মাদক দ্রব্য সম্পর্কিত ফৎওয়া
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। শেষ ফলাফল মুত্তাকীদের জন্য নির্ধারিত এবং একমাত্র যালিমদের ক্ষেত্রেই শত্রুতা। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক নবী ও রাসূলদের সর্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব তথা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর।
অত:পর সৌদী আরবের উচ্চ ওলামা পরিষদের নবম বৈঠক রিয়াদ শহরে ৯/৬/১৪০৭ থেকে ২০/৭/১৪০৭ হিঃ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত বৈঠকে হারামাইন শরীফাইনের খাদেম বাদশাহ ফাহাদ একটি টেলিগ্রাম বার্তা প্রেরণ করেন। যার নাম্বার হলঃ ৮০৩৩, তাং ১১/৬/১৪০৭। তাতে বলা হয়েছেঃ মাদক দ্রব্যের অশুভ পরিণাম ও বর্তমান যুগে এর ব্যাপক প্রসার-প্রচার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সার্বজনীন দাবী হল, এর জন্য একটি সমুচিত শাস্তি ও দন্ডবিধি থাকা দরকার। যাতে করে এর প্রচার-প্রসার কারী ও তার চোরাকারবারীদের জন্য শিক্ষা হয়ে যায়। আমরা আপনাদের সমীপে নিবেদন করছি যে, বিষয়টি উচ্চ উলামা পরিষদের নিকট উপস্থাপন করতঃ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হোক।
উক্ত পরিষদ বিষয়টি পড়েছে ও উহার বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করেছে। এনিয়ে তাঁরা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। মাদক দ্রব্যের প্রচার-প্রসার ও ব্যবহারের কারণ সংঘটিত অপরাধ: যেমন হত্যা, গাড়ী এক্সিডেন্ট, সাধারণ ভাবে স্বাস্থের ক্ষতি সাধন এমনকি কোন কোন সময় মস্তিস্কের পরিবর্তন, পাগলামী, মাতলামী… প্রভৃতি অশুভ পরিণতির দিক বিবেচনা করে বহু আলোচনা-পর্যালোচনার পর উচ্চ পরিষদ সর্ব সম্মতি ক্রমে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছেঃ
প্রথমতঃ মাদক দ্রব্য (মদ, হিরোইন, গাঁজা, প্যাথেডিন… প্রভৃতি) চোরাচালান কারীর শাস্তি হল তাকে হত্যা করতে হবে। কারণ তার এই চোরাচালানীর মাধ্যমে দেশে অনেক ধরণের অন্যায় ও বিপর্যয় হয়ে থাকে। যার পরিধী শুধু মাত্র প্রসারকারীর ক্ষেত্রেই সীমিত থাকেনা বরং এর ক্ষতিকারিতা পুরা জাতিকে বেষ্টন করে। মাদকদ্রব্য আমদানীকারীর অনুরূপ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হল ঐ ব্যক্তি যে তা বহির দেশ হতে নিয়ে আসে অথবা বহির বিশ্ব থেকে আগত হিরোইন গ্রহণ করতঃ উহা নেশাকারীদের মাঝে বিক্রয় করে ব্যবসা করে।
দ্বিতীয়তঃ হিরোইন বাজারজাত কারী সম্পর্কে উচ্চ উলামা পরিষদ ১১/১১/১৪০১ তারীখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তার নম্বর হল ৮৫। সেখানে যা উল্লেখ করা হয়েছে নিম্নে তা পেশ করা হলঃ (যে মাদকদ্রব্য প্রচার করে চাই তা প্রস্তুত করার মাধ্যমে হোক বা বেচা কেনা বা উপঢৌকনের জন্য আমদানী করার মাধ্যমে হোক অর্থাৎ যে কোন মাধ্যমে হোক যদি ইহা তার দ্বারা প্রথম ঘটে থাকে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে। কারাগারে বন্দি রাখতে হবে, বা দোররা মারতে হবে অথবা আর্থিক জরিমানা ধার্য করতে হবে অথবা বিচার বিভাগ যদি মনে করে তবে এগুলো সবকটি একসাথে দন্ড হিসেবে ধার্য করতে পারে। আর যদি উক্ত কর্ম তার দ্বারা একাধিকবার হয় তবে তাকে এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যায় যদিও তাকে সে কারণ হত্যাও করতে হয়। কারণ উক্ত অপতৎপরতায় জড়িত ব্যক্তি এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত যারা ফিৎনা-ফাসাদ কারী এবং যাদের অন্তরে অপরাধ বদ্ধমুল হয়ে গেছে।
গবেষক ওলামায়ে দ্বীন এমর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া তাযীর তথা অনির্ধারিত দন্ডের অন্তর্ভূক্ত। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ যাকে হত্যা না করলে পৃথীবিতে তার অনিষ্ট বন্ধ হয় না তাকে হত্যা করতে হবে। যেমন মুসলিমদের জামাআতে বিভেদ সৃষ্টিকারী ধর্মে বিদআত করার প্রতি আহবান কারী প্রভৃতি…। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উপর মিথ্যারোপকারী ব্যক্তিকে হত্যা করার নিদের্শ দিয়েছিলেন। মদ্যপান থেকে বিরত হয়না এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ইবনুদ্দাইলামী তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “যে তা থেকে বিরত না হবে তাকে হত্যা করে ফেলবে।” শাইখুল ইসলাম (রহঃ) অন্যত্রে শিক্ষামুলক হত্যা করার কারণ দর্শাতে গিয়ে বলেনঃ এধরণের ফিৎনাকারী আক্রমণ কারীর ন্যায়- হত্যা না করলে যদি তাকে আক্রমণকারীকে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হয় তবে তাকে হত্যা করতে হবে।
তৃতীয়তঃ বৈঠকের রায় হলঃ প্রথম ও দ্বিতীয় ধারায় বর্ণিত শাস্তি বিধান জারী করার পূর্বে শরঈ বিচারালয় কর্তৃক অপরাধ ও অপরাধীর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। যাতে করে দায় মুক্তি হওয়া যায়
এবং অনর্থক কাউকে হত্যার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
চতুর্থতঃ উক্ত শাস্তি বাস্তবায়নের পূর্বে প্রচার মাধ্যমের দ্বারা বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে। যাতে করে ওযর আপত্তির অবসান ঘটে এবং মানুষ সতর্ক হয়ে যায়। আল্লাহই তাওফীক দাতা, দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হৌক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর উপর এবং তার ছাহাবীদের উপর।- উচ্চ ওলামা পরিষদ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/ ৩৭৯)
মদ ও মাদক দ্রব্য প্রভৃতি সম্পর্কে ফতওয়া:
(ক) মদপান কারীর ইবাদত:
প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি সদাসর্বদা মদ্যপান করে, যেনা করে এবং নামায এবং ইসলামের অন্যান্য রুকন সমূহও আদায় করে। কিন্ত সে তার উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত হয়না। এর ইবাদত কি ছহীহ হবে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি হালাল মনে করে মদ্যপান করে বা যেনা ব্যভিচার কিংবা যে কোন পাপ সম্পাদন করে তবে সে কাফির বলে গণ্য। আর কুফরীর সাথে কোন আমলই বিশুদ্ধ হবেনা। তবে যদি কেউ পাপের কাজ সম্পাদন করে ওটাকে হারাম জ্ঞান করার পরেও প্রবৃত্তির তাড়নায় এবং এ আশা করে যে আল্লাহ তাকে তা থেকে রক্ষা করবেন। তবে এই ব্যক্তিটি তার ঈমানের কারণে মুমিন এবং পাপের কারণে ফাসেক।
প্রত্যেক পাপী বান্দার উপর ওয়াজিব হল আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা, তার কাছে প্রত্যাবর্তন করা। গুনাহের স্বীকারোক্তি দেয়া, উক্ত পাপ পূণরায় না করার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং কৃতপাপের উপর লজ্জিত হওয়া। আল্লাহর দ্বীন নিয়ে সে খেলা করবেনা, এবং আল্লাহ তার পাপ গোপন করে রেখেছেন এবং ঢিল দিয়ে রেখেছেন একারণ সে ধোকাগ্রস্থ হবেনা। কারণ মহান আল্লাহ শুধুমাত্র একটি পাপের কারণে ইবলীসকে তার রহমত থেকে বের করেছেন এবং চিরতরের জন্য বিতাড়িত করেছেন। আল্লাহ তাকে আদমকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্ত সে তা থেকে বিরত থেকে ছিল। আদম (আঃ)কে আল্লাহ জান্নাত থেকে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছিলেন মাত্র একটি অপরাধের কারণে (তাহলঃ নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া)। কিন্ত আদম (আঃ) তাওবাহ করেছিলেন এবং আল্লাহও তার তাওবাহ গ্রহণ করেছিলেন ও তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করেছেন। অতএব, কোন বান্দাহর জন্য তার প্রতিপালকের সাথে প্রতারনার পন্থাবলম্বন করা উচিত নয়; বরং তার উপর ওয়াজিব হলঃ আল্লাহকে ভয় করা তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করা এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকা।- ফাৎওয়া দানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭৮)
(খ) মদ্যপান কারীকে ধরিয়ে দেয়ার বিধানঃ
প্রশ্নঃ মদ্যপান প্রভৃতি হারাম কাজে লিপ্ত এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কি প্রশাসন বিভাগকে খবর করা যায়? অথচ তাকে আমি কয়েকবার সতর্কও করেছি। নাকি ইহা করা তাকে বেইয্যত করার নামান্তর? অথচ হক বলা থেকে নিরবতা অবলম্বনকারী বোবা শয়তানের ন্যায়।
উত্তরঃ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল- যদি সে তার ভাইকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত দেখে তাহলে তাকে উপদেশ দিবে এবং তাকে পাপ থেকে নিষেধ করবে। তাকে সে পাপের শাস্তির কথা বর্ণনা করে শুনাবে। অন্তর- আত্মায়, অঙ্গ-প্রতঙ্গে, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে, এর কুপ্রভাবের কথা ব্যাখ্যা করবে। হয়তোবা সে বেশী বেশী উপদেশ দেয়ার ফলে পাপ থেকে বিরত হতে পারে এবং সঠিক পথ অবলম্বন করতে পারে। যদি তার সাথে এ পদক্ষেপ ফলপ্রসু না হয়। তবে তাকে পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য সব থেকে নিকটতম পথ অবলম্বন করতে হবে। চাই তা দায়িত্বশীল বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হোক বা এমন ব্যক্তিকে জানিয়ে হোক যার মর্যাদা তার নিকট উক্ত উপদেশ দাতার চেয়েও তার নিকট বেশী। মোটকথাঃ সব চেয়ে নিকটবর্তী পন্থা অবলম্বন করবে যা দ্বারা উদ্দেশ্য সফল হয়। যদিও সে কারণ প্রশাসন বিভাগ পযর্ন্ত তার বিরুদ্ধে নালিশ করতে হয়- যাতে করে তারা তাকে উক্ত পাপ থেকে বিরত রাখতে পারে।- ফাৎওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭৭)
(গ) বিয়ার পান করার বিধানঃ
প্রশ্নঃ বিয়ার পানের বিধান কি? তার অনুরুপ পানীয় পান করার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি বিয়ার নেশা মুক্ত হয় তবে তা পানে কোন অসুবিধা নেই। কিন্ত যদি তা কোন প্রকার নেশা যুক্ত হয় বা তার সাথে এমন বিষয় যুক্ত হয় যার অধিক সেবন মাদকতা নিয়ে আসে তবে তা পান করা জায়েয নয়। অনুরূপ হল বাকী নেশাকারী বস্তুর বিধান। চাই তা খাদ্য দ্রব্য হোক বা পানীয় হোক তা থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব। উহার কোন কিছু পান করা বা খাওয়া যাবেনা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
يا أيها الذين آمنوا إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشيطان فاجتنبوه لعلكم تفلحون، إنما يريد الشيطان أن يوقع بينكم العداوة والبغضاء في الخمر والميسر ويصدكم عن ذكر الله وعن الصلاة فهل أنتم منتهون .
“হে ঈমান্দারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তী এবং লটারীর তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরুপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। শয়তান তো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্র“তা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামায হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে, সুতরাং এখনও কি তোমরা ফিরে আসবে?” (সূরাঃ মায়িদাহ/ ৯০-৯১)
- নবী (ছাঃ) বলেনঃ كل مسكر خمر وكل مسكر حرام অর্থঃ “সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম।” (মুসলিম হা/৩৭৩৩)
- নবী (ছাঃ) থেকে আরো সুপ্রমাণিত যে, তিনিঃ মদ, মদ্যপানকারী, মদ প্রস্তুতকারী, সে ব্যাপারে নির্দেশ প্রদানকারী, বহণকারী, যার নিকট তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, উহার বিক্রেতা, ক্রেতা এবং তার মূল্য ভক্ষণ কারী সবাইকে অভিশম্পাত করেছেন।
- তিনি (ছাঃ) আরো ফরমিয়েছেনঃ كل شراب أسكر فهو حرام “যে সমস্ত পানীয় নেশাকারী তা হারাম।” (বুখারী হা/২৩৫, মুসলিম হা/৩৭২৭) তিনি (ছাঃ)
- আরো বলেনঃ ماأسكر كثيره فقليله حرام “যার অধিক সেবন নেশা নিয়ে আসে তার অল্পও হারাম।” (আবু দাউদ হা/৩১৯৬ তিরমিযী হা/ ১৭৮৮ ইবনু মাজাহ্ হা/ ৩৩৮৪)
- নবী (ছাঃ) থেকে আরো প্রমাণিত, তিনি সমস্ত নেশাকারী ও মাতলামী সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন।
অতএব, সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হলঃ যাবতীয় নেশা জাতীয় বস্তু থেকে নিজে সতর্ক থাকা ও অপরকে তা থেকে সতর্ক করা। এবং যে তাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তার কর্তব্য হল উহা পরিত্যাগ করতঃ অতি শীঘ্র আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ وتوبوا إلى الله جميعا أيها المؤمنون لعلكم تفلحون অর্থঃ হে মুমিনগণ আল্লাহর নিকট তোমরা তাওবাহ কর তবেই তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা নূরঃ ৩১) তিনি আরো বলেনঃ ياأيهاالذين آمنوا توبوا إلى الله توبة نصوحا “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধভাবে তাওবা কর।” (সূরা তাহরীমঃ ৮) – মান্যবর মুফতী ইবনু বায-(আলফাতাওয়া ২/ ২৫৭)
(ঘ) মদের ফ্যাক্টরীতে কাজ করার বিধান
প্রশ্নঃ যে ফ্যক্টরীতে শুধু মাত্র মদ ও নেশা জাতীয় বস্তু তৈরী করা হয় সেখানে মুসলিম ব্যক্তির কাজ করার বিধান কি?
উত্তরঃ মদ এবং যাবতীয় নেশাকারী দ্রব্য হারাম। এগুলোর জন্য ফক্টরী নির্মাণ করা এবং এগুলো ব্যবহার করা সবই হারাম।
-ফাৎওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭২)
(ঙ) প্রশ্নঃ ধুমপানের বিধান কি? উহার বেচা-কেনা হারাম না মাকরুহ?
উত্তরঃ ধুমপান হারাম। কারণ তা খবীস (খারাপ) দ্রব্য এবং অনেক ক্ষয়- ক্ষতির সূত্রস্থল। অথচ আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য শুধু মাত্র পবিত্র পানাহার হালাল করেছেন। এবং তাদের উপর খবীস দ্রব্যাদী হারাম করেছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
ويسألونك ماذا أحل لهم؟ قل احل لكم الطيبات
(হে রাসূল!) তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? আপনি বলে দিন তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে। (আল মায়েদাহঃ ৪) মহান আল্লাহ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
يأمرهم بالمعروف وينهاهم عن المنكرويحل لهم الطيبات ويحرم عليهم الخبائث
“তিনি (মুহাম্মাদ) তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ করেন এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করেন। এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং তাদের উপর খারাপ বস্তু হারাম করেন।” (আল্ আরাফঃ ১৫৭)
ধুমপানের যাবতীয় প্রকার পবিত্র বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তা খবীস বা অপবিত্র বা খারাপ দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ ভাবে সমস্তু নেশাকারী বস্তু সবই খবীস খারাপ দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। ধুমপান করা, তা ক্রয়-বিক্রয় করা মদের মতই অবৈধ। যে ব্যক্তি তা পান করে বা তার ব্যবসা করে, তার উপর ওয়াজিব হলঃ অতি শীঘ্র তাওবাহ করা এবং মহান আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসা। অতীতের কৃত কর্মের উপর লজ্জিত হওয়া, তা পুনরায় না করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ গ্রহণ করেন। এরশাদ হচ্ছেঃ
وتوبوا إلى الله جميعا أيها المؤمنون لعلكم تفلحون
“আর তোমরা আল্লহর নিকট তাওবাহ কর হে মুমিনগণ! যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা আন্ নূরঃ ৩১)
তিনি আরো বলেনঃ
وإني لغفار لمن تاب وآمن وعمل صالحا ثم اهتدى
“নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাওবাহ করে ,ঈমান আনে অতঃপর সঠিক পথে চলে।” (ত্বাহাঃ ৮২)
==================
অনুবাদক: শাইখ আখতারুল আমান।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদী আরব।