নতুন মা’দের রমাদান
সকল প্রশংসা আমাদের মহান রব্বের, যিনি আমাদের সৌভাগ্য দিয়েছেন আরেকটি রমাদানে প্রবেশ করার। এই বছরের রমাদান অনেকেরই কদরে জুটেনি, যারা গত রমাদানে ছিলেন। অনেকেই হয়ত অসুস্থ থাকবেন, কেউ কেউ না চাইতেও অনেক ব্যস্ত থাকবেন, কেউ থাকবেন প্রবাসে, আত্মীয়-স্বজন বিবর্জিত পরিবেশে।
তবে যারা বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ, তাদের জন্য সুসংবাদ। কেউ যখন অসুস্থ হয়ে যায় তখন তার আমলনামায় সেই আমলগুলোই লেখা হয় যা সে করতো সুস্থ অবস্থায়।
এই বছর আল্লাহতালা অনেক বোনকে মা হওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। অনেকেই দুশ্চিন্তা করছেন ছোট বাবু নিয়ে কিভাবে ইবাদত করবেন। কারো বাবু অসুস্থ, কেউ আবার নিজেই অসুস্থ। বোনেরা আমার, সবার আগে শুকরিয়া করুন আমাদের মহান রব্বের যিনি আমাদের এই বছরেও রমাদানের সৌভাগ্য দিয়েছেন। আমরা তো কবরে শুয়ে থাকা সেই বোনের মতও হতে পারতাম, যিনি ভেবেছিলেন এই রমাদানে সব গুনাহের জন্য মাফ চেয়ে নিবেন। আলহামদুলিল্লাহ,এখনো আমাদের গুনাহগুলোরর জন্য ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।
চলুন জেনে নেই ছোট বাবু নিয়ে কি ইবাদত করতে পারি আমরা।
১. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা: আমল করা কঠিন লাগছে। কিন্তু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য কি খুব বেশি এফোর্ট দিতে হবে? গীবাহ, পরচর্চা, মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকুন। টিভি, মিউজিক ইত্যাদি এই রমাদান থেকেই ছেড়ে দেই চলুন। ইউটিউব, ফেবুতে হাবিজাবি দেখা একদম বন্ধ। এভাবে নিজেকে ট্রেনিং দেই চলুন যেন রমাদান শেষ হলেও এসবে ফিরে না যাই আমরা।
২. সময়নষ্টকারী কাজ বন্ধ করা: কাজটা হারাম না, তবে প্রশংসনীয় কিছুও না। এমন সময় নষ্টকারী কাজ গুলো থেকে বেঁচে থাকবো আমরা। অতিরিক্ত ঘুমিয়ে বা নেট ব্রাউজ করে সময় অপচয় করবো না।
৩. ভালো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ : কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সব সময় ভালো আমল করার ইচ্ছা রাখুন। আজই নিয়ত করুন রমাদানে যতটা পারা যায় বেশি বেশি ইবাদত করার। ইন শা আল্লাহ এই নিয়তেই আল্লাহতালা বারাকাহ দিবেন এবং উত্তম প্রতিদান দিবেন।
৪. যিকির করা: একটা কুরআন খুলে বসতে হয়ত আপনাকে একটু সুযোগ খুঁজতে হবে, কিন্তু মুখ, জিহবা আর হৃদয় দিয়ে আল্লাহকে ডাকতে আপনার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানআল্লাহ, আল্লাহু আকবর, অস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। দুরুদ পড়ুন। জিহবাটা যিকিরে আদ্র করে রাখুন।
৫. তিলাওয়াত শোনা: মোবাইলে বা ল্যাপ্টপে আপনার প্রিয় ক্বারীর রিসাইটেশন ছেড়ে রাখতে পারেন। তিলাওয়াত শুন্তে শুনতেই ছোট ছোট সুরাহ গুলো মুখস্থ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
৬. দৈনন্দিন কাজের দুয়াগুলো পড়া: বাথরুমে ঢোকার ও বের হওয়ার, ঘরে প্রবেশ ও ঘর থেকে বের হওয়ার, ঘুমাতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার দুয়া আছে যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ দুয়াগুলো পড়ুন। যে দুয়াগুলো মুখস্থ নেই সেগুলো এই রমাদানে মুখস্থ করার এটেম্পট নিতে পারেন।
৭. প্রতিদিন আল্লাহতালা সুন্দর নামগুলোর একটি নাম ও তার অর্থ জেনে মুখস্থ করা: আল্লাহর নাম জানলে আমাদের দুয়াগুলো সুন্দর হবে। যেমন আল্লাহতালা আল মুজিব, যিনি দুয়ার উত্তর দেন। আপনি নাম আর অর্থটা শিখে নিলে দুয়ার সময় বলবেন,” ইয়া আল্লাহ, আপনি তো আল মুজিব, দুয়ার উত্তরদাতা। আমি জানি আপনি আমার দুয়ারও উত্তর দিবেন। আমার কাজ সহজ করে দিন মালিক।” – দুয়াটা সুন্দর শোনাচ্ছে না? দুয়া কবুলের জন্য একটা আদব হল আল্লাহর সুন্দর নামগুলো দিয়ে তাঁকে ডাকা।
৮. প্রতিদিন কুরআনের একটি আয়াত মুখস্থ করা: সুরাহ মূলকে ত্রিশটি আয়াত আছে। ত্রিশ দিনে ত্রিশটি আয়াত মুখস্ত হয়ে গেলে কি দারুণ হবে ভাবুন তো! রাতে ঘুমানোর আগে মূলক পড়ে ঘুমালে সে রাতেই যদি মৃত্যু হয় তবে এই সূরাহ কবরে ডানা বিছিয়ে ছায়া দিবে। রমাদানে সূরাহটা মুখস্থ করতে পারলে এরপর থেকে রাতে ঘুমানোর আগে কুরআন দেখে আর পড়তে হবেনা। মুখস্থই তিলাওয়াত করতে পারবেন।
এছাড়া সুরাহ কাহাফের প্রথম ও শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করতে পারেন প্রথম ২০ দিনে, আর শেষ দশ দিনে ছোট একটা সুরাহ। সুরাহ কাহাফের এ আয়াত গুলো মুখস্থ থাকলে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ।
ছোট বাচ্চা নিয়ে কিভাবে মুখস্থ করবো?
ফজরের পরে একবার বসবেন কুরআনটা নিয়ে। আয়াতটা আওড়াবেন বারবার। জোহরের পর আর ইশার পরেও বারবার আওড়াবেন। কুরআনটা হাতের কাছেই রাখবেন। একদিনে কয়েকবার একটা মাত্র আয়াত রিডিং পড়লে একসময় মুখস্থ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। যেদিন যে আয়াত পর্যন্ত পড়বেন, সেদিন প্রতি ওয়াক্তের সলাতে বারবার সেই আয়াতগুলো পড়বেন। আর রাতে ঘুমের সময় এবং দিনে কাজ করার সময় মোবাইলে সুরাহটা ছেড়ে রাখবেন।
৯. ওজু অবস্থায় থাকা ও মিসওয়াক করা: পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অংগ। আল্লাহতালা পবিত্রতা পছন্দ করেন আর শায়তান পছন্দ করে অবিত্রতা। সর্বদা ওজু অবস্থায় থাকুন। মিসওয়াক হলো স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের সবচে সহজ উপায়। মিসওয়াক করুন।
১০. দুয়া করুন এবং দুয়া করুন: দুয়া ইবাদত। দুয়া মুমিনের অস্ত্র। সিয়ামরত ব্যক্তির দুয়া কবুল হয়। দুয়া করুন নিজের জন্য এবং সবার জন্য এবং অবশ্যই অবশ্যই এই অধমকে আপনার দুয়ায় রাখতে ভুলবেন না। দুয়া মিরাকেল ঘটাতে পারে। কুরআনে খুব সুন্দর সুন্দর দুয়া আছে, বাবা-মা, স্বামী-সন্তান, মুমিনদের জন্য। দুয়াগুলো মুখস্থ করুন অথবা দেখে দেখি পড়ুন। রব্বানা দুয়া ফ্রম কুরআন লিখে সার্চ দিলেও পাবেন দুয়াগুলো। তবে অথেনটিক কিনা এবং অর্থটা আপনার পরিস্থিতির উপযুক্ত কিনা যাচাই করে নিন।
এছাড়াও প্রতিদিন একটা হাদিস পড়া যেতে পারে, বাচ্চাকে কোলে নিয়েই নফল সলাত আদায় করা যেতে পারে, বাচ্চাকে কুরআন রিসাইট করে করে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করা যেতে পারে। প্রতিটি আমল বাচ্চার সামনে করার চেষ্টা করুন যেন বাচ্চাদেরও এগুলোর অভ্যাস হয়ে যায়।
একেকজনের পরিস্থিতি একেকরকম। কারো আশেপাশে অনেক সাপোর্ট। কেউ কেউ একদম একা। আমাদের কাউকেই তার সাধ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছেনা। আপনার সাধ্য অনুযায়ী আমল করুন। কেউ কেউ উপরে বলা আমল গুলোর চেয়েও অনেক কিছু বাড়তি ইবাদত করতে পারবে। আবার কেউ কেউ হয়ত এক/দুইটা করতেই হিমশিম খাবে। অন্যের সাথে তুলনা করে নিজেকে কষ্ট দিবেন না বোন। আল্লাহ আপনার পরিস্থিতি জানেন। ভালো কাজ করার তীব্র যে ইচ্ছা অন্তরে আপনি পোষণ করছেন তা অন্তরের মালিক সবচেয়ে ভালো ভাবে জানেন। কে জানে এই নিয়তের জন্যেই হয়ত আপনার আমলনামা নেকী দিয়ে ভারী হতে থাকবে।
– নূরুন আলা নূর