মাদায়েন বিজয়
পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া যে সকল ঘটনা ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন করেছে, মুসলমানদের মাদায়েন বিজয় তন্মধ্যে অন্যতম। এ বিজয়ের মাধ্যমে সমগ্র ইরাক অঞ্চলের উপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পারস্য ও রোম বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন, যা খলীফা আবুবকর ও ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর খেলাফতকালে বাস্তবায়িত হয়েছিল। মাদায়েন বিজয়ের সাথে সাথে জালূলা, হুলওয়ান প্রভৃতি এলাকাও মুসলমানদের দখলে চলে আসে। এ সকল যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খালু, ইসলামের জন্য প্রথম তীর নিক্ষেপকারী[1] ও প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারী ছাহাবী সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)। পারস্যের রাজধানী মাদায়েন মুসলমানগণ কর্তৃক বিজিত হয় ১৬ হিজরীর ছফর মাসে। আর মুসলিম সৈন্যগণ সেখানে প্রবেশ করেন ১৫ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে।[2] আলোচ্য নিবন্ধে মুসলমানদের মাদায়েন বিজয়ের ইতিহাস বিধৃত হ’ল।-
পারস্য ও রোম বিজয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীগণকে পারস্য বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন এবং মাদায়েনে অবস্থিত কিসরা সম্রাটের সাদা ভবন তাকে দেখানো হয়েছিল।[3] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করলেন। ফলে আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম উভয় প্রান্ত দেখলাম। আর আমার উম্মতগণ আমার জন্য সংকুচিত পুরো পৃথিবীতে অচিরেই আধিপত্য বিস্তার করবে। আমাকে লাল (স্বর্ণ) ও সাদা (রেŠপ্য) দু’টি ধন ভান্ডার প্রদান করা হয়েছে’।[4] অর্থাৎ পারস্য (বর্তমান ইরাক) ও রোমের (বর্তমান সিরিয়া) রাজত্ব দান করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পারস্য সম্রাট কিসরা যখন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন আর কোন কিসরা থাকবে না। রোম সম্রাট কায়ছার যখন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন আর কোন কায়ছার থাকবে না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! অবশ্যই এই দুই সাম্রাজ্যের ধনভান্ডারসমূহ আল্লাহর পথে ব্যয় করা হবে’।[5]
আব্দুল্লাহ ইবনু বিশর বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা পাত্রের পার্শ্বদেশ হ’তে খাবার গ্রহণ কর আর তার মধ্যস্থল রেখে দাও, তাতে বরকত নাযিল হবে। অতঃপর বললেন, তোমরা খাবার গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তোমরা পারস্য ও রোমের উপর বিজয় লাভ করবে। তখন খাবার অনেক বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তাতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা হবে না’।[6]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ছাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন যে,إِذَ
ا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحِ…..
‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে’… (নাছর ১১০/০১)-এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি? তারা বললেন, পারস্যের রাজধানী মাদায়েন ও এর প্রাসাদগুলোর উপর বিজয় লাভ করা। এবার তিনি এর মর্ম সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অত্যাসন্ন মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে।[7]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী বর্ণনা করেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীগণকে আহযাবের যুদ্ধের দিন পরিখা খনন করার নির্দেশ দিলেন, তখন তাদের সামনে এমন একটি পাথর পড়ে গেল যা পরিখা খননে বাধা হয়ে দাঁড়াল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি কোদাল নিয়ে তাঁর চাদরখানা গর্তের পাশে রেখে বললেন, ‘তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার অধিকার কেউ রাখে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’। অতঃপর পাথর তিনটি অপসারণ করলেন। সালমান ফারেসী (রাঃ) তা প্রত্যক্ষ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন পাথরের উপর আঘাত করছিলেন তখন আঘাতের ঘর্ষণে বিদ্যুৎ চমকিয়ে চারিদিক আলোকিত হয়ে যাচ্ছিল। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন বার আঘাত করলেন এবং তিন বারই উপরোক্ত বাণীগুলো পাঠ করলেন। আর তিনবারই বিদ্যুৎ চমকিয়ে আলোকিত হ’ল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখান থেকে বের হয়ে চাদরখানা নিয়ে বসে পড়লেন। সালমান ফারেসী (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি লক্ষ্য করলাম যে, যখনই আপনি পাথরের উপর আঘাত করছিলেন, তখনই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে সালমান! তুমি তা দেখেছ? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তাঁর কসম করে বলছি, হ্যাঁ আমি তা দেখেছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি যখন পাথরে প্রথম আঘাত করেছিলাম, তখন পারস্যের কিসরার মাদায়েন ও তার আশপাশ এবং বহু শহর আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল, আমি তা নিজ চোখে দেখলাম। উপস্থিত জনৈক ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন যাতে তিনি তার উপর আমাদের বিজয় দান করেন, তাদের ঘর-বাড়ির সম্পদ আমাদের হস্তগত করেন এবং আমাদের হাতে তাদের শহর সমূহের পতন ঘটান। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এজন্য দো‘আ করলেন। এরপর তিনি বললেন, যখন আমি পাথরে দ্বিতীয়বার আঘাত করলাম, তখন আমার সামনে (রোম সম্রাট) কায়ছারের শহর সমূহ ও তার আশ-পাশের অঞ্চলগুলো তুলে ধরা হ’ল, যা আমি স্বচক্ষে দেখলাম। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন তিনি তাদের উপর আমাদেরকে বিজয় দান করেন, তাদের মালসমূহ আমাদের জন্য গণীমতে পরিণত করেন এবং আমাদের হাতে তাদের শহর সমূহের পতন ঘটান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করলেন। অতঃপর বললেন, আমি যখন পাথরে তৃতীয়বার আঘাত করলাম তখন হাবাশার শহর সমূহ এবং তার আশ-পাশের গ্রাম সমূহ আমার সামনে তুলে ধরা হ’ল, যেগুলো আমি নিজ চোখে দেখলাম। এরপর তিনি বললেন, তোমরা হাবশী ও তুর্কীদের ততদিন অব্যাহতি দিবে যতদিন তারা তোমাদেরকে অব্যাহতি দেয়’।[8]
নাফে‘ ইবনু উতবাহ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তোমাদেরকে তার উপর বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তোমাদেরকে তার উপর বিজয় দান করবেন।[9] নাফে‘ (হাশেম) ইবনু উৎবা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘মুসলমানগণ আরব উপদ্বীপ, পারস্য ও রোম এবং কানা দাজ্জালের উপর বিজয় লাভ করবে’।[10]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাথরে আঘাত করার ফলে মদীনা আলোকিত হ’ল এবং তিনি পারস্য ও রোমের প্রাসাদ সমূহ দেখে বললেন, জিবরীল (আঃ) আমাকে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মতগণ তাদের উপর বিজয়ী হবে। এতে মুসলমানগণ আনন্দিত হ’লেন এবং শুভসংবাদ গ্রহণ করলেন’।[11]
মুসলিম সেনাপতি :
এ যুদ্ধে মুসলিম সেনাপতি ছিলেন পৃথিবীতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ), যিনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে তাঁর দো‘আ কবুল হ’ত।[12]
মাদায়েন বিজয়ের কাহিনী :
সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) কাদেসিয়ায় দু’মাস যাবৎ সেনাবাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন। এর মধ্যে সৈন্যগণ বিশ্রাম গ্রহণ করে ক্লান্তি দূর করেন। ইতিমধ্যে সা‘দ (রাঃ)-এর পিঠ ও নিতম্বের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায়। অতঃপর তিনি সৈন্যদের নিয়ে পারস্যের রাজধানী ‘মাদায়েনে’র পশ্চিমাঞ্চল ‘বাহুরাসীরে’র (بَهُرَسِيرَ
) দিকে রওয়ানা হন। তিনি খলীফা ওমর (রাঃ) প্রদত্ত দিক-নির্দেশনা পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করে যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনা করেন। ‘মাদায়েনে’র পথে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে তিনি কাদেসিয়ায় অবস্থানরত মুসলিম নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপত্তা প্রদান, মুসলমানদের বিজয় অক্ষুণ্ণ রাখা এবং আইন-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সৈন্যদের একটি দলকে সেখানে অবস্থান করার নির্দেশ দেন।
সা‘দ (রাঃ) ১৫ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে ‘বাহুরাসীর’ শহরের নিকটবর্তী স্থানে উপনীত হন। তিনি সে শহরটিকে সুরক্ষিত, উন্নত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত অবস্থায় পান।[13]
সা‘দ (রাঃ) সালমান ফারেসীকে ‘বাহুরাসীর’ অধিবাসীদের কাছে এ ফরমান সহ পাঠালেন যে, তিনি যেন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন। সেগুলো হ’ল ইসলাম গ্রহণ অথবা জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা। অন্যথা যুদ্ধ করা। তারা এ প্রস্তাবকে চরমভাবে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্ততি নিতে শুরু করল। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘মিনজানীক’ বা পাথর নিক্ষেপকারী কামান স্থাপন করল। অপরদিকে সা‘দ (রাঃ) তাদেরকে অবরোধ করে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নেওয়া শুরু করলেন। সাথে সাথে তিনি বিশটি ‘মিনজানীক’ তৈরী করে বাহুরাসীর শহরের দিকে তাক করে স্থাপন করলেন এবং চামড়া, কাঠ ও লোহার পাত দিয়ে কিছু ট্যাংক তৈরী করার নির্দেশ দিলেন।[14]
এতে বাহুরাসীর অধিবাসীদের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ল। খাদ্য সামগ্রীও ফুরিয়ে গেল। নিরুপায় হয়ে তারা শহর ছেড়ে মাদায়েনের পূর্বাঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করল। সা‘দ (রাঃ) (বাহুরাসীর) শহরে প্রবেশ করে একে কব্জা করলেন। এটা ছিল ১৬ হিজরীর ছফর মাসের ঘটনা।[15]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সা‘দ (রাঃ) তাদেরকে দু’মাস ধরে অবরোধ করে তাদের বিরুদ্ধে ‘মিনজানীক’ স্থাপন করে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য ব্যস্ত রাখলেন। সাথে সাথে ট্যাংক স্থাপন করে তা থেকে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলেন। তারা একাধিকবার যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রয়াস চালালেও টিকে থাকতে পারেনি। সর্বশেষ তাদের পদাতিক ও তীরন্দায বাহিনী যুদ্ধের জন্য পৃথকভাবে প্রস্ত্ততি নিয়ে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে। মুসলমান সৈন্যরা তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং নিমিষেই তাদেরকে ময়দান ত্যাগে বাধ্য করে। এ অবরোধের ফলে তারা কুকুর ও বিড়ালের গোশত খেতেও বাধ্য হয় (حَتَّى أَكَلُوا الْكِلَابَ وَالسَّنَانِيرَ
)।[16]
সেদিন যুহরা ইবনু হুয়াই একটি ছেড়া বর্ম পরেছিলেন। তাকে বলা হ’ল, আপনি নির্দেশ দিলে ছিদ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি বললেন, কেন? তারা বলল, আমরা এই ছিদ্র দিয়ে তীর বিদ্ধ হওয়ার আশংকা করছি। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান, (আমি এটা মনে করি না যে) পারসিকদের ছোড়া তীর সকল সৈন্যকে বাদ দিয়ে আমার বর্মের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে আমার দেহে বিদ্ধ হবে! তিনি ছিলেন সেদিনের প্রথম শহীদ, যিনি তীর বিদ্ধ হয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। তাদের কেউ কেউ বলল, তোমরা তীরটি বের করে ফেল। তখন তিনি বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। কেননা আমি যতক্ষণ জীবিত থাকার জীবিত থাকব এবং তাদের কাউকে আঘাত করে হত্যা করতে পারব। অতঃপর তিনি শত্রুদের দিকে অগ্রসর হয়ে তাঁর তরবারী দিয়ে ইছত্বাখ্রার অধিবাসী শাহরাবারায (شَهْرَبرَازَ
) কোন বর্ণনা মতে শাহরায়ার (شَهْرَيَارَ
)-কে আঘাত করে হত্যা করতে সক্ষম হ’লেন। অতঃপর তারা তাকে ঘিরে ফেলল এবং তাদের আঘাতে তিনি শাহাদত বরণ করলেন।[17]
এক পারসিক মুসলমান সৈন্যদের সামনে এসে বলল, বাদশাহ আপনাদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন যে, আপনারা কি আমাদের সাথে এ মর্মে সন্ধি করতে চান যে, দজলা এবং পাহাড়ের আশ-পাশের অঞ্চলের অধিকার আমাদের হাতে থাকবে এবং আপনারা দজলার যে অংশে অবস্থান করছেন তার ও পাহাড়ের অত্র অঞ্চলের অধিকার আপনাদের হাতে থাকবে। আপনারা কি এতে রাযী নন? এমন সময় আবু মুকার্রিন আসওয়াদ ইবনু কুত্ববা (أبو مقرن الْأَسْوَدُ بْنُ قُطْبَةَ
), ত্বাবারী ও আল-কামিলের বর্ণনা মতে-আবু মুফাযযির (أَبُو مُفَزِّرٍ الْأَسْوَدُ بْنُ قُطْبَةَ
)! লোকদের কাছে ছুটে আসলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন ভাষায় দূতের প্রত্যুত্তর প্রদান করালেন, যে ভাষা তিনি নিজে এবং তার সাথীরা কেউই বুঝতে পারলেন না। দূত ফিরে গেল এবং তারা বাহুরাসীর ছেড়ে পূর্ব মাদায়েনের পথে রওয়ানা হ’ল, যেখানে বড় সাদা প্রাসাদ ছিল। এ দৃশ্য দেখে লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আবু মুকার্রিন! তুমি তাদেরকে কি বললে? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, যিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি জানি না তাদেরকে কি উত্তর দিয়েছি? তবে আমি খুবই প্রশান্তির মধ্যে ছিলাম এবং আমি আশা করছি যে, আমাকে এমন ব্যক্তির মাধ্যমে কথা বলানো হয়েছে, যিনি আমার চেয়ে উত্তম।
সেনাপতি সা‘দ (রাঃ)ও তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু মুকার্রিন! তুমি তাদেরকে কি বলেছিলে? আল্লাহর কসম! তারা তো পলায়ন করেছে? তখন তিনি আল্লাহর কসম করে বললেন, আমি কি বলেছি, তা নিজেই জানি না। অতঃপর সা‘দ (রাঃ) ঘোষণা দিয়ে লোকদের সাথে নিয়ে শহরে প্রবেশ করলেন। শহরে ‘মিনজানীক’ স্থাপন করা হ’ল। একজন সৈন্য লোকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। ফলে লোকদের নিরাপত্তা দেওয়া হ’ল। আরেকজন এ মর্মে ঘোষণা দিলেন যে, যারা এ শহরে অবস্থান করছে তারা যেন কাতারবন্দী হয়ে যায়। কিন্তু কোন লোক খুঁজে পাওয়া গেল না। কারণ তারা পূর্ব মাদায়েনে পলায়ন করেছিল। তারা এ কথাও বলল যে, আপনারা শহরে প্রবেশ করুন, আপনাদের বাধা দেওয়ার মত কেউ নেই। কিন্তু সেখানে কতিপয় বন্দী ও ঘোষণাকারী লোক ব্যতীত কাউকে পাওয়া গেল না। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কি কারণে তারা পলায়ন করল? বলা হল, সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে বাদশাহ আপনাদের নিকট একজন লোক পাঠিয়েছিলেন। তার জওয়াবে আপনারা বলেছিলেন যে, আমাদের ও তোমাদের মধ্যে ততদিন পর্যন্ত সন্ধি হবে না, যতদিন না আফরীযুনের মধুর সাথে কুছার লেবু ভক্ষণ করবে (حَتَّى نَأْكُلَ عَسَلَ أَفَرَنْدِينَ بِأُتْرُجِّ كُوثَى
)। এ কথা শুনে বাদশাহ বললেন, হায় আফসোস! ফেরেশতাগণ তাদের ভাষায় কথা বলছেন। আমাদের বিরুদ্ধে তারা অবতীর্ণ হয়েছেন এবং আরবদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে জওয়াব দিচ্ছেন। আল্লাহর কসম! এমনটি যদি না হ’ত! আসলে উপরোক্ত বাক্যগুলো আবু মুকার্রিনের মুখ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলিয়ে নিয়েছিলেন।[18]
মুসলমানগণ যখন ‘বাহুরাসীর’ নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তাদের কাছে মাদায়েনের ‘সাদা প্রাসাদ’ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আর এটাই ছিল পারস্য সম্রাট কিসরার বাসভবন। যার কথা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় বলেছিলেন যে, আল্লাহ তা‘আলা অতিসত্বর তাঁর উম্মতদের এর উপর বিজয় দান করবেন। সময়টা সকালের দিকে ছিল, যখন কিছু মানুষ ঘুমন্ত ছিল এবং কিছু মানুষ ঘুম থেকে উঠে রিযিকের সন্ধানে বেরুনোর প্রস্ত্ততি নিচ্ছিল। ইবনু কাছীর বলেন, মুসলমানদের মধ্যে যিরার ইবনু খাত্ত্বাব (রাঃ) প্রথম এই সাদা প্রাসাদ দর্শন করেন। তিনি দেখে তাকবীর ধ্বনি দিয়ে বললেন, কিসরার প্রাসাদ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে এই ভবনের ওয়াদা করেছেন। লোকেরা তার দিকে তাকিয়ে তার অনুকরণ করে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করে আনন্দ প্রকাশ করল।[19]
সেনাপতি সা‘দ (রাঃ) বেশ কিছুদিন ‘বাহুরাসীরে’ অবস্থান করে মাদায়েনের প্রাণকেন্দ্র ‘ত্বায়সাফূনে’ গমনের জন্য নেŠকা-জাহায খুঁজতে থাকলেন। কিন্তু সেখানে কোন নৌকা পাওয়া গেল না। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তারা পারাপারের ফেরীগুলো উঠিয়ে নিয়ে সেগুলোকে দজলা নদীর পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ফিরায (الْفِرَاضَ
) বন্দরে একত্রিত করেছে। সাথে সাথে সাঁকোগুলোও ভেক্ষে ফেলা হয়েছে, যাতে কোনভাবেই মুসলিম সৈন্যরা নদী পার হয়ে আসতে না পারে। উল্লেখ্য যে, মুসলিম সেনাবাহিনী ও সম্রাট ইয়াযদজারদের মধ্যে কেবল প্রতিবন্ধ ছিল দজলা নদী। এতে সেনাপতি সা‘দ (রাঃ) সহ মুসলমানগণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এক মাদায়েনবাসী উপত্যকা পাড়ি দিয়ে নদী পার হওয়ার পরামর্শ দিলে সা‘দ (রাঃ) সে পথ পাড়ি দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। এরই মধ্যে দজলা নদীতে জোয়ার শুরু হয়ে গেল। দজলায় এতো পানি বৃদ্ধি পেল যা পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। এর সাথে সাথে পানি কালো হয়ে ফেনায় পূর্ণ হয়ে গেল।[20] কিন্তু সা‘দ (রাঃ) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হ’লেন না। বরং তিনি এ বিষয়ে চিন্তা করতে থাকলেন এবং অন্যদের সাথে পরামর্শ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইতিমধ্যে তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, মুসলমানদের ঘোড়াগুলো দজলা নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে চলে যাচ্ছে। আর জোয়ার এসেছিল একটি মহাবিস্ময় নিয়ে। তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হ’লেন। সাথে সাথে নদী পার হওয়ার জন্য ঘোড়াগুলোকে প্রস্ত্তত করলেন। এরপর তিনি মুসলমান সৈন্যদের সমবেত করে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন। অতঃপর বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের শত্রুরা এ জাহাযগুলো হস্তগত করার মাধ্যমে নিজেদেরকে নিরাপদ করে নিয়েছে। কিসরা সম্রাট তাদের ধন-সম্পদ ও জনবল নিয়ে যুদ্ধ করার সংকল্প করেছে। আমি নদী পার হওয়ার মনস্থ করেছি। তোমরা স্মরণ রেখ, তোমাদের পশ্চাতে এমন কেউ নেই, যাদেরকে তোমরা ভয় করবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাদের শহরগুলো তোমাদের হস্তগত করেছেন। আমি মনে করি, অবশ্যই আমরা এ নদী অতিক্রম করে তাদের নিকট পৌঁছব। এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত কি? সৈন্যরা বলে উঠল, আল্লাহ আপনার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করুন। আপনি যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা বাস্তবায়ন করুন।[21]
এরপর সা‘দ (রাঃ) লোকদেরকে নদী পার হওয়ার জন্য আহবান জানালেন। দজলা নদী পার হওয়ার জন্য সামরিক কৌশল অবলম্বন করলেন। সেটা এভাবে যে, তিনি দজলা নদীর পূর্ব উপকূলে কিছু মুসলিম অশ্বারোহীকে শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। ‘আহওয়াল’ ও ‘খার্সা’ (ভয়ংকর ও বোবা)
(كَتِيبَةُ الْأَهْوَالِ وَ الْكَتِيبَةُ الْخَرْسَاءُ)
নামে দু’টি ব্যাটেলিয়ন গঠন করার মাধ্যমে তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলেন। আছেম ইবনু আমরের নেতৃত্বে আহওয়াল ব্যাটালিয়নের ৬০ জন সাহসী ও শক্তিশালী সৈন্য প্রথমে নদী পার হ’ল। তারা প্রথমে গিয়ে পারসিকদের ধরাশায়ী করে সমুদ্র বন্দর থেকে তাদের সরিয়ে দিল। অতঃপর আহওয়াল ব্যাটালিয়ানের অন্যান্য সদস্য নদী পার হ’ল। এরপর কা‘কা‘ ইবনু আমরের নেতৃত্বে খারসা ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নদী পার হয়ে ফিরায বন্দরে সমবেত হ’ল।[22]
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে আমাদের জন্য ‘ফিরায’ সমুদ্র বন্দরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। যাতে লোকেরা নিরাপদে নদী পার হ’তে পারে। তখন আছেম ইবনু আমর (রাঃ) সহ ছয়শ যোদ্ধা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রস্ত্তত হ’লেন। সা‘দ (রাঃ) আছেমকে তাদের আমীর নিযুক্ত করলেন। এরপর তারা সমুদ্র উপকূলে চলে গেলেন। আছেম ইবনু আমর বললেন, তোমাদের মধ্যে কারা আমার সাথে প্রথমে এ নদী পাড়ি দিবে, অতঃপর আমরা অপর পাশ থেকে ‘ফেরায’ বনদরকে নিশ্চিত নিরাপদ করে নিব? তখন ৬০ জন বীর সেনা প্রস্ত্তত হয়ে গেল। ওদিকে পারসিক সৈন্যরা অপর প্রান্তে সারিবদ্ধ হয়ে ফিরায বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। (যখন কেউ মৃত্যুর আশংকায় দজলা নদীতে ঝাঁপ দিতে ভয় পাচ্ছিল) তখন একজন মুসলিম সৈন্য সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, তোমরা কি এই জীবন নিয়ে ভয় পাচ্ছ? অতঃপর তিনি পাঠ করলেন,وَمَا
كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُؤَجَّلًا
‘এমন কোন নফস নেই যা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত মারা যাবে। প্রত্যেক জীবের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৪৫)। অতঃপর তিনি তার ঘোড়া পানিতে নামালেন। অন্যরা তাঁকে অনুসরণ করল। অবশ্য এই ৬০টি ঘোড়াকে দু’ভাগে ভাগ করা হ’ল, পুরুষ ঘোড়া ও নারী ঘোড়া। প্রথমে নারী ঘোড়াওয়ালারা পানিতে ঝাঁপ দিল, যাতে তাদের অনুকরণ করে পুরুষ ঘোড়াগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। যখন পারসিক সৈন্যরা মুসলিম সৈন্যদের পানির উপর ভাসমান অবস্থায় দেখল তখন তারা বলল, তোমরা পাথর নিক্ষেপকারী ‘ট্যাংক’ ও ‘মিনজানীক’ প্রস্ত্তত কর। তাদের কেউ বলল, আল্লাহর কসম! তোমরা মানুষের সাথে যুদ্ধ করছ না, বরং জিনের সাথে যুদ্ধ করছ। এরপর তারা পানিতে তাদের অশ্বারোহীদের প্রেরণ করল। যাতে তারা মুসলমানদের প্রথম দলটির সাথে মিলিত হয়ে তাদের পানি থেকে উঠতে বাধা প্রদান করল। এ অবস্থা দেখে আছেম ইবনু আমর তার সাথীদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা তীর দিয়ে শত্রু গোয়েন্দাদের প্রতিহত কর। তারা পারসিক সৈন্যদের সাথে সেরূপই আচরণ করল, যেমন আছেম নির্দেশ দিলেন। এমনকি তারা পারসিক সৈন্যদের ঘোড়ার চোখ উপড়ে নিতে সক্ষম হ’লেন। অতঃপর তারা নদী থেকে উঠে ফিরায বন্দরে পৌঁছে গেলেন।[23]
আছেমের ছয়শ’ সাথীর মধ্যে অন্যান্যরা দজলায় অবতরণ করে নদী পার হয়ে অপর প্রান্তে থাকা মুসলিম সৈন্যদের সাথে একত্রিত হয়ে পারসিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হ’লেন। যুদ্ধ করে তারা পারসিক সৈন্যদের পরাজিক বরকে সক্ষম হ’লেন। এরপর কা‘কা‘ ইবনু আমরের নেতৃত্বে থাকা ‘খারসা বাহিনী’ নদী পার হ’ল।[24]
এদিকে সেনাপতি সা‘দ (রাঃ) সহ অবশিষ্ট মুসলিম সৈন্যগণ নদীর অপর প্রান্ত থেকে যখন লক্ষ্য করলেন যে, মুসলিম অশ্বারোহী বাহিনী ‘ফিরায’ বন্দর দখল করে নিয়েছে, তখন তিনি সকল সৈন্যদের সাথে নিয়ে দজলা নদীতে নেমে পড়লেন। তিনি নদীতে নামার পূর্বে সৈন্যদেরকে নিম্নের দো‘আটি পাঠ করার নির্দেশ দিলেন, نَسْتَعِيْنُ باللَّه وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْهِ، حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا باللَّه الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ
অর্থাৎ ‘আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর উপরই ভরসা করি। আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনিই উত্তম অভিভাবক। নেই কোন শক্তি, নেই কোন ক্ষমতা, আল্লাহ ব্যতীত। যিনি সুমহান’। তিনি প্রথমে তাঁর ঘোড়া নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিলেন। অন্যরাও তাঁর অনুসরণ করে নদীতে নেমে পড়ল। তারা পানির উপর এমনভাবে পথ চলতে লাগল যেন তারা সমতল ভূমিতে পথ চলছিল। এভাবে নদীর দু’কিনারা ভরে গেল। অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর সৈন্যদের ভিড়ে নদীর পানি দেখা যাচ্ছিল না। স্থলভাগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার ন্যায় তারা পানিতে পরস্পরে আলাপ-আলোচনা করছিল। এটা এ কারণে সম্ভব হয়েছিল যে, তাদের অন্তরে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছিল। তাছাড়া আল্লাহর নির্দেশ, ওয়াদা ও তাঁর সাহায্য-সহযোগিতার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা ছিল। আর তাদের নেতা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবীদের অন্যতম সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ), যার প্রতি স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) সন্তুষ্ট ছিলেন। এ দিন তিনি সৈন্যদের শান্তি, নিরাপত্তা ও সাহায্যের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাদেরকে এ সাগর পাড়ি দেয়ার পথ দেখিয়ে দিলেন এবং নিরাপত্তা দান করলেন।
সালমান ফারেসী (রাঃ) সা‘দ (রাঃ)-এর সাথে নদীতে চলছিলেন। তাদের ঘোড়া তাদেরকে সাঁতরিয়ে নদী পার করছিল আর সা‘দ (রাঃ) বলছিলেন,
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ! وَاللهِ لَيَنْصُرَنَّ اللهُ وَلِيَّهُ، وَلَيُظْهِرَنَّ اللهُ دِينَهُ، وَلَيَهْزِمَنَّ اللهُ عَدُوَّهُ، إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي
الْجَيْشِ بَغْيٌ أَوْ ذُنُوبٌ تَغْلِبُ الْحَسَنَاتِ
–
‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনিই উত্তম অভিভাবক। আল্লাহর কসম! অবশ্যই আল্লাহ তার বন্ধুদের সাহায্য করবেন, তাঁর দ্বীনকে বিজয় দান করবেন এবং তাঁর শত্রুদের পরাজিত করবেন। যদি সৈন্যদের মধ্যে এমন পাপ ও অপরাধ না থাকে যা নেকীর উপর প্রাধান্য বিস্তার করে’। তখন সালমান ফারেসী (রাঃ) বললেন, ইসলাম যুগোপযোগী (اَلْإِسْلامُ جَدِيدٌ
), সমুদ্রকে তাদের জন্য অনুগত করে দেওয়া হয়েছে যেভাবে অনুগত করে দেওয়া হয়েছে স্থলভাগকে। আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তিনি অবশ্যই সমুদ্র থেকে মুসলিম সৈন্যদের বের করে নাজাত দিবেন যেভাবে তারা দলে দলে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে। তারা ঐভাবেই বের হ’ল যেমন সালমান (রাঃ) বললেন। অথচ তারা সাগরে কিছুই হারালেন না।[25]
উল্লেখ্য যে, মুসলমান পদাতিক সৈন্যদের দজলা নদী সাঁতরিয়ে পার হওয়ার বিষয়ে কোন কোন ঐতিহাসিক দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলেন, সা‘দ (রাঃ) তাঁর অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে নদী পার হন। পরে তিনি ওপার থেকে নৌকা পাঠিয়ে পদাতিক সৈন্যদের পারাপারের ব্যবস্থা করেন।[26] ঐতিহাসিক ত্বাবারী লিখেছেন, পারস্য সম্রাট ‘বাহুরাসী’ পতনের সময় তার পরিবারকে গোপনে ‘হুলওয়ান’ পাঠিয়ে দেন। যখন মুসলিম সৈন্যগণ নদী পার হওয়ার জন্য পানিতে নামেন, তখন তিনি নিজেও পলায়ন করেন। আর তার অশ্বারোহী বাহিনী মুসলিম বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল। ফলে তাদের সাথে মুসলিম সৈন্যদের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হ’ল। এরই মধ্যে এক ঘোষক ঘোষণা করল যে, হে সৈন্যরা! তোমরা কিসের জন্য নিজেদের ধ্বংস করছ? আল্লাহর কসম! মাদায়েনে কেউ নেই। তখন তারা পলায়ন করল। মুসলিম সৈন্যরা তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের অধিকাংশকে ধরাশায়ী করতে সক্ষম হ’ল।[27] এরপর সা‘দ (রাঃ) বাকী সৈন্য নিয়ে নদী পার হ’লেন।
মুসলিম সৈন্যরা নিরাপদে নদী পার হয়ে তীরে উঠার পর ঘোড়াগুলো চিৎকার করে তাদের দেহের পানি ঝাড়া দিয়ে পারসিক সৈন্যদের পিছু ধাওয়া শুরু করল। মুসলিম সৈন্যগণ মাদায়েন পেঁŠছলেন। কিন্তু সেখানে কাউকে পেলেন না। ইতিপূর্বে পারস্য সম্রাট কিসরা ও তার পরিবার-পরিজন প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ ও ভোগ্য সামগ্রী নিয়ে মাদায়েন ত্যাগ করে ‘হুলওয়ানে’ চাল গিয়েছিল। তারা এ সময় স্বল্পমূল্যের কিছু সম্পদ রেখে গিয়েছিল। যেমন গবাদী পশু, খাদ্যসামগ্রী, পোশাকাদি, পান পাত্র, তেল সামগ্রী এ জাতীয় পণ্য। তখন কিসরার অর্থভান্ডারে তিন হাযার দীনার ছিল। যার অর্ধেকটা কাদেসিয়ার যুদ্ধে ব্যয় করার জন্য রুস্তম নিয়ে গিয়েছিল। বাকী অর্ধেকটা মুসলমানদের হস্তগত হয়। ইবনু কাছীর বলেন, বরং সম্রাট কিসরা পলায়নের সময় যত দীনার নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তত দীনার সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর যা নিয়ে যেতে পারেননি তা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
সেনাপতি সা‘দ (রাঃ) যখন সৈন্য নিয়ে মাদায়েনের প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি সাদা প্রাসাদে অবস্থানরত লোকদেরকে সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। সালমান ফারেসী (রাঃ) পারসিক মুসলিম ছিলেন। তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন। তিনি তাদেরকে বললেন, আমি আসলে তোমাদেরই বংশধর। আমি তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আমি তোমাদের তিনটি বিষয়ের একটির প্রতি আহবান করছি, যেটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। (১) তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহ’লে তোমরা আমাদের ভাইয়ে পরিণত হবে। তোমরা অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা পাবে, যেমন আমরা পাই। তোমাদের উপর সেই বিধান বর্তাবে, যা আমাদের উপর বর্তায়। (২) অথবা জিযিয়া প্রদান করে নিরাপদে বসবাস কর। (৩) অন্যথা যুদ্ধ অবধারিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ খিয়ানতকারীদের ভালবাসেন না। প্রাসাদের অধিবাসীরা তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করে তৃতীয় দিনে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে আসে।[28] সেনাপতি সা‘দ (রাঃ) ‘সাদা প্রাসাদে’ প্রবেশ করে হলঘরকে মসজিদ হিসাবে নির্বাচন করলেন। অতঃপর নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, كَمْ تَرَكُوْا مِنْ جَنَّاتٍ وَعُيُوْنِ، وَزُرُوْعٍ وَمَقَامٍ كَرِيْمٍ،
و
َنَعْمَةٍ كَانُوْا فِيْهَا فَاكِهِيْنَ،
كَذَلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْماً آخَرِيْنَ،
‘তারা ছেড়ে গিয়েছিল কত বাগান ও ঝর্ণা, কত শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য প্রাসাদ, কত বিলাস-উপকরণ, যাতে তারা আনন্দ পেত। এরূপই ঘটেছিল এবং আমি এগুলোর উত্তরাধিকারী করেছিলাম ভিন্ন সম্প্রদায়কে’ (দুখান ৪৪/২৫-২৮)। অতঃপর সা‘দ (রাঃ) সামনে গিয়ে বিজয়ের ছালাত আদায় করলেন। তথা তিনি সেখানে সিজদায়ে শুকূর প্রদায় করলেন। তাছাড়া ঐ বছরের ছফর মাসে ‘সাদা প্রাসাদে’র হ’ল ঘরে জুম‘আর ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এটাই ছিল মাদায়েনে প্রথম জুম‘আ।[29]
সাদা প্রাসাদে কিছু মানুষ ও ঘোড়ার মূর্তি ছিল। সা‘দ (রাঃ) সেগুলো ভাঙ্গলেন না বা ভাঙ্গার নির্দেশও দিলেন না। তবে তিনি একটি মূর্তি দেখলেন, যেটি তার অঙ্গুলি দ্বারা একটি স্থানের দিকে ইশারা করে আছে। তিনি তা দেখে বললেন, এটাকে নিরর্থক এভাবে রাখা হয়নি। ফলে মুসলিম সৈন্যরা মূর্তির আঙ্গুল নির্দেশিত স্থানে অনুসন্ধান শুরু করলেন। সেখানে তারা এক বিরাট ধন-ভান্ডারের সন্ধান পেলেন। যেখানে পূর্ববর্তী সকল কিসরার গচ্ছিত সম্পদ রক্ষিত ছিল। তারা সেখান থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, জমকাল গুদাম ও মূল্যবান উপঢৌকন বের করলেন। মুসলমানগণ এত সম্পদ কখনও দেখেননি। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পারস্য সম্রাট কিসরার মুকুট, যা অতি মূল্যবান জহরত দিয়ে নকশাকৃত এবং এমন উজ্জ্বল, যা চোখের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দেয়। এছাড়াও ছিল তার ফিতা-বেল্ট, তরবারী, বালা, আলখেল্লা ও হলরুমের কার্পেট।
সাদা প্রাসাদের হলঘরের কার্পেটটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ৬০ হাত ছিল। এটি ছিল সোনা-রূপা ও মূল্যবান জহরত খচিত। এতে পূর্বের সকল পারস্য সম্রাটদের ছবি অঙ্কিত ছিল। এতে আরো ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের মানচিত্র। এতে দেশের নদী-নালা, কৃষিক্ষেত ও দেশের গাছপালাও স্থান পেয়েছিল।[30] মুকুট এত বড় ছিল যে, পারস্য সম্রাট তা মাথায় পরতে পারতেন না। সেটা সিংহাসনের উপরে স্বর্ণের তার দ্বারা লটকানো ছিল। সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করে মুকুটের নিচে গিয়ে মাথা মুকুটের মধ্যে প্রবেশ করাতেন। এছাড়া সম্রাট দু’টি বেল্ট, বালা ও জহরত খচিত আলখেল্লা পরিধান করতেন। তবে এগুলো পরিধান করার সময় সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া হ’ত। অতঃপর তাঁর সম্মুখ থেকে যখন পর্দা সরানো হ’ত তখন তার সম্মানে অন্য নেতারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। এরপর তিনি বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের নিকট থেকে আলাদাভাবে রাজ্যের খবরাদি নিতেন। উপস্থিত নেতারা তাদের নিজ নিজ রাজ্যের খবরাদি প্রদান করত। তারা নকশাকৃত কার্পেটটি তাদের সামনে টাঙিয়ে রাখত, যাতে পূর্ববর্তীদের স্মরণ করে নিজেদের মনোবল চাঙ্গা করতে পারে। এছাড়াও সেখানে বহু সম্পদ ছিল, যেগুলো সা‘দ (রাঃ) সৈন্যদের মাঝে বণ্টনের পরে অবশিষ্ট এক-পঞ্চমাংশ বাশীর ইবনুল গাছাছিয়ার মাধ্যমে খলীফা ওমর (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। ওমর (রাঃ) এগুলো দেখে বললেন, লোকেরা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। তখন আলী (রাঃ) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি সংযমশীলতা প্রদর্শন করেছেন। ফলে আপনার প্রজারা সংযমী হয়েছে। আপনি যদি ভোগবিলাসী হ’তেন তাহ’লে তারা ভোগ করে ফেলত। অতঃপর ওমর (রাঃ) সম্পদগুলো মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। আলী (রাঃ)-এর ভাগে কার্পেটের একটা অংশ পড়ে, যা তিনি বিশ হাযার দীনারে বিক্রি করেন’।[31]
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট যখন কিসরার আসবাবপত্রগুলো নিয়ে আসা হ’ল, তখন তিনি কিসরার পোশাকগুলোকে সুরাকা ইবনু মালেক (রাঃ)-কে পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাসান বর্ণনা করেন, একদা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট পারস্য সম্রাট কিসরার মুকুট সহ অন্যান্য পোশাক নিয়ে আসা হ’ল। অতঃপর সেগুলো তাঁর সামনে রাখা হ’ল। লোকদের মাঝে বনু মুদলিজ গোত্রের নেতা সুরাকা ইবনু মালেক ইবনু জু‘শুম (রাঃ) ছিলেন। তিনি লোকদের মধ্যে সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। ওমর (রাঃ) তাকে কিসরা ইবনু হুরমুযের বালা দু’টি পরিধান করতে বললেন। তিনি বালা দু’টি পরিধান করলে তা তার কাঁধ পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে যায়। ওমর (রাঃ) ঐ দু’টি সুরাকার হাতে দেখে বললেন,اَلْحَمْدُ ِللَّهِ سِوَارَيْ كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ فِي يَدَيْ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ أَعْرَابِيٍّ مِنْ بَنِي مُدْلِجٍ
‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, কিসরা ইবনু হুরমুযের বালা দু’টি আজ মুদলিজ গোত্রের নেতা সুরাকা ইবনু মালেক ইবনু জু‘শুম আ‘রাবীর হাতে![32]
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, এ দু’টো সুরাকা ইবনু মালেককে এজন্য পরানো হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেছিলেন, ‘হে সুরাকা! তোমাকে কেমন লাগবে যখন তুমি কিসরার বালা পরবে? আর দু’হাতের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, আমি যেন তোমাকে কিসরার বালা দু’টি পরিধান করিয়েছি। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) আরো বলেন, ‘ওমর (রাঃ) সুরাকা (রাঃ)-কে বালা দু’টি পরানোর সময় বলেছিলেন, ‘আল্লাহু আকবার’ বল। তিনি তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। তিনি বললেন, তুমি বল-اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ سَلَبَهُمَا كِسْرَى بْنَ هُرْمُزَ وألبََسَهُمَا سُرَاقَةَ بْنَ مَالِكٍ أَعْرَابِىٍ
‘ঐ আল্লাহর প্রশংসা যিনি এ দু’টোকে কিসরা ইবনু হুরমুযের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সুরাকা ইবনু মালেক (রাঃ)-কে পরিধান করালেন’।[33]
উপসংহার :
মাদায়েন বিজয় ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ছিল মুসলমানদের দজলা নদী পার হয়ে পূর্ব মাদায়েনে প্রবেশ করা। ঐতিহাসিক মাদায়েন নগরীর দু’টি অংশ দজলা নদী দ্বারা বিভক্ত ছিল। মুসলিম সৈন্যগণ প্রথমে পশ্চিম মাদায়েন জয় করেন, যার নাম ছিল ‘বাহুরাসীর’। পরে অশ্বারোহী সৈন্যরা আছেম ও কা‘কা‘ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ঘোড়ায় আরোহণ করে দজলা নদী পার হন। অতঃপর তাঁরা পারসিক সৈন্যদের পরাজিত করে পারস্য সম্রাটের ঐতিহাসিক ‘সাদা প্রাসাদ’ দখল করেন। সেনাপতি সা‘দ (রাঃ) সাদা প্রাসাদের হলরুমকে মসজিদ হিসাবে নির্ধারণ করেন। তিনি সেখানে বিজয়ের ছালাত আদায় করেন। ইরাকের মাটিতে সেখানেই প্রথম জুম‘আর ছালাত আদায় করা হয়। মুসলমানগণ লাভ করেন গণীমতের অমূল্য সম্পদ। প্রত্যেক অশ্বারোহী ১২ হাযার দীনার লাভ করেন।[34] এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের বড় কারণ ছিল আল্লাহর সাহায্য। মুসলিম সৈন্যদের আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, তাদের নির্ভেজাল ঈমানী চেতনা এবং পাপ থেকে দূরে থাকার মানসিকতাই তাদেরকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পেঁŠছে দিয়েছিল। মুসলমানদের এ বিজয়ের ফলে পারস্য সম্রাট নিশ্চিত হয়ে যান যে, পারস্য সাম্রাজ্যের কোন অংশই আর তাদের দখলে রাখা সম্ভব হবে না। বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাধর ও যুলুমবাজ শাসকদের এ সকল যুগান্তকারী ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হ’ল, ইতিহাস থেকে আমরা কমই শিক্ষা গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন- আমীন!
– আব্দুর রহীম
[1]. বুখারী হা/৪৩২৭।
[2]. তারীখু ইবনু জারীর ত্বাবারী ৩/৬১৮ ও ৪/০১, ৪/২৩,৩২; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১০/২৪ পৃঃ।
[3]. নাসাঈ হা/৩১৭৬।
[4]. মুসলিম হা/২৮৮৯; মিশকাত হা/৫৭৫০।
[5]. বুখারী হা/৩০২৭, ৩১২০; মুসলিম হা/২৯১৮; মিশকাত হা/৫৪১৮।
[6]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৫৮৪৭; ছহীহাহ হা/৩৯৩।
[7]. বুখারী হা/৪৯৬৯।
[8]. নাসাঈ হা/৩১৭৬; আবুদাঊদ হা/৪৩০২; আল-বিদায়াহ ৪/১০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৮৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭৭২; মিশকাত হা/৫৪৩০।
[9]. মুসলিম হা/২৯০০; ছহীহাহ হা/৩২৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৬৯; মিশকাত হা/৫৪১৯।
[10]. ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ ৬/৪০৪; হাকেম হা/৫৬৯০; বাযযার হা/১২৩০; ছহীহাহ হা/৩২৪৬ নং হাদীছের আলোচনা দ্রঃ।
[11]. ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী (বৈরূত : দারুল মা‘রিফা ১৩৭৯ হিঃ) ৭/৩৯১; বায়হাক্বী, দালায়লুন নবুঅত হা/১৩০৬, ৩/৪৯৮; ইবরাহীম আলী, ছহীহুস সীরাহ, পৃঃ ৩৫৪।
[12]. হাকেম হা/৬১২২, ৬১১৩।
[13]. ত্বাবারী ৪/০৬।
[14]. ত্বাবারী ৪/৬; ইবনুল আছীর, আল-কামিল ২/৩৩৭।
[15]. আল-কামিল ২/৩৩৮; ত্বাবারী ৪/১।
[16]. আল-কামিল ২/৩৩৮; ত্বাবারী ৪/০৬; আল-বিদায়াহ ৭/৬৩।
[17]. ত্বাবারী ৪/৬; আল-কামিল ২/৩৩৮; আবু আলী আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ, তাজারিবুল উমাম ওয়া তাআ‘কাবুল হুমাম ১/৩৫২; ইবনুল জাওযী, আল-মুন্তাযাম ফী তারীখিল উমাম ওয়াল মুলূক ৪/২০৪।
[18]. ত্বাবারী ৪/৭; আল-কামিল ২/৩৩৮; ইবনুল জাওযী, আল-মুন্তাযাম ফী তারীখিল উমাম ওয়াল মুলূক ৪/২০৪; আল-বিদায়াহ ৭/৬৩-৬৪; ওয়াকিদী, ফুতূহুশ শাম ২/১৮৪; আল-ইছাবাহ ১/৩৪১।
[19]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৪; আল-কামিল ২/৩৩৮।
[20]. ত্বাবারী ৪/১২; বালাযুরী, ফুতূহুল বুলদান, পৃঃ ৩২২-৩২৩; আল-বিদায়াহ ৮/১০।
[21]. ওয়াকেদী, ফুতূহুশ শাম ২/১৮৫; ত্বাবারী ৪/৯; আল-কামিল ২/৩৩৯।
[22]. আল-বিদায়াহ ৮/১০; ত্বাবারী ৪/১২; আল-কামিল ২/৩৩৯।
[23]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৫।
[24]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৫; আল-কামিল ২/৩৩৯; ত্বাবারী ৪/১০; ইবনু খালদূন ২/৫৩৭।
[25]. আল-কামিল ২/৩৩৯-৩৪০; ত্বাবারী ৪/১২।
[26]. ত্বাবারী ৪/০৯; ফুতূহুল বুলদান, পৃঃ ৩২৩।
[27]. ত্বাবারী ৪/১৫।
[28]. ত্বাবারী ৪/১৪।
[29]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৬; আল-কামিল ২/৩৪১; ত্বাবারী ৪/১৬।
[30]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৬।
[31]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৬-৬৭।
[32]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১২৮১৫; আল-বিদায়াহ ৭/৬৮।
[33]. বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১২৮১২; তবে বর্ণনাটি মুরসাল। মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৩১৯৬; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ৭/৬৮; কুরতুবী, আল-ইস্তী‘আব ২/৫৮১; আল-ইছাবাহ ৩/৩৬।
[34]. আল-বিদায়াহ ৭/৬৭।