হাদীছ কি এবং কেনো? – ৪
তাছাওউফ বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে হাদীছ
(১) জুন্নুন মিসরী (রহঃ) বলেনঃ ‘প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর প্রেমিকের পরিচয় হল, আখলাক চরিত্র, কার্যাবলী, আদেশ-নিষেধ এবং জীবনের নিয়ম পদ্ধতি সব কিছুতেই আল্লাহর হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করা’।
(২) জুনাইদ বাগদাদী (রহঃ) বলেনঃ ‘সূন্নাহর অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহর দিকে যাওয়ার কোন পথই উম্মুক্ত নেই’।
(৩) ইবরাহীম ইবনু আদহাম (রহঃ) দুঅ’া কবুল না হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ মানুষ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসার দাবী করে অথচ তাঁর সুন্নাত ছেড়ে দিয়েছে।
(৪) আব্দুল ওহাব ছাকাফী (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাঅ’ালা সঠিক ব্যতীত অন্য কোন জিনিস কবুল করেন না। আর ইখলাছ ব্যতীত কোন জিনিস সঠিক হতে পারে না। আর সুন্নাতে রাসূলের মোওয়াফেক না হলে কোন জিনিস খালিছ হতে পারেনা।
এহ’ল উম্মতের বিভিন্ন দলের লোকদের কতগুলি উক্তি, যাতে হাদীছ ও সুন্নাহ এর প্রতি তাঁদের সম্মান প্রদর্শন, ভক্তি, মর্যাদাবোধ, সঠিক মুল্যায়ন ইত্যাদি বিষয় স্পষ্ট হল। উম্মতের এসকল উক্তি কেউ একত্রিত করলে, কয়েক খন্ডে বিস্তৃত একটি বড় কিতাব হয়ে যাবে। যারা বুঝাতে চান তাদের জন্য যতটুকু উদ্ধৃত করেছি এটাই যথেষ্ট।
অমুসলিমদের দৃষ্টিতে হাদীছ
মুসলমানেরা তো হাদীছের মুল্য সাধারণতঃ বুঝেই, অনেক অমুসলিমরাও হাদীছের গুরুত্ব ও সত্যতা স্বীকার করতে কুন্ঠাবোধ করেনি।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গীবন লিখেনঃ ‘প্রত্যেক জাতির প্রতিষ্ঠাতার জীবন-চরিত দ্বারা তাঁর লিখিত জ্ঞান সম্পদ পরিপুর্নতা লাভ করে। মুহাম্মদের হাদীছ সমূহ প্রকৃত সত্য কথার পূর্ণাঙ্গ উপদেশ তাঁর কাজ-কর্ম, সততা ও নেক কাজের বাস্তব প্রতীক’।
মুসলমানদের মধ্যে হাদীছের সুত্রে যে সব নৈতিক নিয়ম কানুন প্রচলিত আছে হাইটিংগার এসবের এক লম্বা চওড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। তার দৃষ্টিতে মানুষকে কার্যত নেক কাজের দিকে আকৃষ্ট করার এবং পাপ থেকে বিরত রাখার এতদপেক্ষা উত্তম কর্মপ্রনালী আর কিছুই হতে পারে না।
প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ ডঃ মার্গেলিউথ ঠিকই বলেছেনঃ ‘হাদীছের জন্য মুসলমানরা যত ইচ্ছা গর্ব করতে পারে এটা তাদের পক্ষে শোভা পায়’।
প্রসিদ্ধ রুশ দার্শনিক টলষ্টয় স্বীয় দেশ ও জাতির সংশোধনের জন্য হাদীছ সমূহের একটি সংকলন নিজ ভাষায় প্রকাশ করেছিলেন।
স্যার উইলিয়াম ম্যুর লিখেছেনঃ প্রাথমিক যুগে মুসলিমদের জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক উত্তেজনাপূর্ণ কথা-বার্তার বিষয়বস্তু সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির কথা ও কাজ ছাড়া আর কি হতে পারে। —এ শ্রেষ্ঠ এ বিশ্বজয়ী জাতির অস্তিত্ব ও উত্থান লাভের একমাত্র কারণ। তিনিই মুসলিমদের হস্তে ইহকাল ও পরকাল উভয়ের কুঞ্জিকা সমর্পন করে দিয়েছেন। একারণে হযরত মুহাম্মদের (ছাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম) অনুসারীদের মধ্যে বেশীর ভাগ কথা-বার্তা তাঁর সম্পর্কেই হত। এসব উপায় উপাদানের কারণে হাদীছ বিজ্ঞান যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে।
হাদীছের প্রয়োজনীয়তা কী?
হাদীছ কাকে বলে? তার বাস্তব পরিচিতি কী? কুরআন, সুন্নাহ ও সলফে ছালেহীনের দৃষ্টিতে তার মর্যাদা কী? ইত্যাদি বিষয় জানার পর এবার আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্তভাবে ‘হাদীছ কেন’? – বিষয়টি তুলে ধরতে চাই। অর্থাৎ কুরআন বর্তমান থাকা সত্ত্বেও হাদীছের প্রয়োজনীয়তা আছে কী? কুরআন-হাদীছ গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখলে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর তথা হাদীছের প্রয়োজনীয়তার অনেক কারণ জানতে পারব। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হ’লঃ
১. হাদীছ বা সুন্নাহ হ’ল কুরআনের ব্যাখ্যাঃ
কুরআন-হাদীছের মধ্যেকার বাস্তব সম্পর্ক হ’ল মতন আর ব্যাখ্যার সম্পর্ক। যেহেতু কুরআন মজীদ উচ্চাঙ্গেঁর ভাষা, বর্ণনাভঙ্গিঁ, পান্ডিত্য এবং সর্বোচ্চ সাহিত্য সমৃদ্ধ একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ ও আল্লাহর কালাম। সেহেতু সর্বসাধারণের পক্ষে তার মর্ম বুঝা বা তার সত্যিকার অর্থ উদঘাটন করা অসম্ভব ছিল। তাই আল্লাহ তাঅ’ালা প্রিয় নবী মুহাম্মদ মোস্তাফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ . (النحل، الآية:৪৪)
‘এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিবৃত করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে’।
এই আয়াতে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে যে, আপনি লোকদের কাছে কুরআনের আয়াত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করে দেন। এতে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, কুরআনের তত্ত্ব, তথ্য ও বিধানাবলী নির্ভূলভাবে বুঝা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণনার উপর নির্ভরশীল। যদি প্রত্যেক ব্যক্তি শুধু আরবী ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞান লাভ করেই কুরআনের বিধানাবলী আল্লাহর অভিপ্রেত পন্থায় বুঝতে সক্ষম হত, তাহ’লে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বর্ণনা ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব অর্পন করার কোন অর্থ হতনা।
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেনঃ
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ. (القيامة : ১৯)
‘এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব’।
এই আয়াতে বলা হ’ল যে, কুরআন মজীদের আয়াত সমূহের সঠিক মর্ম ও উদ্দেশ্য আল্লাহ তাঅ’ালা নিজ দায়িত্বে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি তা নিজের কথা, কাজ, অনুমোদন ও আখলাক চরিত্র দ্বারা নির্ভূলভাবে বলে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আখলাক চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে উত্তরে তিনি বলেনঃ
كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآن . (رواه أحمد ومسلم وأبوداؤد)
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-র চরিত্র হ’ল কুরআন’।
অর্থাৎ তিনি ছিলেন এক জীবন্ত কুরআন। তার থেকে যে উক্তি ও কার্য বর্ণিত হয়েছে তা সব কুরআনেরই বক্তব্য। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেনঃ
جَمِيْعُ مَا تَقُوْلُهُ الْأَئِمَّةُ شَرْحٌ لِلسُّنَّةِ وَجَمِيْعُ السُّنَّةِ شَرْحٌ لِلْقُرْآنِ. (الإتقان فى علوم القرآن: ২/১২৬)
‘সম্পূর্ণ হাদীছ কুরআনেরই ব্যাখ্যা। আর ইমামগণের সব কথা হাদীছের ব্যাখ্যা’।
ইমাম শাত্বেবী (রহঃ) ‘আল মুওয়াফাকাত’ গ্রন্থে বলেনঃ
فَكَانَتِ السُّنَّةُ بِمَنْزَلَةِ التَّفْسِيْرِ وَالشَّرْحِ لَمَعَانِى أَحْكَامِ الْكِتَابِ . (الموافقات :৪/১০)
‘সূন্নাহ আগাগোড়া কুরআনের বিধি-বিধানের অর্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।’
আল্লামা ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেনঃ
عَلَيْكَ بِالسُّنَّةِ فَإِنَّهَا شَارِحَةٌ لِلْقُرْآنِ وَمُوْضِحَةٌ لَهُ . ( مقدمة ابن كثير، ص ১১)
‘তুমি হাদীছের অনুসরণ কর। কেননা হাদীছ হ’ল কুরআনের ব্যাখ্যা’।
আল্লাহ তাঅ’ালা বলেনঃ
وَمَاأَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِى اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ.
‘আমি আপনার প্রতি এজন্যই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিস্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং তা ঈমানদারদের জন্য হিদায়েত ও রহমত’।
এই আয়াতেও আল্লাহ তাঅ’ালা একথাই বললেন যে, কুরআন মজীদের সঠিক মর্ম, উদ্দেশ্য ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুবুওয়াতের মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং বড় দায়িত্ব। সূরা জুম’আহ ও অন্যান্য সূরার কতিপয় আয়াতে গ্রন্থ শিক্ষাদান বলে এ উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। সারমর্ম এই যে, যদিও কুরআন মজীদ একটি পূর্ণগ্রন্থ তথাপি তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মুখাপেক্ষী, আর হাদীছে রাসূলই হ’ল তার সেই আসল ও নির্ভূল ব্যাখ্যা।
ইমাম আওযায়ী (রহঃ) বলেনঃ
اَلْكِتَابُ أَحْوَجُ إِلَى السُّنَّةِ مِنَ السُّنَّةِ إِلَى الْكِتَابِ .
‘হাদীছ কুরআনের তত মুখাপেক্ষী নয়, কুরআন হাদীছের যত মুখাপেক্ষী’।
মোট কথা, হাদীছ হ’ল কুরআন মজীদের এমন এক ব্যাখ্যা, যা ব্যতীত কুরআন বুঝা অসম্ভব। এই কারণেই ইমাম আবুহানীফা (রহঃ) বলেনঃ
لَوْلَا السُّنَّةُ مَافَهِمَ أَحَدٌ مِنَّا الْقُرْآنَ. ( لمحات من تاريخ السنة، ص ৩২)
‘যদি হাদীছ না হত তাহ’লে আমাদের কেউ কুরআন বুঝত না’।
২. হাদীছও কুরআনের মত স্বতন্ত্র অহীঃ
আল্লাহ তাঅ’ালা মানুষের হিদায়েতের জন্য যে অহী পাঠিয়েছেন, তা দু’প্রকার। অহীয়ে মাতলূ এবং অহীয়ে গায়রে মাতলূ। অহীয়ে মাতলূ অর্থাৎ যার অর্থ ও ভাষা উভয়ই আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হয়, এর নাম কুরআন মজীদ। আর অহীয়ে গায়রে মাতলূ অর্থাৎ যার কেবল অর্থ আল্লাহর তরফ থেকে নাযিল হয়। কিস্তু রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অর্থ নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন, এর নাম হাদীছ ও সূন্নাহ। কুরআন মজীদের অনেক আয়াত দ্বারা একথা প্রমাণিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ দুএকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করছি।
ক) -আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَن بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ. (التحريم : ৩)
‘যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ তাঅ’ালা নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে বললেন। তখন স্ত্রী বললঃ কে আপনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন? নবী বললেনঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন’।
এই আয়াতে উল্লেখিত গোপন কথাটি হ’ল এই যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নব (রাঃ) এর কাছে মধু পান করার কারণে অন্য বিবিগণ যখন মনঃক্ষুন্ন হলেন, তখন তাদেরকে খুশী করার জন্য তিনি মধু পান না করার শপথ করলেন এবং বিষয়টি প্রকাশ করতে নিষেধ করলেন, যেন যয়নব (রাঃ) মনে কষ্ট না পান। কিন্তু সেই বিবি এই গোপন কথা ফাঁস করে দিলেন। পরে আল্লাহ তাঅ’ালা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনাটি জানিয়ে দিলেন। ঘটনাটি যেহেতু আল্লাহ তাঅ’ালাই জানিয়েছেন সুতরাং তা অহী হবে অন্য কিছু নয়। অথচ কুরআনে এরূপ কোন আয়ত নেই। কাজেই বুঝা গেল যে, কুরআন ব্যতীত অন্য অহীও রাসূলুল্লাহু ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসত। তাই হল ‘হাদীছ’।
খ) -আল্লাহ তাঅ’ালা বলেছেনঃ
وَأَنزَلَ اللّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ. (النساء : ১১৩)
‘আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব (কুরআন) এবং হেকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন কিছু বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না’।
এই আয়াতে ‘হেকমত’ শব্দের অর্থ হ’ল, হাদীছ ও সূন্নাহ। অর্থাৎ কুরআন যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তেমনি হাদীছও আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং এটিও অহী, যাকে অমান্য বা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।
গ) -আল্লাহ তাঅ’ালা বলেনঃ
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ. (القيامة : ১৯)
‘অতঃপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব’।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, কুরআনের সঠিক মর্ম ও উদ্দেশ্য জানিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা নিজেই বর্ণনা করে দিয়েছেন। কিন্তু কুরআনের কোথাও এসবের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়না। বরং হাদীছেই পাওয়া যায় তার বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কুরআন ব্যতীত অন্য অহীও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আসত, বস্তুতঃ হাদীছ ও সুন্নাহই হ’ল সেই অহী।
ঘ) -আল্লাহ তাঅ’ালা বলেনঃ
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى . إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى. (النجم: ৪০৩)
‘তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। তিনি যা বলেন তা অহী বৈ কিছু নয়’।
এই আয়াতটিও হাদীছ অহী হওয়ার ব্যাপারে এক সুস্পষ্ট দলীল। এরূপ আরো অনেক আয়াত আছে, যা দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, হাদীছে রাসূলও স্বতন্ত্র অহী এবং আল্লাহর তরফ থেকে নাযিলকৃত।
ইমাম আওযায়ী (রাহঃ) হাসসান ইবনু আত্বিয়্যাহ থেকে বর্ণনা করেনঃ
كَانَ جِبْرَئِيْلُ يَنْزِلُ عَلَى النَّبِىِّ بِالسُّنَّةِ كَمَا يَنْزِلُ عَلَيْهِ بِالْقُرْآنِ. (الدارمى فى السنن ، ص ৭৭)
‘জিব্রাইল (আঃ) নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কুরআন নিয়ে যেমন অবতরণ করতেন তেমনি হাদীছ নিয়েও অবতরণ করতেন’। তাই নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
أَلَا إِنِّى أُوْتِيْتُ الْقُرْآنَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ
‘জেনে রেখ, আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপও’।
এখানে ‘তার অনুরূপও’ বলে হাদীছকে বুঝানো হয়েছে।
ইমাম ইবনূল কায়্যিম (রহঃ) বলেনঃ
أَحْكَامُ السُّنَّةِ الَّتِى لَيْسَتْ فِى الْقُرْآنِ إِنْ لَّمْ تَكُنْ أَكْثَرَ مِنْهَا لَمْ تَنْقُصْ عَنْهَا
‘হাদীছে বর্ণিত সে সব বিধি বিধান যা কুরআনে নেই, তা যদিও কুরআনের চেয়ে বেশী হবে না, তথাপি কমও হবে না’।
সারকথা, আল্লাহর তরফ থেকে অহীর দুটি অংশ রয়েছে। একটি হ’ল কুরআন আর অপরটি হ’ল হাদীছ। সুতরাং হাদীছকে বাদ দেয়া তথা তাকে আল্লাহর অহী বলে স্বীকার না করার অর্থ হবে, আল্লাহর ‘অহী’র একটি অংশকে অস্বীকার করা। যা স্পষ্ট কুফরী হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বীমত থাকার কথা নয়।