তথ্য-প্রযুক্তি/মিডিয়া

ভার্চ্যুয়াল যৌনাচার : এক নিরব ঘাতক

ভার্চ্যুয়ালি যৌনতা বেশ সহজলভ্য। অল্প টাকায় এক জিবি ডাটা কিনে বেশ সহজের হারিয়ে যাওয়া যায় পর্নোগ্রাফির নিষিদ্ধ পল্লিতে। আর যাদের ব্রডব্যান্ড সংযোগ আছে- তাদের জন্য তো কথাই নেই। অল্প দামেই ক্ষয় করা যায় অফুরান জীবনীশক্তি। আহা, কী অপরিনামদর্শী অপচয়!

একটা সময় ছিলো- যখন বিকৃত রুচির মানুষজন নিষিদ্ধ পাড়ায় যেতো, তাও বেশ গোপনে। মনে সারাক্ষণ জাগরিত থাকতো ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। কেউ ধরা পড়ে গেলে সমাজে আর তার মান মর্যাদা বলে কিছু থাকতো না। তাই অনেকে চাইলেও সেসব নিষিদ্ধ পাড়ায় গমন ছিলো একপ্রকার দুঃসাধ্য কাজ।

অবশেষে মানুষের এই ভোগবাদী কামনাকে স্যাটিস্ফাই করতে এগিয়ে এলো পশ্চিমা পুঁজিবাদী পর্ন ইন্ডাস্ট্রি। তারা পর্নোগ্রাফির লালসাকে করলো ভার্চ্যুয়াল রূপায়ণ। বিকৃত যৌনাচার চলে এলো একদম হাতের নাগালে। ভার্চ্যুয়াল যৌনাচারে হরহামেশাই করা যায় রুচির পরিবর্তন। এক মডেলে আকর্ষণ ফুরিয়ে এলে ইচ্ছে মতো করা যায় মডেল পরিবর্তন। বাছাই করা যায় নিজের পছন্দমাফিক ক্যাটেগরির পর্ন। এভাবেই পর্নের ভোক্তারা এক নতুন নেশায় বুদ হয়ে যায়, ইচ্ছায় কিম্বা অনিচ্ছায়।

এছাড়াও আইটেম গানের নামে এক ধরণের অসুস্থ যৌন উত্তেজক বিনোদনের রেওয়াজ চালু করেছে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এইধরণের সফটকোর পর্নের ভোক্তা নারীপুরুষ নির্বিশেষে এদেশের অসংখ্য মানুষ। অনিবার্য যত ক্ষয়- তার সবটার ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা ধীরে ধীরে, পুরো জাতি।

পর্নোগ্রাফি মানুষের মস্তিষ্কের প্যাটার্ন বদলে দেয়। মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশকে বলা হয় রিওয়ার্ড সেন্টার- সেখান থেকে মাত্রাতিরিক্ত ডোপামিন নিঃসৃত হতে থাকে পর্ন আসক্তির ফলস্বরূপ। ছোট ছোট ভালো লাগার কারণগুলোতে তখন আমাদের মন আর উদ্দীপিত হয় না। ক্রমেই মন ছেয়ে যায় হতাশা, অনিহা, গ্লানি আর অবসাদে। হারিয়ে যায় জীবনের রঙ। দুরন্ত যৌবন পরিণত হয় অবসাদগ্রস্ত বার্ধক্যে।

মানুষ তার স্বাভাবিক যৌন চাহিদা মেটাতে না পারলে বেছে নেয় বিকৃত সব উপায়। পর্ন আসক্তি কারো কারো মননকে হায়না বানিয়ে দেয়, সে তখন ধর্ষণের মতো গর্হিত পন্থা বেছে নেয় নির্দ্বিধায়। উপযুক্ত বয়সে কেউ বিয়ে না করা মানে এই না যে- সে যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকে, বরং তার থাকে এক উদ্ভ্রান্ত যৌনজীবন। সে যতটুকু পারে সেটা লোকচক্ষুর আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে। আর এক্ষেত্রে ভার্চ্যুয়াল যৌনাচার তার কাজকে বেশ সহজসাধ্য করে তোলে।

সমাজে বিয়ে কঠিন হয়ে গেলে যেনা-ব্যাভিচারের উপায় উপকরণ বেশ সহজ হয়ে যায়। মানুষ তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই সেসব উপায় উপকরণের প্রাপ্তিকে সহজ করে তোলে। আর মানুষের এই চাহিদাকে টার্গেট করেই কোটি-কোটি টাকা কামিয়ে নেয় পর্ন ইন্ডাস্ট্রির হর্তাকর্তারা।

নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন, এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রির একজন নিয়মিত ভোক্তা হয়ে আপনি কি শুধুই নিজের শরীর, মন ও মস্তিষ্কেরই ক্ষতি করছেন না? নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাচ্ছেন না অন্ধকারের গহবরে? আর সমাজের কালেক্টিভ বিবেকের কাছে প্রশ্ন- বাল্যবিবাহের বিরোধিতা এবং ক্যারিয়ারের হুজুগ তুলে আর কতকাল বিয়েকে কঠিন করে রাখবেন? মিডিয়ায় চাইল্ড রোমান্টিসিজমকে পেট্রোনাইজ করে বিয়ের বেলায় বাল্যবিবাহের ব্যাপারে যে সেনসিটিভিটি দেখান- এই নিরেট ভণ্ডামি থেকে কবে বেরিয়ে আসবেন?

নাগরিক সমাজে আমরা যেমন কপট, আমাদের সন্তানরাও হয়ে উঠছে একেকজন কপট আর উদ্ভ্রান্ত নাগরিক। এর থেকে মুক্তি ততক্ষণ মিলবে না- যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সমস্যা দেখেও না দেখার ভান করে থাকবো। ধিক জানাই আমাদের এমন নির্লিপ্ততাকে!

– SEAN Publication

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button