ক্বারী ওবায়দুল্লাহ (রহ:)

ক্বারী ওবায়দুল্লাহ রহ. (ইন্তেকাল: ২০শে ডিসেম্বর ২০১৬; ৭৩ বছর) বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শ্রেষ্ঠ ক্বারী ছিলেন এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন উঁচু মাপের মুত্তাকী এবং মুখলিস মানুষ ছিলেন সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না।
আমি তখন মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষক। শিক্ষাবর্ষের সমাপনী দারস অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রীত মেহমান হিসেবে এলেন। তাঁকে বিদায় দেওয়ার পর প্রিন্সিপাল মাওলানা সালমান নদভী বললেন- ক্বারী সাহেবকে দারুর রাশাদের দুর্দিনে একবার এক সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেছি। বিদায়ের সময় আমার দেওয়া সম্মানীর খামটা ফেরত দিয়ে উল্টা বরং নিজের পকেট থেকে (সেই আমলের) চকচকে ৫০০ টাকার একটা নোট বের করে দিলেন মাদরাসার জন্য। বললেন-এই নোটটা বাংলাদেশ বেতারে তিলাওয়াত রেকর্ড করতে গিয়ে একটু আগে পেয়েছি।
স্বাধারণত: ক্বারী সাহেবরা একটু সৌখিন প্রকৃতির হয়ে থাকেন। মানুষের নগদ বাহবায় এক ধরণের আত্মতৃপ্তি দেখা যায় তাঁদের চোখেমুখে। ক্বারী উবায়দুল্লাহ (রহ:)-এর তিলাওয়াতের সময় এবং তার আগে পরের ভিডিওগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন এসব থেকে তিনি কতো দুরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এবং প্রেসিডেন্ট জিয়ার খুবই পছন্দের লোক ছিলেন। তাঁরা কখনো তাঁকে ডেকে পাঠাতেন, কখনো নিজেরা ছুটে যেতেন চক বাজার শাহী মসজিদে। কিন্তু কখনো তাদের কাছ থেকে দুনিয়া হাসিলের চেষ্টা করেননি। উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাড়িটিও এক সময় দখল করে নেয় প্রভাবশালী মহল। আজীবন সাধারণ একজন দরিদ্র মানুষের মতোই কাটিয়েছেন তিনি। কামরাঙ্গীর চরের যে বাসায় জীবনের শেষ সময়গুলো কাটিয়েছেন, তার ভেতরের দৃশ্য দেখে অনেকেই কেঁদেছেন। তাঁর সাদাসিধে জিন্দেগী দেখে অনেকেই আপ্লুত হয়েছেন। একাধিকবার আমি তাঁর চিকিৎসার জন্য সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। জানতে পারলাম, তাঁর জন্য কেউ সহায়তা ফান্ড সংগ্রহ করুক এটা তিনি অপছন্দ করেন। অনেকের সহায়তা ফেরৎ দিয়েছেন।
তিনি ১৯৬২ সাল থেকে দীর্ঘ ৪৮ বছর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্তর ও আশির দশকে মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চারজন কারির মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, মিসরের কায়রোসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত কেরাত প্রতিযোগিতায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
আজ যোগ্য আলেমের যতো অভাব, তারচে অনেক বেশি অভাব নীতিবান, মুখলিস ও মুত্তাকী আলেমের; যাঁর মধ্যে আত্মপ্রচারণা এবং সম্পদ সঞ্চয়ের মোহ নেই। যিনি উম্মাতের ইসলাহের জন্য দরদ রাখেন, কাঁদেন, দু’আ করেন এবং রাত জেগে আল্লাহর কাছে মিনতি করেন।
হে মালিক, যাঁর মধুমাখা তিলাওয়াত আর হ্রদয় গলানো আযানের ধ্বনিতে সিক্ত হতো কোটি অন্তর, আপনি তাঁকে আপন রহমতের চাদরে ঢেকে নিন। আমাদেরকে তাঁর মতো মুখলিস ও মুত্তাকী হওয়ার তাউফীক দান করুন।
লেখক: আহমাদ উল্লাহ
(বর্ধিত)