মদীনার আনসারদের পরিচয়
আরবী ‘আল-আনসার’ শব্দটি বহুবচন। একবচনে ‘নাসের’ অর্থঃ সাহায্যকারী। রাসূলুল্লাহর সা. মক্কা হতে মদীনায় হিজরাতের পর সেখানকার যে সকল মুসলমান তাঁকে খোশ আমদেদ জানান ও সাহায্য করেন, তাঁদেরকে বলা হয় ‘আনসার’। মূলতঃ তাঁরা ছিলেন মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্রের জনগণ।
প্রাচীনকালের আরবের অধিবাসীদের তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ ১. আল-’আরাব আল-বায়িদা, ২. আল-’আরাব আল-’আরিবা, ৩. আল-’আরাব আল-মুসতা’রাবা। হযরত নূহের আ. প্লাবনের পর যেসব গোত্র আরবে শাসন কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং শেষে বিলীন হয়ে যায়, তাঁদের বলা হয় ‘বায়িদা’। ’আদ, সামুদ, ’আমালিকা, ত্বাসাম, জাদীস প্রভৃতি জাতি এর অন্তর্ভুক্ত। আর বায়িদার সমসাময়িক অন্যসব গোত্র, যারা তাদের পরে আরবের কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের বলা হয় ’আরিবা। কাহত্বান, সাবা, হিমইয়ার, মুঈন প্রভৃতি তাদেরই শাখাসমূহ। আর মুসতা’রাবা বলা হয় ঐ সব গোত্রকে যারা ছিল নবী হযরত ইসমা’ঈলের আ. বংশধর এবং মূলতঃ তারা ছিল আরবের উত্তর অঞ্চলের অধিবাসী।
মদীনার আনসারদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা এই যে, তারা আল-আরাব আল-’আরেবার বংশধর। এরই ভিত্তিতে আরবের নসববিদগণ তাদের নসবনামা কাহ্ত্বান ইবন ’আবের পর্যন্ত পৌঁছিয়ে থাকেন, যিনি আল-আরাব ’আরিবার উত্তরাধিকারী। তবে কাহত্বান থেকে নসববিদগণ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যান। একদল বলেন, কাহ্ত্বান নিজেই এক স্বতন্ত্র খান্দানের প্রতিষ্ঠাতা। পক্ষান্তরে অন্যদল তাঁকে পৃথক কোন শাখা খান্দান মনে করেন না। তাঁরা কাহ্ত্বানকে নাবিত ইবন ইসমা’ঈলের সন্তান বলে মনে করেন। কালবী ও কতিপয় ইয়ামনবাসী এ মৃত পোষণ করেছেন। তাঁরা হযরত ইসমা’ঈলকে আ. সমগ্র আরবের পিতৃ-পুরুষ বলে মনে করেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৭) তবে মাস’উদী বলেন, ইয়ামনবাসীরা যে কাহত্বানকে নাবিতের সন্তান মনে করে, একথা ঠিক নয়। বরং তারা কাহত্বানকে ’আবিরের সন্তান বলে থাকে। (কিতাবুত তানবীহ ওয়াল-আশরাফ-৮১)
যাই হোক, কাহ্ত্বান একটি স্বতন্ত্র খান্দান এবং একটি স্বতন্ত্র রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা। ইয়ামনে তাদের বংশধরগণ বহুকাল ক্ষমতার অধিকারী ছিল।
আরব ঐতিহাসিকরা আনসারদেরকে কাহত্বানের বংশধর বলে মনে করেন। এ কারণে তারা আনসারদের ইতিহাস কাহত্বানের সময় থেকে শুরু করেন। এই বংশে ’আবদি শামস নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁরা উপাধি ছিল ‘সাবা’। তাঁকেই ইয়ামনের ‘সাবা’ রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। হিমইয়ার ও কাহ্লান নামে তাঁর দুই ছেলে ছিল। মৃত্যুর পূর্বে তিনি দুই ছেলে, রাজবংশের সদস্যবৃন্দ ও রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ডেকে অসীয়াত করে যান যে, ‘আমার বড় ছেলে হিমইয়ারকে রাজ্যের ডান ভাগ এবং ছোট ছেলে কাহ্লানকে বাম ভাগ দেবে।’ যেহেতু ডান হাতের জন্য তরবারি, চাবুক, কলম এবং বাম হাতের জন্য লাগাম, ঢাল ইত্যাদির প্রয়োজন। এজন্য সবাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, হিমইয়ার রাজা হবেন এবং রাজ্যের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন কাহ্লান। এভাবে হিমাইয়ার রাজা হলেন। তারপর বংশ পরম্পরায় তারা সিংহাসনে অধিকারী হলেন। এবং কাহ্লানের বংশধরগণ রাজ্যের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে চললেন।
রাজা আল-হারেস আর-রায়িশ-এর সময় ’আমর আল-মুযাইকিয়া এই একই দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এই আমরের স্ত্রী তুরাইফা বিন্তু জাবর ছিল একজন ‘কাহেনা’ বা ভবিষ্যদ্বক্তা। এক রাতে সে স্বপ্ন দেখে যে, একটি ঘন, কালো মেঘ গোটা ইয়ামনকে ঘিরে ফেলেছে। বিদ্যুতের ঝলকানি এবং বজ্রপাতের দুর্বিসহ গর্জনে চারিদিক প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। যেখানেই বজ্রপাত হচ্ছে, তা ধ্বংস্তূপে পরিণত হচ্ছে। সে ভীত-শংকিত অবস্থায় ঘুম থেকে উঠে আমরের কাছে স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বলে, এখন আর কোন উপায় নেই। আমর জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাদের করণীয় কি? সে বললোঃ খুব তাড়াতাড়ি ইয়ামন ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।
’আমর ছিলেন প্রচুর ধন-দৌলত, জীব-জন্তু ইত্যাদির অধিকারী। ইচ্ছা করলেই হঠাৎ কোথাও চলে যেতে পারেন না। তাছাড়া মানুষকে কী বলে যাবেন? এ জন্য এক বুদ্ধি আঁটলেন। বড় ছেলে সা’লাবাকে বললেন, আমি তোমাকে মানুষের সামনে একটা কাজের নির্দেশ দেব, আর তুমি তা পালন না করার ভান করবে। আমি ধমক দিলে তুমি আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেবে। সা’লাবাকে বললেন, আমি তোমাকে মানুষের সামনে একটা কাজের নির্দেশ দেব, আর তুমি তা পালন না করার ভান করবে। আমি ধমক দিলে তুমি আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেবে। সা’লাবা বললো, এমন কাজ আমার দ্বারা কেমন করে সম্ভব? ’আমর বললেন, ‘কল্যাণ এতেই রয়েছে।’ পরিকল্পনা অনুযায়ী ’আমর নেতৃস্থানীয় লোকদের খাবারের দা’ওয়াত দিলেন। সবাই উপস্থিত হলে তিনি সা’লাবাকে একটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং সে তা পালনে অস্বীকৃতি জানালো। ’আমর তাকে মারার জন্য নিযা হাতে উঠিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে সা’লাবা পিতার গালে জোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ’আমর বলে উঠলেন, ‘এমন অপমান!’ সা’লাবার ভাই তাকে মারার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। ’আমর তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ছেড়ে দাও, আমি আমার বিষয়-সম্পত্তি বিক্রী করে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছি। এ ধৃষ্টতার জন্য আমি তাকে এক কপর্দকও দেবনা। এভাবে ’আমর তাঁর বিষয়-সম্পদ উচ্চমূল্যে বিক্রী করে নিজের পরিবার-পরিজনসহ ইযামন থেকে বেরিয়ে পড়েন। এরপর ’আরাম বাঁধ ভেঙ্গে গোটা ইয়ামন তলিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
’আমর ‘মারিব’ থেকে বের হয়ে প্রথমে আক্কায় আশ্রয় নেন এবং তাঁর তিন ছেলে- হারেস, মালিক ও হারেসাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলেন। তারা ফিরে আসার পূর্বেই ’আমর মারা যান এবং তার বড় ছেলে ‘সা’লাবাতুল ’আনকা’ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। পরবর্তীকালে তারা এ আক্কা থেকেও হিজরাত করে এবং আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং হিজাযের মক্কায় খুযা’য়া, শামে গাস্সান এবং ইয়াসরিবে (মদীনা) আউস ও খাযরাজ বসতি স্থাপন করে। এভাবে ‘সাবায়ে উলা’ বা প্রথম সাবা রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। আর তখন থেকেই আরবী প্রবাদ ‘তাফাররাকূ আইদী সাবা’- সাবাদের ক্ষমতার মত বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে- প্রচলিত হয়।
কেউ কেউ এটাকে একটা বানোয়াট কাহিনী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আবার অনেকে আনসারদেরকে নাবিতের বংশধর বলেছেন। তারা মনে করেন, নাবিতের সময় থেকে আনসারদের ইতিহাসের সূচনা। তাহলে আনসাররা ’আল-আরাব আল-মুস্তা’রাবার অন্তর্ভুক্ত হবেন।
আরবীতে নাবিত, হিব্রুতে নায়াবুত। তাওরাতে তাঁকে হযরত ইসমা’ঈলের আ. সন্তানদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে হযরত ইসমা’ঈলের আ. জ্যেষ্ঠ পুত্র বলা হয়েছে। আরব ঐতিহাসিকরা খুব সংক্ষেপে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন। তাবারী বলেছেনঃ আল্লাহ নাবিত ও কাইদার-এর দ্বারা আরবদের বংশবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। (তাবারী- ১/৩৫২) ইবন হিশাম তাঁর সীরাতে লিখেছেনঃ হযরত ইসমা’ঈলের আ. পরে কা’বার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব তাঁর ছেলে নাবিতের হাতে পৌঁছে।’ (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৬৩) এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় নাবিত মক্কার অধিবাসী ছিলেন এবং হযরত ইবরাহীম ও হযরত ইসমা’ঈল নির্মিত কা’বা ঘরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। এছাড়া তাঁর সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না।
মক্কা ছিল শুষ্ক পাহাড়ী ভূমি। এ কারণে নাবিতের মৃত্যুর পর তাঁর নিজের ও তাঁর ভাইদের সন্তানরা আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। নাবিতের সন্তানরা আরবের উত্তর-পশ্চিম অংশে আবাসন গড়ে তোলে। তবে কাইদার-এর সন্তানরা তখনও মক্কায় থেকে যায়। পরবর্তীকালে মুদাদ বিন হামী মক্কার কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নিলে তারা মক্কা ছেড়ে কাজেমা, গুমার জীকুন্দাহ, শা’ছামীম প্রভৃতি অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, নাবিতের সন্তানরা হিজাযের উত্তর এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল। এখানে তারা হযরত ’ঈসার জন্মের চার শো বছর পূর্বে ‘আনবাত’ নামে একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে এই নাবাতী সাম্রাজ্য খুবই প্রতাপশালী হয় এবং উত্তর আরব থেকে সাবা সাম্রাজ্যের মূলোৎপাটন করে। খ্রীঃ পূঃ ৬২ সনে হারেস সিংহাসন লাভ করেন। তিনি এ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় প্রতাপশালী বাদশাহ ছিলেন। মোটকথা, খ্রীস্টীয় দ্বিতীয় শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এই নাবাতীরা অত্যন্ত প্রতাপের সাথে রাজত্ব করেন।
এই আনবাতের বংশধরদের অন্য একটি শাখা আছে। তারা কোন এক অজ্ঞাত যুগে ইয়ামনে বসতি স্থাপন করে। তারা আয্দ অথবা আসাদ গোত্র। তারা নাবিত ইবন মালিকের বংশধর। সম্ভবতঃ ইসমা’ঈলীদের ইয়ামনে বসতি স্থাপনের সময় বা তার পরে এই লোকেরা সেখানে যায়। তারা মা’রিব-এ বসবাস করতো। কালক্রমে তাদের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অভাব ও অন্যসব অসুবিধার কারণে তারা মা’রিব ছাড়তে বাধ্য হয়। যখন তারা মা’রিব ত্যাগ করে তখন তাদের নেতা ছিলেন ’আমর ইবন ’আমের। তিনি ইতিহাসে ‘মুয়াইকিয়া’ নামে খ্যাত। মূলত তিনিই গোটা আনসার সম্প্রদায় ও গাস্সানীদের আদিপুরুষ। আনসারদের ইতিহাস তাঁর সময় থেকেই পরিষ্কারভাবে জানা যায়।
’আমর প্রথমতঃ মালিক ইবন ইয়ামন ও আয্দ গোত্রকে সংগে করে মা’রিব থেকে বের হন। আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু যুগ ধরে তাঁর বংশধরগণ বসবাস করতে থাকে। ইতিহাসের এক পর্যায়ে এই ’আমরের অধস্তন পুরুষরা ইয়াসরিব ও তার আশে-পাশে বসতি স্থাপন করে। তারাই মদীনার বিখ্যাত আউস ও খাযরাজ গোত্রের পূর্বপুরুষ।
আনসারদের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে যত কথাই প্রচলিত থাক না কেন, প্রকৃতপক্ষে মদীনার আনসারদের সবগুলি গোত্র আউস ও খাযরাজ নামের দু’ব্যক্তি থেকে উৎসারিত। তাদের পিতার নাম হারেসা এবং মাতার নাম কাইলা বিনতু ’আমর ইবন জাফনা। ’আদী নামে তাঁদের আর এক ভাই ছিলেন, তাঁর বংশধরগণও মদীনায় বিদ্যমান ছিল। খাযরাজ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে আউস সম্পর্কে এতটুকু জানা যায় যে, তিনি একজন খতীব (বক্তা) ও শা’য়িব (কবি) ছিলেন। তাঁর নামে বর্ণিত কিছু জ্ঞানগর্ভ কথা সংরক্ষিত আছে। এই আউস, খাযরাজ ও ’আদীর বংশধরগণ ইয়াসরিবে বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন উপগোত্রে বিভক্ত হয়। যথাঃ
’আদীঃ তাঁর নামে পৃথক কোন শাখা গোত্র নেই। অনেকের ধারণা তাঁর সন্তানরা আউস ও খাযরাজের সাথে মিলে এক হয়ে গেছে। কারণ, আরবে ভাতিজারা চাচার খ্যাতির কারণে তাঁর সন্তান রূপে প্রসিদ্ধি পায়। (উসুদুল গাবা- ৫/২০৪)
আউসঃ মালিক নামে তাঁর ছিল এক ছেলে। আর এই মালিকের ছিল পাঁচ ছেলে, যারা প্রত্যেকেই পৃথক শাখা গোত্রের উর্ধতন পুরুষ। যথাঃ ’আমর ইবন মালিক, ’আওফ ইবন মালিক, মুররা ইবন মালিক, ইমরাউল কায়েস ইবন মালিক ও জাশাম ইবন মালিক।
খাযরাজঃ খাযরাজের ছিল পাঁচ ছেলেঃ ’আমর আওফ, জাশাম, কা’ব ও হারেস। রাসূলুল্লাহর সা. দাদা আবদুল মুত্তালিবের মাতুল গোত্র বনু নাজ্জারের সকল শাখাই ছিল ’আমর ইবন খাযরাজের বংশধর।
আনসারদের পূর্ব-পুরুষের মদীনায় আগমণের পূর্বেই সেখানে ইহুদীরা বসতি স্থাপন করেছিল। অনেকের মতে তারা হযরত সুলাইমানের আ. সময়ে, আবার অনেকের মতে বখ্তে নাসরের বায়তুল মাকদাস ধ্বংসের পরে তারা আরবে আসে এবং ইয়াসরিব ও তার আশে-পাশের এলাকায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে আউস ও খাযরাজের পূর্বপুরুষরা এসে দুর্গ ও বাড়ীঘর তৈরী করে বসবাস শুরু করে। তারা ইহুদীদের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করে; কিন্তু কালক্রমে তাদের সংখ্যা বেড়ে গেলে ইহুদীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয় এবং পরে তা শত্রুতায় পরিণত হয়।
আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা প্রথমে ইয়াসরিবের একই এলাকায় বসবাস করতো। পরে ইহুদীদের শক্তি কিছুটা খর্ব হলে তারা সেখানকার গোটা নিচু ও উঁচু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে পৃথক বসতি অঞ্চল গড়ে তোলে।
আউস ও খাযরাজ গোত্র দু’টি দীর্ঘকাল পরস্পর মিলেমিশে বসবাস করে। কিন্তু এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয় এবং তারা একের পর এক ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইসলামের আবির্ভাব না হলে তারা হয়তো পৃথিবী হতে বিলীন হয়ে যেত। ‘খুলাসাতুল ওয়াফা’ গ্রন্থের লেখক বলেনঃ ‘অতঃপর তাদের মধ্যে এত বেশী যুদ্ধ সংঘটিত হয় যে, অন্য কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে তার চেয়ে বেশী ও দীর্ঘ যুদ্ধের কথা আর শোনা যায় না।’ ‘সামীর’ যুদ্ধ থেকে শুরু ‘বুয়াস’ যুদ্ধে তার পরিসমাপ্তি। ‘বুয়াস’ যুদ্ধটি হয় রাসূলুল্লাহর সা. মদীনায় হিজরাতের পাঁচ বছর পূর্বে। এই দুই যুদ্ধের মাঝখানে কত যুদ্ধ যে হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। ইতিহাসে শুধু বড় যুদ্ধগুলির কথা বর্ণিত হয়েছে। (আল কামিল ফিত তারীখ-১/৫০৩)