কুরআন ও বাইবেলের আলোকে যাবীহুল্লাহ কে?
ইবরাহীম (আঃ) তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে কুরবানী করার বিষয়ে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এ আদেশ কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ) সম্পর্কে ছিল না। এটাই অকাট্য সত্য। কুরআনুল কারীম দ্বারা এটাই প্রমাণিত এবং এর উপরই সর্বকালের মুহাক্কিক মনীষীদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর বিপরীতে ইসহাক (আঃ)-কে যাবীহুল্লাহ সাব্যস্ত করা সম্পূর্ণ মনগড়া, যার ভিত্তি হ’ল ইহূদীদের তাহরীফ (বিকৃতি) ও অপব্যাখ্যা। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হ’ল।-
১. কুরআন মাজীদের আলোকে :
আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَبِيًّا- وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا- ‘এই কিতাবে তুমি ইসমাঈলের বৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা কর। সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং সে ছিল রাসূল ও নবী’। ‘সে তার পরিবারকে ছালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন’ (মারইয়াম ১৯/৫৪-৫৫)।
ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং মা হাজেরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। ঐ সময়ে ইবরাহীমের বয়স ছিল ৮৬ বছর।[1] শিশু বয়সে তাঁকে ও তাঁর মাকে পিতা ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মক্কার বিজন ভূমিতে রেখে আসেন। সেখানে ইবরাহীমের দো‘আর বরকতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে যমযম কূপের সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইয়ামনের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুরহুম গোত্র কর্তৃক মা হাজেরার আবেদনক্রমে সেখানে বসতি শুরু হয়।
১৪ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তরে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের বিস্ময়কর ত্যাগ ও কুরবানীর এই ঘটনাটি। পিতা ইবরাহীম কর্তৃক পুত্র ইসমাঈলকে স্বহস্তে কুরবানীর ঘটনায় চৌদ্দ বছরের তরুণ ইসমাঈলের ঈমান ও আত্মত্যাগের একমাত্র নমুনা ছিলেন তিনি নিজেই। তিনি স্বেচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ না করলে পিতার পক্ষে পুত্র কুরবানীর ঘটনা সম্ভব হ’ত কি-না সন্দেহ। তাই ঐ সময় নবী না হ’লেও নবীপুত্র ইসমাঈলের আল্লাহভীতি ও দৃঢ় ঈমানের পরিচয় ফুটে উঠেছিল তাঁর কথায় ও কর্মে। এরপর পিতার সহযোগী হিসাবে তিনি কা‘বাগৃহ নির্মাণে শরীক হন এবং কা‘বা নির্মাণ শেষে পিতা-পুত্র মিলে যে প্রার্থনা করেন, আল্লাহ পাক তা নিজ ভাষায় পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন (বাক্বারাহ ২/১২৭-১২৯)।
এভাবে ইসমাঈল স্বীয় পিতার ন্যায় বিশ্বের সমস্ত মুমিনের হৃদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রশংসায় বলেন, ‘সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী’ (মারইয়াম ১৯/৫৪)। যা তিনি যবহের পূর্বে পিতাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন,يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِيْ إِنْ شَآء اللهُ مِنَ الصَّابِرِيْنَ، ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’ (ছাফফাত ৩৭/১০২)।
উল্লেখ্য যে, ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ৯টি সূরায় ২৫টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[2]
যাবীহুল্লাহ কে?
ইসহাক (আঃ)-এর জন্ম হয় কেন‘আনে বিবি সারাহর গর্ভে ইসমাঈলের প্রায় চৌদ্দ বছর পরে। শৈশবে তিনি মক্কায় এসেছেন বলে জানা যায় না। পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারাহ (২/১৩৩, ৩৬, ৪০), সূরা আলে ইমরান (৩/৮৪), নিসা (৪/১৬৩), ইবরাহীম (১৪/৩৯), ছাফফাত (৩৭/১০০-১১৩) আয়াতগুলিতে ইসমাঈলের পরেই ইসহাক ও ইয়া‘কূবের আলোচনা এসেছে। এ ব্যাপারে সকল ইস্রাঈলী বর্ণনা একমত যে, ইসমাঈলের জন্মের সময় ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। পক্ষান্তরে ইসহাক জন্মের সময় ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ছিল অন্যূন ১০০ বছর এবং সারাহর বয়স ছিল অন্যূন ৯০ বছর।
নিঃসন্তান ইবরাহীম বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট একটি নেককার সন্তান প্রার্থনা করেছিলেন। যেমন কুরআনে এছেন, رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ، فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيْمٍ، ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সুসন্তান দান করুন’। ‘অতঃপর আমরা তাকে একটি সহনশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম’ (ছাফফাত ৩৭/১০০-১০১)। আর তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান ইসমাঈল।
ইবরাহীমকে একটি ধৈর্যশীল সন্তানের সুসংবাদ শুনানোর পরে কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা শেষে বলা হয়েছে-وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيّاً مِّنَ الصَّالِحِيْنَ ‘আর আমরা তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের। সে ছিল নবী ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত’ (ছাফফাত ৩৭/১১২)। অত্র আয়াতগুলির বর্ণনা পরম্পরায় স্পষ্ট বুঝা যায় যে, প্রথম সুসংবাদপ্রাপ্ত সন্তানটি ছিলেন ইসমাঈল, যাকে কুরবানী করা হয়। অতঃপর সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তান ছিলেন ইসহাক।
যেমন ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দো‘আ করেন,الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ وَهَبَ لِيْ عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَاء ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে আমার বৃদ্ধকালে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অবশ্যই দো‘আ শ্রবণ করে থাকেন’ (ইবরাহীম ১৪/৩৯)। এখানে তিনি ইসমাঈলের পরে ইসহাকের নাম উল্লেখ করেছেন।
অতএব উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, যবীহুল্লাহ ছিলেন ইবরাহীমের প্রথম সন্তান ইসমাঈল (আঃ), ইসহাক নন।
২. বাইবেলের বর্ণনার আলোকে :
ইংরেজী ‘বাইবেল’ (Bible) শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে গৃহীত, যার অর্থ ‘পুস্তক’। ল্যাটিন ভাষায় এবং ইংরেজীতে ‘পবিত্র পুস্তক’ অর্থে ‘বাইবেল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পরিভাষাগত ভাবে ইহূদী ও খৃস্টান ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলির সমষ্টি একত্রে ‘বাইবেল’ (The Bible) নামে পরিচিত। যেহেতু কট্টরপন্থী ইহুদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ই কুরআনের এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এবং কুরবানীর ঘটনাটি ইসহাক (আঃ)-এর সাথে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করে, তাই বাইবেলের আলোকেও বিষয়টি আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি। বাইবেল পুরাতন নিয়মের প্রথম কিতাব ‘আদি পুস্তক’[3] -এর মধ্যে ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-এর সুসংবাদ ও জন্মের আলোচনা এবং কুরবানীর ঘটনাও উল্লেখ রয়েছে। যেখানে নিচের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান-
(১) And Abram was fourscore and six years old, when Hagar bare Ishmael to Abram.[4] অর্থ : আব্রাহামের ছিয়াশি বছর বয়সে ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল।[5]
(২) And Abraham was an hundred years old, when his son Isaac was born unto him.[6] অর্থ : আব্রাহামের বয়স যখন একশ’ বছর তখন তাঁর ছেলে ইসহাকের জন্ম হয়েছিল।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বুঝা গেল যে, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ীও ইসমাঈল জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন, যিনি ইসহাক থেকে ১৪ বছরের বড়। আর ১৪ বছর পর্যন্ত ইসমাঈলই ইবরাহীম (আঃ)-এর একমাত্র পুত্র ছিলেন। আদি পুস্তকে[7] কুরবানীর যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে only son (একমাত্র পুত্র)-কে কুরবানী করার কথা রয়েছে (বাইবেলের বাংলা অনবাদে অদ্বিতীয় পুত্র কথাটি ভুল)।
বলাবাহুল্য জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলের বর্তমানে ইসহাক একমাত্র পুত্র হ’তে পারেন না। ইসহাকের জন্মের ১৪ বছর পূর্ব পর্যন্ত ইসমাঈল পিতার একমাত্র পুত্র ছিলেন। সুতরাং বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ীও কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈলের সাথেই সংঘটিত হয়েছে। এ বিষয়ে বাইবেলের অনুবাদসমূহে ইসহাকের উল্লেখ স্পষ্ট ভ্রান্তি, যা বাইবেলের স্পষ্ট বর্ণনাসমূহেরও পরিপন্থী।
অদ্বিতীয় বা একমাত্র পুত্র : বাইবেলের আদিপুস্তকের[8] বক্তব্য নিম্নরূপ :
And it came to pass after these things, that God did tempt Abraham, and said unto him, Abraham : and he said, Behold, here I am. And he said, Take now thy son, thine only son Isaac, whom thou lovest, and get thee into the land of Moriah; and offer him there for a burnt offering upon one of the mountains which I will tell thee of.[9]
‘১. এই সকল ঘটনার পরে ঈশ্বর আব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, হে আব্রাহাম! তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন! এই আমি। ২. তখন তিনি কহিলেন, তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, (কোন কোন আরবী বাইবেলে : তোমার প্রথমজাত পুত্রকে) (thine only son) যাহাকে তুমি ভালবাস, সেই ইসহাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও এবং …তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর’।[10]
এর পরের ঘটনা বাইবেলে এসেছে এভাবে-[11]
(10) And Abraham stretched forth his hand, and took the knife to slay his son. (11) And the angel of the Lord called unto him out of heaven, and said, Abraham, Abraham: and he said, Here am I. (12) And he said, Lay not thine hand upon the lad, neither do thou any thing unto him: for now I know that thou fearest God, seeing thou hast not withheld thy son, thine only son from me. (13) And Abraham lifted up his eyes, and looked, and behold behind him a ram caught in a thicket by his horns: and Abraham went and took the ram, and offered him up for a burnt offering in the stead of his son. (14) And Abraham called the name of that place Jehovah-jireh: as it is said to this day, In the mount of the Lord it shall be seen. (15) And the angel of the Lord called unto Abraham out of heaven the second time, (16) And said, By myself have I sworn, saith the Lord, for because thou hast done this thing, and hast not withheld thy son, thine only son : (17) That in blessing I will bless thee, and in multiplying I will multiply thy seed as the stars of the heaven, and as the sand which is upon the sea shore; and thy seed shall possess the gate of his enemies.
‘(১০) পরে আব্রাহাম হস্ত বিস্তার করিয়া আপন পুত্রকে বধ করণার্থে খড়গ গ্রহণ করিলেন। (১১) এমন সময়ে আকাশ হইতে সদাপ্রভুর দূত তাঁহাকে ডাকিলেন, কহিলেন, আব্রাহাম, আব্রাহাম। (১২) যুবকের প্রতি তোমার হস্ত বিস্তার করিও না, উহার প্রতি কিছুই করিও না, কেননা এখন আমি বুঝিলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে তোমর অদ্বিতীয় পুত্র দিতেও অসম্মত নও। (১৩) তখন আব্রাহাম চক্ষু তুলিয়া চাহিলেন, আর দেখেলেন, তাঁহার পশ্চাৎ দিকে একটি মেষ, তাহার শৃঙ্গ ঝোপে বদ্ধ; পরে আব্রাহাম গিয়া সেই মেষটি লইয়া আপন পুত্রের পরিবর্তে বলিদান করিলেন। (১৫) পরে সদাপ্রভুর দূত দ্বিতীয় বার আকাশ হইতে আব্রাহামকে ডাকিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু বলিতেছেন, (১৬) তুমি এই কার্য করিলে, আমাকে তোমার অদ্বিতীয় পুত্র দিতে অসম্মত হইলে না, এই হেতু আমি আমারই দিব্য করিয়া কহিতেছি। (১৭) আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্বাদ করিব…।[12]
ইসহাক জন্ম থেকেই দ্বিতীয় পুত্র, প্রথম পুত্র ইসমাঈল : এভাবে বাইবেলে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইবরাহীম (আঃ) তার একমাত্র ও অদ্বিতীয় পুত্রকে- কোন আরবী বাইবেলে : তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে- কুরবানী করতে নিয়ে যান। এখানে আমরা আরো দেখছি যে, পুত্রের অদ্বিতীয় হওয়ার বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এর উপরেই মূল আশীর্বাদের ভিত্তি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ পুত্রটি ছিলেন ইসহাক। যে কোন বাইবেল পাঠক বুঝবেন যে, কথাটি ‘সোনার পাথর-বাটি’ ছাড়া কিছুই নয়। কারণ ইসহাক (আঃ) কখনোই ইবরাহীম (আঃ)-এর অদ্বিতীয় পুত্র ছিলেন না, তিনি জন্ম থেকেই ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। এ বিষয়ে বাইবেলের বক্তব্যও স্পষ্ট, যা নিম্নরূপ-
আদিপুস্তকের ১৬ অধ্যায়ে ইসমাঈলের জন্ম-বিবরণে বলা হয়েছে, ‘১. আব্রামের স্ত্রী সারী নিঃসন্তান ছিলেন এবং হাগার নামে তাঁহার এক মিসরীয়া দাসী ছিল। … ৩. এইরূপে কেনান দেশে আব্রাম দশ বৎসর বাস করিলে পরে আব্রামের স্ত্রী সারী আপন দাসী মিসরীয়া হাগারকে লইয়া আপন স্বামী আব্রামের সহিত বিবাহ দিলেন। … ১৫. পরে হাগার আব্রামের নিমিত্তে পুত্র প্রসব করিল; আর আব্রাম হাগারের গর্ভজাত আপনার সেই পুত্রের নাম ইশ্মায়েল রাখিলেন। ১৬. আব্রামের ছিয়াশি বৎসর বয়সে হাগার আব্রামের নিমিত্তে ইশ্মায়েলকে প্রসব করিল’।
এবার ইসহাকের জন্ম বিবরণ দেখুন : আদিপুস্তকের ১৭তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘১. আব্রামের নিরানববই বৎসর বয়সে সদাপ্রভু তাঁহাকে দর্শন দিলেন… ১৫. আর ঈশ্বর আব্রাহামকে কহিলেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলিয়া ডাকিও না; তাহার নাম সারা [রাণী] হইল। ১৬. আর আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিব এবং তাহা হইতে এক পুত্রও তোমাকে দিব; আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিব, তাহাতে সে জাতিগণের [আদিমাতা] হইবে …আব্রাহাম ঈশ্বরকে কহিলেন, ইশ্মায়েলই তোমার গোচরে বাঁচিয়া থাকুক (O that Ishmael might live before thee!) ১৯. তখন ঈশ্বর কহিলেন, তোমার স্ত্রী সারা অবশ্য তোমার নিমিত্তে পুত্র প্রসব করিবে এবং তুমি তাহার নাম ইসহাক [হাস্য] রাখিবে। আর আমি তাহার সহিত আমার নিয়ম স্থাপন করিব, তাহা তাহার ভাবী বংশের পক্ষে চিরস্থায়ী নিয়ম হইবে। ২০. আর ইশ্মায়েলের বিষয়েও তোমার প্রার্থনা শুনিলাম; দেখ, আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিলাম এবং তাহাকে ফলবান করিয়া তাহার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; তাহা হইতে দ্বাদশ রাজা উৎপন্ন হইবে, ও আমি তাহাকে বড় জাতি করিব…’।
এরপর ২১তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘… ৫. আব্রাহামের এক শত বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়। …. ১২. আর ঈশ্বর আব্রাহামকে কহিলেন, …. সারা তোমাকে যাহা বলিতেছে, তাহার সেই কথা শুন; কেননা ইসহাকেই তোমার বংশ আখ্যাত হইবে’।
এরপর ২৫তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘৮. পরে আব্রাহাম বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া শুভ বৃদ্ধাবস্থায় প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন। ৯. আর তাঁহার পুত্র ইসহাক ও ইশ্মায়েল মম্রির সম্মুখে হেতীয় সোহরের পুত্র ইফ্রোণের ক্ষেত্রস্থিত মকেপলা গুহাতে তাঁহার কবর দিলেন’।
উপরের বক্তব্যগুলি থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, ইবরাহীমের প্রথম পুত্র হ’লেন ইসমাঈল (আঃ)। ইসমাঈলের বয়স চৌদ্দ বৎসর হ’লে দ্বিতীয় পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়। ইসমাঈল ১৪ বছর পর্যন্ত অদ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। আর ইসহাক জন্মের মুহূর্ত থেকেই দ্বিতীয় পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ইসহাকের জন্মের পূর্বে ইসমাঈল ইবরাহীমের প্রিয়তম পুত্র ছিলেন। তাঁর জন্য তিনি হৃদয় দিয়ে দো‘আ করতেন।
ইসমাঈলকে দূর ‘বনবাসে’ পাঠালেও ইবরাহীমের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। তার বড় প্রমাণ যে, পিতার মৃত্যুর সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং ছোট ভাই ইসহাকের সাথে একত্রে তাঁকে দাফন করেন।
বস্ত্তত মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে তাঁর একমাত্র ও অদ্বিতীয় প্রিয় পুত্রের বিষয়ে বারংবার পরীক্ষা করেন এবং ইবরাহীম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রথম পরীক্ষা ছিল শিশু বয়সেই এ প্রিয় পুত্রকে ‘মরুবাসে’ পাঠানো। যদিও বিকৃত ‘তাওরাত’-এ ইসহাকের জন্মের পরে ইসমাঈলের মরুবাসে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তবে তাওরাত বা বাইবেলের বর্ণনাই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, ইসহাকের জন্মের অনেক আগে, অতি অল্প বয়সে- মায়ের কাঁধে বা কোলে থাকার সময়ে ইবরাহীম তাঁর এ পুত্রকে ‘মরুবাসে’ পাঠান।
৩. যুক্তির আলোকে ইসমাঈলের কুরবানী ও মরুবাস :
এখানে সুস্পষ্ট যে, ইসমাঈলকে যখন মরুবাসে প্রেরণ করা হয় তখন তিনি হাঁটতে-দৌঁড়াতে পারতেন না। এত ছোট ছিলেন যে তাঁর মা তাকে রুটি ও পানির সাথে একত্রে কাঁধে নিতে পেরেছিলেন। তাঁকে ফেলে রেখে মা দূরে যেয়ে বসে ছিলেন, কিন্তু দৌঁড়ে বা হেঁটে এক তীর দূরে মায়ের কাছে যাওয়ার মত বয়সও ইসমাঈলের হয়নি। নিঃসন্দেহে একমাত্র শিশু পুত্রকে এভাবে দূরে রেখে আসা ইবরাহীম (আঃ)-এর জন্য মহাপরীক্ষা ছিল। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে আল্লাহ তাঁকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করলেন কুরবানী দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই ইবরাহীমের জীবনের মোড় ঘুরল। তাঁর এ পুত্রের বিষয়ে সুসংবাদ লাভের পাশাপাশি তিনি দ্বিতীয় পুত্র ও তাঁর বংশধরের সুসংবাদ লাভ করেন।
এখানে আরো লক্ষণীয় যে, আমরা উপরে ইসহাকের জন্ম-বিষয়ক বিবরণ থেকে দেখেছি যে, ইসহাকের জন্মের পূর্বেই প্রভু তাঁর বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি তাঁর বংশ বৃদ্ধি করবেন এবং ইসহাকের মাধ্যমেই ইবরাহীমের বংশ অখ্যাত হবে। যে পুত্রের জন্মের পূর্বেই প্রভু প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তার বংশধর বৃদ্ধি করবেন, সে পুত্রকে তিনি বিবাহ ও বংশবৃদ্ধির পূর্বেই কুরবানীর নির্দেশ দিয়ে নিজের প্রতিজ্ঞা নিজেই ভঙ্গ করবেন তা কি সম্ভব?
আমরা আরো দেখেছি যে, কুরবানীর স্থান হিসাবে ‘মোরিয়া দেশ’ (Moriah)-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সুস্পষ্ট যে, মক্কার ‘মারওয়া’ নামক স্থানকেই বুঝানো হয়েছে। এতেও প্রমাণিত হয়, মক্কায় অবস্থানরত ইসমাঈলকেই কুরবানীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।[13]
তাছাড়া বাইবেলের সবচেয়ে বিশুদ্ধতম বর্ণনা, যা ইঞ্জীলে বারনাবাস নামে প্রসিদ্ধ, তাতে ৪৩ ও ৪৪ নং অধ্যায়ে ঈসা (আঃ)-এর স্পষ্ট বাণী উল্লেখ রয়েছে যে, কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈল (আঃ)-এর, ইসহাক (আঃ)-এর নয়। এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে, খৃস্টানগণ এই ইঞ্জীলটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। আর তা মূলতঃ এর এসব বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট তথ্যসমূহের কারণেই।[14]
৪. ইতিহাসের আলোকে :
ইতিহাসের সুদৃঢ় পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরবানীর এই ঘটনা মক্কার হারাম এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। কুরবানীর আদেশ পালনের সময় শয়তান যে তিনটি স্থানে কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, ইবরাহীম (আঃ) প্রত্যেকবার তাকে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিলেন। মূলতঃ তারই স্মৃতিচারণে মিনার জামরাসমূহে কঙ্কর নিক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তখন থেকেই হজ্জের বিধানসমূহে কুরবানী অন্তর্ভুক্ত হয়। হজ্জ ছাড়াও যিলহজ্জ মাসে কুরবানী প্রথা আরবে (যারা ইসমাঈল-এর বংশধর) পালিত হয়ে আসছে। বলাবাহুল্য যে, মক্কার হারাম এলাকা ইসমাঈল (আঃ)-এর বাসস্থান ছিল, ইসহাক (আঃ)-এর নয়। কেননা তিনি শাম এলাকায় বসবাস করতেন। সুতরাং হারাম এলাকায় কুরবানীর ঘটনা সংঘটিত হওয়া এবং আজ পর্যন্ত তার প্রচলন অব্যাহত থাকা এ কথার প্রমাণ যে, এই ঘটনাটি ইসমাঈলের, ইসহাকের নয়। কুরবানীর আদর্শ ইসমাঈল বংশীয়দের মাঝে পালিত হয়, ইসহাক বংশীয়দের মাঝে নয়।[15]
৫. গবেষকদের বিশ্লেষণের আলোকে :
প্রত্যেক যুগের গবেষকদের বিশ্লেষণ একটি দীর্ঘ আলোচনার দাবী রাখে। এখানে শুধু নমুনাস্বরূপ কয়েকজন ব্যক্তির ও কিতাবের নাম উল্লেখ করা হ’ল।-
১. আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যার পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী করা হয়েছে তিনি ইসমাঈল। ইহুদীরা তাকে ইসহাক বলে থাকে। এটি তাদের মিথ্যাচার।[16]
২. তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব আল-কুরাযী (মৃঃ ১২০ হি.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ)-কে যে পুত্র কুরবানী করার আদেশ করেছেন তিনি হ’লেন ইসমাঈল। এ বিষয়টি আমরা কিতাবুল্লায় (কুরআন মাজীদ) পেয়েছি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ করার পর ইসহাক (আঃ)-এর আলোচনা করেছেন এবং অন্য স্থানে ইরশাদ করেছেন,فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ، ‘তখন আমরা তাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়া‘কূবের জন্মের সুসংবাদ দিলাম’ (হূদ ১১/৭০)।
… এরপরও তাকে যবেহ করার আদেশ কীভাবে দেওয়া যেতে পারে? নিঃসন্দেহে যবেহ করার আদেশ ইসমাঈল সম্পর্কেই ছিল।[17]
৩. মুহাম্মাদ বিন কা‘ব আল-কুরাযীর বর্ণনা রয়েছে যে, আমার উপস্থিতিতে ওমর ইবনে আব্দুল আযীযকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, যবীহ হযরত ইসমাঈল ছিলেন নাকি হযরত ইসহাক? তখন মজলিসে এমন এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন যিনি পূর্বে ইহূদী পন্ডিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়েছেন। তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহর শপথ, তিনি ইসমাঈলই ছিলেন। ইহূদীরা এই বিষয়টি জানে, কিন্তু আরবদের প্রতি ঈর্ষাবশত এই দাবী করে যে, যাবীহ হ’লেন হযরত ইসহাক (আঃ)।[18]
৪. আছমাঈ একবার আবূ আমর আল-আলা (১৫৪ হি.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, যবীহ কে ছিলেন? তিনি উত্তরে বললেন, তোমার বুদ্ধি-বিচার কোথায় গেল! ইসহাক (আঃ) কি কখনো মক্কায় ছিলেন? ইসমাঈল (আঃ)-ই তো পিতার সঙ্গে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেছেন। আর কুরবানীস্থল তো মক্কায়।[19]
উপসংহার :
সত্যসন্ধানীদের জন্য ইনশাআল্লাহ এই দলীল-প্রমাণ অপ্রতুল নয়। এ বিষয়ে আরো তথ্য-প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। আপাতত এখানেই সমাপ্ত করা হ’ল। আশা করি, সত্যপন্থীদের কোন সংশয় থাকবে না। আর সাধারণ মুসলমানদের উচিত তারা যেন নিজের সঠিক আক্বীদার ব্যাপারে স্বার্থান্বেষী কিংবা মূর্খ লোকদের কুমন্ত্রণায় প্রভাবিত না হন। আল্লাহ আমাদেরকে খৃস্টান মিশনারীদের অপপ্রচার হ’তে মুক্ত থাকার তাওফীক দান করুন-আমীন!
-রূহুল হোসাইন**
জলঙ্গী, মুর্শিদাবাদ, ভারত।
[1]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/১৭৯।
[2]. যথাক্রমে সূরা বাক্বারাহ ২/১২৫, ১২৭-১২৯, ১৩২, ১৩৩, ১৩৬, ১৪০ মোট ৮ বার; আলে ইমরান ৩/৮৪; নিসা ৪/১৬৩; আন‘আম ৬/৮৬; ইবরাহীম ১৪/৩৯; মারইয়াম ১৯/৫৪, ৫৫; আম্বিয়া ২১/৮৫, ৮৬; ছাফফাত ৩৭/১০১-১০৮; ছোয়াদ ৩৮/৪৮।
[3]. আদি পুস্তক ১৬, ১৭, ২১ ও ২২ নং অধ্যায় ।
[4]. Baibel Genesis 16/16; KJV.
[5]. আদি পুস্তক ১৬ : ১৬।
[6]. Baibel Genesis 21/5 KJV. আদি পুস্তক ২১ : ৫।
[7]. Genesis ২২ তম অধ্যায়ে ২২ : ২।
[8]. Genesis ২২ অধ্যায়।
[9]. Genesis 22/1-2 KJV।
[10]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ২২/১-১)।
[11]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis 22/10-17 KJV)।
[12]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis 22/10-17)।
[13]. বাইবেলের Jacob ইসরাঈলীদের আদি পিতা-সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১/২০০-২০১।
[14]. ইঞ্জিলে বারনাবাস পৃঃ ১৭৭-১৮১।
[15]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউ ফাতাওয়া ৪/৩৩৫-৩৬; ইবনুল কাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৭৩; ইগাছাতুল লাহফান ২/৩৮৫; শাববীর আহমদ উছমানী, তাফসীরে উছমানী, সূরা ছাফফাত; সাইয়্যিদ সুলাইমান নদভী, সীরাতুনণবী (ছাঃ) ১/৭৮-৮৬।
[16]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ৪/১৯।
[17]. ঐ ৪/২০।
[18]. তাফসীরে ১০/৫১৪।
[19]. আবূ হাইয়ান আনদালুসী (৭৫৪ হি.), আল-বাহরুল মুহীত (সূরা ছাফফাত)। এ সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন : ইবনু তায়মিয়া, মিনহাজু সুনণাহ ৫/৩৫৩-৩৫৫; শিবলী নুমানী, সীরাতুন নবী ১/৭৮-৮৬; ড. মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আবূ শাহবা, আল-ইসরাঈলিয়াত ওয়াল-মাওযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর পৃঃ ২৫২-২৬০; কাযী মুহাম্মাদ সুলায়মান মনছূরপুরী, রহমাতুলিলল আলামীন ২/৪৭-৫১; মুহাম্মাদ সাঈদ আলআনী, আল-কওলুছ ছহীহ ফী তা‘য়ীনিয যাবীহ; হামীদুদ্দীন ফারাহী রচিত আর-রায়ুছ ছহীহ ফী মান হুয়ায যাবীহ প্রবন্ধ। যার উর্দূ অনুবাদ ‘কুরবানী আওর উসকি হাকীকত’ নামে মাকতাবা তা‘মীরে ইনসানিয়াত, লাহোর থেকে প্রকাশিত হয়েছে; হিফযুর রহমান, কাছাছুল কুরআন, ১/১৬৫-১৬৭।