হজ্ব আমাদেরকে তাওহীদের শিক্ষা দেয়
হজ্ব আমাদেরকে তাওহীদের শিক্ষা দেয়
হজ্ব ইসলামের রুকনসমূহের মধ্যে একটি রুকন। এই হজ্ব তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদে ভরপূর একটি ইবাদত।
হজের নিয়তের সময় তাওহীদ:
একজন হাজী যখন হজ্বের নিয়ত করছে তখন সে বলছে, “হে আল্লাহ্ আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি উপস্থিত হলাম কোনো লৌকিকতা বা নামের জন্য নয়। (এই অর্থে হাদীসটি ইবনু মাজায় বর্ণিত হয়েছে)
তালবিয়ার শুরুতে তাওহীদ:
হজ্বের তালবিয়া পুরোটাই তাওহীদের বাণী। “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বায়িক লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নে‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা- শারীকা লাক।”
অর্থঃ ‘আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি! হে আল্লাহ্ আমি আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি, আপনার কোনই অংশীদার নেই, আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি, সকল প্রকার প্রশংসা আপনার এবং নে‘মত সামগ্রী সবই তো আপনার। আপনারই জন্য বাদশাহী, আপনার কোনো অংশীদার নেই ।’
ত্বাওয়াফের শুরুতে তাওহীদ:
ত্বাওয়াফের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্ আল্লাহু আকবার’ বলে আল্লাহ্র একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে ত্বাওয়াফ শুরু করা হচ্ছে।
সা‘ঈর শুরুতে তাওহীদ:
সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে বলতে হয়ঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়নি কাদীর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু, ওয়া নাসারা ‘আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।”
অর্থঃ আল্লাহ্ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি একক, তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করছেন এবং তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করছেন আর তিনি একাই শত্রুবাহিনীকে পরাভূত করছেন ।
আরাফার দো‘আতে তাওহীদ:
আরাফার দো‘আসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দো‘আও তাওহীদের অমীয় বাণী। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: সর্বোত্তম দো‘আ হল আরাফার দিনের দো‘আ, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যে সর্বোত্তম কথা বলছেনে তা হলো:
“লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।”
অর্থঃ আল্লাহ্ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনিই সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল ।
জামারাগুলোতে কংকর নিক্ষেপের সময় তাওহীদ:
জামারাগুলোতে কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ্র একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে বলতে হয় “আল্লাহু আকবার”।
যাবতীয় কর্মকাণ্ডে তাওহীদের স্বীকৃতি:
হজ্ব আদায়ের সময় মীনা, মুযদালিফা এবং আরাফাতের মাঠে যাতায়াতের সময়ও হাজীগণের মুখে হজ্বের তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্র তাওহীদ বা একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে।
আল্লাহর বাণীঃ
﴿فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِ﴾ [البقرة: ١٩٨]
“অতঃপর যখন তাওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশ‘আরে হারামের নিকটে আল্লাহ্কে স্মরণ কর।” (সূরা আল-বাক্বারা-১৯৮)
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাসওয়া নামক উটে আরোহণ করে মুযদালিফায় আসেন। অতঃপর কেবলামুখী হয়ে দো‘আ করেন এবং তাকবীর বলেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করেন এবং মহান আল্লাহ্র একত্ববাদ বর্ণনা করেন ।
কুরবানী বা হাদই যবাই করার সময় তাওহীদ:
হাদই যবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহ্র একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। আল্লাহর বাণীঃ
﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]
“অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং (যবেহ বা নাহর এর মাধ্যমে) রক্ত প্রবাহিত করুন।” (সূরা কাওসার-২)
এমনিভাবে হজ্বের প্রতিটি র্কমকাণ্ডে একজন হাজী আল্লাহ্র একত্ববাদের ঘোষণা দিচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে ইবাদতের মূলই হল আল্লাহ্র একত্ববাদ। আর এই নির্দেশনাই আল্লাহ্ সমস্ত নবীগণের নিকট প্রেরণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ ٱلضَّلَٰلَةُۚ فَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٣٦ ﴾ [النحل: ٣٦]
“আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদাত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর । অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্ হিদায়াত দিয়েছেন, আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; কাজেই তোমরা যমীনে পরিভ্রমণ কর অতঃপর দেখে নাও মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে ?
তাই হাজী সাহেবদের আমাদের আকুল আবেদন থাকবে, আপনারা অবশ্যই হজ্ব থেকে তাওহীদের এ মহান শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরকে আল্লাহর আযাব ও গযব থেকে নিরাপদ করবেন। নিজেদের ঈমান ও আমল হেফাযত করবেন। পরবর্তী জীবন পূর্বের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখবেন। শির্ক, বিদ‘আত পরিত্যাগ করে তাওহীদ ও সুন্নাতের অনাবিল আনন্দ ও স্থায়ী শান্তির দিকে অগ্রসর হবেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাওহীদের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমীন।
– আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
1 বুখারী-৩/৪০৮,মুসলিম-২/৮৪১
2 (মুসলিম-২/৮৮৮)
3 (তিরমিযী-৩/১৮৪)
4 (মুসলিম-২/৮৯১)।
Allah amaderke tawheeder upor suprotisthito rakhun… Amin!
Thanks.
Jaajakallah!