আদব ও আমল

আকাশের দরজাগুলো কখন ও কেন খোলা হয়? (৩)

পূর্বের অংশ: যেসব আমল সম্পাদনকালে আকাশের দরজাগুলো খোলা হয় (২)

যে সকল দো‘আ ও যিকিরের মাধ্যমে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয় :

বান্দার হৃদয়ের ফোয়ারা থেকে যখন কোন পবিত্র বাক্য ও কথা উৎসারিত হয়, তখন আল্লাহ সেটা তাঁর কাছে তুলে নেন। তিনি বলেন, إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ ‘তাঁর দিকেই অধিরোহন করে পবিত্র বাক্য। আর সৎকর্ম তাকে উচ্চ করে’ (ফাতির ৩৫/১০)। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, এখানে ‘পবিত্র বাক্য’ বলতে আল্লাহর যিকির, তাসবীহ-তাহমীদ, কুরআন তিলাওয়াত, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ প্রভৃতিকে বুঝানো হয়েছে, যা নিয়ে ফেরেশতামন্ডলী আকাশে আরোহন করেন এবং আল্লাহ তার ছওয়াব প্রদান করেন।[1] ইসলামী শরী‘আতে কতিপয় দো‘আ ও যিকিরের বিবরণ এসেছে, যার মাধ্যমে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যা নিম্নরূপ :

১. কালেমায়ে ত্বইয়েবাহ :

কালেমায়ে ত্বইয়েবাহ (পবিত্র বাক্য) হ’ল لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) ‘নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম যিকির হ’ল ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ এবং সর্বোত্তম দো‘আ হ’ল ‘আল-হামদুলিল্লাহ’।[2] আর যদি কেউ উক্ত বাক্যটি একনিষ্ঠতার সাথে পাঠ করে, তাহ’লে তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا قَالَ عَبْدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَطُّ مُخْلِصًا، إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، حَتَّى تُفْضِيَ إِلَى العَرْشِ، مَا اجْتَنَبَ الكَبَائِرَ. ‘কোন বান্দা একনিষ্ঠতার সাথে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করলে তার জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। ফলে সেই কালেমা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যতক্ষণ সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’।[3] একদা আবু যার (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। আল্লাহর রাসূল বললেন, إِذَا عَمِلْتَ سَيِّئَةً فَأَتْبِعْهَا حَسَنَةً تَـمْحُهَا ‘পাপ কাজ করার সাথে সাথেই সৎ আমল করবে, তাহ’লে এটা তোমার পাপকে মিটিয়ে দিবে’। ছাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা কি সৎ আমল’? তিনি বললেন, هِيَ أَفْضَلُ الْـحَسَنَاتِ ‘এটা তো সর্বোৎকৃষ্ট সৎ আমল’।[4]

২. চারটি প্রিয় বাক্য :

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য চারটি। সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি। (১) سُبْحَانَ اللهِ ‘সুবহা-নাল্লাহ’ (২) الْحَمْدُ لِلَّهِ ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’ (৩) لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ (৪) اللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহু আকবার’। এই চারটি কালেমার যে কোন একটি (আগ-পিছ করে) প্রথমে বললে কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[5] অপর এক বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এই বাক্যগুলো এমনভাবে বান্দার পাপরাশি ঝরিয়ে ফেলে, যেমন গাছের পাতা ঝরে পড়ে।[6]

নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ مِنْ جَلَالِ اللهِ مِنْ تَسْبِيحِهِ، وَتَحْمِيدِهِ، وَتَكْبِيرِهِ، وَتَهْلِيلِهِ، يَتَعَاطَفْنَ حَوْلَ الْعَرْشِ، لَهُنَّ دَوِيٌّ كَدَوِيِّ النَّحْلِ، يُذَكِّرْنَ بِصَاحِبِهِنَّ، أَلَا يُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ لَا يَزَالَ لَهُ عِنْدَ اللهِ شَيْءٌ يُذَكِّرُ بِهِ؟.

‘যারা ‘সুবহা-নাল্লাহ’, আল-হামদুলিল্লা-হ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘লা ইলা-হা ইল্লা-হ’ বলে মহান আল্লাহর যিকির করে, তাদের পঠিত বাক্যগুলো আল্লাহর আরশের চারপাশে মৌমাছির মত প্রদক্ষিণ করতে থাকে এবং বাক্যগুলো পাঠকারীর নাম বলতে থাকে। তোমরা কি পসন্দ করো না যে, তোমাদের নাম আল্লাহর কাছে সর্বদা স্মরণ করা হোক?[7] এই কালেমাগুলো আরশে পৌঁছে যাওয়া প্রমাণ করে যে, আল্লাহর প্রিয় এই চারটি বাক্য পাঠ করলে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। দরজা ছাড়া কোন কিছুই আকাশের সীমানা পার হ’তে পারে না। হাদীছের সোনালী পাতায় এই চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়ার আরোও প্রমাণ মেলে নিম্নোক্ত হাদীছ থেকে,

إِنَّ اللهَ اصْطَفَى مِنَ الْكَلَامِ أَرْبَعًا: سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، فَمَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ، كَتَبَ اللهُ لَهُ عِشْرِينَ حَسَنَةً، أَوْ حَطَّ عَنْهُ عِشْرِينَ سَيِّئَةً، وَمَنْ قَالَ : اللهُ أَكْبَرُ، فَمِثْلُ ذَلِكَ، وَمَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَمِثْلُ ذَلِكَ، وَمَنْ قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ،  مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ،  كُتِبَتْ لَهُ

ثَلَاثُونَ حَسَنَةً، أَوْ حُطَّ عَنْهُ ثَلَاثُونَ سَيِّئَةً-

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বাক্য থেকে চারটি বাক্য চয়ন করেছেন। ‘সুবহা-নাল্লাহ’, আল-হামদুলিল্লা-হ’, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’। যে ব্যক্তি ‘সুবহা-নাল্লাহ’ বলবে তার জন্য ২০টি নেকী লেখা হবে এবং ২০টি গুনাহ মোচন করা হবে। যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, তার জন্য অনুরূপ। যে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে, তার জন্যও অনুরূপ ফযীলত রয়েছে। আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতার সাথে অন্তর থেকে ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল আলামীন’ বলবে, তার জন্য ৩০টি নেকী লেখা হবে এবং ৩০টি পাপ মোচন করা হবে’।[8] শুধু তাই নয়, সাথে সাথে প্রত্যেক বাক্যের বিনিময়ে জান্নাতে একটি করে বৃক্ষ রোপণ করা হবে।[9] আর যে ব্যক্তি বিছানায় আশ্রয় নিয়ে বলবে,

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْـحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، سُبْحَانَ اللهِ وَالْـحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ.

‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। সুবহানাল্লা-হ, ওয়াল-হামদুলিল্লা-হ, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হূ, ওয়াল্লাহু আক্বার’ তাহলে তার সকল পাপরাশি মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমপরিমাণ হয়’।[10]

৩. ছালাত শুরু করার বিশেষ দো‘আ :

মুমিন বান্দা যখন ছালাত শুরু করে, তখন তিনি যেন এক অপার্থিব জগতে প্রবেশ করেন। তার হৃদয়ের সকল আকুতি মহান রবের দরবারে পেশ করে পরিতৃপ্ত হন। কারণ একমাত্র আল্লাহই তার ব্যথিত হৃদয়ের কথা শোনেন এবং অশ্রুসিক্ত চোখের ভাষা বুঝেন। তার রুকু-সিজদা সবকিছু আল্লাহর জন্যই সমর্পিত হয়। দুনিয়ার সকল চিন্তা ও দুর্ভাবনা থেকে অবসর হয়ে তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে তিনি ছালাত শুরু করেন। তাকবীরে তাহরীমার পরে পঠিতব্য প্রায় ১২টি দো‘আর ব্যাপারে হাদীছে বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে কতিপয় দো‘আ রয়েছে, যা পাঠ করলে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) বলেন, ‘আমরা একদা আল্লাহর রাসূলের সাথে ছালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ কওমের এক ব্যক্তি তাকবীরে তাহরীমার পর বলে উঠল,

اللهُ أَكْبَرُ كَبِيْرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيْرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيْلًا.

রাসূল (ছাঃ) ছালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, এই কথাগুলো কে বলল? সবার মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি বলেছি। তখন তিনি বললেন, ‘কথাগুলো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল’।[11] বার জন ফেরেশতা এর ছওয়াব আগে ভাগে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছিল।[12] আর এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, দরজা ছাড়া ফেরেশতারা আসমানে আরোহন করতে পারে না।

আনাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি দ্রুতগতিতে ক্লান্ত অবস্থায় মসজিদে (ছালাতে) উপস্থিত হয়ে বলল,الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ. অতঃপর রাসুলূল্লাহ (ছাঃ) ছালাত শেষে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এই দো‘আটি পড়েছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি ক্লান্ত অবস্থায় মসজিদে এসে এই দো‘আটি পড়েছি। আললাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি দেখতে পেলাম বার জন ফেরেশতা এজন্য প্রতিযোগিতায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, কে সর্বাগ্রে দো‘আটি আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাবেন। তারপর তিনি বলেন,وَإِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ فَلْيَمْشِ نَحْوَ مَا كَانَ يَمْشِي فَلْيُصَلِّ مَا أَدْرَكَهُ وَلْيَقْضِ مَا سَبَقَهُ ‘তোমাদের কেউ মসজিদে এলে সে যেন স্বাভাবিক গতিতে আসে। অতঃপর ইমামের সাথে যতটুকু ছালাত পাবে ততটুকু আদায় করবে এবং ছালাতের ছুটে যাওয়া অংশটুকু (ইমামের সালাম ফেরার পর) একাকী আদায় করে নিবে’।[13]

৪. ক্বওমার দো‘আ :

রুকু থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ক্বওমা বলে। হযরত রিফা‘আহ বিন রাফে‘ আয-যুরাক্বী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করছিলাম। যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে বললেন, سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে), তখন তাঁর পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠলرَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ ‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দ, হামদান কাছীরান ত্বইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহ’ (হে আমার রব! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়। অতঃপর সালাম ফেরার পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَنِ الـمُتَكَلِّمُ ‘এই বাক্য কে বলল?’ লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি বলেছি। তখন তিনি বললেন, ‘আমি ৩০-এর অধিক ফেরেশতাকে দেখলাম যে, তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে, কে এই দো‘আ পাঠকারীর নেকী আগে লিখবে’।[14] উল্লেখ্য, কোন আমলের নেকী আকাশের দরজা ছাড়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং বোঝা গেল যে, ক্বওমার উক্ত দো‘আ পাঠকালে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তবে ক্বওমাতে পঠিতব্য আরো একাধিক দো‘আ আছে, যা ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

৫. মাযলূমের দো‘আ :

নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ব্যথিত হৃদয় থেকে উৎসারিত দো‘আ আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করে নেন। কোন প্রতিবন্ধতা এই দো‘আ কবুলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন,اتَّقِ دَعْوَةَ الـمَظْلُومِ، فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ ‘তুমি মাযলূমের বদ দো‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা সেই বদ দো‘আ ও আল্লাহর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না’।[15] এমনকি সেই বদ দো‘আ কোন কাফের অথবা পাপী লোকের পক্ষ থেকে হলেও আল্লাহ তা সাথে সাথে কবুল করে নেন।[16] মাযলূমের দো‘আ এতই গুরুত্ববহ যে, এটা আল্লাহর কাছে পৌঁছার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। প্রিয় নবীর কণ্ঠে সেই বিবরণ বিঘোষিত হয়েছে। তিনি বলেন,

وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ تُحْمَلُ عَلَى الْغَمَامِ وَتُفْتَحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ وَعِزَّتِي لأَنْصُرَنَّكَ وَلَوْ بَعْدَ حِينٍ.

‘মাযলূমের দো‘আ মেঘের উপরে তুলে নেওয়া হয় এবং উহার জন্য আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা বলতে থাকেন, আমার ইয্যতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব একটু পরে হলেও’।[17]

ইতিহাসের সোনালী পাতার রূপালী হরফে চোখ বুলালে আমরা দেখতে পাই, বদরের প্রান্তরে নির্যাতিত রাসূল (ছাঃ)-এর কাতর কণ্ঠের দো‘আ আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُـمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِيْنَ. ‘যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট কাতর কণ্ঠে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, আর তিনি তোমাদের সে প্রার্থনা কবুল করেছিলেন এই মর্মে যে, আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব ধারাবাহিকভাবে আগত এক হাযার ফেরেশতা দ্বারা’ (আনফাল ৮/৯)। আলে ইমরানের ১৬৫নং আয়াতে পাঁচ হাযার ফেরেশতা নাযিলের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এভাবে এক হাযার মুশরিকের মোকাবেলায় মাত্র ৩১৩ জন মুসলিম বিজয়ী হয়েছিল। বদর প্রান্তরের বিজয় মাযলূম সেনাপতি মুহাম্মাদ (ছাঃ) এরই পদচুম্বন করেছিল।

তবে আল্লাহ মাঝে মাঝে যালেমদেরকে অবকাশ দেন। যাতে তাদের যুলুমের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের শাস্তিও কঠোরতম হয়। আল্লাহ বলেন,وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ ‘তুমি অবশ্যই একথা ভেবো না যে, যালেমরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষুসমূহ বিস্ফারিত হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যালেমদের ছাড় দিয়ে থাকেন। আর অবশেষে যখন ধরেন তখন আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি পাঠ করেন,وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيْدٌ ‘আর এরূপই হয়ে থাকে তোমার পালনকর্তার পাকড়াও যখন তিনি কোন পাপিষ্ঠ জনপদকে ধরেন। নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও অতীব যন্ত্রণাদায়ক ও অত্যন্ত কঠোর’ (হূদ ১১/১০২)। এজন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যুলুম থেকে বাঁচার জন্য সর্বদা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখনই ঘর থেকে বের হ’তেন, তখন আকাশের দিকে চোখ ফিরিয়ে বলতেন,اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ  ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে পথভ্রষ্ট করা বা পথভ্রষ্ট হওয়া, গুনাহ করা বা গুনাহের দিকে ধাবিত করা, অত্যাচার করা বা অত্যাচারিত হওয়া এবং অজ্ঞতা প্রকাশ করা ও অজ্ঞতার পাত্র হওয়া থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’।[18]

৬. জিহাদের ময়দানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সৈনিকদের দো‘আ :

আল্লাহর দ্বীনের ঝান্ডাকে উড্ডীন করার জন্য জিহাদের ময়দানে সারিবদ্ধ সৈনিকের দো‘আ আল্লাহ তাড়াতাড়ি কবুল করেন। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,سَاعَتاَنِ تُفْتَحُ فِيْهِمَا أبْوَابُ السَّمَاءِ وَقَلَّماَ تُرَدُّ عَلى دَاعٍ دَعْوَتَه: لِحُضُوْرِ الصَّلاَةِ والصَّفِّ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ. ‘দু’টি সময়ে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর এই সময় প্রার্থনাকারীর দো‘আ কদাচিৎ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সময় দুটি হ’ল, ছালাতের সময় এবং আল্লাহর পথে (জিহাদের ময়দানে) সারিবদ্ধ হওয়ার সময়।[19]

আর এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সেই মুজাহিদের সম্মানে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পবিত্র কণ্ঠে সেই সুসংবাদ অনুরণিত হয়েছে,

إذا صفَّ الناسُ للصلاةِ، وصَفُّوا للقتال، فُتحتْ أبوابُ السماءِ وأبوابُ الجنةِ، وغُلّقتْ أبوابُ النارِ، وزُيِّن الحورُ العيْن واطَّلعن، فإذا أقبل الرجل قلن: اللهم انصره، وإذا أَدبر احتجَبْنَ منه وقلن: اللهم اغفر له.

‘যখন মানুষ ছালাতের জন্য কাতারবদ্ধ হয় এবং জিহাদের জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়, তখন আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর আনতনয়না হুরদেরকে সুসজ্জিত করা হয় এবং তারা উকি মারে। যখন ব্যক্তিটি (ছালাতে বা জিহাদে) গমন করে তখন হুরেরা তার জন্য দো‘আ করে বলে, হে আল্লাহ তুমি তাকে সাহায্য কর। আর যখন সে পশ্চাদপসরণ করে, তখন তারা তার থেকে আত্মগোপন করে এবং বলতে থাকে- হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর’।[20]

৭. ওযূর শেষে বিশেষ দো‘আ পাঠ করা :

আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ تَوَضَّأَ، ثُمَّ فَرَغَ مِنْ وُضُوئِهِ فَقَالَ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أنت، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ، خُتِمَ عَلَيْهَا بِخَاتَمٍ ثُمَّ وُضِعَتْ تَحْتَ الْعَرْشِ، فَلَمْ تُكْسَرْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

‘যে ব্যক্তি ওযূ শেষে এই দো‘আটি পাঠ করবে, ‘সুবাহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’, একটি বিশেষ মোহর দ্বারা দো‘আটি মোহরাঙ্কিত করে দেওয়া হয়। অতঃপর সেটা আরশের নিচে রেখে দেওয়া হয়, ক্বিয়ামত পর্যন্ত সেই মোহর খোলা হয় না।[21] অপর বর্ণনায় রয়েছে, সেই দো‘আটি তার জন্য একটি কাগজে লেখা হয় এবং তাতে সীল মেরে দেওয়া হয়, যা ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত খোলা হয় না।[22] আর এই কথা সহজেই অনুমেয় যে, আকাশের দরজা খোলা ছাড়া কোন কিছুই আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছে না।

বিশেষ করে এই দো‘আটি ‘মজলিসের কাফ্ফারা’ রূপে পরিচিত, যা কোন বৈঠকের শেষে পাঠ করলে উক্ত বৈঠকের মাঝে কৃত ভুলগুলোর কাফফারা হয়ে যায়।[23]

তবে ওযূর পরবর্তী আরো মাসনূন দো‘আ রয়েছে, যা ওযূর পর পাঠকারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়, যেন ওযূকারী বান্দা যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযূ সম্পাদন করার পর বলবে,

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِيْنَ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الـمُتَطَهِّرِيْنَ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ-

‘আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ। আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি একক ও শরীক বিহীন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন)। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে।[24]

৮. আরোও একটি কালেমা :

আকাশের দরজা উন্মোচনকারী আরোও একটি যিকির রয়েছে, যা একনিষ্ঠতার সাথে পাঠ করলে আল্লাহ পাঠকারীর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেন এবং ঐ খোলা দরজা দিয়ে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন,

مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، مُخْلِصًا بِهَا رُوحُهُ وَجْهَ اللهِ، مُصَدِّقًا بِهَا لِسَانُهُ وَقَلْبُهُ إِلَّا فُتِقَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ فَتْقًا حَتَّى يَنْظُرَ الرَّبُّ إِلَى قَائِلِهَا مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا، وَحَقٌّ لِعَبْدٍ إِذَا نَظَرَ اللهُ إِلَيْهِ أَنْ يُعْطِيَهَ سُؤْلَهُ-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠতার সাথে জিহবা ও হৃদয় দিয়ে সত্যায়ন করে বলবে- ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’ (আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। সকল রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সকল কিছুর উপর তিনিই সর্ব শক্তিমান)। তাহ’লে তার জন্য এমনভাবে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় যে, মহান রব দুনিয়াবাসীর মধ্য হ’তে এই বাক্য পাঠকারীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দার প্রতি দৃষ্টি দেন, তখন বান্দার চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা তাঁর জন্য আবশ্যক হয়ে যায়।[25] এছাড়াও ছহীহ হাদীছ সমূহে এই কালেমার আরোও অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

ক. আইয়ুব আল-আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، عَشْرَ مَرَّاتٍ، كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ قَالَهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ، وَحَطَّ اللهُ عَنْهُ بِهَا عَشْرَ سَيِّئَاتٍ، وَرَفَعَهُ اللهُ بِهَا عَشْرَ دَرَجَاتٍ، وَكُنَّ لَهُ كَعَشْرِ رِقَابٍ، وَكُنَّ لَهُ مَسْلَحَةً مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ إِلَى آخِرِهِ، وَلَمْ يَعْمَلْ يَوْمَئِذٍ عَمَلًا يَقْهَرُهُنَّ، فَإِنْ قَالَ حِيْنَ يُمْسِي، فَمِثْلُ ذَلِكَ-

‘যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকাল বেলা এই কালেমাটি (লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু …) দশ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তার পঠিত প্রত্যেক শব্দের বিনিময়ে দশটি করে নেকী লিখে দেন, দশটি পাপ মিটিয়ে দেন এবং তার মর্যাদা দশ স্তর উন্নীত করে দেন। তার আমলনামায় দশটি গোলাম মুক্ত করার সমপরিমাণ নেকী লেখা হয় এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার নিরাপত্তার জন্য একদল ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়। সে ঐ দিন এমন কোন আমল করতে পারে না, যা এই কালেমা পাঠ করার নেকীকে পরাভূত করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলা পাঠ করবে তার জন্য; অনুরূপ নেকী রয়েছে’।[26]

খ. উমারাহ ইবনু শাবীব সাবায়ী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ عَلَى إِثْرِ المَغْرِبِ بَعَثَ اللهُ لَهُ مَسْلَحَةً يَحْفَظُونَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ حَتَّى يُصْبِحَ، وَكَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ مُوجِبَاتٍ، وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ مُوبِقَاتٍ، وَكَانَتْ لَهُ بِعَدْلِ عَشْرِ رِقَابٍ مُؤْمِنَاتٍ

‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পর এই কালেমাটি (লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু) দশ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তার নিরাপত্তার জন্য এক দল ফেরেশতা পাঠান, যারা তাকে ভোর পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্টকারিতা থেকে রক্ষা করেন। তার জন্য আল্লাহর রহমত আবশ্যককারী দশটি পুণ্য লেখা হয় এবং তার দশটি ধ্বংসাত্মক পাপ (কবীরা গুনাহ) মুছে দেওয়া হয়। আর তার জন্য দশটি ঈমানদার দাসমুক্ত করার সমপরিমাণ ছওয়াব রয়েছে’।[27]

গ. আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَالَ عَشْرَ مَرَّاتٍ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، كَانَتْ لَهُ عِدْلَ أَرْبَعِ رِقَابٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ ‘যে ব্যক্তি এই কালেমাটি (লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু …..) দশ বার পাঠ করবে, সে ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের (কুরায়েশ বংশের) চারজন দাস মুক্ত করার নেকী পাবে’।[28]

ঘ. হযরত ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ قَالَ فِي سُوقٍ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، كَتَبَ اللَّهُ تَعَالَى لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةً، وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةً، وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ.

‘যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে বলবে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু …’, আল্লাহ তার জন্য এক লক্ষ ছওয়াব লিখেন এবং তার এক লক্ষ গুনাহ মুছে দেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’।[29]

[চলবে]


[1]. ফাৎহুল কাদীর ৪/৩৪১

[2]. তিরমিযী হা/ ৩৩৮৩; ইবনু মাজাহ হা/ ৩৮০০; মিশকাত হা/ ২৩০৬; সনদ হাসান।

[3]. তিরমিযী হা/৩৫৯০; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬৪৮; সনদ হাসান।

[4]. আহমাদ হা/ ২১৪৮৭; ছহীহ তারগীব হা/ ৩১৬২; সনদ ছহীহ।

[5]. মুসলিম হা/২১৩৭; মিশকাত হা/২২৯৪; সনদ ছহীহ।

[6]. ছহীহ তারগীব হা/১৫৭০; সনদ হাসান।

[7]. আহমাদ হা/ ১৮৩৬২; হাকেম হা/ ১৮৪১; সনদ ছহীহ।

[8]. আহমাদ হা/ ৮০১২; হাকেম হা/১৮৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/ ১৭১৮

[9]. ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৭; হাকেম হা/১৮৮৭; ছহীহ তারগীব হা/১৫৪৯; সনদ হাসান।

[10]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫৫২৮; সিলসিলা ছহীহাহ্ হা/৩৪১৪।

[11]. মুসলিম হা/৬০১; তিরমিযী হা/৩৫৯২; সনদ ছহীহ।

[12]. নাসাঈ হা/ ৮৮৫; সনদ ছহীহ।

[13]. মুসলিম হা/৬০০; আবূদাঊদ হা/৭৬৩; সনদ ছহীহ।

[14]. বুখারী হা/৭৯৯; নাসাঈ হা/১০৬২; আবূদাউদ হা/৭৭০; মিশকাত হা/৮৭৭

[15]. বুখারী হা/ ১৪৯৬; মুসলিম হা/ ১৯; তিরমিযী হা/ ১২;

[16]. আহমাদ হা/ ৮৭৯৫; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/২৯৩৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৮২, ৩৩৮২।

[17]. আহমাদ হা/৮০৩০; তিরমিযী হা/৩৫৯৮; ইবনে মাজাহ হা/১৭৫২; ছহীহা হা/৮৭০, হাসান।

[18]. আবূদাউদ হা/৫০৯৪; নাসাঈ হা/৫৪৮৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৮৪; মিশকাত হা/২৪৪২; সনদ ছহীহ।

[19]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৮৭; সনদ ছহীহ।

[20]. ছহীহ তারগীব, হা/১৩৭৭; হাকেম হা/৬০৮৭; তাবারানী হা/৬৪১; সনদ ছহীহ।

[21]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৭৩০; ছহীহ তারগীব হা/২২৫।

[22]. ছহীহ তারগীব হা/২২৫।

[23]. আবূদাঊদ হা/৪৮৫৯; ছহীহ তারগীব হা/১৫১৭।

[24]. তিরমিযী হা/৫৫; নাসাঈ হা/১৪৮; ইবনু মাজাহ হা/৪৭০; ইবনু হিববান হা/১০৫০; বায়হাক্বী, সুনানে ছুগরা হা/১০৯, সনদ ছহীহ।

[25]. ইবনু খুযায়মাহ, কিতাবুত তাওহীদ ২/৯০৫।

[26]আহমাদ হা/২৩৫৬৮; ত্বাবারানী, দো‘আ হা/৩৩৭; ছহীহা হা/১১৪।

[27]. তিরমিযী হা/৩৫৩৪; ছহীহ তারগীব হা/; সনদ হাসান।

[28]. তিরমিযী হা/৩৫৫৩; সনদ ছহীহ।

[29]. ত্বাবারানী, দো‘আ হা/৭৯০; ছহীহা হা/৩১৩৯।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button