হযরত যুল-কিফল (আঃ)
পবিত্র কুরআনে কেবল সূরা আম্বিয়া ৮৫-৮৬ ও ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে যুল-কিফলের নাম এসেছে। তিনি আল-ইয়াসা‘-এর পরে নবী হন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দেন।
আল্লাহ বলেন,
وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ- وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِيْ رَحْمَتِنَا إِنَّهُمْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ- (الأنبياء ৮৫-৮৬)-
‘আর তুমি স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফলের কথা। তারা প্রত্যেকেই ছিল ছবরকারী’। ‘আমরা তাদেরকে আমাদের রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তারা ছিল সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৫-৮৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ- (ص ৪৮)- ‘আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল-কিফলের কথা। তারা সকলেই ছিল শ্রেষ্ঠগণের অন্তর্ভুক্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৮)।
ইবনু কাছীর বলেন, শ্রেষ্ঠ নবীগণের সাথে একত্রে বর্ণিত হওয়ায় প্রতীয়মান হয় যে, যুল-কিফল একজন উঁচুদরের নবী ছিলেন’। সুলায়মান পরবর্তী নবী হিসাবে তিনিও শাম অঞ্চলে প্রেরিত হন বলে নিশ্চিত ধারণা হয়।
ইবনু জারীর তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, পূর্বতন নবী আল-ইয়াসা‘ বার্ধক্যে উপনীত হ’লে একজনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি তার সকল সাথীকে একত্রিত করে বললেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকবে, তাকেই আমি আমার খলীফা নিযুক্ত করব। গুণ তিনটি এই যে, তিনি হবেন (১) সর্বদা ছিয়াম পালনকারী (২) আল্লাহর ইবাদতে রাত্রি জাগরণকারী এবং (৩) তিনি কোন অবস্থায় রাগান্বিত হন না।
এ ঘোষণা শোনার পর সমাবেশ স্থল থেকে ঈছ বিন ইসহাক্ব বংশের জনৈক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালেন। সে নবীর প্রতিটি প্রশ্নের জওয়াবে হাঁ বললেন। কিন্তু তিনি সম্ভবতঃ তাকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাই দ্বিতীয় দিন আবার সমাবেশ আহবান করলেন এবং সকলের সম্মুখে পূর্বোক্ত ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করলেন। কিন্তু সবাই চুপ রইল, কেবল ঐ একজন ব্যক্তিই উঠে দাঁড়ালেন। তখন আল-ইয়াসা‘ (আঃ) উক্ত ব্যক্তিকেই তাঁর খলীফা নিযুক্ত করলেন, যিনি তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর নবুঅতী মিশন চালিয়ে নিবেন এবং মৃত্যুর পরেও তা অব্যাহত রাখবেন। বলা বাহুল্য, উক্ত ব্যক্তিই হ’লেন ‘যুল-কিফল’ (দায়িত্ব বহনকারী), পরবর্তীতে আল্লাহ যাকে নবুঅত দানে ধন্য করেন (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)।
‘যুল-কিফল’ উক্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন দেখে ইবলীস হিংসায় জ্বলে উঠল। সে তার বাহিনীকে বলল, যেকোন মূল্যে তার পদস্খলন ঘটাতেই হবে। কিন্তু সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলল, আমরা ইতিপূর্বে বহুবার তাকে ধোঁকা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। অতএব আমাদের পক্ষে একাজ সম্ভব নয়। তখন ইবলীস স্বয়ং এ দায়িত্ব নিল।
যুল-কিফল সারা রাত্রি ছালাতের মধ্যে অতিবাহিত করার কারণে কেবলমাত্র দুপুরে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। ইবলীস তাকে রাগানোর জন্য ঐ সময়টাকেই বেছে নিল। একদিন সে ঠিক দুপুরে তার নিদ্রার সময় এসে দরজার কড়া নাড়লো। কাঁচা ঘুম থেকে উঠে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? উত্তর এল, আমি একজন বৃদ্ধ মযলূম। তিনি দরজা খুলে দিলে সে ভিতরে এসে বসলো এবং তার উপরে যুলুমের দীর্ঘ ফিরিস্তি বর্ণনা শুরু করল। এভাবে দুপুরে নিদ্রার সময়টা পার করে দিল। যুল-কিফল তাকে বললেন, আমি যখন বাইরে যাব, তখন এসো। আমি তোমার উপরে যুলুমের বিচার করে দেব’।
যুল-কিফল বাইরে এলেন এবং আদালত কক্ষে বসে লোকটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিন্তু সে এলো না। পরের দিন সকালেও তিনি তার জন্য অপেক্ষা করলেন, কিন্তু সে এলো না। কিন্তু দুপুরে যখন তিনি কেবল নিদ্রা গেছেন, ঠিক তখনই এসে কড়া নাড়ল। তিনি উঠে দরজা খুলে দিয়ে তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, আদালত কক্ষে মজলিস বসার পর এসো। কিন্তু তুমি কালও আসনি, আজও সকালে আসলে না। তখন লোকটি ইনিয়ে-বিনিয়ে চোখের পানি ফেলে বিরাট কৈফিয়তের এক দীর্ঘ ফিরিস্তি পেশ করল। সে বলল, হুযুর! আমার বিবাদী খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। আপনাকে আদালতে বসতে দেখলেই সে আমার প্রাপ্য পরিশোধ করবে বলে কথা দেয়। কিন্তু আপনি চলে গেলেই সে তা প্রত্যাহার করে নেয়’। এইসব কথাবার্তার মধ্যে ঐদিন দুপুরের ঘুম মাটি হ’ল।
তৃতীয় দিন দুপুরে তিনি ঢুলতে ঢুলতে পরিবারের সবাইকে বললেন, আমি ঘুমিয়ে গেলে কেউ যেন দরজার কড়া না নাড়ে। বৃদ্ধ এদিন এলো এবং কড়া নাড়তে চাইল। কিন্তু বাড়ীর লোকেরা তাকে বাধা দিল। তখন সে সবার অলক্ষ্যে জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং দরজায় ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করল। এতে যুল-কিফলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলেন সেই বৃদ্ধ ঘরের মধ্যে অথচ ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তিনি বুঝে ফেললেন যে, এটা শয়তান ছাড়া কেউ নয়। তখন তিনি বললেন, তুমি তাহ’লে আল্লাহর দুশমন ইবলীস? সে মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। আমি আজ আপনার কাছে ব্যর্থ হ’লাম। আপনাকে রাগানোর জন্যই গত তিনদিন যাবত আপনাকে ঘুমানোর সময় এসে জ্বালাতন করছি। কিন্তু আপনি রাগান্বিত হলেন না। ফলে আপনাকে আমার জালে আটকাতে পারলাম না। ইতিপূর্বে আমার শিষ্যরা বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আজ আমি ব্যর্থ হ’লাম। আমি চেয়েছিলাম, যাতে আল-ইয়াসা‘ নবীর সাথে আপনার কৃত ওয়াদা ভঙ্গ হয়। আর সে উদ্দেশ্যেই আমি এতসব কান্ড ঘটিয়েছি। কিন্তু অবশেষে আপনিই বিজয়ী হলেন’।
উক্ত ঘটনার কারণেই তাঁকে ‘যুল-কিফল’ (ذو الكفل)। উপাধি দেওয়া হয়। যার অর্থ, দায়িত্ব পূর্ণকারী ব্যক্তি।[1]
(১) নবীদের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য রক্ত, বর্ণ ও গোত্রীয় মর্যাদা শর্ত নয়। বরং মৌলিক শর্ত হ’ল- তাক্বওয়া ও আনুগত্যশীলতা।
(২) শয়তান বিশেষ করে পরহেযগার মুমিনের প্রকাশ্য দুশমন। কিন্তু ঈমানী দৃঢ়তার কাছে সে পরাজিত হয়।
(৩) ধৈর্যগুণ হ’ল সফলতার মাপকাঠি। তাক্বওয়া ও ছবর একত্রিত হ’লে মুমিন সর্বদা বিজয়ী থাকে।
(৪) শুধু নিজস্ব ইবাদতই যথেষ্ট নয়। বরং জনগণের খেদমতে সময় ব্যয় করাই হল প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য।
(৫) শয়তানের শয়তানী ধরে ফেলাটা মুমিনের সুক্ষ্মদর্শিতার অন্যতম লক্ষণ। অতএব কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন চিন্তা ও পরামর্শ সম্মুখে উপস্থিত হ’লেই বুঝে নিতে হবে যে, এটি শয়তানী ধোঁকা মাত্র।
যুল-কিফল একজন নবী ও একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন। পবিত্র কুরআনে তাঁকে নবীদের সাথেই দু’স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন,
(১) সূরা আম্বিয়া ৮৫-৮৬ আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِسْمَاعِيلَ وَإِدْرِيسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِينَ، وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِي رَحْمَتِنَا إِنَّهُم مِّنَ الصَّالِحِينَ-(الأنبياء ৮৫-৮৬)-
‘আর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফল, সকলেই ছিল ধৈর্যশীলগণের অন্তর্ভুক্ত’। ‘আর আমরা তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই তারা ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৫-৮৬)। (ক) উক্ত আয়াত দ্বয়ের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, فالظاهر من السياق أنه ما قرن مع الأنبياء إلا وهو نبي- ‘পূর্বাপর সম্পর্কে এটা স্পষ্ট যে, নবীগণের তালিকায় নবী ব্যতীত অন্যদের নাম যুক্ত হয় না। তবে অন্যেরা কেউ বলেছেন, তিনি একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন, কেউ বলেছেন, তিনি একজন ন্যায়পরায়ন শাসক ছিলেন। ইবনু জারীর এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন’।
(খ) কুরতুবী এখানে যুল-কিফল সম্পর্কিত আবু ঈসা তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হি:) এবং হাকীম তিরমিযী (মৃ: ৩৬০হি:) বর্ণিত দু’টি যঈফ হাদীছ উল্লেখ করে ক্ষান্ত হয়েছেন। জামে‘ তিরমিযী (হা/২৪৯৬)-তে এসেছে আল-কিফল (الكفل) এবং হাকীম তিরমিযী-র কিতাব ‘নাওয়াদিরুল উছূল’-য়ে এসেছে ‘যুল-কিফল’ (ذو الكفل)। দু’টিই ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে যঈফ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে (তাহকীক কুরতুবী হা/৪৩৫২-৫৩)। ইবনু কাছীর বলেন, তিরমিযীর হাদীছটি ‘হাসান’ বলা হ’লেও সেখানে ‘আল-কিফল’ বলা হয়েছে, যিনি কুরআনে বর্ণিত নবী ‘যুল-কিফল’ নন। বরং অন্য ব্যক্তি’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আম্বিয়া ৮৫; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০৮৩)।
(গ) সম্ভবতঃ ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত উপরোক্ত যঈফ হাদীছের উপরে ভিত্তি করেই ইমাম শাওকানী মন্তব্য করেছেন, الصحيح أنه رجل من بني إسرائيل، كان لا يتورع عن شيئ من المعاصي فتاب فغفر الله له، ليس نبي، وقال جماعة هو نبي- ‘সঠিক কথা এই যে, তিনি বনু ইস্রাঈলের একজন ব্যক্তি ছিলেন। যিনি কোন পাপের কাজে দ্বিধা করতেন না। পরে তিনি তওবা করেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে মাফ করেন। তিনি নবী নন। তবে একদল বলেছেন যে, তিনি নবী’ (ফাৎহুল ক্বাদীর, তাফসীর সূরা আম্বিয়া ৮৫)।
(ঘ) কুরতুবী আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে আরেকটি হাদীছ এনেছেন যে, إن ذا الكفل لم يكن نبيًا ولكنه عبدا صالحًا ‘নিশ্চয়ই যুল-কিফল নবী ছিলেন না। বরং তিনি একজন সৎকর্মশীল বান্দা ছিলেন’। অথচ ইবনু জারীর বর্ণিত উক্ত হাদীছটির অবস্থা এই যে,لا أصل له في المرفوع بل موقوف ضعيف أخرجه الطبري وهو منقطع- ‘এর মরফূ‘ হওয়ার অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হওয়ার কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি মওকূফ, অর্থাৎ আবু মূসার নিজস্ব উক্তি। অথচ যার সূত্র যঈফ এবং যা ইবনু জারীর স্বীয় তাফসীরে মুনক্বাতি‘ অর্থাৎ ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন (তাহকীক কুরতুবী, আম্বিয়া ৮৫)।
(২) সূরা ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে বলা হয়েছে, وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ ‘আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল-কিফল সম্পর্কে। আর তারা সকলেই ছিল শ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৮)।
(ক) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় কুরতুবী বলেন, أي ممن أخةير للنبوة অর্থাৎ তারা ছিলেন সেই সকল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে নবুঅতের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা ছোয়াদ ৪৮)।
(খ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাওকানী স্বীয় তাফসীরে বলেন, أنهم من جملة من صبر من الأنبياء وتحملوا الشدائد في دين الله– ‘তারা হ’লেন সেই সকল নবীগণের অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহর পথে বহু কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেছেন’ অত:পর وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ -এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, الذين اختارهم الله لنبوّته واصطفاهم من خلقه ‘যাদেরকে আল্লাহ স্বীয় নবুঅতের জন্য মনোনীত করেছেন এবং সৃষ্টিকুলের মধ্য হ’তে বাছাই করে নিয়েছেন’। অত:পর এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, أمر الله رسوله صلى الله عليه وسلم بأن يذكرهم؛ ليسلك مسلكهم في الصبر– ‘আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তিনি ঐ সকল নবীদের কথা স্মরণ করেন, যাতে আল্লাহর পথে ধৈর্য ধারণের ব্যাপারে তিনি তাদের অনুসৃত পথে চলতে পারেন।’
অথচ ইতিপূর্বে সূরা আম্বিয়া ৮৫ আয়াতের তাফসীরে তিনি যুল-কিফলকে নবী বলেননি।
(গ) আশ্চর্যের বিষয় যে, আধুনিক মুফাসসির আবুবকর জাবের আল-জাযায়েরী স্বীয় ‘আয়সারুত তাফাসীরে’ সূরা আম্বিয়া ৮৫ আয়াতের তাফসীরের টীকায় লিখেছেন, وأرجح الأقوال ما رواه أبو موسى رضي الله عنه عن النبي صـ أنه قال: ‘সব কথার সেরা কথা হ’ল যা বর্ণনা করেছেন আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে’- বলেই তিনি পূর্বে বর্ণিত যঈফ হাদীছটির অংশবিশেষ উদ্ধৃত করেছেন, যা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে (অর্থাৎ তিনি নবী ছিলেন না)। অথচ সূরা ছোয়াদ ৪৮-এর আলোচনায় ৩০ হ’তে ৪৮ আয়াত পর্যন্ত বর্ণিত দাঊদ (আঃ) হ’তে যুল-কিফল পর্যন্ত সকলকে তিনি নবীগণের অন্তর্ভুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন।
এক্ষণে আমাদের বক্তব্য হ’ল, কুরআন যখন ইসমাঈল, ইদরীস, আল-ইয়াসা‘ প্রমুখ নবীগণের সাথে যুল-কিফলের নাম একসাথে বর্ণনা করেছে, তখন তিনি যে ‘নবী’ ছিলেন, এ বিশ্বাসই রাখতে হবে। এর বিপরীতে কোন বিশুদ্ধ দলীল নেই। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।