আব্দুল সাত্তার ইদি
কতো শত রূপকথার গল্প শুনে এসেছি, কল্পনার রাজ্যে হাতড়ে বেরিয়েছি কতো শত চরিত্র। একটু বড় হতে গিয়েই ভাবতাম ইস! আদৌ কি এমন কোন চরিত্র বা গল্পের অস্তিত্ব থাকতে পারে?! ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি এক রূপকথার জগতেই আমরা বাস করতাম, আমাদের আশেপাশেই এমন কিছু চরিত্রের আনাগোনা ছিলো যাদের কেবল চিনে রাখতে পারলেই হয়তো এই ক্ষুদ্র জীবনের ছোট্ট এক আফসোস নিমিষেই মিলিয়ে যেতো।
“যে আত্মশুদ্ধির জন্য নিজের ধন সম্পদ দান করে। তার উপর অন্য কারো কোনো প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না, কেবল তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতিত। সে সত্বরই সন্তুষ্টি লাভ করবে” (সুরা আল-লাইল ১৮- ২১)
আব্দুল সাত্তার ইদি; মানবতার চূড়ান্ত সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী এক ব্যক্তি। উপরে উল্লেখিত আয়াত বুঝি এদের তরেই খেটে যায়। ‘৪৭ এ দেশ ভাগের পর ভারত হতে ইসলামিক রাষ্ট্রে সামাজিক কাজ করার উদ্দ্যেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এরপর পাকিস্তানের তৎকালিন কার্যকলাপ তাকে মারাত্মক ব্যাধিত করেছিলো। ‘৬৫ তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিজ চোখে অবলোকন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর জীবন মানবতা এবং ধর্মের জন্যই ওয়াকফ করে দেবেন। আর এভাবেই শুরু…..
একে একে এতিমখানা, হাসপাতাল, মসজিদ, বাচ্চা-পালন প্রতিষ্ঠান, বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ, দেশের সবচেয়ে বড় এম্বুলেন্স সার্ভিস, মর্গ, লাশ পরিবহন সহ হাজারো অনাথকে অন্য দান করার মতো কার্যক্রম খুলে বসলেন স্ত্রী বিলকিস ইদিকে নিয়ে!
ধর্মীয় কুসংস্কার এর আরেক আস্তাকুড় হলো পাকিস্তান। অনৈতিক মিলনের ফলে আগত সন্তানদের তারা পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতো। আব্দুল সাত্তার এসকল শিশুদের রক্ষনাবেক্ষন করতেন। এক সারনীতে দেখা যায় তিনি প্রায় ৩৫০০০ বিবাহবহির্ভূত আগত শিশুদের রক্ষনাবেক্ষন করেছিলেন। ইদি ফাউন্ডেশনের ১৫০০ এম্বুলেন্স সার্ভিস গিনেজ বুক রেকর্ড লিস্টেও স্থান করে নিয়েছে।
কোনোদিন স্কুলের গন্ডি না পেরুলেও ২০০৬ সালে করাচির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে তাকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ও তাকে ডিলিট দেয়। ১৯৮৭ সালে র্যামন ম্যাগসাস পুরষ্কারেও তিনি ভুষিত হন।
গোটা জীবন মানুষের জন্য করতে গিয়ে বিভিন্ন বৈরী পরিবেশে কাজ করতে হয়েছে তাকে। কখনও পচা লাশের মাঝে আবার কখনও বোমা হামলার মাঝে ক্ষতিকারক গ্যাস মুখোমুখি করে নিরাপরাধ মানুষকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই মূলত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। গত শুক্রবার পাকিস্তানে নিজ শহরে মারা যান এই মহান ব্যক্তিত্ব। মিডিয়া এবং গনমাধ্যম থেকে আড়াল হয়ে আর কেউ এভাবে কাজ করে নি।
আল্লাহ তাকে জান্নাতে উচু মাকাম দান করুন।