কুরআন তেলাওয়াতের আদব সমূহ
আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পরকালীন জীবনে স্থায়ী আবাস নির্ধারিত হয় ইহকালীন জীবনের ইবাদত তথা সৎ আমলের মাধ্যমে। ইবাদতের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত অন্যতম। কুরআন তেলাওয়াতের শিষ্টাচার সম্পর্কে ইসলামে বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। যেগুলি পালন করলে যথাযথ ছওয়াব লাভ হয়। আর এগুলির অভাবে কোন ক্ষেত্রে ছওয়াব বিনষ্ট হয়। নিম্নে কুরআন তেলাওয়াতের আদবগুলি উল্লেখ করা হ’ল।-
কুরআন তেলাওয়াতের আদব সমূহ : কুরআন তেলাওয়াতের আদব সমূহ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ক. বাতেনী বা অপ্রকাশ্য আদব ও খ. যাহেরী বা প্রকাশ্য আদব। অপ্রকাশ্য আদব বলতে যা অন্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট বাহ্যিকভাবে যা দেখা যায় না। প্রকাশ্য আদব বলতে বুঝায় যা বাস্তবে দেখা যায়।
ক. বাতেনী বা অপ্রকাশ্য আদব সমূহ :
১. খালেছ অন্তরে তেলাওয়াত করা : কুরআন তেলাওয়াত ইবাদত। যার ভিত্তি ইখলাছের উপরে প্রতিষ্ঠিত। ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা না থাকলে তা বাতিল হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ، ‘অথচ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে’ (আল-বায়্যিনাহ ৯৮/৫)।
মূলতঃ
আমল বিশুদ্ধ ও কবুল হয় আমলকারীর নিয়তের উপরে। যেমন রাসূল (ছাঃ)
বলেন,إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا
نَوَى، ‘নিশ্চয়ই কর্মফল নিয়তের উপরে নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই
হবে, যার সে নিয়ত করবে’।[1]
২. আল্লাহর কালামের যথাযোগ্য সম্মান করা : তেলাওয়াতকারী ও শ্রোতা উভয়ের চিন্তা করা উচিত যে, এটা আল্লাহর বাণী। যা জিব্রীল (আঃ)-এর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে নাযিল করা হয়েছে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে ছাহাবায়ে কেরাম শিখেছেন। যখন মানুষ একে আল্লাহর কালাম হিসাবে মনে মনে ভাববে তখন তার অন্তর ভীত হবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সন্ত্রস্ত হবে। আর তার দেহ-মনে আল্লাহর ভয়, তাঁর সম্মান ও মহত্ত্ব প্রভাব বিস্তার করবে।
৩. মনোযোগ সহকারে তেলাওয়াত করা : কুরআন
তেলাওয়াতকালে মন থেকে অন্য সকল চিন্তা দূরে রাখতে হবে। উদাসীনতা পরিহার
করে তেলাওয়াত করতে হবে। ক্বারীকে চিন্তা করতে হবে যে, সে তার প্রতিপালকের
সামনে আছে এবং তাঁর বাণী তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর সাথে কথা বলছে। আল্লাহর
কিতাব তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাছিল করার চেষ্টা করবে। এতে তার
মধ্যে একাগ্রতা ও নিবিষ্টতা বৃদ্ধি পাবে। জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইবাদত মনের
চাহিদার অনুকূল হয় ততক্ষণ তিলাওয়াত করতে থাক এবং (তাতে) মনোসংযোগে ব্যাঘাত
ঘটলে পড়া ত্যাগ কর’।[2]
৪. আয়াত অনুধাবনের চেষ্টা করা : তেলাওয়াতকৃত আয়াতের অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের চেষ্টা করা উচিত। কেননা এসব আল্লাহর নির্দেশ। যার অর্থ বুঝে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা যরূরী। আর তেলাওয়াকারীকে চিন্তা করতে হবে যে, আল্লাহ এ কুরআনে বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন বিষয়ে আদেশ-নিষেধ করেছেন। সেজন্য আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে যথাযথভাবে বুঝে তা প্রতিপালন করা আবশ্যক। আর আদেশ-নিষেধ অনুধাবন করা কুরআন তেলাওয়াতের অন্যতম উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوْا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ، ‘এটি এক বরকতমন্ডিত কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে লোকেরা এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৯)। তিনি আরো বলেন,أَفَلاَ يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوْبٍ أَقْفَالُهَا- ‘তবে কি তারা কুরআন গবেষণা করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলি তালাবদ্ধ’? (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)।
৫. আয়াতের সাথে প্রভাবিত হওয়া : প্রত্যেকটি আয়াতের প্রেক্ষাপট ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। সেই সাথে আল্লাহ গুণাবলী ও নামসমূহ এবং তাঁর কার্যাবলী সম্পর্কে গবেষণা করলে তাঁর মহত্ত্ব অবহিত হওয়া যাবে। অনুরূপভাবে নবী-রাসূলগণের ঘটনাবলী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা যে, কিভাবে তাঁদেরকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা হয়েছিল, তাঁদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, মুত্তাক্বীদের কি হয়েছিল। আর এসব থেকে উপদেশ গ্রহণ করা। নবী-রাসূলগণকে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী ও আল্লাহর অবাধ্যদেরকে কিভাবে দুনিয়াতে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং পরকালে তাদের জন্য কি শাস্তি রয়েছে, সে বিষয়ে চিন্তা করা।
খ. প্রকাশ্য আদব সমূহ :
১. পবিত্রতা অর্জন করা : পবিত্র অবস্থায় তথা ওযূ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنِّيْ كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ، أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ، ‘ওযূ ব্যতীত আমি আল্লাহর নাম নেয়া অপসন্দ করি অথবা তিনি বললেন, পবিত্রাবস্থায় ব্যতীত’।[3] আর কুরআন তেলাওয়াত যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তবে ওযূ ছাড়াও কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে বলেন,كَانَ يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন’।[4] তাই ওযূ ছাড়াও তেলাওয়াত করা যাবে। কিন্তু ওযূ অবস্থায় তেলাওয়াত করা উত্তম।
২. মিসওয়াক করা : তেলাওয়াতের
পূর্বে মিসওয়াক করে মুখ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ
أَفْوَاهَكُمْ طُرُقٌ لِلْقُرْآنِ، فَطَيِّبُوْهَا بِالسِّوَاكِ، ‘তোমাদের
মুখ হ’ল কুরআনের রাস্তা। অতএব তোমরা মিসওয়াক করে তা পবিত্র ও সুগন্ধযুক্ত
করো’।[5] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আলী (রাঃ) বলেন,أُمِرْنَا بِالسِّوَاكِ.
وَقَالَ: إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّي أَتَاهُ الْمَلَكُ فَقَامَ
خَلْفَهُ يَسْتَمِعُ الْقُرْآنَ وَيَدْنُو، فَلاَ يَزَالُ يَسْتَمِعُ
وَيَدْنُو حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيْهِ، فَلاَ يَقْرَأُ آيَةً إِلَّا
كَانَتْ فِيْ جَوْفِ الْمَلَكِ، ‘আমাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই বান্দা যখন ছালাতে দাঁড়ায়, তখন একজন ফেরেশতা এসে
তার পিছনে দাঁড়িয়ে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে থাকেন এবং নিকটবর্তী হন। এভাবে
তিনি শুনতে থাকেন এবং নিকটবর্তী হ’তে থাকেন। এমনকি তিনি তাঁর মুখ মুছল্লীর
মুখের উপরে রাখেন। অতঃপর যখনই সে কোন আয়াত তেলাওয়াত করে তখন তা ফেরেশতার
পেটে চলে যায়’।[6] অন্যত্র এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَطَهِّرُوْا
أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ، ‘অতএব তোমরা কুরআনের জন্য তোমাদের মুখকে পবিত্র
কর’।[7]
৩. ক্বিবলামুখী হওয়া : তেলাওয়াতকারীর জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে ছালাতের বাইরে কিবলামুখী হওয়া। শিক্ষকের সামনে আদব সহকারে বসার ন্যায় বিনম্র হয়ে বসে তেলাওয়াত করা উত্তম। তবে দাঁড়িয়ে, বসে বা কাত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করলেও তা জায়েয হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَقُعُوْدًا وَعَلَى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ، ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও’ (আলে ইমরান ৩/১৯১)!
আয়েশা
(রাঃ) বলেন,كَانَ يَتَّكِئُ فِيْ حَجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ يَقْرَأُ
القُرْآنَ، নবী করীম (ছাঃ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। আর
তখন আমি হায়েয অবস্থায় ছিলাম’।[8]
৪. তেলাওয়াতের শুরুতে আঊযুবিল্লাহ পাঠ করা : তেলাওয়াতের শুরুতে আঊযুবিল্লাহ পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، ‘যখন তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর, তখন (শুরুতে) বিতাড়িত শয়তান হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর’ (নাহল ১৬/৯৮)। এজন্য কোন বিদ্বান ‘আঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করাকে ওয়াজিব এবং জমহূর বিদ্বান মুস্তাহাব বলেছেন।
৫. তেলাওয়াতের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা : তেলাওয়াতের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। শায়খ ছালেহ আল-ওছায়মীন বলেন, ছালাতে ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পড়া, বিসমিল্লাহ ও আঊযুবিল্লাহ বলা এবং আমীন বলা সুন্নাত।[9] সুতরাং বিসমিল্লাহ বলা ছালাতের মধ্যে যখন ওয়াজিব নয়, সুন্নাত, তখন তা ছালাতের বাইরেও সুন্নাত, ওয়াজিব নয়।
শায়খ
বিন বায (রহঃ) বলেন, সূরা ফাতিহা অথবা অন্য সূরা তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে
বিসমিল্লাহ পড়া ছালাতের ভিতরে ও বাইরে সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। এটাই সঠিক কথা।[10]
অতএব যদি কেউ তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তবুও তার তেলাওয়াত সিদ্ধ হবে। কিন্তু সুন্নাত পরিত্যাগ করা হবে। এজন্য তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ পড়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৬. গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহ আয়াতের পুনরাবৃত্তি : গুরুত্বপূর্ণ
আয়াতের অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের জন্য বারবার একই আয়াত তেলাওয়াত করা যায়। আবূ
যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَصْبَحَ بِآيَةٍ وَالْآيَةُ: (إِنْ
تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإنَّك أَنْت
الْعَزِيز الْحَكِيْم)- ‘একদা নবী করীম (ছাঃ) ছালাতে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া
পর্যন্ত একটি আয়াত বারবার তেলাওয়াত করতে থাকেন। (আয়াতের অর্থ) আপনি যদি
তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর আপনি যদি তাদের ক্ষমা করেন
তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (মায়েদা ৫/১১৮)।[11]
৭. বিনম্রভাবে তেলাওয়াত করা : বিনম্রভাবে বা কান্না জড়িত কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করা। যেমন আল্লাহ বলেন,وَيَخِرُّوْنَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا- ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরও বৃদ্ধি পায়’ (বনু ইসরাঈল ১৭/১০৯)।
মুত্বাররিফ
ইবনু আব্দুল্লাহ বিন শিখখীর (রহঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন,أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي
وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ يَعْنِي: يَبْكِي وَفِي
رِوَايَةٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يُصَلِّي وَفِي صَدْرِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الرَّحَا مِنَ الْبُكَاءِ. ‘আমি
নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি ছালাত আদায় করছিলেন এবং তাঁর ভিতর
থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ হয়। অর্থাৎ
তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি নবী করীম
(ছাঃ)-কে ছালাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর বুকের মধ্যে চাক্কির
আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হ’তে থাকত।[12]
৮. রহমতের আয়াত আসলে তা চাওয়া এবং আযাবের আয়াত আসলে তা হ’তে পানাহ চাওয়া : কুরআন তেলাওয়াতকালে রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর নিকটে তাঁর রহমত প্রার্থনা করা এবং আযাবের আয়াত আসলে তা থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করা কর্তব্য। হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَةِ، فَمَضَى، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَتَيْنِ، فَمَضَى، فَقُلْتُ: يُصَلِّي بِهَا فِي رَكْعَةٍ، فَمَضَى، فَافْتَتَحَ النِّسَاءَ، فَقَرَأَهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا، يَقْرَأُ مُتَرَسِّلًا إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسْبِيحٌ سَبَّحَ، وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ، وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ،
‘আমি এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে
ছালাত আদায় করলাম। তিনি সূরা বাক্বারাহ শুরু করলেন, আমি মনে মনে বললাম যে,
হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তেলাওয়াত করে রুকূ করবেন। কিন্তু তিনি তেলাওয়াত
চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দু’শত আয়াত পরিমাণ
তেলাওয়াত করে রুকুতে যাবেন, কিন্তু তিনি তেলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি
মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাক‘আতেই তেলাওয়াত করে ফেলবেন।
কিন্তু তিনি তেলাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকলেন এবং সূরা নিসা শুরু করে তাও
তেলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা আলে ইমরানও শুরু করে তাও তেলাওয়াত করে
ফেললেন। তিনি ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তেলাওয়াত
করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করতেন, যদি কোন যাঞ্ছা
করার আয়াত তেলাওয়াত করতেন তখন যাঞ্ছা করতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে
আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তখন আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।[13]
৯. তেলাওয়াতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বস্ত্ত দূরে রাখা : কুরআন তেলাওয়াতের সময় তেলাওয়াতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। যেমন হাসাহাসি, খেলাধূলা, হাতে অনর্থক কাজ করা, বিনা প্রয়োজনে এদিক-সেদিক তাকানো, মোবাইল টেপা অন্যের সাথে অনর্থক কথা বলা, তেলাওয়াতের মাঝে লোকের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে তেলাওয়াত বন্ধ করে দেওয়া এবং অযথা বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করা ইত্যাদি।
১০. হাই তোলার সময় তেলাওয়াত বন্ধ রাখা : হাই
তোলার সময়ে তেলাওয়াত বন্ধ রাখা কর্তব্য। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,إذَا
تَثَاءَبْتَ وَأَنْتَ تَقْرَأُ، فَأَمْسِكْ عِنْدَ الْقِرَاءَةِ
تَعْظِيْمًا حَتَّى يَذْهَبَ تَثَاؤُبَكَ، ‘যখন তুমি হাই তোল তেলাওয়াত
অবস্থায়, তখন তুমি ক্বিরাআত থেকে বিরত থাক কুরআনের সম্মানে, যতক্ষণ না
তোমার হাই চলে যায়’।[14]
নাফে‘ (রহঃ) হ’তে
বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما إِذَا قَرَأَ
الْقُرْآنَ لَمْ يَتَكَلَّمْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ، ‘ইবনু ওমর (রাঃ) যখন
কুরআন তেলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তেলাওয়াত হ’তে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন
না’।[15]
১১. সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াত করা : আল্লাহ কুরআন তেলাওয়াত শুনে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا أَذِنَ اللهُ لِشَىْءٍ مَا أَذِنَ لِلنَّبِىِّ أَنْ يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ ‘আল্লাহ তা‘আলা কোন বিষয়ের প্রতি এরূপ কান লাগিয়ে শুনেন না যেরূপ তিনি নবীর সুমধুর তেলাওয়াত শুনেন’।[16] এজন্য সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতে রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কুরআনকে সুসজ্জিত করে পাঠ কর’।[17] তিনি আরো বলেন,حَسِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ، فَإِنَّ الصَّوْتَ الْحَسَنَ يَزِيْدُ الْقُرْآنَ حُسْناً- ‘তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বর দ্বারা কুরআনকে সেŠন্দর্যমন্ডিত কর। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়’।[18] সুন্দর আওয়াজে তেলাওয়াত করা কুরআনের সৌন্দর্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন,حُسْنُ الصَّوْتِ زِيْنَةُ القُرْآنِ، ‘সুন্দর আওয়াজ (কণ্ঠস্বর) কুরআনের সৌন্দর্য’।[19] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ صَوْتًا بِالْقُرْآنِ الَّذِى إِذَا سَمِعْتُمُوْهُ يَقْرَأُ حَسِبْتُمُوْهُ يَخْشَى اللهَ، ‘মানুষের মধ্যে সুকণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াতকারী সেই ব্যক্তি যার তেলাওয়াত শুনে তোমাদের ধারণা হয় যে, সে আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত’।[20] উল্লেখ্য, গানের সুরে ও বাজনার তালে তালে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না।
১২. তারতীল ও তাজবীদসহ তেলাওয়াত করা : ধীরে-সুস্থে কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ বলেন,وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيْلاً، ‘আর কুরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে-সুস্থে সুন্দরভাবে’ (মুযযাম্মিল ৭৩/৪)।
ক্বতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,سُئِلَ أَنَسٌ كَيْفَ كَانَتْ
قِرَاءَةُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم. فَقَالَ كَانَتْ مَدًّا. ثُمَّ
قَرَأَ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ، يَمُدُّ بِبِسْمِ اللهِ،
وَيَمُدُّ بِالرَّحْمَنِ، وَيَمُدُّ بِالرَّحِيْمِ. ‘আনাস (রাঃ)-কে নবী
করীম (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর
ক্বিরাআত কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত দীর্ঘ
ছিল। এরপর তিনি বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, নবী
করীম (ছাঃ) বিসমিল্লাহ আর-রহমান, আর-রহীম পড়ার সময় দীর্ঘায়িত করতেন’।[21]
১৩. বড় অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ না করা : গোসল ফরয হওয়া, হায়েয, নেফাস ইত্যাদি অবস্থায় কুরআন স্পর্শ না করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لاَ يَمَسُّهُ إِلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ، ‘পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ একে স্পর্শ করেনি’ (ওয়াকি‘আহ ৫৬/৭৯)। এখানে পবিত্রগণ বলতে ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا يَمَسُّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ ‘পবিত্র লোক ছাড়া যেন কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ না করে’।[22] এখানে পবিত্র বলতে জুনুবী বা যার উপরে গোসল ফরয এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। আর ছোট অপবিত্রতা বা ওযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে কুরআন স্পর্শ করা যাবে এবং দেখে তেলাওয়াত করা যাবে।[23] তবে ওযূ করে তেলাওয়াত করা উত্তম।
উল্লেখ্য যে, ফরয গোসলের নাপাকীতে কুরআন আদৌ স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখস্থ পড়া যাবে। তাছাড়া কুরআন মুদ্রণ, বাইন্ডিং, বহন ইত্যাদি যরূরী কাজে নিয়োজিত মুসলিম কর্মচারীরা ওযূ ব্যতীত এটি স্পর্শ করতে পারবে। কিন্তু কাফের-মুশরিকরা তা স্পর্শ করতে পারবে না।
১৪. তন্দ্রা অবস্থায় তেলাওয়াত না করা :
তন্দ্রাবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত না করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا قَامَ
أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ فَاسْتَعْجَمَ الْقُرْآنُ عَلَى لِسَانِهِ
فَلَمْ يَدْرِ مَا يَقُولُ فَلْيَضْطَجِعْ، ‘তোমাদের কেউ (ঘুমের ঘোরে)
রাতের ছালাতে দন্ডায়মান হ’লে কুরআন স্বাভাবিকভাবে তার মুখ থেকে বের হয় না
এবং সে কি তেলাওয়াত করছে তাও বুঝতে পারে না। কাজেই এরূপ অবস্থায় সে যেন
অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়ে’।[24]
১৫. কুরআন অনুযায়ী আমল করা : কুরআন
অনুযায়ী আমল করা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا
الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِيْنَ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা এই
কিতাবের দ্বারা কতক লোককে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং কতককে অবনমিত
করেন’।[25] অর্থাৎ যারা এর প্রতি পূর্ণাঙ্গ ঈমান আনয়ন করতঃ তাকে সম্মান করে
এবং সে অনুযায়ী আমল করে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।[26] কেউ বলেন, যারা
ইলম অনুযায়ী আমল করেন তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং যারা তা করেন না,
তাদেরকে অবনমিত করেন।[27]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ ‘কুরআন হ’ল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষের প্রমাণ’[28]
এ হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, যদি তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর ও সে
অনুযায়ী আমল কর, তাহ’লে তুমি উপকৃত হবে। অন্যথা কুরআন তোমার বিপক্ষে দলীল
হবে।[29] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) কুরআন অনুযায়ী আমল না করলে কবরে ক্বিয়ামত অবধি শাস্তি হবে বলে উল্লেখ করেছেন।[30]
আমল বিহীন ক্বারীর উদাহরণ পেশ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
الْمُؤْمِنُ
الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالأُتْرُجَّةِ، طَعْمُهَا
طَيِّبٌ وَرِيحُهَا طَيِّبٌ، وَالْمُؤْمِنُ الَّذِى لاَ يَقْرَأُ
الْقُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالتَّمْرَةِ، طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلاَ رِيحَ
لَهَا، وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ
كَالرَّيْحَانَةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ، وَمَثَلُ
الْمُنَافِقِ الَّذِى لاَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالْحَنْظَلَةِ، طَعْمُهَا
مُرٌّ أَوْ خَبِيثٌ وَرِيْحُهَا مُرٌّ، ‘ঐ মুমিন যে কুরআন পাঠ করে এবং সে
অনুযায়ী আমল করে, তাঁর দৃষ্টান্ত ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে
চমৎকার। আর ঐ মুমিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে আমল করে তার
দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই। আর
মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের মত, যার মন মাতানো
খুশবু আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ। আর ঐ মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে না,
তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতে বিস্বাদ এবং গন্ধে
দুর্গন্ধময়’।[31]
১৬. তেলাওয়াতের মাধ্যমে অন্যকে বিরক্ত না করা :
উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করে অন্যকে বিরক্ত করা উচিত নয়। অনেকে
অসুস্থ
থাকে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকে, শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নে মশগূল
থাকে এবং কেউবা ছালাতে বা যিকরে রত থাকে; এমতাবস্থায় উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত
করে তাদেরকে বিরক্ত করা অদৌ উচিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَلاَ يَجْهَرْ
بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ، ‘একজনের কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ
অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে।[32] অর্থাৎ ছালাতরত ব্যক্তি, ঘুমন্ত ও অন্য
কোন তেলাওয়াতকারীকে যেন উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরক্ত করা বা কষ্ট
দেওয়া না হয়।[33] ইবুন রজব বলেন, মসজিদে ছালাতরত অবস্থায় উচ্চৈঃস্বরে
তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরক্ত না করা।[34]
১৭. রুকূ‘-সিজদায় তেলাওয়াত না করা : ছালাতের
রুকূ‘-সিজদায় কুরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ। আবু বকর (রাঃ) বলেন,أَيُّهَا
النَّاسُ إِنَّهُ لَمْ يَبْقَ مِنْ مُبَشِّرَاتِ النُّبُوَّةِ إِلاَّ
الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ يَرَاهَا الْمُسْلِمُ أَوْ تُرَى لَهُ أَلاَ
وَإِنِّى نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَأَمَّا
السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِى الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ
لَكُمْ، ‘হে লোকেরা! নবুঅতের কিছুই অবশিষ্ট নেই, তবে মুসলিমরা যে নেক
স্বপ্ন দেখবে তা ব্যতীত। তিনি আরো বলেন, আমাকে রুকূ‘ ও সিজদাতে কুরআন পড়তে
নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা রুকূ‘ অবস্থায় রবের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো
এবং সিজদাতে বেশী করে দো‘আ পড়ার চেষ্টা করো। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ
কবুল হবে’।[35]
১৮. তেলাওয়াতে কষ্ট হ’লে ধৈর্য ধারণ করা : কুরআন
তেলাওয়াতে পারদর্শী না হ’লে অনেক সময় তেলাওয়াত করতে কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে
ধৈর্য ধারণ করে তেলাওয়াত করলে দ্বিগুণ ছওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ مَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَةِ
الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِى يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ
فَلَهُ أَجْرَانِ، ‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন
ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন পড়ার সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে
তেলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব’।[36]
১৯. তিনদিনের কমে কুরআন খতম না করা : তিনদিনের
কম সময়ে কুরআন খতম না করা। কেননা এত অল্প সময়ে কুরআন খতম করলে কুরআন বোঝা
সম্ভব নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,يَا
رَسُوْلَ اللهِ فِىْ كَمْ أَقْرَأُ الْقُرْآنَ قَالَ فِىْ شَهْرٍ. قَالَ
إِنِّىْ أَقْوَى مِنْ ذَلِكَ يُرَدِّدُ الْكَلاَمَ أَبُو مُوْسَى
وَتَنَاقَصَهُ حَتَّى قَالَ اقْرَأْهُ فِىْ سَبْعٍ. قَالَ إِنِّى أَقْوَى
مِنْ ذَلِكَ. قَالَ لاَ يَفْقَهُ مَنْ قَرَأَهُ فِىْ أَقَلَّ مِنْ ثَلاَثٍ.
‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কয়দিনে কুরআন খতম করব? তিনি বললেন, এক মাসে।
তিনি বললেন, আমি এর চেয়ে অধিক শক্তি রাখি। আবূ মূসার বর্ণনায় রয়েছে অতঃপর
আলোচনার মাধ্যমে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে অবশেষে বললেন, সাত দিনে খতম করবে।
তিনি বললেন, আমি এর চেয়েও বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তিন
দিনের কমে কুরআন খতম করে, সে কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না’।[37]
২০. সশব্দে ও নীরবে তেলাওয়াত করা : কুরআন
সশব্দে ও নীরবে তেলাওয়াত করা যায়। ক্বারীর অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি
অনুযায়ী কখনও সরবে ও কখনো নীরবে পড়া উত্তম। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا
أَذِنَ اللهُ لِشَىْءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِىٍّ حَسَنِ الصَّوْتِ يَتَغَنَّى
بِالْقُرْآنِ يَجْهَرُ بِهِ، ‘মহান আল্লাহ অন্য কিছু এত মনোযোগ দিয়ে শুনেন
না, যেভাবে তিনি নবীর সুমধুর কন্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে কুরআন পাঠ শুনেন’।[38]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْجَاهِرُ بِالْقُرْآنِ كَالْجَاهِرِ
بِالصَّدَقَةِ وَالْمُسِرُّ بِالْقُرْآنِ كَالْمُسِرِّ بِالصَّدَقَةِ،
‘উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াতকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মতো এবং নিঃশব্দে
কুরআন তেলাওয়াতকারী গোপনে দানকারীর মতো’।[39]
ইমাম
নববী (রহঃ) বলেন, নীরবে তেলাওয়াত লৌকিকতামুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি
লৌকিকতার ভয় করে তার জন্য নীরবে তেলাওয়াত করা উত্তম। আর যদি রিয়ার আশঙ্কা
না করে তাহ’লে সরবে তেলাওয়াত করা উত্তম। তবে শর্ত হ’ল অন্য মুছল্লী, ঘুমন্ত
ব্যক্তি কিংবা অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া না হয়। অন্যথা নীরবে উত্তম। আর সরবে
তেলাওয়াত উত্তম হওয়ার কারণ হ’ল এরূপ আমল সাধারণত অধিক করা হয়, এতে অন্যেরা
উপকৃত হয়, শ্রবণ, শিক্ষা, অনুসরণ করা এবং এটা দ্বীনের নিদর্শন হওয়ার কারণে।
তাছাড়া এতে ক্বারীর অন্তর জাগ্রত হয়, তার মনোযোগ এর প্রতি নিবদ্ধ হয়, এর
প্রতি তার কর্ণ প্রত্যাবর্তিত হয়; এর দ্বারা ক্বারীর ঘুম দূর হয়, তার উদ্যম
বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে ঘুমন্ত ও উদাসীন ব্যক্তি জাগ্রত, সচেতন ও উৎসাহী হয়।
তাই এরূপ নিয়তে সরবে তেলাওয়াত করা উত্তম।[40]
২১. তেলাওয়াতের সিজদা দেওয়া : তেলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আসলে সিজদা করা সুন্নাত। এই সিজদা করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّىْ رَأَيْتُنِىْ اللَّيْلَةَ وَأَنَا نَائِمٌ كَأَنِّى أُصَلِّى خَلْفَ شَجَرَةٍ فَسَجَدْتُ فَسَجَدَتِ الشَّجَرَةُ لِسُجُودِى فَسَمِعْتُهَاوَهِىَ تَقُوْلُ اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِىْ بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّىْ بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِى عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّىْ كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ. قَالَ الْحَسَنُ قَالَ لِىْ ابْنُ جُرَيْجٍ قَالَ لِىْ جَدُّكَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقَرَأَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم سَجْدَةً ثُمَّ سَجَدَ. قَالَ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَسَمِعْتُهُ وَهُوَ يَقُوْلُ مِثْلَ مَا أَخْبَرَهُ الرَّجُلُ عَنْ قَوْلِ الشَّجَرَةِ.
‘এক
ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আজ রাতে
ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি যেন একটি গাছের পিছনে ছালাত আদায়
করছি। আমি তেলাওয়াতের সিজদা করলাম এবং গাছটিও আমার সাথে সাথে সিজদা করল।
আমি গাছটিকে বলতে শুনলাম ‘হে আল্লাহ! এই সিজদার বিনিময়ে তোমার কাছে আমার
জন্য ছওয়াব নির্ধারণ করে রাখ, এর বিনিময়ে আমার একটি গোনাহ দূর কর, এটাকে
তোমার কাছে আমার জন্য সঞ্চয় হিসাবে জমা রাখ এবং এটা আমার নিকট হ’তে গ্রহণ
করে নাও, যেভাবে তুমি তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ)-এর নিকট গ্রহণ করেছিলে’। ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সিজদার আয়াত পাঠ করলেন এবং সিজদা
করলেন। ইবনু আববাস (রাঃ) আবার বললেন, আমি তাঁকে তখন সেই গাছের দো‘আটির মতো
পাঠ করতে শুনলাম, যে সম্পর্কে ইতিপূর্বে লোকটি তাকে জানিয়েছিল’।[41]
উল্লেখ্য, এই সিজদায় ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে
তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই।[42]
২২. দীর্ঘ সময় নিয়ে কুরআন খতম না করা : অধিক
সময় নিয়ে কুরআন খতম না করে সাধ্যমত কম সময়ে কুরআন খতম করা উচিত।
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, তাকে রাসূল (ছাঃ)
বললেন,اقْرَأِ القُرْآنَ فِي أَرْبَعِيْنَ. ‘তুমি চল্লিশ দিনে কুরআন পাঠ
(শেষ) করবে’।[43]
২৩. ক্বিরাআতে পারদর্শী না হ’লে আলেমদের নিকটে পেশ করা : কুরআন
তেলাওয়াতে পারদর্শী না হ’লে যারা তেলাওয়াতে দক্ষ তাদের নিকটে পেশ করা এবং
ভুল-ত্রুটি থাকলে সংশোধন করে নেওয়া কর্তব্য। যেমন রাসূল (ছাঃ) ছাহাবায়ে
কেরামকে বিশেষ ব্যক্তিদের নিকট থেকে কুরআন শেখার নির্দেশ দেন। মাসরূক (রহ.)
হ’তে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর মজলিসে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ
(রাঃ)-এর আলোচনা হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, তিনি সে ব্যক্তি যাঁকে নবী করীম
(ছাঃ)-এর বক্তব্য শুনার পর হ’তে আমি খুব ভালবাসি। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
কুরআন শিক্ষা কর চারজনের নিকট থেকে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (সর্ব প্রথম
তিনি এ নামটি বললেন), সালিম আবূ হুযাইফার আযাদকৃত গোলাম, মু‘আয ইবনু জাবাল ও
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)।[44] কারণ তারা রাসূলের যুগে কুরআন সংরক্ষণ করেছিলেন।[45]
২৪. আয়াতের মাঝে তেলাওয়াত বন্ধ করে না দেওয়া : কুরআন
তেলাওয়াতকালে আয়াতের মাঝে তেলাওয়াত বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। কারণ আল্লাহর
কালামের উপরে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। নাফে‘ (রহঃ) হ’তে
বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما إِذَا قَرَأَ
الْقُرْآنَ لَمْ يَتَكَلَّمْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ، ‘ইবনু ওমর (রাঃ) যখন
কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তেলাওয়াত হ’তে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন
না’।[46]
২৫. কুরআন নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া : কুরআন নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الجِدَالُ في القُرآنِ كُفْرٌ ‘কুরআন নিয়ে বিতর্ক করা কুফরী’।[47]
তিনি আরো বলেন,أَمَا إنَّهُ لَمْ تَهْلَكِ الأُمَمُ قَبْلَكمْ حَتَّى
وَقَعُوْا فِيْ مِثْلِ هَذَا يَضْرِبُوْنَ القُرْآنَ بَعْضَهُ بِبَعْضٍ مَا
كَانَ مِنْ حَلاَلٍ فَأَحِلُّوْهُ وَمَا كَانَ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوْهُ
وَمَا كَانَ مِنْ مُتَشَابِهٍ فَآمِنُوْا بِهِ، ‘পূর্ববর্তী সকল উম্মতই
ধ্বংস হয়েছে যখনই তারা এ ধরনের কাজে জড়িত হয়েছে। তারা কুরআন নিয়ে একে অপরের
সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে। এতে হালাল করা হয়েছে, তাকে হালাল গণ্য কর এবং
এতে যা হারাম করা হয়েছে তাকে হারাম গণ্য কর। আর যা সন্দেহপূর্ণ বা
দ্ব্যর্থবোধক তার প্রতি ঈমান রাখ’।[48]
অতএব কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে উপরোক্ত আদব বা শিষ্টাচার সমূহ মেনে চলা যরূরী। এর ফলে অশেষ ছওয়াব হাছিল হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে এবং কুরআন তেলাওয়াত সহ ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
– ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
[1]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৮; মিশকাত হা/১।
[2]. বুখারী হা/৫০৬০-৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/১১৬৬।
[3]. আবূদাঊদ হা/১৭; নাসাঈ হা/৩৮; মিশকাত হা/৪৬৭; ছহীহাহ হা/৮৩৪।
[4]. মুসলিম হা/৩৭৩; আবূদাঊদ হা/১৮; তিরমিযী হা/৩৩৮৪; ছহীহাহ হা/৪০৬।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/২৯১; ছহীহাহ হা/১২১৩।
[6]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৩৭; ছহীহাহ হা/১২১৩।
[7]. ছহীহাহ হা/১২১৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২১৫।
[8]. বুখারী হা/২৯৭, ৭৫৪৯; মিশকাত হা/৫৪৮।
[9]. শরহুল মুমতে‘ ৩/৩৩০ পৃঃ।
[10]. http://www.binbaz.org.sa/mat/14993.
[11]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৫০; নাসাঈ হা/১০১০; মিশকাত হা/১২০৫, সনদ ছহীহ।
[12]. আবূদাঊদ হা/৯০৪; নাসাঈ হা/১২১৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৪৪; মিশকাত হা/১০০০।
[13]. মুসলিম হা/৭৭২; আবূদাঊদ হা/৮১৫; নাসাঈ হা/১৬৬৪।
[14]. মুহাম্মাদ ছাফা শায়খ ইবরাহীম হাক্বী, উলূমুল কুরআন মিন খিলালে মুক্বাদ্দামাতিত তাফাসীর, ২য় খন্ড, (বৈরূত : মুআসসাতুর রিসালাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪২৫হিঃ/২০০৪খ্রিঃ), পৃঃ ১৯৭।
[15]. বুখারী হা/৪৫২৬, ৪৫২৭।
[16]. বুখারী হা/৫০২৪; মুসলিম হা/৭৯২; মিশকাত হা/২১৯২।
[17]. আবূদাঊদ হা/১৪৬৮; ইবনু মাজাহ হা/১৩৪২; ছহীহাহ হা/৭৭২; মিশকাত হা/২১৯৯।
[18]. দারিমী হা/৩৫৪৪; ছহীহাহ হা/৭৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৪৫।
[19]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৪৪; ছহীহাহ হা/১৮১৫।
[20]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২২০২; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪৫০।
[21]. বুখারী হা/৫০৪৫-৪৬; মিশকাত হা/২১৯১।
[22]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হ/৪৬৮; ছহীহুল জামি‘ হা/৭৭৮০; মিশকাত হা/৪৬৫।
[23]. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৩৮৭; নায়লুল আওত্বার ১/২৫৯।
[24]. মুসলিম হা/৭৮৭; আবূদাঊদ হা/১৩১১; ইবনু মাজাহ হা/১৩৭২।
[25]. মুসলিম হা/৮১৭; ইবনু মাজাহ হা/২১৮; মিশকাত হা/২১১৫।
[26]. মির‘আত ৪/১৪৯৭।
[27]. মির‘আত ৭/১৮০।
[28]. মুসলিম হা/২২৩; তিরমিযী হা/৩৫১৭; ইবনু মাজাহ হা/২৮০; মিশকাত হা/২৮১।
[29]. শরহু মুসলিম ৩/১০২।
[30]. বুখারী হা/১৩৮৬, ১০৭৫।
[31]. বুখারী হা/৫০৫৯, ৫০২০।
[32]. আহমাদ হা/১৯০৪৪; মিশকাত হা/৮৫৬; ছহীহাহ হা/১৬০৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৫১।
[33]. মিরকাত ২/৭০২ পৃঃ।
[34]. ইবুন রজব হাম্বলী, ফাতহুল বারী, ৩/৩৯৮ পৃঃ।
[35]. মুসলিম হা/৪৭৯; আবূদাঊদ হা/৮৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৯৯।
[36]. বুখারী হা/৪৯৩৭ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; মুসলিম ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, ‘কুরআনে পারদর্শী হওয়ার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; আবূদাঊদ হা/১৪৫৪; তিরমিযী হা/২৯০৪।
[37]. আবূদাঊদ হা/১৩৯০; তিরমিযী হা/২৯৪৬; ছহীহাহ হা/১৫১৩; মিশকাত হা/২২০১।
[38]. মুসলিম হা/৭৯২-৯৩; আবূদাঊদ হা/১৪৭৩; নাসাঈ হা/১০১৭।
[39]. আবূদাঊদ হা/১৩৩৩; তিরমিযী ‘ফাযায়িলে কুরআন’ অধ্যায় হা/২৯১৯; নাসাঈ হা/১৬৬২ ‘ক্বিয়ামুল লাইল’ অধ্যায়, ‘স্বরবের উপর নীরবের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/২২০২।
[40]. মির‘আত, ৭/২৮৪ পৃঃ।
[41]. তিরমিযী হা/৫৭৯; ইবনু মাজাহ হা/১০৫৩; ছহীহাহ হা/২৭১০।
[42]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪।
[43]. আবূদাঊদ হা/১২৬১; তিরমিযী হা/২৯৪৭; ছহীহাহ হা/১৫১২।
[44]. বুখারী হা/৩৮০৮, ৩৭৫৮,৪৯৯৯; মুসলিম হা/২৪৬৪।
[45]. বুখারী হা/৩৮১০, ৫০০৩; মুসলিম হা/২৪৬৫।
[46]. বুখারী হা/৪৫২৬, ৪৫২৭।
[47]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩১০৬।
[48]. ছহীহুল জামে‘ হা/১৩২২।