সৎ লোকের দো‘আ
এ পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে প্রেরণ করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ তাদের কর্তব্য ভুলে গিয়ে বিভিন্ন অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হয়। এরূপ মানুষ আল্লাহর নিকট ঘৃনিত এবং জনসমাজেও ধিকৃত। তবে যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে, তাঁর অনুগত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করে, আল্লাহ তাদের ভালবাসেন, তাদের যেকোন দো‘আ কবুল করেন। এ সম্পর্কেই নিম্নের হাদীছ।-
উসায়র ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাকে ইবনু জাবিরও বলা হয়, তিনি বলেন, ইয়েমেনের বসবাসকারীদের পক্ষ থেকে ওমর (রাঃ)-এর নিকট সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করতেন, তোমাদের মাঝে উয়াইস ইবনু আমির আছে কি? অবশেষে (একদিন) উয়াইস (রাঃ) এসে গেলেন। তাকে তিনি (ওমর) প্রশ্ন করলেন, আপনি কি উয়াইস ইবনু আমির? সে বলল হ্যাঁ। ওমর (রাঃ) আবার বললেন, ‘মুরাদ’ সম্প্রদায়ের উপগোত্র ‘কারনের’ লোক? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনার কি কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, তা হ’তে সুস্থ হয়েছেন এবং মাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনার মা জীবিত আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (ওমর) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘ইয়ামানের সহযোগী দলের সাথে উয়াইস ইবনু আমির নামক এক লোক তোমাদের নিকট আসবে। সে ‘মুরাদ’ জাতির উপজাতি ‘কারনের’ লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা হ’তে সে মুক্তি পাবে, শুধুমাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তার মা বেঁচে আছে, সে তার মায়ের খুবই অনুগত। সে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তা আল্লাহ তা‘আলা পূরণ করে দেন। তুমি যদি তাকে দিয়ে তোমার গুনাহ মাফের জন্য দো‘আ করাবার সুযোগ পাও তাহ’লে তাই করবে’। ওমর (রাঃ) বলেন, কাজেই আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য আপনি দো‘আ করুন। অতএব তিনি (উয়াইস) ওমরের অপরাধের ক্ষমা চেয়ে দো‘আ করলেন। ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি কোথায় যেতে চান? তিনি বললেন, কূফা (যাবার ইচ্ছা আছে)। তিনি (ওমর) বলেন, আমি সেখানকার গভর্ণরকে আপনার (সাহায্যের) জন্য লিখে দেই? তিনি বললেন, আমার নিকট গরীব-মিসকীনদের মাঝে বসবাস করাই বেশী পসন্দীয়। পরের বছর কূফার এক নেতৃস্থানীয় লোক হজ্জে এলো। তার সাথে ওমরের দেখা হ’লে তিনি উয়াইস সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করলেন। সে বলল, আমি তাকে এরকম অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তার ঘরটা অত্যন্ত জীর্ণ অবস্থায় আছে এবং তার জীবন-যাপনের উপকরণসমূহ খুবই নগণ্য। ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘উয়াইস ইবনু আমির নামক এক লোক ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে তোমাদের নিকট আসবে। সে ‘মুরাদ’ জাতির উপজাতি ‘কারন’ বংশীয় লোক। তার কুষ্ঠ রোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধুমাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তার মা বেঁচে আছে এবং সে তার মায়ের খুবই অনুগত। সে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তা আল্লাহ পূরণ করে দেন। তুমি যদি তোমার গুনাহ মাফের জন্য তাকে দিয়ে দো‘আ করানোর সুযোগ পাও, তাহ’লে তাই করবে’। লোকটি ফিরে এসে উয়াইসের নিকট গিয়ে বলল, আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য আপনি দো‘আ করুন। তিনি (উয়াইস) বললেন, এইমাত্র মঙ্গলময় সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন; বরং আপনি আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি কি ওমরের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সে বলল, হ্যাঁ। তার জন্য উয়াইস দো‘আ করলেন। উয়াইসের মর্যাদা সম্পর্কে লোকেরা সচেতন হ’লে সেখান থেকে উয়াইস অন্য স্থানে চলে গেলেন। হাদীছটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
মুসলিমের আরেক বর্ণনায় উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ওমর (রাঃ)-এর নিকট কূফার অধিবাসীরা একটি সাহায্যকারী দল পাঠায়। দলের এক লোক উয়াইসকে বিদ্রূপ করত। ওমর (রাঃ) বললেন, এখানে ‘কারন’ বংশীয় কেউ আছে কি? ঐ ব্যক্তিটি উঠে আসলে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ইয়েমেন থেকে উয়াইস নামে এক লোক তোমার নিকট আসবে। সে তার মাকে ইয়ামানে একা রেখে আসবে। তার কুষ্ঠরোগ হবে। সে আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে, আল্লাহ তার রোগমুক্তি দান করবেন, শুধুমাত্র এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে কেউ তার দেখা পেলে, তাকে দিয়ে সে যেন তার গুনাহ মাফের জন্য দো‘আ করায়’।
মুসলিমের আরেক বর্ণনায় ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘পরবর্তীদের (তাবিঈ) মধ্যে উয়াইস নামে এক সৎ লোক হবে। তার মা বেঁচে আছে। তার শরীরে কুষ্ঠের চিহ্ন থাকবে। তার নিকট গিয়ে নিজের গুনাহ মাফের জন্য তাকে দিয়ে প্রার্থনা করাও’ (মুসলিম হা/২৫৪২/২২৫)।
পরিশেষে বলব, আল্লাহ আমাদেরকে উয়াইস ইবনু আমিরের মত সৎ কর্মশীল বান্দা হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন!
– মুসাম্মাৎ শারমীন আখতার