যুলুম হ’ল অন্ধকার
যুলুম-অত্যাচার কোন মানুষের কাম্য নয়। এর ফলাফল দুনিয়াতে যেমন ভাল হয় না, তেমনি পরকালে এর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। যুলুম পরিহার করার জন্য কুরআন-হাদীছে বিভিন্ন নির্দেশ এসেছে। একে অপরের প্রতি যুলুম না করার নির্দেশ এসেছে নিম্নোক্ত হাদীছে –
আবূ যার গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহ তা‘আলার নাম করে যেসব হাদীছ বর্ণনা করেছেন তার একটি হ’ল তিনি বলেছেন যে, আল্লাহ তাবারকা ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার ওপর যুলম করাকে হারাম করেছি। তাই আমি তোমাদের জন্যও যুলম করা হারাম করে দিয়েছি। অতএব তোমরা পরস্পরের প্রতি যুলম কর না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট। কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই (সেই পথের সন্ধান পায়)। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পথের সন্ধান কামনা কর, তাহ’লে আমি তোমাদেরকে পথের সন্ধান দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত। কিন্তু আমি যাকে খাবার দেই (সে খাবার পায়)। তাই তোমরা আমার কাছে খাবার চাও।
আমি তোমাদেরকে খাবার দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই বস্ত্রহীন। কিন্তু আমি যাকে পোষাক পরাই (সে পোষাক পরে)। তাই তোমরা আমার নিকট পোষাক চাও। আমি তোমাদেরকে (পোষাক) পরাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাত-দিন গুনাহ (অপরাধ) করে থাক। আর আমি তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা ক্ষতিসাধন করার সাধ্য রাখ না যে, আমার ক্ষতি করবে। এভাবে তোমরা আমার কোন উপকার করারও শক্তি রাখ না যে, আমার কোন উপকার করবে। তাই হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্য হ’তে সর্বাপেক্ষা পরহেযগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়ে পরহেযগার হয়ে যায়, তাতেও আমার সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অত্যাচারী-অনাচারী ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়ে অত্যাচার-অনাচার করে, তাদের এ কাজও আমার সাম্রাজ্যের বিন্দুমাত্র ক্ষতি বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন একই মাঠে দাঁড়িয়ে একসাথে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আর আমি তোমাদের প্রত্যেককে তাদের চাওয়া জিনিস দান করি তাহ’লে আমার কাছে যা আছে, তার কিছুই কমাতে পারবে না। শুধু এতখানি ছাড়া যতটুকু একটি সূঁই সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়া হ’লে যতটুকু সমুদ্রের পানি কমায়। হে আমার বান্দাগণ! এখন বাকী রইল তোমাদের আমল (কৃতকর্ম), যা আমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করব।
অতঃপর এর প্রতিদান আমি পরিপূর্ণভাবে দিব। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন ভাল (ফল) লাভ করে, সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আর যে মন্দ (ফল) লাভ করে, সে যেন নিজেকে ছাড়া অন্যকে দোষারোপ না করে (কেননা তা তারই কৃতকর্মের ফল)’ (মুসলিম হা/২৫৭৭; মিশকাত হা/২৩২৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬২৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৪৫)।
মানুষ সাধারণত দুর্বলের উপরে যুলুম করে থাকে, যে ঐ যুলুম মুখ বুজে সহ্য করে। যার প্রতিকারের কোন ক্ষমতা থাকে না। ফলে সে যালেমের বিরুদ্ধে দরবারে এলাহীতে বিচার দায়ের করে। এর প্রতিকারের জন্য মহান আল্লাহর কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে দো‘আ করে। সুতরাং আল্লাহ স্বীয় বান্দার নিবিষ্ট মনের একনিষ্ঠ দো‘আ কবুল করেন। হয় ইহকালে যালেমকে শাস্তি দেন, নতুবা পরকালে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেন। উপরোক্ত হাদীছে পরকালীন শাস্তির পূর্বে বান্দাকে যুলুম না করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর এ নির্দেশ মেনে চলা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।
– মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
জাযাকাল্লাহু খইরন