পরিবার ও দাম্পত্যরামাযান ও ছিয়ামসচেতনতা

শিশুদের রোজা রাখতে উৎসাহ দিন

অনেকেই আছেন পরীক্ষা, স্কুল খোলা, কষ্ট হবে, বাচ্চা মানুষ, ইত্যাদি বলে বাচ্চাদের রোজা রাখতে দেন না। ফলে বাচ্চাদের অভ্যাস তৈরি হয় না। এমনকি বড় বাচ্চারাও আজকাল রোজা রাখে না।

আমার মনে আছে, আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন দিনে দুটো রোজা রাখতাম। সকাল থেকে দুপুর, আবার দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত। রোজা না থাকলেও ইফতারের আগে কোনো কিছু মুখে দেওয়া একদম নিষেধ ছিল। ইফতারে একসাথে সবার সাথে বসে খেতে হবে। তার আগে যতই ক্ষুধা লাগুক, খাওয়া যেতো না। আব্বুকে দেখতাম ইফতার শুরু হওয়ার ১৫/২০ মিনিট আগে খাবার সামনে নিয়ে দু’আ করতো। আমরাও বসে দু’আ করতাম।

★ হুট করে কোনো বাচ্চাই সবগুলো রোজা রাখতে পারবে না। তাই একদম প্রথম রোজা, শুক্রবারের রোজা, আর শেষ রোজাটা রাখার জন্য তাদের উৎসাহ দিন। এরপরের বছর গুলোতে রোজার সংখ্যা বাড়াতে থাকুন। এভাবেই অভ্যাস হয়ে যাবে।

★যেদিন বাচ্চারা রোজা রাখবে, সেদিন তাদের প্রিয় খাবারগুলো ইফতারের মেন্যুতে রাখার চেষ্টা করুন।

★ সিয়ামের বিনিময়ে আল্লাহ্‌ তাদের কি দিবেন, সে ব্যাপারে আলোকপাত করুন। আর মাস শেষে আপনি নিজেও তার জন্য একটা সারপ্রাইজ গিফট রাখুন অথবা স্পেশাল ট্রিট দিন। রমাদানের শুরুতেই সারপ্রাইজ গিফট বা ট্রিটের কথা জানিয়ে রাখুন।

★সেদিন দেখলাম কয়েকজন মিলে বাচ্চাদের নিয়ে রমাদান এর আগমন উপলক্ষে একটা পার্টি করেছে। সেখানে বিভিন্ন ক্রাফট ওয়ার্কের মাধ্যমে বাচ্চাদের এ সম্পর্কিত ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে। বাচ্চারা হৈ হুল্লোর করে, খাওয়া দাওয়া করে, খেলতে খেলতে সিয়াম পালনের গুরুত্ব জেনে গিয়েছে। ইবাদত যে এনজয় করার ব্যাপার, এই ব্যাপারটা তারা নিজের অজান্তেই শিখে গিয়েছে।

★এ মাসে ছোট যে কোনো একটি সুরা আপনি নিজেও মুখস্থ করুন, সন্তানকেও মুখস্থ করান। কে আগে মুখস্থ করতে পারে, তার প্রতিযোগিতা করুন। যে কোনো ছোট দু’আও মুখস্থ করতে পারেন।

মুখস্থ করে ফেলার জন্য আলাদা গিফট দিন। বাচ্চাকে বুঝাতে হবে যে, গিফট দেওয়াটা লোভ দেখানোর জন্য না, এটা আসলেই তার পাওনা, কারণ সে কষ্ট করে মুখস্থ করেছে, আর আসল গিফট পরকালে আল্লাহ্‌’র কাছ থেকে পাবে।

★তারাবির নামাজ পড়ার সময় সন্তানকেও সাথে নিয়ে বসুন।

★ দান সাদাকা বেশী বেশী করুন, বাচ্চাদের সাথে নিয়ে করুন, এ ব্যাপারে বাচ্চাদের সাথে আলাপ আলোচনা করুন। ফলে তারা সেটা আপনার কাছ থেকে দেখে শিখবে।

★আগে রোজার সময় খাবার দোকানগুলো বন্ধ থাকতো। আর যেসব খোলা থাকতো সেগুলো ঢেকে ঢুকে খাবার বিক্রি করতো। অনেকের নানা সমস্যা থাকতেই পারে, তাই মানুষজন নিজেকে আড়াল করেই খেতো। কিন্তু ইদানীং রোজা না রেখে অনেকেই সবার সামনেই খাওয়াদাওয়া করে।

ফলে রোজার যে ভাবগাম্ভীর্য ব্যাপারটা আছে, সেটা থাকে না। রোজার মাসে আপনার বাচ্চাকে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে, খুব প্রয়োজন না থাকলে সবার সামনে খাওয়াবেন না। এটাও যে এক ধরনের শিষ্টাচার সেটা শিখাবেন। তার লজ্জা ভেঙে দিবেন না।

★ইফতারের কিছু আগে খাবার সামনে নিয়ে বাচ্চাদের সাথে নিয়ে বসে দূ’আ করুন। দু’আ কবুলের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কাজে লাগান, বাচ্চাদেরকেও কাজে লাগানো শেখান। রোজা রাখুক বা না রাখুক, ইফতারের আগে যেনো কেউ খাবার না খায়, সেটা শেখান।

★আগেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে কাজটা করুন। ফলে রমাদান মাসে ইবাদতের সময় বেশী পাবেন। এই ব্যাপারটা বাচ্চাদের বুঝিয়ে দিন। আশা করা যায়, বড় হতে হতে এটাও তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। ছোট বলে ভাববেন না যে তারা বুঝবে না। তারা অনেক কিছুই বুঝে। নিজেকে দিয়ে বিচার করুন। আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন কি অনেক কিছু বুঝেননি?

★ কেউ দেখুক বা না দেখুক, আল্লাহ্‌ যে সব দেখছেন, আল্লাহ্‌’র কাছে যে কিছুই লুকানো যায় না, এই ব্যাপারটা সবচেয়ে সহজে রোজার সময়েই শেখানো যায়। তাই এই সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।

রামাদান এসেছে। সবার জন্য দু’আ রইলো, যেন আমরা সবাই সুন্দর করে এই মাসের ইবাদতগুলো পালন করতে পারি এবং আল্লাহ্‌ যেনো সেসব কবুল করে নেন। আমীন।

– তাহনিয়া খান

মন্তব্য করুন

Back to top button