স্বাস্থ্য তথ্য

পাস্তুরিত কাঁচা দুধে ভয়ঙ্কর বিপদ

বাজারে পাওয়া ৭৫ শতাংশের বেশি পাস্তুরিত (প্যাকেটজাত তরুল) দুধে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পাস্তুরাইজেশন করাই হয়ে থাকে দুধকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে যেন গরম করা ছাড়াই পান করা যায়। আইসিডিডিআরবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ গরুর দুধ সংগ্রহ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে দোকানে সাজানো পাস্তুরিত দুধের প্যাকেট পরীক্ষা করে কয়েক প্রকার ব্যাকটেরিয়া পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা পাস্তুরিত দুধে বাংলাদেশের বিএসটিআই অথবা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পাস্তুরিত দুধ কাঁচা পান করলেই কেবল বিপদের কারণ হবে। উত্তমরূপে সিদ্ধ করে পান করলে এসব ব্যাকটেরিয়া শরীরের কোনো ক্ষতি করবে না।

গবেষণাটি ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজিতে গত এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০১২ থেকে ২০১৩ সময়ের মধ্যে।

বগুড়া, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রংপুর, সিরাজগঞ্জের ১৮টি উপজেলা থেকে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা ৪৩৮ সি নমুনা সংগ্রহ করেন দুধ উৎপাদনকারী, সংগ্রহ করে রাখার স্থান (কালেকশন পয়েন্ট) ও ঠাণ্ডা করার কারখানা (চিলিং প্ল্যান্ট), স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে এবং অপর ৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করেন ঢাকা ও বগুড়ায় বিক্রির জন্য দোকানো সাজানো বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধ থেকে।

মাইক্রোবায়োলজিস্টরা দুধের উৎপাদনকারী পর্যায় থেকে প্রাপ্ত দুধে ৭২ শতাংশ কলিফরম ও ৫৭ শতাংশ ফিকাল কলিফরম (ব্যাকটেরিয়া) পেয়েছেন এবং এসব নমুনায় ১১ শতাংশ ইকোলি ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। তারা বলছেন, সব ধরনের কালেকশন পয়েন্ট থেকে সংগৃহীত নমনায় অতি উচ্চ মাত্রার কলিফরম পাওয়া গেছে। কালেকশান পয়েন্টের ৯১ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে গোবরের অণু এবং এখান থেকে প্রাপ্ত ৪০ শতাংশের বেশি নমুনায় পাওয়া গেছে ইকোলি।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, ঠাণ্ডা করার প্ল্যান্টে কালেকশন পয়েন্টের চেয়ে বেশি ব্যাকটিরিয়া পাওয়া গেছে। উত্তরাঞ্চলের মোট ১৫টি ঠাণ্ডা করার প্ল্যান্ট থেকে দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে বেশি পরিমাণে কোলি ফর্ম, ফিকাল কোলিফরম পাওয়া গেছে। সব ঠাণ্ডা করা প্ল্যান্টেই ইকোলি পাওয়া গেছে, ৬৭ শতাংশ প্ল্যান্টে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। ঠাণ্ডা প্ল্যান্টে আরো পাওয়া গেছে স্টেফাইলোকক্কাসও নামক ব্যাকটেরিয়া। তবে এসব ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ছিল নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে।

মাইক্রোবায়োলস্টিরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায় থেকে প্যাকেট করে বিক্রির পর্যায় পর্যন্ত ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়েছে।

আইসিডিডিআরবির ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের প্রধান এবং এ গবেষণার প্রধান ইনভেস্টিগেটর ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্যাকেটজাত এসব দুধ সিদ্ধ করা ছাড়া পান করা উচিত নয়। তবে ইউএইচটি মিল্কের প্যাকেটে কোনো ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ইউএইচটি গরম করা ছাড়া পান করা যেতে পারে।’ ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, এই গবেষণায় আমরা কেবল জীবাণুর উপস্থিতি দেখেছি। কোনো রাসায়নিক উপস্থিতির পরীক্ষা কিংবা ভেজাল আছে কি না তা জানার চেষ্টা করা হয়নি।’

গবেষণাটি করা হয়েছে কেয়ার বাংলাদেশের ‘স্ট্রেংদেনিং দ্য ডেইরি ভ্যালু চেইন’ প্রজেক্টের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সরকার, সুইডিশ সিডা, ইউকেএআইডি, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সমর্থনে।

মন্তব্য করুন

Back to top button