তথ্য-প্রযুক্তি/মিডিয়া

ইসলাম বিরোধী পেজ/ওয়েবসাইট দেখলে কি করবেন?

ভাই ও বোনেরা, অবিশ্বাসীদের মধ্যে যারা উপহাস ও পরনিন্দা করতে ভালবাসে, তারা একের পর এক এসব ইসলাম বিরোধী কাজ করতেই থাকবে, কারণ অন্যের অবমাননা এবং অন্যকে গালমন্দ ব্যাতীত তারা আর কিছু পারেনা। আমরা তাদের এসব কাজে যত বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাব, তারাও শয়তান দ্বারা এসব কাজের প্রতি তত বেশি উৎসাহিত হবে। মনে রাখবেন, আমাদেরকে ক্রোধান্বিত করা এবং আমাদের দা’ওয়াহ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়াই তাদের মূল চক্রান্ত।

 ফেসবুকে আমরা যখনই কোন ইসলাম বিরোধী পেজ দেখি, আমরা প্রথমেই বন্ধুদের বলি সেটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে। কিন্তু কজনই বা উপলব্ধি করেন যে এতে  আসলে ওই নির্দিষ্ট পেজ/গ্রুপটিকে সাহায্য করা হচ্ছে, তাদের বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে??

 বর্তমানের ক্লিক নির্ভর ইন্টারনেট জগতে, বেশিরভাগ মানুষই যা করেন, তা হল, ওই ওয়েবসাইট/পেজটির ইউ.আর.এল (URL) এ ক্লিক করেন। যার ফলে পেজটির হিট সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পেজটির কর্তাদের উদ্দেশ্যও সফল হয়। দ্বিতীয়ত, এই হিট সংখ্যা বাড়ার মধ্য দিয়ে সার্চ ইঞ্জিনে স্থান পেতেও পেজটির সুবিধা হয়।তৃতীয়ত আপনি যখন ঐ পেজ ওপেন করলেন, এবং বিভিন্ন স্ট্যাটাস/ছবিতে কমেন্ট করলেন, ঐ সব নোটিফিকেশন আপনার বন্ধুদের ফেসবুক হোমপেজে দেখাবে। আপনি আপনার নিজের শত্রুকে তার হাতিয়ার তৈরি করতে সাহায্য করলেন!!

 ফেসবুকে একটি পেজ/গ্রুপ খোলাটা অনেক সহজ। কিন্তু ওই পেজের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করাটা অনেক কঠিন। ইসলাম বিরোধী এই পেজগুলো আশানুরূপ সাড়া না পেলে অচিরেই নিষ্প্রভ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি সবাইকে এগুলোর ব্যাপারে বলে বেড়াতে থাকেন, তাহলে নিজের অজান্তেই আপনি তাদের প্রচারণার কাজ করছেন। এবং এটাই তারা চায়।

 আপনি যদি কাউকে একটি নির্দিষ্ট  পেজ/গ্রুপ/সাইটে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চান, সবচেয়ে সহজ উপায় হল, তাকে এ ব্যাপারে কিছুই না বলা।

সি.এন.এনের মত সুপ্রতিষ্ঠিত কোন ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে একটি ‘প্রটেস্ট ক্যাম্পেইন’ (Protest Campaign) করা বেশ যৌক্তিক। কিন্তু অধিকাংশ সাইটের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। আপনার উচিৎ পেজটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা। এটিকে অবহেলার মরণ মরতে দেওয়া। যত দ্রুত এটি আকর্ষণ হারাবে, তত দ্রুত এই দানবের বিনাশ ঘটবে।

 সুতরাং পরবর্তীতে আপনি যখনই কোন ইসলাম বিরোধী পেজ/গ্রুপ এর সতর্কবার্তা পাবেন, সাথে সাথে তা মুছে ফেলবেন। যদি প্রেরককে কোন উত্তর পাঠাতে চান তাহলেও ওই সতর্কবার্তার মূল পাঠ্য (Original text)  সংযোজন করবেননা, কারণ এতেও সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে তারা সহায়তা পাবে।

 সম্প্রতি ফেসবুকে বহু সংখ্যক ইসলাম বিরোধী পেজ/গ্রুপ খোলা হয়েছিল কিন্তু সেগুলো অল্প সময়েই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কারণ, সৌভাগ্যবশত, সেগুলো আগ্রহীদের চোখে পড়েনি এবং সতর্কবার্তার মাধ্যমে সেগুলোর প্রচারণাও হয়নি।

 

তাহলে, এর বিকল্প কি?

 ১।  পেজটির বিরুদ্ধে আমাদের রিপোর্ট করে দেয়া উচিত; অন্যদের জানানো ছাড়াই

আমাদের পছন্দের কোন ইসলামিক পেজের কোন লিঙ্ক তৎক্ষণাৎ শেয়ার করা উচিৎ এবং বন্ধুদেরও তাতে যোগদান করতে বলা উচিৎ।

 

অতঃপর, এর প্রাপ্তি কি হবে?

১। পেজটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা হবে।

২। আমরা অনিচ্ছাসত্ত্বে অথবা অজান্তে এর প্রচারণার সাথে সংশ্লিষ্ট হব না।

৩। আমরা ওই নির্দিষ্ট পেজ এর ক্লিক/লাইক এর সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হব, এতে করে পেজটি ডিলিট হবারও কিছু সম্ভাবনা থাকে।

। অনেক আজেবাজে জিনিসপত্র দেখা থেকে আমাদের ইসলামের ভাইবোনদের রক্ষা করতে পারব।

। ভাইবোনদেরকে রাগান্বিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারব।

। ইসলামিক শিক্ষার বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত রাখতে পারব।

। পছন্দের ইসলামিক পেজে লিঙ্ক দিয়ে এবং বন্ধুদের তাতে আহ্বান করে আমরা আসলে দা’ওয়াহর কাজটি করব – যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক।

। যেসব বন্ধুরা ইসলামিক পেজগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমল করে, কোন অতিরিক্ত প্রচেষ্টা ছাড়াই ইনশাল্লাহ আমরাও তাদের সমপরিমাণ নেকী অর্জন করব।

। সময়কে বিজ্ঞতার সাথে ব্যবহার করতে সক্ষম হব।

১০। আমরা সকলে ইনশাল্লাহ আরও ভাল মুসলিম হয়ে উঠতে সক্ষম হব।

 আসুন এখন থেকেই আমরা এই জিনিসগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি, যাতে অন্ততপক্ষে ফেসবুকে হলেও কোন ইসলাম বিরোধী প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে পারি।

 ইন্টারনেটে আপনার শক্তির সর্বোৎকৃষ্ট প্রয়োগ হবে তখনই, যখন আপনি সেটিকে কোন ভাল ইসলামিক সাইটের কাজে ব্যাবহার করবেন। আসুন ভালোর মাধ্যমে খারাপকে বিতাড়িত করি।

এই পোস্টটি আপনার প্রোফাইল/ইসলামিক পেজে শেয়ার করার মাধ্যমে সকলকে জানাতে সাহায্য করুন। জাযাকাল্লাহু খাইরান এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবচেয়ে ভাল জানেন।

লেখকঃ শাকির পারভেজ খান, সাদমান সাকিব এবং ‘Manners in Islam’

মন্তব্য করুন

Back to top button