেছে। ফলে নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করেছে। আর তাদের মাধ্যমেই সুন্দর পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়েছে। এ সময় মানুষেরা চোখ-কান থাকতেও আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে না। এদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, وَكَأَيِّنْ مِنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ   ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে বহু নিদর্শন রয়েছে। তারা এসবের উপর দিয়ে অতিক্রম করে, অথচ সেগুলি হ’তে উদাসীন থাকে’ (ইউসুফ ১২/১০৫)। বস্ত্ততঃ এরূপ লোকের সংখ্যাই পৃথিবীতে সর্বযুগে বেশী। যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহ প্রত্যক্ষ করে। অথচ এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না। বরং ভাবে যে সবকিছু আপনা-আপনি সৃষ্টি হচ্ছে ও লয় হচ্ছে। সবই প্রকৃতির লীলাখেলা মাত্র। এর কোন সৃষ্টিকর্তা ও বিধায়ক নেই।

ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ :

বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ- ‘আমি তোমাদের মাঝে ছেড়ে যাচ্ছি দু’টি বস্ত্ত। যতদিন তোমরা এ দু’টি বস্ত্ত অাঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৩৩৩৮, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৮৬)

উপরে বর্ণিত আল্লাহর বাণী সমূহ এবং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর বিদায়ী ভাষণের আকুল আহবানে সাড়া দেওয়ার মত কোন ঈমানদার মানুষ আছেন কি?

জ্ঞানার্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ :

শিক্ষা সংস্কারের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জ্ঞানার্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ হ’ল, পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে জ্ঞানার্জন করা। তাতে দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিতেই মানুষ সফল হবে। পক্ষান্তরে লক্ষ্য যদি দুনিয়া হয়, তাহ’লে দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিতেই মানুষ ব্যর্থ হবে।

এ দেশে ১১ ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী আফসোস করেছেন, যা নিম্নরূপ :

১. সরকারী প্রাইমারী স্কুল ২. এক্সপেরিমেন্টাল প্রাইমারী স্কুল ৩. রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাইমারী স্কুল ৪. নন-রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাইমারী স্কুল ৫. প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-সংযুক্ত প্রাইমারী স্কুল ৬. কমিউনিটি স্কুল ৭. স্যাটেলাইট স্কুল ৮. হাইস্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাইমারী স্কুল ৯. এনজিও পরিচালিত স্কুল ১০. কিন্ডারগার্টেন ও ১১. ইবতেদায়ী মাদ্রাসা।

এগুলির মধ্যে সরকারের আপত্তি কেবল মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে। কারণ সেখানে ইসলামী শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের স্বার্থে প্রকাশ্যভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ না করে ইসলামী আক্বীদা বিনষ্টকারী সিলেবাসের মাধ্যমে ভিতর থেকে ছুরি মারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে প্রাথমিক শিক্ষাতেই শিশু-কিশোরদের আক্বীদা বিনষ্ট করে অতঃপর মাধ্যমিক ও উচ্চতর শ্রেণীগুলিতে তা আরও পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। ফলে এখন ডিগ্রীধারী কিছু লোক তৈরী হচ্ছে বটে, কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞানী ও যোগ্য মানুষ তৈরী হচ্ছেনা। আর এভাবেই রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হচ্ছে। এরা নিজেরা পথভ্রষ্ট হচ্ছে, অন্যকেও পথভ্রষ্ট করছে। এদের হাতে এখন দেশ, জাতি ও মানবতা কোনটাই নিরাপদ নয়।

আমাদের প্রস্তাব :  

(১) দেশে প্রচলিত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্বিত করে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একক ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। (২) সরকারী ও বেসরকারী তথা কিন্ডার গার্টেন, প্রি-ক্যাডেট, ও-লেভেল ইত্যাদি নামে পুঁজিবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে বৈষম্যহীন ও সহজলভ্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। (৩) ছেলে ও মেয়েদের পৃথক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উভয়ের জন্য উচ্চ শিক্ষা এবং পৃথক কর্মক্ষেত্র ও কর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করা। (৪) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবতীয় দলাদলি ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকান্ড নিষিদ্ধ করা এবং প্রয়োজনবোধে সেখানে বয়স, যোগ্যতা ও মেধাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। (৫) ইসলামী আক্বীদা বিনষ্টকারী সকলপ্রকার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বর্জন করা এবং তদস্থলে ছহীহ আক্বীদা ও আমল ভিত্তিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি চালু করা।

আল্লাহ সংশ্লিষ্ট সকলকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর পথে পরিচালিত করুন- আমীন!

মন্তব্য করুন

Back to top button