আদব ও আমল

মুমিন কিভাবে দিন অতিবাহিত করবে (১)

মানুষের জীবন কিছু দিন-রাতের সমষ্টি। ইহকালীন জীবনের আমলের বিনিময়ে পরকালীন জীবনে জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। তাই মানুষের দুনিয়াবী জীবন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় অবহেলায় কাটিয়ে দিলে পরকালে বিচার দিবসে হিসাব-নিকাশের বেলায় কেঁদে-কেটে কোন লাভ হবে না, কাঁদার ও কাজ করার প্রকৃত সময় পার্থিব জীবন। পরকালীন জীবন শুধু আল্লাহর অফুরন্ত নে‘মত উপভোগের কিংবা শাস্তি আস্বাদনের জায়গা। সেখানে কোন আমল করার সুযোগ নেই। তাই ইহকালীন জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ব্যয় করার চেষ্টা করা অতি যরূরী। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা মুমিন তার দিন কিভাবে অতিবাহিত করবে সে বিষয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব।

দিবসের উপকারিতা : আল্লাহ রাত-দিন সৃষ্টি করেছেন, যা তাঁর অসীম ক্ষমতার এক অনন্য নিদর্শন। মানুষের কল্যাণের জন্যই তিনি রাত-দিনের বিবর্তন করেন। আর দিনের নানা উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

ক. আল্লাহ দিনকে করেছেন আলোকময়। যাতে দিনের আলোতে মানুষ তার চারপাশের সবকিছু দেখতে পায় এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিস হ’তে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারে। অনুরূপভাবে রাতের অন্ধকারে যেসব অনিষ্ট ও ক্ষতিতে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে দিনের আলোতে তা থেকে নিজেকে হেফাযত করতে পারে। আল্লাহ বলেন,اللهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوْا فِيْهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا- ‘আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্য রাত্রি বানিয়েছেন যাতে তোমরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পার, আর দিনকে করেছেন আলোকময়’ (মুমিন ৪০/৬১)

খ. দিনের বেলায় মানুষ জীবিকা অন্বেষণ ও পরকালীন জীবনের জন্য বিভিন্ন আমল করতে পারে। আল্লাহ বলেন, وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا- ‘আর দিবসকে করেছি জীবিকা অন্বেষণকাল’ (নাবা ৭৮/১১)। তিনি আরো বলেন, وَجَعَلَ النَّهَارَ نُشُوْرًا- ‘আর সমুত্থানের জন্য দিয়েছেন দিবসকে’ (ফুরক্বান ২৫/৪৭)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاؤُكُمْ مِنْ فَضْلِهِ- ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম হ’ল রাত্রি ও দিবাভাগে তোমাদের নিদ্রা ও তার মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান’ (রূম ৩০/২৩)

দিবসে মুমিনের করণীয় : মুমিনের দৈনন্দিন কার্যাবলীকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ইবাদত ও মু‘আমালাত।

ক. ইবাদত : মুমিন কি কি ইবাদতের মাধ্যমে সারাদিন অতিবাহিত করবে, সে বিষয়ে নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

১. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর করণীয় :

ক. দো‘আ পাঠ : ঘুম থেকে উঠে নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করবে-اَلْحَمْدُ ِللهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ،  ‘আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আহইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’ (সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করলেন এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই হবে আমাদের পুনরুত্থান)।[1]

খ. পবিত্রতা অর্জন : ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দু’হাত তিনবার ধৌত করা সু্ন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِى الإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلاَثًا فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِى أَيْنَ بَاتَتْ يَدُه-ُ ‘তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জাগ্রত হ’লে সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত (পানির) পাত্রে না ঢোকায়। কেননা সে জানে না যে, তার হাত রাতে কোথায় অবস্থান করছিল’।[2] অতঃপর উত্তমরূপে ওযূ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ- ‘যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমস্ত পাপ ঝরে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়’।[3]

গ. তাহিয়াতুল ওযূ : ওযূ করার পর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব।[4] রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ ثُمَّ يَقُوْمُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ- ‘যে কোন মুসলিম যখনই সুন্দরভাবে ওযূ করে দাঁড়িয়ে একাগ্রতার সাথে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়’।[5]

২. আযান ও আযানের উত্তর দেওয়া :

দিনের বেলায় তিন ওয়াক্ত ছালাত রয়েছে। ছুবহে ছাদিক হ’লে ফজর, দ্বিপ্রহরের পরে সূর্য ঢলে পড়লে যোহর এবং কোন বস্ত্তর ছায়া একগুণ হ’লে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয়।[6] এ সময় আযান দেওয়া অনেক ছওয়াবের কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْمُؤَذِّنُوْنَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়াযযিনগণ লোকেদের মাঝে সুদীর্ঘ ঘাড় বিশিষ্ট হবে’।[7] অন্যত্র তিনি বলেন,الْمُؤَذِّنُونَ أُمَنَاءُ الْمُسْلِمِيْنَ عَلَى صَلَاتِهِمْ وَحَاجَتِهِمْ ‘মুওয়াযযিনগণ মুসলমানদের ছালাত ও তাদের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হেফাযতকারী’।[8] অর্থাৎ ইফতার ও সাহারীর ক্ষেত্রে হেফাযতকারী’।[9]

ক. আযানের উত্তর দেওয়া ও দো‘আ পড়া : আযানের উত্তর দেওয়া অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মুওয়াযযিন তো আমাদের উপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ، ‘যখন তোমরা আযান শুনতে পাবে, তখন মুওয়াযযিন যা বলে তোমরাও তাই বল’।[10] তিনি আরো বলেন, قُلْ كَمَا يَقُوْلُوْنَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَهْ ‘মুওয়াযযিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর তুমি তা শেষ করে (আল্লাহর নিকট) দো‘আ করবে। তখন তোমাকে তা-ই দেয়া হবে’ (অর্থাৎ তোমার দে‘আ কবুল হবে)।[11]

খ. আযান ও ইক্বামতের মাঝে দো‘আ করা : আযান ও ইক্বামতের মধ্যে দো‘আ করলে তা কবুল হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الدُّعَاءُ لاَ يُرَدُّ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ- ‘আযান ও ইক্বামতের মাঝে দো‘আ প্রত্যাখ্যাত হয় না’।[12] তিনি আরো বলেন, الدُّعَاءُ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإِقَامَةِ مُسْتَجَابٌ فَادْعُوْا- ‘আযান ও ইক্বামতের মাঝে দো‘আ কবুল হয়, সুতরাং তোমরা দো‘আ কর’।[13] তিনি আরো বলেন,

إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِى إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ-

‘যখন তোমরা মুওয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রূপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আযান শেষে) আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা কর। আর ওসীলা হ’ল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা ঐ স্থানের অধিকারী হবেন এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলা চাইবে তাঁর জন্য শাফা‘আত করা আমার উপর ওয়াজিব হবে’।[14]

অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُوْدًا الَّذِىْ وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে দো‘আ করে, হে আল্লাহ! (তাওহীদের) এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের তুমি প্রভু। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তুমি দান কর ‘অসীলা’ (নামক জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং পৌঁছে দাও তাঁকে (শাফা‘আতের) প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা তুমি তাঁকে করেছ’।[15]

তিনি আরো বলেন,مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً وَبِالإِسْلاَمِ دِيْنًا. غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ. قَالَ ابْنُ رُمْحٍ فِىْ رِوَايَتِهِ مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ وَأَنَا أَشْهَدُ- ‘যে ব্যক্তি মুওয়াযযিনকে বলতে শুনে বলে, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً وَبِالإِسْلاَمِ دِيْنًا- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত মা‘বূদ নেই এবং তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহকে রব, ইসলামকে আমার দ্বীন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে রাসূল মেনে নিয়েছি’, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’।[16]

গ. আযান ও ইক্বামতের মাঝে ছালাত আদায় করা : আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ ثُمَّ قَالَ فِى الثَّالِثَةِ لِمَنْ شَاءَ، ‘প্রত্যেক আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত রয়েছে। তৃতীয়বারে বললেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে’।[17]

৩. মসজিদে গমন :

উত্তমরূপে ওযূ করে মসজিদ অভিমুখে গমন করা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَطَهَّرَ فِىْ بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ لِيَقْضِىَ فَرِيْضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللهِ كَانَتْ خَطْوَتَاهُ إِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيئَةً وَالأُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً. ‘যে ব্যক্তি বাড়ী থেকে পাক-পবিত্র হয়ে (ওযূ করে) কোন ফরয ছালাত আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোন ঘরে (কোন মসজিদে) যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি পাপ ঝরে পড়ে এবং একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়’।[18]

ক. মসজিদে গমনপথে দো‘আ : রাসূল (ছাঃ) মসজিদে যাওয়ার পথে দো‘আ পড়তেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,

فَخَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ وَهُوَ يَقُوْلُ اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَفِىْ لِسَانِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ فِىْ بَصَرِىْ نُوْرًا وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِىْ نُوْرًا وَمِنْ أَمَامِى نُوْرًا وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِىْ نُوْرًا وَمِنْ تَحْتِى نُوْرًا، اللَّهُمَّ أَعْطِنِىْ نُوْرًا-

‘অতঃপর তিনি ছালাতের জন্য বের হ’লেন। তখন তিনি এ দো‘আ করছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে আলো (নূর) সৃষ্টি করে দাও, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার পিছন দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার সামনের দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার উপর দিক থেকে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার নীচের দিক থেকেও আলো সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ! আমাকে নূর বা আলো দান করো’।[19]

খ. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দো‘আ : মসজিদে প্রবেশ কালে দো‘আ পড়া সুন্নাত। মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রথমে ডান পা রেখে বলবে, اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ- (আল্লা হুম্মাফ্তাহ্লী আবওয়া-বা রহ্মাতিকা) ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও’।[20] অন্য বর্ণনায় শুরুতে দরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। যেমন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ (আল্লা-হুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া সাল্লিম) ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর’।[21]

মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় প্রথমে বাম পা রেখে বলবে,اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ-  (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিকা) ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’।[22] অন্য বর্ণনায় শুরুতে দরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। যেমন, اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّسَلِّمْ (আল্লা-হুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া সাল্লিম) ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর’।[23]

খ. তাহিইয়াতুল মসজিদ : মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাত, যাকে তাহিইয়াতুল মসজিদ বলে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ. وفي رواية فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ. ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পূর্বে বসবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নেয়’।[24]

৪. ফজরের ছালাত আদায় করা :

ক. ফজরের সুন্নাত : ফজরের সুন্নাত ছালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফজরের ফরযের পূর্বে এ ছালাত আদায় করতে হয়। ফরযের পূর্বে সময় না পেলে ফরযের পরেও আদায় করা যাবে।[25] এ ছালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا-  ‘ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ছালাত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম’।[26]

খ. ফরয ছালাত : ফজরের ফরয ছালাতের গুরুত্ব অত্যধিক। আল্লাহ বলেন,أَقِمِ الصَّلاَةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا- ‘সূর্য অপরাহ্নে ঢলে পড়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত তুমি ছালাত কায়েম কর এবং ফজরের ছালাত আদায় কর। নিশ্চয়ই ফজরের ছালাত (রাত্রি ও দিবসের ফেরেশতাগণের মাধ্যমে) সাক্ষ্যপ্রাপ্ত হয়’ (ইসরা ১৭/৭৮)। তিনি আরো বলেন,وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا- ‘এবং তোমার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে’ (ত্ব-হা ২০/১৩০)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِىْ ذِمَّةِ اللهِ فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ اللهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَىْءٍ- ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মাদারী লাভ করল। অতএব হে আদম সন্তান! লক্ষ্য রাখ, আল্লাহ যেন অবশ্যই তোমাদের কাছে তার যিম্মাদারীর কিছু দাবী না করেন’।[27] তিনি আরো বলেন, مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ- ‘যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা ছালাত আদায় করল, সে জান্নাত প্রবেশ করবে’।[28] তিনি আরো বলেন,لَنْ يَّلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا ‘ঐ ব্যক্তি কখনও জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের পূর্বের এবং সূর্যাস্তের পূর্বের ছালাত অর্থাৎ ফজর ও আছরের ছালাত আদায় করে’।[29]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের নিকট দিনেরাতে ফেরেশতাগণ পালাক্রমে যাতায়াত করতে থাকেন। আর ফজর ও আছরের ছালাতে তাঁরা একত্রিত হন। অতঃপর যারা তোমাদের কাছে রাত কাটিয়েছেন, তাঁরা ঊর্ধ্বে (আকাশে) চলে যান। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে ভালভাবে অবগত, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তাঁরা বলেন, আমরা যখন তাদেরকে ছেড়ে এসেছি, তখন তারা ছালাতরত ছিল। আর যখন আমরা তাদের নিকট গিয়েছিলাম, তখনও তারা ছালাতরত ছিল’।[30]

অন্য বর্ণনায় আছে, ফজর ও আছরের ছালাতে রাত্রি ও দিনের ফেরেশতা একত্রিত হন। ফজরের সময় একত্রিত হয়ে রাতের ফেরেশতা উঠে যান এবং দিনের ফেরেশতা থেকে যান। অনুরূপ আছরের ছালাতে একত্রিত হয়ে দিনের ফেরেশতা উঠে যান এবং রাতের ফেরেশতা থেকে যান। তাদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এলে? তাঁরা বলেন, আমরা তাদের কাছে গেলাম, তখন তারা ছালাত পড়ছিল এবং তাদের কাছ থেকে এলাম, তখনও তারা ছালাত পড়ছিল, সুতরাং ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে মাফ করে দিন’।[31]

জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পূর্ণিমার রাতে বসেছিলাম। তিনি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, নিঃসন্দেহে তোমরা (পরকালে) তোমাদের প্রতিপালককে ঠিক এইভাবে দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা এই পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। সুতরাং যদি তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে (নিয়মিত) ছালাত আদায়ে পরাহত না হ’তে সক্ষম হও (অর্থাৎ এ ছালাত ছুটে না যায়), তাহ’লে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন কর’।[32]

৫. কুরআন তেলাওয়াত করা :

কুরআন তেলাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর এই কুরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুফারিশ করবে। কুরআন তেলাওয়াতকারী ও যে তেলাওয়াত করে না তাদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِىْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الأُتْرُجَّةِ، رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ، وَمَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِىْ لاَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ لاَ رِيْحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ، وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِىْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ مَثَلُ الرَّيْحَانَةِ، رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ، وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ الَّذِىْ لاَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الْحَنْظَلَةِ، لَيْسَ لَهَا رِيْحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ- ‘কুরআন তেলাওয়াতকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত কমলার মত, যার ঘ্রাণও চমৎকার স্বাদও মজাদার। যে মুমিন কুরআন তেলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের মত, যার কোন সুঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন তেলাওয়াত করে তার উদাহরণ রায়হানার মত, যার সুঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন তেলাওয়াত করে না তার উদাহরণ হানযালা ফলের ন্যায়, যার সুঘ্রাণও নেই, স্বাদও তিক্ত’।[33] তিনি আরো বলেন,يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا- ‘(ক্বিয়ামতে) কুরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কুরআন পাঠ করতে করতে উপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে’।[34]

অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِيْنَ، ‘আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন’।[35] অর্থাৎ যারা এ কিতাবের অনুসারী ও এর উপরে আমলকারী হবে তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত এবং পরকালে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

কুরআন তেলাওয়াতের নেকী সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেন,مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُوْلُ الم َحَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করবে তার জন্য ছওয়াব রয়েছে। আর ছওয়াব হয় তার দশ গুণ। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’।[36]

তিনি অন্যত্র বলেন,يَجِىءُ الْقُرْآنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ حَلِّهِ فَيُلْبَسُ تَاجَ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ زِدْهُ فَيُلْبَسُ حُلَّةَ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ ارْضَ عَنْهُ فَيَرْضَى عَنْهُ فَيُقَالُ لَهُ اقْرَأْ وَارْقَ وَتُزَادُ بِكُلِّ آيَةٍ حَسَنَةً- ‘কুরআন ক্বিয়ামত দিবসে হাযির হয়ে বলবে, হে আমার রব! একে (কুরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার পালনকর্তা! তার প্রতি সন্তুষ্ট হৌন। কাজেই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত তেলাওয়াত করতে থাক এবং উপরের দিকে উঠতে থাক। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে ছওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে’।[37]

তিনি আরো বলেন,إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللهِ إِكْرَامَ ذِى الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِى فِيْهِ وَالْجَافِى عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِى السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ ‘নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান

দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত’।[38] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ لِلَّهِ أَهْلِيْنَ مِنَ النَّاسِ. قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ هُمْ قَالَ هُمْ أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللهِ وَخَاصَّتُهُ ‘কতক লোক আল্লাহর পরিজন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তারা কারা? তিনি বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন ও তাঁর বিশেষ বান্দা’।[39]

৬. ইশরাক ছালাত আদায় করা :

ইশরাক, চাশত ও আওয়াবীন একই ছালাত, যা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। ‘ইশরাক্ব’ অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যুহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়।[40] আর দুপুরের পূর্বের এই ছালাতকেই ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলে।[41]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِىْ جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ- ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, তারপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও ওমরাহর নেকী রয়েছে’।[42] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,فِى الإِنْسَانِ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّوْنَ مَفْصِلاً فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ. قَالُوْا وَمَنْ يُطِيْقُ ذَلِكَ يَا نَبِىَّ اللهِ قَالَ النُّخَاعَةُ فِى الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا وَالشَّىْءُ تُنَحِّيْهِ عَنِ الطَّرِيْقِ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ- ‘মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে ছাদাক্বাহ করা। ছাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করার? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি ছাদাক্বাহ। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও একটি ছাদাক্বাহ। তিনশত ষাট জোড়ার ছাদাক্বাহ দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে যুহার দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট’।[43]

৭. যোহর ছালাত আদায় করা :

সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্ত্তর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হ’লে শেষ হয়।[44]

ক. ফরযের পূর্বের ও পরের সুন্নাত ছালাত আদায় করা : যোহরের ফরযের পূর্বে দু‘রাক‘আত[45] বা চার রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করা যায়।[46] রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صَلَّى أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعًا بَعْدَهَا لَمْ تَمَسَّهُ النَّارُ، ‘যে ব্যক্তি যোহরের ফরয ছালাতের পূর্বে চার রাক‘আত এবং ফরযের পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না’।[47] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا حَرُمَ عَلَى النَّارِ، ‘যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হবে’।[48]

খ. যোহরের ফরয : যোহর ছালাত আদায়ের ব্যাপারে মহান আল্লাহর নির্দেশ, أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا ‘সূর্য অপরাহ্নে ঢলে পড়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত তুমি ছালাত কায়েম কর এবং ফজরের ছালাত আদায় কর। নিশ্চয়ই ফজরের ছালাত (রাত্রি ও দিবসের ফেরেশতাগণের মাধ্যমে) সাক্ষ্যপ্রাপ্ত হয়’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৭৮)। তিনি আরো বলেন,وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ- ‘এবং অপরাহ্নে ও যোহরে। বস্ত্ততঃ তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে’ (রূম ৩০/১৮)

পরবর্তী অংশ: মুমিন কিভাবে দিন অতিবাহিত করবে (২)

– ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম


[1]. বুখারী হা/৬৩১৫, ৬৩২৪; মিশকাত হা/২৩৮২, ২৩৮৪, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়।

[2]. মুসলিম হা/২৭৮; আবু দাউদ হা/১০৫; মিশকাত হা/৩৯১।

[3]. মুসলিম হা/২৪৫; মিশকাত হা/২৮৪।

[4]. নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৫৪৫; ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৪৫।

[5]. মুসলিম হা/২৩৪; আবু দাঊদ হা/৯০৬; তিরমিযী হা/১০৫৯।

[6].  আবু দাউদ হা/৩৯৪; ইরওয়া ১/২৬৯।

[7]. মুসলিম হা/৩৮৭; ইবনু মাজাহ হা/৭২৫; মিশকাত হা/৬৫৪।

[8]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২০৩১; ছহীহুল জামে’ হা/৬৬৪৬।

[9]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর; ছহীহুল জামে’ হা/৬৬৪৭।

[10]. মুসলিম হা/৩৮৪; আবু দাউদ হা/৫২৩; মিশকাত হা/৬৫৭।

[11]. আবু দাউদ হা/৫২৪; মিশকাত হা/৬৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪০৩।

[12]. আবু দাউদ হা/৫৩৪; তিরমিযী হা/২১২; মিশকাত হা/৬৭১; ইরওয়া হা/২৪৪।

[13]. মুসনাদ আবূ ইয়া‘লা, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪০৫।

[14]. মুসলিম হা/৩৮৪; তিরমিযী হা/৩৬১৪; মিশকাত হা/৫৫৭।

[15]. বুখারী হা/৬১৪; আবু দাউদ হা/৫২৯; মিশকাত হা/৬৫৯, ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়, ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ।

[16]. মুসলিম হা/৩৮৪; আবু দাউদ হা/৫২৫; ইবনু মাজাহ হা/৫২১।

[17]. বুখারী হা/৬২৭; মুসলিম হা/৮৩৮; আবু দাউদ হা/১২৮৩; মিশকাত হা/৬৬২।

[18]. মুসলিম হা/৬৬৬ [১৫৫৩]।

[19]. মুসলিম হা/৭৬৩।

[20]. মুসলিম হা/৭১৩; আবু দাউদ হা/৪৬৫; মিশকাত হা/৭০৩, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[21]. আবুদাঊদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২-৭৩; ছহীহাহ হা/২৪৭৮।

[22]. মুসলিম হা/৭১৩; মিশকাত হা/৭০৩ ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[23]. আবুদাঊদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭৩; ছহীহাহ হা/২৪৭৮।

[24]. বুখারী হা/১১৬৩; মুসলিম হা/১৬৮৭।

[25]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪৩; আবুদাঊদ হা/১২৬৫-৬৭; মিশকাত হা/১০৪৪ ‘ছালাতের নিষিদ্ধ সময় সমূহ’ অনুচ্ছেদ।

[26]. মুসলিম হা/৭২৫; তিরমিযী হা/৪১৬; মিশকাত হা/১১৬৪।

[27]. মুসলিম হা/৬৫৭; তিরমিযী হা/২২২; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৪৫।

[28]. বুখারী হা/৫৭৪, মুসলিম হা/৬৩৫ ‘ফজর ও আছর ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।

[29]. মুসলিম হা/৬৩৪; আবু দাউদ হা/৪২৭; মিশকাত হা/৬২৪।

[30]. বুখারী হা/৫৫৫, মুসলিম হা/১৪৬৪, নাসাঈ হা/৪৮৫।

[31]. আহমাদ হা/৯১৪০; ইবনে খুযাইমা ১/১৬৫।

[32]. বুখারী হা/৫৫৪, মুসলিম হা/১৪৬৬।

[33]. বুখারী হা/৫৪২৭, ৭৫৬০; মুসলিম হা/৭৯৭; আবু দাউদ হা/৪৮২৯; মিশকাত হা/২১১৪।

[34]. আবু দাউদ হা/১৪৬৪; মিশকাত হা/২১৩৪, সনদ হাসান।

[35]. মুসলিম হা/৭১৮; ইবনু মাজাহ হা/২১৮; মিশকাত হা/২১১৫।

[36]. তিরমিযী হ/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭; ছহীহাহ হা/৩৩২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৬৯।

[37]. তিরমিযী হা/২৯১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৩০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪২৫।

[38]. আবু দাউদ হা/৪৮৪৩; মিশকাত হা/৪৯৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/২১৯৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯৮।

[39]. ইবনু মাজাহ হা/২১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/২১৬৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪৩২।

[40]. মির‘আত শরহ মিশকাত ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ, ৪/৩৪৪-৫৮।

[41]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২; মির‘আত ৪/৩৫১।

[42]. তিরমিযী হা/৫৮৬, মিশকাত হা/৯৭১ ‘ছালাতের পরে যিকর’ অনুচ্ছেদ।

[43]. আবুদাঊদ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১ ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ।

[44]. বুখারী হা/৫৪১; মুসলিম হা/৬১২; মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ; আবুদাঊদ হা/৩৯৮; তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩।

[45]. বুখারী হা/১১৬৫, ১১৮০; তিরমিযী হা/৪২৫, ৪৩৩; মিশকাত হা/১১৬০।

[46]. তিরমিযী হা/৪১৪; ইবনু মাজাহ হা/১১৪০, সনদ ছহীহ।

[47]. মুসনাদ আহমাদ হা/২৬৮০৭; নাসাঈ হা/১৮১৭, সনদ ছহীহ।

[48]. আবু দাউদ হা/১২৬৯; ইবনু মাজাহ হা/৪২৮; নাসাঈ হা/১৮১৬; মিশকাত হা/১১৬৭।

মন্তব্য করুন

Back to top button