সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

পৃথিবী নামক গ্রহটিকে প্রাকৃতিকভাবে চলতে দিন!

বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ফসিল জ্বালানি ব্যবহারের কারণে তথাকথিত উন্নয়ন ও শিল্পায়নের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের ছোবলে দেশে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয় যখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই বিশ্বের উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদরা টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা মেলে ধরতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই আমাদের এই সবুজ গ্রহের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে গত ১০ হাযার বছরে বিশ্বের ইকোলজির যত ক্ষতি হয়েছে, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে গত দেড়শ বছরে ধরিত্রীর ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে বহুগুণ বেশী হয়েছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তির সংগ্রামকে কর্পোরেট মুনাফাবাজ ও দলবাজদের হাতে ছেড়ে দিয়ে বিশ্বের জন্য এই বিপর্যয়কে আরও ত্বরান্বিত ও অনিবার্য করে তোলা হয়েছে।

জাতিসংঘসহ বিশ্বসংস্থাগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বড় বড় সম্মেলন করলেও আমাদের মতো দেশের অস্তিত্বের সাথে জড়িত দেশের নদী সমূহের প্রবাহ ঠিক রেখে কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর ফারাক্কা বাঁধ, গজলডোবা বাঁধ, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এযাবৎ কাউকে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। যেগুলি বাংলাদেশকে তিলে তিলে ঊষর মরুভূমিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। যদি দেশই না বাঁচে, তাহ’লে তথাকথিত মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কি লাভ? গত দুই দশকে সুন্দরবনের আশপাশে শত শত ভারী শিল্পের অনুমোদন দিয়ে, সুন্দরবনের স্পর্শকাতর এলাকায় বাণিজ্যিক নৌ চ্যানেল চালু রেখে এবং কোটি মানুষের প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের উদ্বেগ-আশঙ্কা অগ্রাহ্য করে সুন্দরবন সংলগ্ন রামপালে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ধনুর্ভঙ্গ পণ করে সরকার জনগণের কাছে কী বার্তা দিচ্ছে? এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, সরকার জনস্বার্থেই এটা করতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, বিদ্যুতের অনেক বিকল্প থাকলেও বাংলাদেশের জন্য সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের যেসব ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে তা পরিস্ফুট হ’তে হয়ত কয়েক দশক সময় লাগবে। তার আগে কোটি কোটি টন কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতে বাংলাদেশে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি হয়ত আরো বেগবান হবে। কিন্তু বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার মতো সুন্দরবন নৌ চ্যানেল মারাত্মক দূষণের শিকার হওয়ার পর একদিন যখন সুন্দরবনের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে, তখন আজকের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষ-বিপক্ষদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিগত দিনে ভারত ও বাংলাদেশের নেতারা ফারাক্কা বাঁধ সৃষ্টি ও চালু করে উভয় দেশের সর্বনাশ করে গেছেন। আজও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রূপপুর পারমাণবিক চুল্লী নির্মাণ প্রকল্প আগামী দিনে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ধ্বংসের কারণ হবে। তখন আজকের নেতারা কেউই থাকবেন না। কিন্তু তারা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন চিরদিন। অতএব ঝুঁকি নিয়ে হ’লেও দূরদর্শিতার সাথে দেশের কল্যাণে কাজ করুন। পরবর্তী বংশধরদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আল্লাহর সৃষ্টি এই সুন্দর পৃথিবীটিকে প্রাকৃতিক নিয়মে চলতে দিন। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীবের প্রতি সবচাইতে বেশী দয়ালু। তিনি আমাদের সহায় হৌন- আমীন!

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button