হাদীছ কি এবং কেনো? – ২
৬ – আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌَّرَحِيمٌ. (آل عمران:৩১)
‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহ’লে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন, আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু’।
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাঅ’ালার ভালবাসার মাপকাঠি বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। আর এই অনুসরণকে স্বতন্ত্র রাখা হয়েছে। কোন বিশেষতা এখানে আনা হয়নি। অতএব কুরআন ভিত্তিক অনুসরণ ও সূন্নাহ ভিত্তিক অনুসরণ উভয়ই এর অন্তর্ভুক্ত। তা হ’লে বুঝা গেল যে, হাদীছও কুরআনের মত শরীয়তের একটি অনুসরণীয় দলীল।
৭ – আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا . (النساء: ৬৫.)
‘অতএব আপনার পালন কর্তার শপথ! তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবেনা এবং ও হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে’।
এই আয়াতটিও হাদীছ শরীয়তের দলীল হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। কারণ এতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহর যে কোন সিদ্ধান্তকে যতক্ষণ নির্দ্বিধায় ও নিঃসঙ্কোচে মেনে নিতে পারবেনা ততক্ষণ ম’ুমিন হতে পারবেনা।
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেনঃ এখানে যে মীমাংসার কথা বলা হয়েছে, তা কুরআনের স্পষ্ট হুকুম নয়, বরং তা হল ‘সূন্নাহ’।
অতএব এই আয়াত দ্বারা ‘সূন্নাহর’ অপরিহার্যতা ও আবশ্যকীয়তা বুঝে আসে এমনভাবে যে, তার উপর দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল না হলে সে কাফের হয়ে যাবে।
আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহঃ) বলেনঃ ‘কুরআনের বাণীসমূহের উপর আমল করা মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথেই সীমিত নয়। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর পবিত্র শরীয়তের মীমাংসাই হল তাঁর মীমাংসা। কাজেই এ নির্দেশটি ক্বেয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবে বলবৎ থাকবে, যেমন ছিল তাঁর যুগে। তখন যেমন সরাসরি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্তকে তাঁর কাঁেছ উপস্থিত করা হত, তেমনি তাঁর পরে তাঁর শরীয়ত [অর্থাৎ কুরআন ও সূন্নাহ] এর মীমাংসা নিতে হবে। আর এটা প্রকৃত পক্ষে তাঁরই অনুসরণ। এই আয়াত দ্বারা একথাও প্রমাণিত হয় যে, ‘ফীমা শাজারা বাইনাহুম’ বাক্যটি শুধু আচার-অনুষ্ঠান কিংবা অধিকারের সাথেই সম্পৃক্ত নয়, আকীদা, মতবাদ এবং অপরাপর বৈষয়িক বিষয়েও ব্যাপক। অতএব, কোন সময় কোন বিষয়ে পারস্পরিক মতবিরোধ দেখা দিলে, বিবাদ পরিহার করে উভয় পক্ষকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এবং তাঁর অবর্তমানে তৎপ্রবর্তীত শরীয়তের কাছে মীমাংসা অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয’।
৮- আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ. (الحجرات: ১)
‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রনী হওনা এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন’।
এই আয়াতে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কেমন ব্যবহার করবে তার আদব বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে ‘আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রনী হওনা’ একথার অর্থ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘কুরআন ও সূন্নাহর বিরূদ্ধে কিছু বলো না’। মুফাসসির যাহ্হাক বলেনঃ শরীয়তের যে কোন ব্যাপারে কুরআন-সূন্নাহ ব্যতীত কোন ফায়সালা করো না। সুফিয়ান সাওরী বলেনঃ কথা ও কাজ যে কোন ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রনী হওনা। অন্য সব লোকের কথা, অভিমত, রায়, ইজতিহাদ ও ফাতওয়া ইত্যাদির স্থান হ’ল কুরআন সূন্নাহর পরে। অতএব যতক্ষণ কোন কাজের ফায়সালা কুরআন ও সূন্নাহে পাওয়া যাবে, ততক্ষণ অন্য কারো রায়, ইজতিহাদ গ্রহন করা হবেনা। এর দ্বারা বুঝা গেল, শরীয়তের আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কুরআনের পরপরই হাদীছের স্থান। অর্থাৎ হাদীছও কুরআনের মত শরীয়তের একটি স্বতন্ত্র দলীল।
৯ – আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
لَا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًا فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ. (النور: ৬৩.)
‘রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের পরষ্পরের আহবানের মত গন্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরূদ্ধাচারণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে’।
এই আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ডাকেন, তখন একে সাধারণ মানুষের ডাকের মত মনে কর না, যে সাড়া দেয়া না দেয়া ইচ্ছাধীন; বরং তখন সাড়া দেয়া ফরয হয়ে যায় এবং অনুমতি ছাড়া চলে যাওয়া হারাম হয়ে যায়। আর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরা উম্মতকে বারংবার কুরআন ও সুন্নাহের প্রতি আহ্বান করেছেন। তাহ’লে সকল উম্মতের জন্য তার ডাকের সাড়া দেয়া ওয়াজিব হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আহবান যতদিন কুরআন-সূন্নাহ বর্তমান থাকবে ততদিন অর্থাৎ ক্বেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। সুতরাং ক্বেয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের প্রত্যেক স্থানের প্রত্যেক জনসাধারনকে কুরআন ও সহীহ সূন্নাহের প্রতি এই আহবানের সাড়া দিতে হবে। যারা আল্লাহর দাঈ [আহবানকারী]-র ডাকে সাড়া দিবে না, তারা ইহজগত ও পরজগতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আহবান কুরআন ও সুন্নাহ উভয়ের দিকে ছিল, আর আল্লাহ তাঅ’ালাও উভয়কে স্বতন্ত্রভাবে মানার আদেশ দিয়েছেন, তাই বুঝা গেল যে, হাদীছও কুরআনের মত অনুসরণীয় দলীল।
১০ – আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا. (الأحزاب: ২১)
‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম অনুপম আদর্শ’।
হাফেজ ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও চাল-চলনের অনুসরণ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে এ আয়াতটি একটি মৌল ভিত্তি। আর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কথা, কাজ ও সমর্থন দ্বারা শুধু কুরআনই বলেননি; বরং হাদীছও বলেছেন। তা হ’লে বুঝা গেল যে, হাদীছও কুরআনের মত শরীয়তের উৎস।
১১ – আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেছেনঃ
المر تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَالَّذِيَ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يُؤْمِنُونَ. (الرعد:১)
‘আলিফ লাম-মীম-রা, এগুলি কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না’।
এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম এবং সত্য। এখানে কিতাব বলে কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে এবং وَالَّذِى أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ (যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে)-বলে হাদীছকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কিতাব এবং সেই অহী যা কুরআন ব্যতীত আপনার কাছে এসেছে। কেননা, এ বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না যে, রাসুলুল্লাহর কাছে যে অহী আসত, তা শুধু কুরআনেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বয়ং কুরআন বলছে- وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُو إِلَّا وَحْىٌ يُوْحَى অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের খেয়াল-খুশী মতে কিছু বলেন না; বরং তার উক্তি একটি অহী, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার কাছে প্রেরিত হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি কুরআন ছাড়া অন্য যে সব বিধি-বিধান দিয়েছেন, সেগুলিও আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ। পার্থক্য এতটুকু যে, কুরআনের তেলাওয়াত করা হয় কিন্তু সেগুলির তেলাওয়াত হয় না। সে মতে আয়াতের অর্থ হবে, এই কুরআন এবং যেসব বিধি-বিধান আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়, সেগুলি সব সত্য এবং সন্দেহের অবকাশমুক্ত। কিন্তু অধিকাংশ লোক চিন্তা-ভাবনা না করার কারণে তা বিশ্বাস করেনা।
১২ – আল্লাহ তাঅ’ালা এরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ . (محمد: ৩৩)
‘হে ম’ুমিনগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং তোমাদের আমল নষ্ট করো না’। এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহর আনুগত্য ও রাসূলের অনুসরণ ব্যতীত কোন আমলই গ্রহন যোগ্য হবেনা। অর্থাৎ আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হল, সুন্নাতে রাসূল তথা হাদীছের অনুসরণ।
এখানে আমি কুরআনের দৃষ্টিতে হাদীছের মর্যাদার কথা বলতে গিয়ে শুধুমাত্র বারটি আয়াতের কথা উল্লেখ করলাম। যে গুলির প্রত্যেকটি একথাই প্রমাণ করে যে, হাদীছও বাস্তবে অহী এবং ইসলামী শরীয়তে কুরআন মজীদের পরপর এর স্থান। এবিষয়ে আরো অনেক আয়াত রয়েছে, আল্লাহর তাওফীক হলে, অন্য কোন সময় তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব ইন্শা আল্লাহ।
রাসূলের বাণীর দৃষ্টিতে হাদীছ
এবার আসুন! একটু দেখি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই হাদীছের মর্যাদা সম্পর্কে কি বলেছেন? নিুে পাঠকের জ্ঞাতার্থে উদাহরণ স্বরূপ কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করা হচ্ছে। যেগুলোর প্রত্যেকটি দ্বারা একথা প্রমাণ হয় যে, হাদীছের গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম।
(১) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله ُعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ قَالَ :”كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى”. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ: ” مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى. (رواه البخاري)
১- আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমার সকল উম্মতই বেহেশতে যাবে কিন্তু যে অসম্মত সে যাবে না। জিজ্ঞেস করা হল, কে অসম্মত? রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হবে সে অসম্মত’।
(২) عن جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ الله ُعَنْهُ يَقُولُ جَاءَتْ مَلاَئِكَةٌ إِلَى النَّبِيِّ وَهْوَ نَائِمٌ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ. فَقَالُوا إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلاً فَاضْرِبُوا لَهُ مَثَلاً. فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ. فَقَالُوا مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا، وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا، فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنَ الْمَأْدُبَةِ، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنَ الْمَأْدُبَةِ. فَقَالُوا أَوِّلُوهَا لَهُ يَفْقَهْهَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ. فَقَالُوا فَالدَّارُ الْجَنَّةُ، وَالدَّاعِي مُحَمَّدٌ فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا فَقَدْ عَصَى اللَّهَ، وَمُحَمَّدٌ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ. (رواه البخاري)
২- জাবের (রাঃ) বলেনঃ ‘একদা একদল ‘মালাক’ তথা ফেরেশতা নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। তখন তিনি ঘুমে ছিলেন। ফেরেশতাগণ পরস্পর বললঃ তোমাদের এই সাথীর একটি উদাহরণ রয়েছে। তাঁকে উদাহরণটি বল। তখন কেউ বললেনঃ তিনি যে নিদ্রিত। অপর জন বললেনঃ তাঁর চক্ষু নিদ্রিত হলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত, তখন তাঁদের কেউ বললঃ তাঁর উদাহরণ এইযে, এক ব্যক্তি একটি ঘর তৈরি করল এবং তাতে যিয়াফত তৈরী করে রাখল। অতঃপর লোকদের আহবান করার জন্য একজন আহবায়ক পাঠাল। এখন যে আহবায়কের সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে এবং খেতে পারল। আর যে আহবায়কের আহবানে সাড়া দিলনা, সে ঘরেও প্রবেশ করতে পারলনা এবং খেতেও পারলনা। অতঃপর তাঁদের একজন বললঃ তাঁেক এই উদাহরণের তাৎপর্য বলে দাও, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তখন কেউ বললঃ তিনি যে নিদ্রিত, আর একজন বললঃ তাঁর চক্ষু নিদ্রিত হলেও অন্তর জাগ্রত। তাঁরা বললেন, ঘরটি হল জান্নাত এবং আহবায়ক হ’লেন মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য স্বীকার করল, সে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করল। আর যে ব্যক্তি তার অবাধ্য হল, সে আল্লাহর অবাধ্য হল। এক কথায় মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারনকারী মানদন্ড’।
(৩) عن أنس رَضِيَ الله ُعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: “ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي . (رواه البخاري )
৩- আনাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার সূন্নাহ থেকে বিমূখ হবে সে আমার দলভূক্ত নয়’।
(৪) عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ الله ُعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ :” إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمًا فَقَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي رَأَيْتُ الْجَيْشَ بِعَيْنَىَّ، وَإِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْعُرْيَانُ فَالنَّجَاءَ. فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِنْ قَوْمِهِ فَأَدْلَجُوا، فَانْطَلَقُوا عَلَى مَهَلِهِمْ فَنَجَوْا، وَكَذَّبَتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ فَأَصْبَحُوا مَكَانَهُمْ، فَصَبَّحَهُمُ الْجَيْشُ، فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِي، فَاتَّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ، وَمَثَلُ مَنْ عَصَانِي وَكَذَّبَ بِمَا جِئْتُ بِهِ مِنَ الْحَقِّ ”.(متفق عليه)
৪- আবু মুছা আশ’আরী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমার এবং যে বিষয় নিয়ে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরীত হয়েছি, তার উদাহরণ হ’ল এই যে, এক ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের কাছে এসে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার এই দুই চক্ষু দিয়ে শক্র সৈন্য দেখেছি আর আমি হলাম তোমাদের জন্য বিশেষ ভাবে সতর্ককারী, সুতরাং তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর, একথা শুনে তার সম্প্রদায়ে একদল তার কথা মানল এবং রাতারাতি চলে গেল। তাতে তারা ধীরে সুস্থে যেতে পারল এবং মুক্তি পেল। আর অপরদল তাকে মিথ্যুক বলল এবং ভোর পর্যন্ত নিজ স্থানেই রইল। ভোরে হঠাৎ শত্র“ সৈন্য তাদের উপর হামলা করে বসল এবং তাদেরকে ধ্বংস ও স্বমূলে বিনাশ করে দিল। এ হ’ল সে ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার বাধ্যতা স্বীকার করেছে এবং আমি যা এনেছি তার অনুসরণ করেছে এবং সে ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার অবাধ্য হয়েছে এবং আমি যে সত্য নিয়ে এসেছি তাকে সে মিথ্যারোপ করেছে’।
(৫) عَنْ أَبِي رَافِعٍ رَضِيَ الله ُعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الأَمْرُ مِنْ أَمْرِي مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لاَ نَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ”. (سنن أبى داؤد)
৫- আবুরাফে’(রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমি তোমাদের কাউকে যেন এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌঁছবে, যাতে আমি কোন আদেশ করেছি বা কোন নিষেধ করেছি, তখন সে বলবেঃ আমি জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পাব তারই অনুসরণ করব’।
(৬) عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ رَضِيَ الله ُعَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ أَنَّهُ قَالَ : أَلاَ إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلاَ يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلاَلٍ فَأَحِلُّوهُ وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ ، أَلاَ إِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُوْلُ الله مِثْلَ مَا حَرَّمَ الله ، أَلاَ لاَ يَحِلُّ لَكُمْ لَحْمُ الْحِمَارِ الأَهْلِيِّ وَلاَ كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ وَلاَ لُقَطَةُ مُعَاهِدٍ إِلاَّ أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يَقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ ”. (رواه أحمد وأبوداؤد وابن ماجة)
৬- মেকদাদ ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘জেনে রাখ, আমাকে কিতাব (কুরআন) এবং তার অনুরূপ (হাদীছ) দেয়া হয়েছে। মনে রাখ, এমন এক সময় এসে পৌঁছছে যখন কোন উদরপূর্ণ বড়লোক তার গদীতে বসে বলবেঃ ‘তোমরা শুধু এই কুরআনকেই গ্রহন করবে। তাতে যা হালাল পাবে তাকেই হালাল মনে করবে, আর তাতে যা হারাম পাবে তাকেই হারাম মনে করবে’। অথচ আল্লাহর রাসূল যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারই অনুরুপ। জেনে রাখ, গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতওয়ালা কোন হিংস্র পশুও হালাল নয়। এমনিভাবে সন্ধিতে আবদ্ধ অমুসলমানের হারানো বস্তুও তোমাদের জন্য হালাল নয়। অবশ্য সে যদি তা বর্জন করে (তখন অন্য কথা)। যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের কাছে আগন্তুক হিসেবে পৌঁছে তখন তাদের উচিত তার আতিথ্য করা। যদি তারা তা না করে, তা হলে তাদের কষ্ট দিয়ে হলেও তার আতিথ্য পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার রয়েছে’।
(৭) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله ُعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : تَرَكْتُ فِيْكُمْ شَيْئَيْنِ ، لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُمَا : كِتَابَ الله ، وَسُنَّتِى ، وَلَنْ يَّتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ . (رواه مالك والحاكم )
৭- আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমি তোমাদের মধ্যে এমন দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তা আঁকড়ে ধরে থাকবে পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও আমার ‘সুন্নাহ’ (বা হাদীছ)। এ বস্তুদ্বয় ক্বেয়ামতের দিন হাউযে কাউসারে আমার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে কোনদিন পরস্পর কখনো পৃথক হবে না’।
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ الله ُعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : أُوْصِيْكُمْ بِتَقْوَى الله، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَأِنْ أُمِّرَ عَلَيْكٌمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ، فَأِنَّهُ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيْرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ، تَمَسَّكُوْا بِهَا، وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ، فَإِنَّ كُـلَّ مُحْدَثَـةٍ بِدْعَةٌ ، وَكُـلَّ بِـْدعَةٍ ضَلَالَةٌ. (الترمذي)
৮- ইরবায ইবনু সারিয়া (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিতেছি এবং ইমামের কথা শুনতে এবং অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও সে হয় হাবশী গোলাম। আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অল্প দিনের মধ্যেই অনেক মতভেদ দেখবে, তখণ তোমরা আমার সূন্নাহ এবং সৎপথ প্রাপ্ত খোলাফাদের সূন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে’। এদুটিকে মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরবে। আর (দ্বীনের বেলায়) নব আবিস্কৃত বিষয়াদি থেকে সম্পূর্ণ সাবধান থেকো। কারণ প্রত্যেক নব আবিস্কৃত বিষয় বিদাত। আর প্রত্যেক বিদাত গোমরাহী। আর প্রত্যেক গোমরাহী (অনুসরণকারী) জাহান্নামে।
(৯) عَن عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ الله ُعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : نَضَّرَ الله امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئًا ، فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ ، فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى مِنْ سَامِعٍ . (الترمذى وأبوداؤد وابن ماجة )
৯- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তাঅ’ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন, যে আমার কোন কথা শুনে তা মুখস্থ করেছে এবং যেরূপ শুনেছে সেরূপ অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কেননা অনেক ব্যক্তি যাদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে, তারা শ্রবনকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী’।
(১০) عَن ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ الله ُعَنْهُما عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: أَلَا ليُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ. (رواه البخاري)
১০- ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ওহে তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিতের কাছে কথাগুলি পৌঁছিয়ে দাও’।
(১১) عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ الله عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامُ الصَّبْرِ، لِلْمُتَمَسِّكِ فِيْهِنَّ يَوْمَئِذٍ بِمَا أِنْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرُخَمْسِيْنَ شَهِيْدًا مِنْكُمْ ، قَالُوْا يَا نَبِيَّ الله أَوَمِنْهُمْ ؟ قَالَ: بَلْ مِنْكُمْ. (رواه الطبراني فى الكبير وابن نصر فى السنة)
১১- ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পিছনে রয়েছে ধৈর্য্যরে সময়। তখন যে ব্যক্তি তোমরা যে (সুন্নাত) তরীকার উপর আছ তাকে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য তোমাদের থেকে পঞ্চাশ জন শহীদের সমান ছাওয়াব পাবে। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর নবী! তাদের মধ্য থেকে? তিনি বললেনঃ বরং তোমাদের মধ্য থেকে।
(১২) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: مَنْ أَحْدَثَ فِىْ أَمْرِنَا هَذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. (متفق عليه)
(১৩) وَعَنْهَا رَضِيَ الله عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ.(رواه مسلم وأحمد)
১২- উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে নতুন কোন বিষয় আবিষ্কার করবে, যা এই দ্বীন থেকে নয়, তা পরিত্যক্ত।
১৩- অন্য বর্ণনায় তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে, যা আমাদের দ্বীন থেকে নয়, তা পরিত্যাজ্য।
এই উভয় হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, সুন্নাত তথা হাদীছের অনুসরণ ব্যতীত কোন আমল আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। বরং সে সব আমল পরিত্যজ্য হবে, যা সুন্নাতের বিপরীত পন্থায় সম্পন্ন হবে। তাহলে বুঝা গেল যে, আমল কবুল হওয়ার জন্য শুধু এখলাছ যথেষ্ট নয়; বরং তার সাথে সাথে ইত্তিবায়ে সুন্নাতও আবশ্যক।
(১৪) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ الله أَنَّهُ قَالَ: مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ الله وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى الله ، وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيْرِىْ فَقَدْ أَطَاعَنِى وَمَنْ عَصَى أَمِيْرِي فَقَدْ عَصَانِي. (متفق عليه)
১৪- রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আমার আনুগত্য করবে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করবে। আর যে আমার বিরুদ্ধাচারণ করবে, সে আল্লাহরই বিরুদ্ধাচরণ করবে। যে আমীর (তথা মুসলিম শাসক) এর অনুসরণ করবে, সে আমারই অনুসরণ করবে। পক্ষান্তরে যে মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধাচারণ করবে, সে আমারই বিরুদ্ধাচরণ করবে।
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীছ থেকে মাত্র চৌদ্দটি হাদীছ আমি এখানে উপস্থাপন করলাম। এগুলির প্রত্যেকটি একথা প্রমাণ করে যে, হাদীছে রাসূলও কুরআনের মত শরীয়তের একটি স্বতন্ত্র দলীল। এরূপ সব হাদীছ একত্র করতে গেলে, হয়ত কয়েক খন্ডে বি¯তৃত একটি গ্রন্থ তৈরী হয়ে যাবে। জ্ঞান সম্পন্ন ও বুদ্ধিমান লোকদের জন্য যা উল্লেখ করেছি, তাই এব্যাপারে সঠিক ধারণা লাভের জন্য যথেষ্ট। সূতরাং আমাদের জন্য ‘কুরআনই যথেষ্ট’ বলে হাদীছকে উপেক্ষা করা, বা অস্বীকার করার কোন অবকাশ থাকে না।