ইতিহাস

মুসলিম বিজ্ঞানীদের আড়াল করার চক্রান্ত : ল্যাটিন অনুবাদে নাম পরিবর্তন

পূর্বের অংশ: ইসলামের স্বর্ণযুগ : আড়ালে চলে যাওয়া ইতিহাস

স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের সবগুলাে বই ল্যাটিনসহ অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তবে অনূদিত গ্রন্থগুলােতে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিজ্ঞানীদের নামও ল্যাটিনে অনুবাদ করা হয়। অন্য যে কোনাে ভাষায় কোনাে লেখকের বই অনুবাদ করার সময় কেবলমাত্র বইয়ের বিষয়বস্তু অনুবাদ করা হয়। কখনাে লেখকের নাম অনুবাদ করা হয়। । লেখকের নাম অনুবাদ করার এমন অদ্ভুত উদাহরণ ইতিহাসে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সব দেশের কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নাম অক্ষত রেখে অনুবাদ কর্ম সম্পাদন করা হলেও স্বর্ণযুগের মুসলিম দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের নাম অক্ষত রাখা হয়নি।

ল্যাটিন ভাষায় মুসলিম পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীদের নাম বিকৃত করার এই হীন প্রচেষ্টা অধ্যাপক সারটনের উক্তিকে সত্য বলে প্রমাণ করছে। আরবী গ্রন্থগুলাে ইউরােপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হলেও গ্রন্থকারের ল্যাটিন নাম দেখে বুঝার উপায় নেই যে, তারা মুসলমান। প্রত্যেক মুসলমান গ্রন্থকারের নাম আরবীতে লম্বাচুরা হলেও ল্যাটিন ভাষায় তাদের নাম দেয়া হয়েছে, একটি মাত্র শব্দে।

ইবনে সিনার পুরাে নাম আবু আলী আল-হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তার নাম ‘আভিসিনা’ (Avicenna)।

বীজগণিতের জনক খাওয়ারিজমির পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমি। ল্যাটিন ভাষায় তার নাম ‘এলগােরিজম’ (Algorism)।

ইবনে বাজ্জাহর পুরাে নাম আবু বকর মােহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে আল-সায়িগ। কিন্তু তার ল্যাটিন নাম ‘অ্যাভামপেস (Avempace)।

আল-ফরগানি আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মােহাম্মদ ইবনে কাছির হলাে আলফরগানির পূর্ণ নাম। কিন্তু ল্যাটিনে তার নাম ‘আলফ্রাগানাস’ (Alfraganus)।

পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অঙ্কনকারী আল-ইদ্রিসীর পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ ইবনে মােহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস আল-শরীফ আল-ইদ্রিসী। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তিনি ‘দ্রেসেস’ (Dreses) নামে পরিচিত।

শুধু ইবনে সিনা, খাওয়ারিজমি, ইবনে বাজ্জাহ, আল-ফরগানি কিংবা আল-ইদ্রিসী নয়, সব মুসলিম বিজ্ঞানীর প্রতি ল্যাটিন ইউরােপ এ অবিচার করেছে।

মুসলিম বিজ্ঞানীদের শুধু নামের বিকৃতি নয়, খােদ তাদের পরিচয় নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাদের কারাে কারাে ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, তারা আদৌ মুসলমান নন, জরােস্ত্রীয় অথবা ইহুদী কিংবা ইউরােপীয়। রসায়নের জনক জাবির হাইয়ান এমন এক অপপ্রচারের শিকার। ইউরােপের কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক দাবি করছেন, জাবির ইবনে হাইয়ান ছাড়া আরেকজন জাবির ছিলেন। তার নাম ‘জিবার’ এবং এ জিবার হলেন ইউরােপীয় ।

বীজগণিতের জনক আল-খাওয়ারিজমি সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলা হচ্ছে। কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক তাকে জরােস্ত্রীয় হিসাবে দাবি করছেন। খাওয়ারিজমির বিপরীতে আরেকজন ‘খাওয়ারিজমি’র অস্তিত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে দ্বিতীয় খাওয়ারিজমি হলেন গণিতে প্রথম শূন্য ব্যবহারকারী।

পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী আলফরগানিও ষড়যন্ত্রের শিকার। তার পরিচয় নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে বলা হচ্ছে, ফরগানি হলেন দু’জন।

এমনি আরাে কতভাবে বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান অস্বীকার অথবা তাদের অবদানকে খাটো করার হীন চক্রান্ত চালানাে হচ্ছে তার শেষ নেই। আমরা সবাই একনামে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও ও নিউটনের মতাে ইউরােপীয় বিজ্ঞানীদের চিনি। চিনি না কেবল তাদের গুরু ইবনে বাজ্জাহ, ইবনে রুশদ অথবা নাসিরুদ্দিন তুসিকে। আমরা না চিনলেও ইতিহাস থেকে তারা হারিয়ে যাবেন না। বিজ্ঞান যতদিন টিকে থাকবে মুসলিম বিজ্ঞানীরাও ততদিন ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন ।

চলমান…

– সাহাদত হোসেন খান

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

৪টি মন্তব্য

  1. এর দোষ আমাদের নাকি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আর প্রচার মাধ্যমের
    আমরা মিথ্যা শিখে বড় হয়েছি। এই মিথ্যা না শিখলে চাকরি নাই (এখন শিখলেও নাই)। সকাল থেকে বিকাল সারাদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটে, তার আগে পরে আছে প্রাইভেট কোচিং, সবজায়গাতেই মিথ্যা গেলানোর মেহনত। দিন শেষে একটু দম ফেলানোর ফুসরত পাওয়া গেলে তখন আবারও নতুন করে পড়াশুনা করতে ইচ্ছে হয়না। রাতে আবার এই মিথ্যা পড়া তৈরি কর পরদিনের জন্য। খাওয়ার সময় একটু টিভি নিয়ে বসা হয় বিনোদন আর খবরের জন্য, এখানেও মিথ্যা, আর দ্বীন বিধ্বংসী জিনিস,যা ইসলামে নিষিদ্ধ, ঠিক তাই ধর্ম বলে শেখানো হচ্ছে। সবাই মিথ্যা বলে, মিথ্যা ইতিহাস শেখায়, দ্বীন বিধ্বংসী বিষয় শেখায়, ছোট থেকেই শেখায়, আর আশা করে, বড় হলে সে সঠিকটা জানবে, দ্বীনদার হবে।
    আর না হলে গালি দেবে
    …… বাঙ্গালি, বাঙ্গালিরা সব …।।
    আমরা নিজেদের ইতিহাস জানলাম না, নিজেদের চিনলামনা।
    কবে মানুষ হব আমরা ইত্যাদি।

    আমি যদি আমার সন্তানকে ছোট থেকে প্রাথিষ্ঠানিকভাবে নীলকে লাল আর লালকে হলুদ বলে শিখাই, তবে সে কি শিখবে? মানে সত্যিটা পুরোপুরি নিজের ইচ্ছা আর চেষ্টায় জানতে হবে, আর প্রাথিষ্ঠানিকভাবে মিথ্যা শিখানো হবে, সবাই প্রচার মাধ্যমে মিথ্যা বলবে, এর পরে কেউ সত্য জানলে ভাল, না জানলে?। আমার একটা কম্পিউটার আর অঢেল ইন্টারনেট আর সময় থাকায় আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় অল্প বিস্তর জানতে পেরেছি, সবার কিন্তু তা নেই। এমনকি অনেক বইয়ের নামও আমি জানতামনা যে বই পড়ব। একটা সময় মানুষ ঘর সংসার চাকুরীতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। তখন এত মিথ্যা থেকে পড়াশুনা করে সত্য বের করা সম্ভভ হয়না, ফলে প্রচার মাধ্যম যেমন ইসলামের ব্যাপারে নেগেটিভ প্রচার করে, তারাও তেমন নামাজিরা দাঁড়িওলারা আরও খারাপ মনোভাব নিয়েই বড় হয়। দায় কার?

মন্তব্য করুন

Back to top button