সূরা কাফিরুনের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
আব্দুল্লাহ শাহেদ
সরল বঙ্গাবনুবাদঃ
১) বলুনঃ হে কাফের সম্প্রদায়!
২) তোমরা যার ইবাদত কর আমি তার ইবাদত করি না।
৩) তোমরাও ইবাদতকারী নও যার আমি ইবাদত করি ।
৪) আর আমি ইবাদতকারী নই তোমরা যার ইবাদত কর।
৫) তোমরা ইবাদতকারী নও যার আমি ইবাদত করি।
৬) তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য আমার দ্বীন আমার জন্য।
সূরার শানে নযূলঃ
রাসূল (সাঃ) যখন মক্কায় তাওহীদের দাওয়াত শুরু করলেন, তখন মক্কার কুরাইশগণ নানা কৌশলে তাঁকে এই দাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করল। আবু তালেবের কাছেও তারা একাধিকবার প্রতিনিধি পাঠিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে সত্য দ্বীনের দাওয়াত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। অমানষিক নির্যাতন করেও কোন কাজ হয় নি। এমন কি তারা আরবের বাদশাহ বানিয়ে দেয়ার প্রস্তাবও করেছিল।
সকল প্রকার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা এক নতুন কৌশল অবলম্বন করল। তারা তাওহীদের দাওয়াত ও কুফরীর মধ্যে একট আপোস ও মীমাংসার প্রস্তাব দিল। কুরাইশদের কাফের সম্প্রদায় মুর্খতার কারণে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহবান করলেনঃ তিনি এক বছর তাদের মূর্তির পূজা করবেন, আর তারাও তাঁর মা’বূদ আল্লাহর এক বছর ইবাদত করবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই সূরাটি নাযিল করেন এবং তাঁর রাসূলকে আদেশ করেন, তিনি যেন তাদের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেন।
কখন সূরাটি পাঠ করা সুন্নাত?
১)কাবা ঘরের তাওয়াফ শেষে দু’রাকাআত ছালাতের প্রথম রাকাআতে। জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সূরাটি এবং সূরা ইখলাছ তওয়াফ শেষের দু’ রাকাআতে পাঠ করতেন। (মুসলিম)
২) ফজর এবং মাগরিবের সুন্নাত নামাযের প্রথম রাকাআতে। আর দ্বিতীয় রাকাআতে পড়তে হয় সূরা ইখলাছ। ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের পূর্বের দু’রাকাআতে এবং মাগরিবের পরের দু’রাকাআতে বিশের অধিকবার বা দশের অধিকবার পাঠ করেছেন- “ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফেরূন” এবং “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ”। (আহমাদ)
৩) নিদ্রার পূর্বে। রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন পাঠ করবে “ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফেরূন”- শেষ পর্যন্ত তা পাঠ করবে। কেননা উহার মধ্যে শির্ক থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। (ত্ববরাণী)
সূরার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁর নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে, তিনি যেন সুষ্পষ্ট ও প্রকাশ্য ভাবে কাফেরদের সামনে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে প্রকাশ্যে গোপনে তারা যাদের ইবাদত করে থাকে তা থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। আল্লাহর ইবাদতে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা না থাকার কারণে তারা আল্লাহর ইবাদতই করে না। শির্কের সাথে মিশ্রিত তাদের ইবাদতকে কোন ইবাদতই বলা চলে না। এ কারণে আল্লাহ্ তা’আলা দু’দলের মধ্যে এভাবে পার্থক্য করে দিয়েছেনঃ (لكم دينكم ولي دين) “তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য আমার দ্বীন আমার জন্য।”
এ সূরা থেকে যে সমস্ত বিষয় শিক্ষা লাভ করা যায়ঃ
১) এককভাবে আল্লাহ্ জন্য ইবাদতকে খালেছ বা একনিষ্ঠ করা ওয়াজিব।
২) শির্ক এবং তার অনুসারীদের থেকে সম্পূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদ করা অতি আবশ্যক।
৩) এই সূরায় যারা বিভিন্ন ধর্মের মাঝে দূরুত্ব কমিয়ে পরষ্পরের নিকটবর্তী হওয়ার দাওয়াত দেয় তাদেরকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা হক ও বাতিলের মাঝে সুষ্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং ইসলামই একমাত্র হক ধর্ম। তা ছাড়া অন্যান্য সকল ধর্ম বাতিল।
৪) ইমাম শাফেয়ী (রঃ) (لكم دينكم ولي دين) “তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য আমার দ্বীন আমার জন্য।” এ আয়াতটি থেকে এ দলীল নিয়েছেন যে, সকল কাফেরের ধর্ম একই।