ইসলামের পরিচয়

শান্তির ধর্ম ইসলাম


মুহাম্মাদ রশীদ


ইসলাম শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘সিলম’, যার অর্থ শান্তি। অতএব ইসলাম-এর পারিভাষিক অর্থ হবে নবী (ছাঃ)-এর ত্বরীক্বা মোতাবেক আল্লাহর বিধান পালন করতঃ জীবন গঠন করে শান্তি লাভ করা।
পৃথিবীতে অনেক ধর্ম বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইসলামই হ’ল সঠিক ও সত্য ধর্ম। বাকী সব বাতিল। পৃথিবীতে যত নবী এসেছেন সকলেই ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় বিভিন্ন ধর্ম ও মতের আবির্ভাব ঘটে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَن يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دِيْنًا فَلَن يُّقْبَلَ مِنْهُ-
‘যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীনের অন্বেষণ করবে তার পক্ষ থেকে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)। অতএব ইসলাম ছাড়া যত দ্বীন আছে সবই বাতিল।
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
وَالَّذِىْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِىْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُوْدِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالذِّىْ أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.
‘যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ রয়েছে তার শপথ, যদি এ উম্মতের মধ্য হ’তে কোন ইহুদী ও খৃষ্টান আমার কথা শুনে কিন্তু আমাকে যা কিছু দিয়ে পাঠানো হয়েছে তার উপর ঈমান  না  এনে  মারা  যায়,  তাহ’লে সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।
সম্প্রতি ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের অপপ্রচার চালাচ্ছে। সে কারণে সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে ইসলামের সততা ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচ্য নিবন্ধে আলোচনা পেশ করা হ’ল:
কুরআন সৎপথ প্রদর্শনকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ هَـذَا الْقُرْآنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْراً كَبِيْراً- وأَنَّ الَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْآخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَاباً أَلِيْماً-
‘নিশ্চয়ই এ কুরআন হিদায়াত করে সেই পথের দিকে, যা সুদৃঢ় এবং সৎ কর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। আর যারা আখেরাতের উপর ঈমান রাখে না, আমরা তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৯-১০)
ইসলাম মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, গরীব-মিসকীন তথা সকল মানবের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُوْراً-
‘তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর আর তার সাথে কাউকে শরীক করো না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর পথিক এবং তোমাদের ডান হাত যাদের অধিকারী তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও আত্মাভিমানীকে ভালবাসেন না’ (নিসা ৪/৩৬)
উক্ত আয়াতে নিয়মতান্ত্রিক মুসলিম-অমুসলিম সবার সাথে সদ্ব্যহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলাম যে ন্যায়-নিষ্ঠার ধর্ম তা-ই এ আয়াতে বিবৃত হয়েছে। অতএব ইসলাম যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং অশান্তি প্রতিষ্ঠা চায় না এ আয়াত দ্বারা তা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হচ্ছে।
ইসলাম অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে ও কারো সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلاَ تَقْتُلُواْ أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً- وَمَن يَّفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَاناً وَظُلْماً فَسَوْفَ نُصْلِيْهِ نَاراً وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللّهِ يَسِيْراً-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরে একজন আরেকজনের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে (যা উপার্জিত হয় তা ভক্ষণ করো)। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতি দয়াশীল। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন ও নির্যাতন করে এ রকম করবে আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করব। এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ’ (নিসা ৪/২৯-৩০)
ইসলাম লোকজনকে নিয়ে ঠাট্ট-বিদ্রূপ করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَّكُوْنُوْا خَيْراً مِّنْهُمْ وَلاَ نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْراً مِّنْهُنَّ وَلاَ تَلْمِزُوْا أَنْفُسَكُمْ وَلاَ تَنَابَزُوْا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الْاِسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ-
‘হে ঈমানদারগণ! কোন পুরুষ যেন অন্য পুরুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে। সম্ভবতঃ ওরা বিদ্রূপকারীদের থেকে ভাল হ’তে পারে। আর কোন নারী যেন অন্য নারীকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে। সম্ভবতঃ ওরা বিদ্রূপকারিণীদের থেকে ভাল হ’তে পারে। তোমরা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করো না এবং একজন আরেকজনকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর অসৎ কাজ করা কতই না খারাপ। আর যারা তওবা করে না তারাই অত্যাচারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)
উক্ত আয়াতে সাধারণ লোকজনকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা এবং একে অপরকে দোষারোপ ও মন্দ নামে ডাকাকে নিষেধ করা হয়েছে। মানুষের মান-সম্ভ্রম রক্ষার জন্য ইসলামের যদি এরকম নির্দেশ থাকে, তাহ’লে ইসলাম কি সন্ত্রাসী কাজ-কর্মের নির্দেশ দিতে পারে? একটু ভাবলেই তা অনুমেয়। অতএব ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এর দ্বারা তা-ই প্রমাণিত হচ্ছে।
ইসলাম পরনিন্দা করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْراً مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوْا وَلَا يَغْتَبْ بَّعْضُكُم بَعْضاً أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَّأْكُلَ لَحْمَ أَخِيْهِ مَيْتاً فَكَرِهْتُمُوْهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيْمٌ-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ কোন কোন ধারণা গুনাহ। আর তোমরা অন্যের গোপন বিষয় অন্বেষণ করো না এবং তোমরা একজন আরেকজনের পরনিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করাকে পসন্দ করবে? না, তোমরা একে অপসন্দই করবে। ভয় করো আল্লাহকে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও দয়াবান’ (হুজুরাত ৪৯/১২)
কতই সুন্দর ইসলাম যে, সন্ত্রাস তো দূরের কথা বরং কোন ব্যক্তি সম্পর্কে কুধারণা করতে নিষেধ করেছে। তবে কেউ যদি প্রকাশ্যে কিছু করে তাহ’লে তা ভিন্ন কথা। কারো গোপন দোষ অন্বেষণ করতে এবং পরনিন্দা করতেও ইসলাম নিষেধ করেছে। ইসলাম যে স্বচ্ছ, সুন্দর ও কালিমামুক্ত এগুলো তারই প্রমাণ।
ইসলাম জাত ও বর্ণের পার্থক্য করে না। আল্লাহ পাক বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْباً وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ-
‘হে লোকসকল! আমি তোমাদের নর ও নারী হ’তে সৃষ্টি করেছি এবং পরিচিতির জন্য তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও উপজাতিতে বিভক্ত করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্য হ’তে সে-ই সবচেয়ে বেশী মর্যাদাশীল যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও দক্ষ’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক সকল মানবকে সমানভাবে উল্লেখ করেছেন। চাই কালো হোক, সাদা হোক কিংবা অন্য কোন রঙ্গের হোক এতে কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির ভিত্তিতে।
ইসলাম সবাইকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান করে। আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئاً وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَاباً مِّنْ دُوْنِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُوْنَ-
‘বলুন, হে কিতাবধারীগণ! এসো একটি বাণীর দিকে যেটি আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান। আমরা যেন একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি এবং তার সাথে কাউকে শরীক না করি। আর আমাদের একজন অন্যজনকে রব হিসাবে গ্রহণ করি না। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল তোমরা সাক্ষী থাক আমরা হচ্ছি মুসলিম’ (আলে ইমরান ৩/৬৪)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক কিতাবধারীদেরসহ সকল মানব জাতিকে একমাত্র তার ইবাদতের দিকে আহবান করেছেন। অতএব সকল মানবজাতির উচিত যে, তারা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর একমাত্র আল্লাহকেই প্রভু হিসাবে মানবে।
ইসলাম গচ্ছিত আমানত হক্বদারদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوْا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُواْ بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ سَمِيْعاً بَصِيْراً-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আমানতসমূহ হক্বদারদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর যখন তোমরা লোকজনের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (নিসা ৪/৫৮)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক আমানত আদায় ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম যে সুন্দর ও ন্যায়-নিষ্ঠার ধর্ম তা-ই এ আয়াতে বিবৃত হয়েছে। তাই ইসলামী বিধি-বিধান যদি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহ’লে ভূমন্ডলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সন্ত্রাসের ধর্ম নয় এটাই প্রমাণিত।
ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে কুরআনে অনেক উদ্ধৃতি রয়েছে। বরং কুরআনের পুরো অংশটাই সৌন্দর্যে ভরপুর। কিন্তু এখানে কয়েকটির উল্লেখ করা হ’ল। আশা করি ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এর প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের দলীল হিসাবে এগুলোই যথেষ্ট।
ইসলাম সৎ চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছে। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে ঐ বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, যা মানুষকে অধিকহারে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। জবাবে তিনি বলেন, تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ  ‘আল্লাহভীতি ও সৎচরিত্রই সর্বাধিক জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। অতএব ইসলাম সৎচরিত্রের অধিকারী হওয়ার ও আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ প্রদান করে, সন্ত্রাসের নয়।
ইসলাম সততা অবলম্বন করার ও মিথ্যাচারিতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ প্রদান করেছে।
عن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِىْ إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِىْ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِىْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِىْ إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا-
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা সততা অবলম্বন করো। কারণ সততা নেক কাজের পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে। মানুষ সৎ কথা বলতে থাকে এবং সততার অন্বেষণ করতে থাকে। পরিশেষে তার নাম আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসাবে লিখা হয়। আর তোমরা মিথ্যাচারিতা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যাচারিতা মানুষকে অসৎ কাজের দিকে নিয়ে যায় এবং অসৎ কাজ জাহান্নামের পথ প্রদর্শন করে। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে থাকে ও মিথ্যার অন্বেষণ করতে থাকে। ফলে তার নাম আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীরূপে লিখে দেয়া হয়’।
অতএব ইসলাম যে সৎ ও ন্যায়-নিষ্ঠার ধর্ম এর দ্বারা তা-ই প্রমাণিত হ’ল। পক্ষান্তরে ইসলাম যে মিথ্যাচারিতা ও ধোকার ধর্ম নয় এর দ্বারা তাও প্রমাণিত হ’ল।
ইসলাম শুধু মানুষ কেন বরং কুকুরের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছে।
عن أبى هريرة رضى الله أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال بَيْنَا رَجُلٌ يَمْشِىْ فَاشْتَدَّ عَلَيْهِ الْعَطَشُ فَنَزَلَ بِئْرًا فَشَرِبَ مِنْهَا ثُمَّ خَرَجَ فَإِذَا هُوَ بِكَلْبٍ يَلْهَثُ يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ الْعَطَشِ فَقَالَ لَقَدْ بَلَغَ هَذَا مِثْلُ الَّذِىْ بَلَغَ بِىْ فَمَلَأَ خُفَّهُ ثُمَّ أَمْسَكَهُ بِفِيْهِ ثُمَّ رَقِىَ فَسَقَى الْكَلْبَ فَشَكَرَ اللهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَإِنَّ لَنَا فِى الْبَهَائِمِ أَجْرًا؟ قَالَ فِىْ كُلِّ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ-
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। এমনি মুহূর্তে তার প্রচন্ড পিপাসা অনুভূত হ’লে সে কূপে নেমে পানি পান করল। তারপর কূপ থেকে বের হয়ে দেখল একটা কুকুর হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ভিজা মাটি চাটছিল। সে বলল, যেভাবে আমার তৃষ্ণা পেয়েছে সেভাবে এ কুকুরেরও তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই সে তার চামড়ার মোজা ভরে পানি নিল এবং চামড়ার মুখ বন্ধ করে উপরে উঠল আর কুকুরকে পানি খাওয়াল। যার ফলে আল্লাহ তার শুকরিয়া আদায় করলেন আর তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। ছাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের জন্য কি পশুতেও ছওয়াব রয়েছে? আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, প্রত্যেক জীবন্ত কলিজা বিশিষ্ট প্রাণীতে ছওয়াব রয়েছে’।
যে ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে থাকা কষ্টদায়ক বস্ত্ত অপসারণ করে ইসলাম তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছে।
عن أبى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مَرَّ رَجُلٌ بِغُصْنِ شَجَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ طَرِيْقٍ فَقَالَ وَاللهِ لَأُنَحِّيَنَّ هَذَا عَنِ الْمُسْلِمِيْنَ لاَ يُؤْذِيْهِمْ فَأُذْخِلَ الْجَنَّةَ-
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে থাকা একটি গাছের ডালের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে বলল, আল্লাহর কসম আমি এটি মুসলিমদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিব, যেন তারা কষ্ট না পান (আর ওটি রাস্তা থেকে সরিয়ে দিল)। যার ফলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হ’ল’।
মানুষ কেন বরং কোন প্রাণীর উপরও যুলুম করা ইসলামে অবৈধ। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِىْ هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيْهَا النَّارَ لاَ هِىَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِىَ تَرَكَتْهَا تَأكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ.
‘একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেওয়া হয়েছে। সে বিড়ালকে বেঁধে রেখেছে। তাই সে মারা গেছে। ফলে মহিলাটি জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। মহিলাটি যখন বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল তখন তাকে খেতেও দেয়নি এবং পান করতেও দেয়নি। এমনকি তাকে মাটির কীট পতঙ্গও খেতে দেয়নি’।
ইসলাম মানুষ কেন বরং একটা বিড়ালকেও কষ্ট দিতে নিষেধ করেছে। অতএব যাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নেই তাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা উচিত। আর কোন বিষয় বোধগম্য না হ’লে বিজ্ঞজনকে জিজ্ঞেস করা উচিত। আল্লাহ সকলকে সঠিক জ্ঞান দান করুন আমীন!
যার অসদাচরণ থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ থাকতে পারে না সে জান্নাতে যেতে পারবে না।
عن أبى هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ،
‘যার অসদাচরণ থেকে প্রতিবেশী নির্ভয় ও নিরাপদ থাকতে পারে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।
উক্ত হাদীছে ইসলাম প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যহারের নির্দেশ দিয়েছে। আর যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে কষ্ট দিবে তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অতএব প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া যদি ইসলাম নিষিদ্ধ করে থাকে তাহ’লে সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করাকে কি ইসলাম বৈধ বলে ঘোষণা দিতে পারে? একটু অনুধাবন করলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ইসলাম মজদুরের মজুরী তার ঘাম শুকাবার আগে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে,
عن عبد الله بن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرْقُهُ،
আব্দুল্লাহ বিন ওমর বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মজদুরকে ঘাম শুকাবার আগে তার মজুরী প্রদান কর’। সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক মজদুরের হক আদায় করতে হবে। মজদুরের হক্ব আদায়ে বিলম্ব করা যুলুমের অন্তর্ভুক্ত।
মজদুরী ইসলামের দৃষ্টিতে ভাল কাজ। বরং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম কামাই হচ্ছে ঐ কামাই যেটি মানুষ নিজ হাত দ্বারা করে’। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যত নবী এসেছেন সবাই ছাগল চরিয়েছেন’ (বুখারী হা/২১৪৩)
হালাল কামাই করার জন্য যারা বের হন আল্লাহ পাক তাদের প্রশংসা করে বলেছেন, وَآخَرُوْنَ يَضْرِبُوْنَ فِى الْأَرْضِ يَبْتَغُوْنَ مِنْ فَضْلِ اللهِ، ‘আর কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধানে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে পড়ে’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২০)
অবশ্য কামাইটা হ’তে হবে বৈধ, অবৈধ হবে না। কারণ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّىَ بِالْحَرَامِ ‘ঐ শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না যেটি হারাম খাবার দ্বারা পুষ্ট হয়েছে’।১০
অতএব কামাইটা যেন অবৈধ না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এর দ্বারা তাই প্রমাণিত হচ্ছে। ইসলাম কাউকে যুলুম করার অনুমোদন দেয় না। শ্রমিককে পরিশ্রম করে কামাই করার নির্দেশ দিচ্ছে ইসলাম। অন্যদিকে মালিক পক্ষকে তার হক্ব যথা সময়ে এবং তৎক্ষণাৎ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে।
ইসলাম জিহবা ও হাত দ্বারা কাউকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেছে। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, اَلْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُوْنَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ‘প্রকৃত মুসলিম হ’ল সে, যার জিহবা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে’।১১
উক্ত হাদীছে যদিও শুধু মুসলিমের কথা উল্লেখ হয়েছে তবুও তার মানে এটি নয় যে, অমুসলিমকে কষ্ট দিবে। বরং এর সাথে ঐসব অমুসলিমও শামিল যারা মুসলিমদের কষ্ট দেয় না এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرِحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيْحَهَا يُوْجَدْ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا،
‘যে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ কাফিরকে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধি ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়’।১২
একজন মুসলিমকে হত্যা করা পৃথিবী ধ্বংস হওয়া থেকেও ভয়াবহ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ ‘আল্লাহর নিকট একজন মুসলিমের হত্যাকান্ড থেকে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া সহজ’।১৩

�মুসলিমের ইযযত আল্লাহর কাছে এত বেশী। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার আজ অনেকেই এদিকে ভ্রূক্ষেপ করে না। যার ফলে সর্বত্র সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি মুসলিম মুসলিমকে হত্যা করছে। পরিণামে সুনামের ইসলাম দুর্নামে রূপান্তরিত হচ্ছে। আর এসব অসৎ লোক শান্তির ধর্ম ইসলামকে অশান্তির ধর্ম বলে জনসম্মুখে তুলে ধরছে। কিন্তু আল্লাহর অঙ্গীকার মোতাবেক তাঁর দ্বীনের হেফাযত তিনি নিজেই করবেন। আল্লাহ বলেছেন,
 إِنَّا نَحْنُ نَزَّلًنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ
‘নিশ্চয়ই আমি যিকির নাযিল করেছি আর আমিই এর হেফাযত করব’ (হিজর ১৫/৯)
শান্তির ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে যতই লিখা যাক না কেন শেষ হবে না। এখানে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হ’ল মাত্র। আশা করি সত্যসন্ধানীদের অনেকটা সহযোগী হবে। আল্লাহই সঠিক পথ প্রদর্শক।

. মুসলিম হা/১৫৩।

. তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৮৩২ সনদ হাসান।

. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৪।

. বুখারী হা/২৩৬৩।

. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৯০৪।

. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৯০৩।

. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৩।

. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯৮৭, সদন ছহীহ।

. ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬৮৮।

১০. ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৩০; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৯; মিশকাত হা/২৭৮৭।

১১. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৬।

১২. বুখারী, মিশকাত হা/৩৪৫২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৭।

১৩. তিরমিযী, নাসাঈ, ছহীহ আল জামে‘ হা/৫০৭৭।


মন্তব্য করুন

Back to top button