ঈমান ধ্বংসকারী আমল
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার যিনি অসীম দয়ালু পরম করুণাময়। আরম্ভ করছি আল্লাহর নামে এবং দরূদ ও সালাম প্রেরণ করছি নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি। বর্তমান মুসলিম সমাজের কতিপয় কার্যকলাপের চরম সংশয় সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ইবাদত তথা ইসলামের নামে প্রচলিত ভন্ডামি, শিরক, বিদআত এবং কুফর এর বিরুদ্ধে কুরআন (কিতাবুল্লাহ) এবং হাদীস (সুন্নাতু রাসুলুল্লাহ)-এর কিছু দলীল প্রচার করা নিজের দায়িত্ব মনে করছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু শিরক এবং কুফর, যা আমরা ইবাদত, ইসলামের অন্তর্ভূক্ত এবং সওয়াবের বিষয় বলে বিবেচনা করি। আমাদের এ সকল আমল শুধু আমাদেরকে সম্পূর্ণ গোমরাহির দিকেইনিয়ে যাচ্ছে না বরং জাহান্নামের ভয়াবহতম লেলিহান আগুনে আমাদের চির জীবনের আবাসস্থল তৈরি করছে। রাসূলগণ, সাহাবাগণ এবং তাঁদের পর অন্তত কয়েক শত বছর কারো মধ্যে এ সকল শরীয়াত বিরোধী আমল খুজে পাওয়া যায় না, যা আমাদের যুগে বিষধর সাপের ন্যায় ধীরে ধীরে আমাদের ধর্মে (দ্বীনে) প্রবেশ করেছে।
নিম্মে কিছু প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে এর সমাধান করার চেষ্টা করেছি এবং প্রত্যেক উত্তরের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে দলীল দেয়ার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন ১: আল্লাহ তায়ালা আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরঃ যেন আমরা এক মাত্র আল্লাহর ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কোন শিরক না করি।
কুরআনের দলীলঃ “আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” (সুরা যারিয়াতঃ ৫৬)
হাদীসের দলীলঃ “বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে কোন শিরক না করা।”
(বুখারী ও মুসলিমের মিলিত হাদীস)
প্রশ্ন ২: যদি আমরা আল্লার সাথে শিরক করি তাহলে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?
উত্তরঃ না, আল্লাহ মুশরিক (শিরককারী)কে কখনই ক্ষমা করবেন না।
কুরআনের দলীলঃ “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম” (সুরা মায়িদাঃ৭২)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি ঐ অবস্থায় মারা যায় যে, সে আল্লাহর সাথে শিরক করত, তবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (মুসলিম)
প্রশ্ন ৩: শিরকের সাথে কোন আমল করলে কি কোন লাভ হবে?
উত্তরঃ না, কোন লাভই হবে না বরং অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
কুরআনের দলীলঃ “যদি তারা শেরেকী করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত।” (সুরা আন্ আমঃ ৮৮)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে যাতে আমার সাথে অন্যকে শরিক করে, তখন তাকে এবং তার শিরকী আমল আমি পরিত্যাগ করি।” (মুসলিম, হাদীসে কুদছি)
প্রশ্ন ৪: আমরা কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করব?
উত্তরঃ যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) হুকুম করেছেন, সেভাবে।
কুরআনের দলীলঃ “তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।” (সুরা বাইয়েনাহঃ ৫)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যা আমাদের (অনুমোদিত) শরিয়াত সম্মত নয়, তা বাতিল বলে গণ্য হবে।” (মুসলিম)
প্রশ্ন ৫: আল্লাহ তায়ালা কেন রাসূলদের প্রেরণ করেছেন?
উত্তরঃ একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে এবং তাঁর সাথে শরিক করা হতে নিষেধ করতে।
কুরআনের দলীলঃ “ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক।” (সুরা নাহলঃ৩৬)
হাদীসের দলীলঃ “প্রত্যেক নবী একে অন্যের ভাই আর তাঁদের দ্বীনও এক, অর্থাৎ প্রত্যেক রাসূলই তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
প্রশ্ন ৬: আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে একত্ববাদ (তাওহীদ) কি?
উত্তরঃ প্রতিটি ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য করা যেমন, দু’আ করা, মানত করা, হুকুম মানা, আইন মানা।
কুরআনের দলীলঃ “আর জেনে রেখো তিনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নাই। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই।” (সুরা মুহাম্মাদঃ ১৯)
হাদীসের দলীলঃ “সর্ব প্রথম তুমি তাদের লা-ইলাহার সাক্ষ্য দিতে বলবা অর্থাৎ একমাত্র তাঁর একত্ববাদের (তাওহীদের) দাওদাত দিবে।” (বুখারী ও মুসলিমের মিলিত হাদীস)
প্রশ্ন ৭: বড় শিরক কি?
উত্তরঃ তা হচ্ছে ইবাদতের কোন অংশ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য নির্দিষ্ট করা। যেমন, পীব-ফকিরের কিছু চাওয়া, পীরের নামে মানত করা, সওয়াবের আশায় পীরের বাড়ীতে গমন করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন গ্রহন করা ইত্যাদি।
কুরআনের দলীলঃ “(হে নবী) বলুনঃ আমি তো আমার রবের ইবাদত করি আর তাঁর সাথে কোন শিরক করি না।” (সুরা জ্বীনঃ ২০)
হাদীসের দলীলঃ “সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা।” (বুখারী)
প্রশ্ন ৮: শিরক কি বর্তমানে বিদ্যমান আছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, খুবই বেশী পরিমাণে বিদ্যমান আছে।
কুরআনের দলীলঃ “অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং সাথে সাথে শিরকও করে।” (সুরা ইউসুফঃ ১০৬)
হাদীসের দলীলঃ “ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত ঘটবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উম্মতের একদল মুশরিক না হয়ে যায় এবং তারা মূর্তি, গাছ, পাথরের পূজা না করে।” (সহীহ্, তিরমিযি)
প্রশ্ন ৯: আল্লাহ ছাড়া কোন পীর-আওলিয়ার নিকট দু’আর হুকুম কি?
উত্তরঃ তাদের নিকট দু’আ করা শিরক এর অন্তর্ভূক্ত।
কুরআনের দলীলঃ “আর আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের নিকট দু’আ করো না, তাহলে আযাবে নিপতিত হবে।” (সুরা আশ্ শুআরাঃ ২১৩)
হাদীসের দলীলঃ “যে এ অবস্থায় মারা যায় যে, সে আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের নিকট দু’আ করত, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী)
প্রশ্ন ১০: দু’আ কি ইবাদতের শামীল?
উত্তরঃ অবশ্যই ইবাদতের শামীল।
কুরআনের দলীলঃ “আর তোমাদের রব বলেন আমার নিকট দু’আ করো; অবশ্যই আমি কবুল করব।” (সুরা গাফিরঃ ৬০)
হাদীসের দলীলঃ “দু’আ হচ্ছে ইবাদত।” (সহীহ্ তিরমিযি)
প্রশ্ন ১১: মৃত ব্যক্তিরা, মৃত পীর-আওলীয়ারা কি তাদের নিকট কৃত দু’আ শুনতে পায়?
উত্তরঃ মৃতরা কখনই শুনতে পায় না।
কুরআনের দলীলঃ “নিশ্চয়ই তুমি মৃতদের শ্রবণ করাতে পারবে না।” (সুরা নামলঃ৮০)
হাদীসের দলীলঃ “আল্লাহ তায়ালার কিছু সংখ্যক মালাইকা (ফিরিশতা) আছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায় আমার উম্মতের তরফ হতে তারা আমাকে সালাম পৌছায়।” (সহীহ্, আহমদ)
প্রশ্ন ১২: আমরা কি বিপদে মৃত ব্যক্তিদের অথবা পীর-আওলীয়াদের বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট সাহায্য চাইব?
উত্তরঃ না, অবশ্যই তাদের নিকট সাহায্য চাইব না, বরং একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইব।
কুরআনের দলীলঃ “যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে, তখন তিনি তোমাদের সাহায্য করেন।” (সুরা আনফালঃ ৯)
হাদীসের দলীলঃ “হে চিরঞ্জিব, হে চিরস্থায়ী, তোমার রহমতের অছিলায় সাহায্য প্রার্থনা করি।” (তিরমিযি)
প্রশ্ন ১৩: পীর-আওলীয়াদের নিকট সাহায্য চাওয়া কি জায়িয?
উত্তরঃ না, জায়িয নয়।
কুরআনের দলীলঃ “নিশ্চয়ই আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও তোমারই নিকট সাহায্য চাই।” (সুরা ফাতিহাঃ ৫)
হাদীসের দলীলঃ “যদি কোন কিছু চাও, তবে আল্লাহর নিকট চাও। যদি সাহায্য চাও তবে একমাত্র তার নিকটই চাও।” (তিরমিযি)
প্রশ্ন ১৪: পীরের নামে মানত করা কি জায়িয?
উত্তরঃ সম্পূর্ণ নাজায়িয।
কুরআনের দলীলঃ “হে আমার রব আমার পেটে যে বাচ্চা আছে তা তোমার নামে উৎসর্গ করছি।” (সুরা আল ইমরানঃ ৩৫)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের জন্য মানত করে সে যেন তা পূর্ণ করে, আর যে তার বিরুদ্ধে পাপাচরণে মানত করে সে যেন তা হতে বিরত থাকে।” (বুখারী)
প্রশ্ন ১৫: পীরের নামে যবেহ্ করা কি জায়িয?
উত্তরঃ এটা শিরক। আল্লাহ ছাড়া কারো নামে যবেহ করা জায়িয নয়।
কুরআনের দলীলঃ “আর তোমার রবের সালাত আদায় কর আর যবেহ (কুরবানী) কর।” (সুরা কাওছারঃ ২)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ্ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ)।” (মুসলিম)
প্রশ্ন ১৬: কোন ভবিষ্যৎ বর্ণনাকারী পীরের কথা কি বিশ্বাস করা যায়?
উত্তরঃ না, কোন পীরের ভবিষ্যৎবাণী বিশ্বাস করা শিরক।
কুরআনের দলীলঃ “(হে নবী) বলুনঃ আসমান ও জমীনের গায়িবের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানের না।” (সুরা নামলঃ ৬৫)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি কোন গণক বা ভবিষ্যৎ বর্ণনাকারী ব্যক্তির নিকট গমন করে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, তবে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে যেন অস্বীকার করল।” (সহীহ্, আহমদ)
প্রশ্ন ১৭ঃ সুস্থতা লাভের জন্য তাবিজ বা এই জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা কি জায়িয?
উত্তরঃ এগুলোর অনেক কিছুই শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
কুরআনের দলীলঃ “আর যদি তোমাকে কোন খারাবী স্পর্শ করে, তবে তা দূর করার ক্ষমতা তিনি ছাড়া অন্য কারো নেই।” (সুরা আন’আমঃ ১৭)
হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি কোন তাবিজ ব্যবহার করল সে যেন শিরক করল।” (সহীহ্, আহমদ)
প্রশ্ন ১৮: কোন পীর আউলিয়ার অছিলা করে দু’আ করার কি প্রয়োজনীয়তা আছে?
উত্তরঃ না, কোন পীর বা আউলিয়ার অছিলা করে দু’আ করার প্রয়োজন নেই।
কুরআনের দলীলঃ “আর যদি বান্দা আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, তবে বলুন, আমি অতি নিকটে, দু’আকারীর দু’আর জবাব দেই যখন সে আমাকে ডাকে।” (সুরা বাকারাহঃ ১৮৬)
হাদীসের দলীলঃ “নিশ্চয় তোমরা এমন জাতকে ডাকছো, যিনি সর্বশ্রোতা ও অত্যন্ত নিকটে এবং তিনি তোমাদের সাথে আছেন। অর্থাৎ ইলমের দ্বারা তিনি তোমাদের দেখেন ও কথা শ্রবণ করেন।” (মুসলিম)
প্রশ্ন ১৯: আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদকে কেন অবতীর্ণ করেছেন?
উত্তরঃ এটি এজন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে, যেন তার উপর আমল করা হয়।
কুরআনের দলীলঃ “তোমাদের রবের তরফ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ কর।” (সুরা আ’রাফঃ ৩)
হাদীসের দলীলঃ “কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, আর তার উপর আমল করতে থাক, তার দ্বারা অর্থ উপার্জন করো না, বেশি বেশি আয়ের লোভও করো না।” (আহ্মদ, সহীহ্)
প্রশ্ন ২০: আমরা কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার উপর কোন পীর, ইমাম, আউলিয়া বা মণিষীদের কথাকে অথবা তাদের রচিত বই পুস্তককে প্রাধান্য দিব?
উত্তরঃ না, অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার উপর এক বিন্দু পরিমাণ কাউকে প্রাধান্য দেয়া জায়িয নয়, বরং আল্লাহর হুকুমের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
কুরআনের দলীলঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর কাউকে প্রাধান্য দিবে না।” (সুরা হুজরাতঃ ১)
হাদীসের দলীলঃ “আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণের কারো কোন আনুগত্য চলবেনা। একমাত্র ভাল কাজেই আনুগত্য চলবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
প্রশ্ন ২১: যদি আমাদের মধ্যে মতবিরোধ হয় তখন কি করব?
উত্তরঃ তখন আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও সহীহ্ সুন্নাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করব।
কুরআনের দলীলঃ “যদি তোমাদের কোন ব্যাপারে মতবিরোধ হয় তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর।” (সুরা নিসাঃ ৫৯)
হাদীসের দলীলঃ “তোমাদের মধ্যে আমি দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তা আঁকড়ে ধর, তাহলে কখনো গোমরাহ্ হবেনা, তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ।” (মালিক, সহীহ)
প্রশ্ন ২২: দ্বীনের (ধর্মের) মধ্যে কি বিদআতে হাসানাহ আছে?
উত্তরঃ না, দ্বীনের (ধর্মের) মধ্যে বিদআতে হাসানাহ্ বলে কোন জিনিস নেই। কিছু আছে “মাসলাহাতিল উম্মাহ” যা তা দ্বীনের জন্য ও মানুষের জন্য সহায়ক কিন্তু দ্বীনের মধ্যে নয়।
কুরআনের দলীলঃ “আজ তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দিলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) হিসেবে মনোনীত করে তার উপর রাজী হয়ে গেলাম।”(সুরা মায়িদাঃ ৩)
হাদীসের দলীলঃ “ওহে! সমস্ত ধরনের (নতুন আবিষ্কার) বিদআতের ব্যাপারে সাবধান, কারণ দ্বীনের প্রতিটি নতুন সংযোজনই বিদআত, আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী (পথভ্রষ্টা)।” (সহীহ্, আবু দাউদ)
প্রশ্ন ২৩: দ্বীনের মধ্যে বিদআত কি?
উত্তরঃ ইসলামের নামে ঐ সমস্ত কাজ যাতে শরীয়াতের কোন সহীহ্ দলীলা নেই।
কুরআনের দলীলঃ “আর তাদের কি কোন শরীক আছে যারা তাদের জন্য ঐ নতুন দ্বীনের প্রবর্তন করেছে, যার ব্যাপারে আল্লাহর সম্মতি নেই।”(সুরা শুরাঃ ২১)
হাদীসের দলীলঃ “যারা আমাদের হুকুমের মধ্যে এমন কোন নতুন কথার প্রবর্তন করবে, যা আমাদের কথা নয়, তবে তা পরিত্যক্ত।” (বুখারী ও মুসলিম)
প্রশ্ন ২৪: ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন আইন মানার অনুমতি আছে কি?
উত্তরঃ না, বরং অন্য আইনের উপর চলা, তাকে সঠিক মনে করা বা বিকল্প মনে করা শিরক।
কুরআনের দলীলঃ “আর যারা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার করবে না তারা কাফির।” (সুরা মায়িদাঃ ৪৪)
কুরআনের দলীলঃ “অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মেনে না নিবে। অত:পর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে মেনে নিবে।”
হাদীসের দলীলঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাসকগণ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসন না করবে, আর আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের কোন্টা গ্রহণ করবে, কোন্টা ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে দিবেন।” (ইবনে মাজাহ্)
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে, আমাকে সঠিক দ্বীন ইসলামের উপর কুরআন সুন্নাহ্ মুতাবিক চলার তাওফিক দান করুন এবং শয়তানের ছত্রছায়া থেকে রাব্বুল আলামীন তাঁর নিকট আমাদের আশ্রয় দান করুন, আমীন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।
মূলঃ শাঈখুল হাদীস মুফতি জসিমুদ্দীন রাহমানী