হারাম-হালাল

কবর পূজা করা হারাম

মৃত ওলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে ইত্যাকার কথা বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ‘তোমার প্রভু চূড়ান্ত ফয়ছালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না’ (বনী ইসরাঈল ২৩)। অনুরূপভাবে শাফা‘আতের নিমিত্তে কিংবা বালা-মুছীবত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মৃত নবী-ওলী প্রমুখের নিকট দো‘আ করাও শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ-

‘বল তো কে নিঃসহায়ের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহবান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোন ইলাহ আছে’? (নামল ৬২)

অনেকেই উঠতে, বসতে, বিপদাপদে পীর-মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেয়া অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোন বিপদে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফাঈ। কেউ যদি ডাকে আইদারুসকে তো অন্যজন ডাকে মা যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবনু উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ‘আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস’ (আ‘রাফ ১৯৪)

কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সিজদা করে, উহার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযূর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَّ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُوْنَ-

‘তাদের থেকে অধিকতর দিকভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা ক্বিয়ামত পর্যন্তও তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোন খবর রাখে না’ (আহক্বাফ ৫)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,          مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তার নিকট দো‘আ প্রার্থনা করে, আর ঐ অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]

কবরপূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মুন্ডন করে।[2] তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী-আউলিয়া বা সাধু-সন্তুদের কবরকে বুঝিয়ে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী-আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের উপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন,

وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ-

‘আর যদি আপনার প্রতিপালক আপনাকে কোন অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ উহার বিমোচক নেই। আর যদি তিনি আপনার কোন মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রুখবারও কেউ নেই’ (ইউনুস ১০৭)

একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মানত করাও শিরক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মানত করে অনেকেই এরূপ শিরকে জড়িয়ে পড়ছে।

 

– মুহাম্মাদ ছালেহ আল মুনাজ্জিদ


[1]. বুখারী হা/৪৪৯৭।

[2]. আমাদের দেশে শিশুদের মাথার চুল মাযারের নামে মানত করার নিয়ম চালু আছে। নির্দিষ্ট দিনে মাযারে গিয়ে এই চুল মুন্ডন করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত-অনুবাদক।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button