তিনি অনন্ত বিদ্যমান, সব কিছুর ধারক (আয়াতুল কুরসি, আল-বাক্বারাহ ২)
কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ ﷻ আমাদের অনেক মানসিক সমস্যা এবং প্রশ্নের সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। এই আয়াতগুলো আমরা যখন মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তখন ধাক্কা খাই। যখন সময় নিয়ে ভেবে দেখি, তখন আমাদের হতাশা, অবসাদ, ডিপ্রেশন, কিছু না পাওয়ার দুঃখ, নিজের উপরে রাগ, অন্যের উপরে হিংসা, প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা —এই সবকিছু কাটিয়ে ওঠার শক্তি খুঁজে পাই। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে, আমরা এতদিন থেকে যেসব সমস্যায় ভুগছিলাম, তার সমাধান তো এই আয়াতেই ছিল! এরকম একটি আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। এই আয়াতের প্রতিটি বাক্যে শিরক থেকে দূরে থাকার শিক্ষা রয়েছে এবং একই সাথে আমরা দুনিয়াতে যে নানা ধরনের শিকলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছি, তা থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় শেখানো হয়েছে—
আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোনো উপাসনার যোগ্য কেউ নেই, তিনি অনন্ত বিদ্যমান, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর। কে আছে যে তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাদের দৃষ্টির সামনে এবং দৃষ্টির অগোচরে যা কিছুই আছে, তিনি তাঁর সব জানেন। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে কখনো ক্লান্ত করে না। তিনি সবার ঊর্ধ্বে, সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান। [আল-বাক্বারাহ ২৫৫]
আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোনো ‘ইলাহ’ নেই
‘ইলাহ’ إِلَٰه শব্দটিকে সাধারণত উপাস্য বা উপাসনার যোগ্য প্রভু অনুবাদ করা হয়। কিন্তু ইলাহ অর্থ আসলে হচ্ছে: কোনো কিছু বা কাউকে এতটাই চাওয়া হয়, এতটাই ভালবাসা হয় যে, ভালবাসা তখন উপাসনার পর্যায়ে চলে যায়। হৃদয়ে তখন দিন, রাত শুধু ইলাহ-এর চিন্তা ঘোরে। ইলাহ হয়ে যায় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আকাঙ্খা। বাকি সব কিছু ইলাহ’র কাছে তখন তুচ্ছ। মন তখন ইলাহকে পাওয়া, ইলাহকে তুষ্ট করার চিন্তায় বিভোর হয়ে যায়।[১][১১]
হাজার বছর ধরে মানুষের ইলাহ ছিল বিভিন্ন দেব-দেবী, সূর্য, চাঁদ, তারা, গরু ইত্যাদি নানা প্রাকৃতিক বস্তু, এমনকি কিছু মানুষও। এদেরকে তুষ্ট করার জন্য, এদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য মানুষ এমন কিছু নেই, যা করতো না। বিকৃত সব অনুষ্ঠানে পশু-পাখি, এমনকি মানুষ এর জীবন উৎসর্গ করে হলেও তারা এই সব ভুয়া ইলাহদের তুষ্ট করার চেষ্টা করতো। এগুলো করে কোনো লাভ হতো না। মাঝখান থেকে সমাজে ব্যাপক দুর্নীতি, নৈতিক অবনতি সৃষ্টি হতো। সমাজের এক শ্রেণীর ‘পবিত্র’ মানুষগুলো বিরাট লাভ হাতিয়ে নিত, আর সাধারণ মানুষগুলো তাদের সহায়, সম্পত্তি হারাত এবং সারাক্ষণ কৃত্রিম ভয়ের মধ্যে ডুবে থাকতো।
ইলাহ যে শুধু এধরনের কোনো প্রাকৃতিক কিছু বা মানুষ হতে হবে তা নয়, এটি অন্য যে কোনো কিছু হতে পারে। কারো বেলায় ইলাহ হয় তার সম্পদ। কারো বেলায় তা হয় তার মান-সম্মান, সমাজে স্ট্যাটাস, তার জৈবিক কামনা। আবার কারো বেলায় তার ইলাহ হয়ে যায় তার স্বামী, বা স্ত্রী, অথবা সন্তানরা। মানুষ তখন এসব ‘ইলাহ’কে পেতে গিয়ে তার সমস্ত মনোযোগ, সময়, শক্তি দিয়ে দেয়। এভাবে মানুষের জীবনে এক ইলাহ’র বদলে একাধিক ইলাহ চলে আসে। কখন কার জন্য করবে, কাকে বেশি গুরুত্ব দেবে, তা নিয়ে শুরু হয় টানাটানি, অশান্তি, প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত একাধিক ইলাহ’র কোনোটাকেই ঠিক মতো না পেয়ে অশান্তি, অতৃপ্তি, হতাশায় ডুবে যায়।[১][১১]
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ — আল্লাহ ﷻ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, এটা যখন আমরা খুব ভালোভাবে বুঝে নিজের কথা, কাজ, চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করতে পারবো, তখন আমাদের জীবন বদলে যাবে। আমরা তখন আর আল্লাহ ﷻ অবাধ্যতা করে স্বামীর জন্য সব ত্যাগ করে, তারপর তার কাছ থেকে প্রতিদান না পেয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাবো না। স্বামীর উপর এত নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ার আগে আমাদের মাথায় থাকবে: স্বামী আমার ইলাহ না, আল্লাহ ﷻ আমার ইলাহ। — আমরা আর কখনো আল্লাহকে ﷻ ভুলে গিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের জন্য রক্ত পানি করে, জীবনের সব শক্তি বিকিয়ে দিয়ে, তারপর স্ত্রী-সন্তানের অন্যায়, অবাধ্যতায় কষ্ট পেয়ে জীবন দুর্বিষহ করে ফেলবো না। আমাদের সব সময় মাথায় থাকবে: আমার স্ত্রী-সন্তান আমার ইলাহ না, আল্লাহ ﷻ আমার ইলাহ। — আমরা আর কখনো আল্লাহকে ﷻ ভুলে গিয়ে দিনরাত ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটে, জীবনের সব শক্তি নিঃশেষ করে, তারপর ক্যারিয়ার গড়তে না পেরে ডিপ্রেশনে চলে যাবো না। আমাদের সব সময় মাথায় থাকবে: উচ্চতর ডিগ্রি, টাকাপয়সা, গাড়ি, বাড়ি, বিদেশ যাওয়া — এগুলো আমার ইলাহ না, আল্লাহ ﷻ আমার ইলাহ।
যারা আল্লাহর ﷻ উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারে, তারা কখনো কারো ভয়ে থাকে না। কোনো দুর্ঘটনায় হতাশ হয় না। দিনরাত খারাপ কিছু ঘটার আতঙ্কে থাকে না। অমূলক ভয়ভীতি এবং নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব থেকে তারা মুক্ত। অমূলক ভয়, হতাশা, আতঙ্ক —এগুলো সবই পরিস্কার লক্ষণ যে, সে এখনো আল্লাহর ﷻ উপর পুরোপুরি নিজেকে সঁপে দিতে পারেনি। এখনো সে আল্লাহর ﷻ থেকে অন্য কোনো মানুষ বা বস্তুর উপর বেশি নির্ভর করে। এখনো তার জীবনে আল্লাহ ﷻ ছাড়া আরও কিছু ইলাহ রয়ে গেছে।
তিনি অনন্ত বিদ্যমান, সব কিছুর ধারক
আমাদের চারপাশের এই বিশাল, জটিল মহাবিশ্বকে বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ করে দেখল যে, সব কিছুই এসেছে ক্ষুদ্র এবং সরল কিছু প্রক্রিয়া থেকে। যেমন, জটিল প্রাণী এসেছে এককোষী প্রাণী থেকে। বিশাল সব গ্রহ নক্ষত্র এবং ভারি মৌলিক পদার্থগুলো সৃষ্টি হয় হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দুটি ক্ষুদ্রতম মৌলিক পদার্থ থেকে। বিশাল সব গ্যালাক্সি, তাদের ভেতরে কোটি কোটি নক্ষত্র, গ্রহ সবকিছুই তৈরি হয় অভিকর্ষের প্রভাবে গ্যাস ঘনীভূত হয়ে। মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকাই, দেখা যায় জটিল সব কিছুই সৃষ্টি হচ্ছে সরল কিছু মৌলিক পদার্থ এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া থেকে।
এভাবে সৃষ্টির শুরুর দিকে গেলে দেখা যায়, আমাদের সৃষ্টি জগতের সবকিছু এসেছে কয়েকটি মৌলিক কণা এবং কয়েকটি মৌলিক সূত্র থেকে। এখান থেকে বিজ্ঞান উপসংহারে পৌছাল যে, একসময় শূন্য থেকে এই মৌলিক কণা, সময় এবং সূত্রগুলোর আবির্ভাব হলো বিগব্যাং নামের একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে, এবং তারপর থেকে সবকিছুর সৃষ্টি এবং পরিচালনা হচ্ছে পদার্থ বিজ্ঞানের কয়েকটি সূত্রের মাধ্যমে। আমাদের চারপাশের এত বৈচিত্র্যময় প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগত, আকাশ, নদী, সমুদ্র, গ্রহ, নক্ষত্র — এই সব কিছুই কোটি কোটি বছর ধরে বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক প্রক্রিয়ার ফসল। আমরা সবাই হচ্ছি কিছু মৌলিক কণিকার কিছু সূত্র অনুসরণ করার ফসল। কোনো অতিপ্রাকৃত, অতিবুদ্ধিমান সত্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি। শূন্য থেকে এমনিতেই সময়, সূত্র এবং মহাবিশ্ব তৈরির যাবতীয় কাঁচামাল সৃষ্টি হয়েছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে এগুলো কিছু ছিল না।
কীভাবে শূন্য থেকে সেই মৌলিক কণিকা, সূত্রগুলো এবং সময় আসলো? — তার কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। তখন বিজ্ঞানীরা শূন্য বলতে এমন কিছু বোঝানো শুরু করলো, যার কাজ হচ্ছে এগুলোর জন্ম দেয়া। তারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে এমন একটি অতি-মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা দিলো, যার কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা, যার একটিতে আমরা রয়েছি। যদি প্রশ্ন করা হয়: তাহলে কি একই কথা দাঁড়ালো না? সেই অতি-মহাবিশ্ব, তার প্রক্রিয়াগুলো, তার উপাদানগুলো কীভাবে আসলো? — কোনো উত্তর নেই।
আল-হাইই
আয়াতুল কুরসি আমাদেরকে শেখায়: আল্লাহ ﷻ হচ্ছেন আল-হাইই الْحَيّ — তিনি সবসময় ছিলেন। তাঁর কোনো আদি নেই, কোনো অনন্ত নেই। তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে ছিলেন, মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও থাকবেন। তিনি সময়ের ঊর্ধ্বে। সময় তাঁরই একটি সৃষ্টি।
যেমন, কাউকে যদি সময়ের বাইরে বের করে ফেলা হয়, তাহলে সে একই সাথে সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বে যত ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটবে তার সব একসাথে দেখতে পাবে। এবং সেই দেখা যে চলচ্চিত্র দেখার মতো ধীরে ধীরে হবে তা নয়। সময়ের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে তার বেলায় আর ‘ধীরে’, ‘জোরে’, ‘আগে’, ‘পরে’ এই সব কোনো শব্দ প্রযোজ্য হবে না। সে এক মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু জেনে যাবে। আপনি-আমি জীবনে যা কিছুই করেছি এবং করবো, তার সবই সে মুহূর্তের মধ্যে জেনে যাবে। কিন্তু তার এই জেনে যাওয়ার মানে এই না যে, আপনি-আমি কোনো কিছু করতে বাধ্য ছিলাম এবং আমরা অন্য কিছু করতে পারতাম না, বা আমাদের চিন্তার কোনো স্বাধীনতা ছিল না।
যেহেতু আমরা সময়ের ঊর্ধ্বে চিন্তা করতে পারি না, তাই আমরা নানা ধরনের দার্শনিক প্যাঁচে আটকা পড়ে যাই। যেমন, আল্লাহ ﷻ যদি জানেনই আমি জাহান্নামে যাবো, তাহলে আর নামাজ, রোজা করে লাভ কী? আল্লাহ ﷻ যদি জানতেনই আমি এরকম করবো, তাহলে আমার আর দোষ কী? — এখানে আমরা ধরে নিচ্ছি যে, আল্লাহর ﷻ জানাটা হচ্ছে অতীত কালের ঘটনা। আমরা আল্লাহকে ﷻ সময়ের মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। তাঁর সম্পর্কে এমনভাবে ধারণা করছি, যেভাবে আমরা সময়ের মধ্যে থাকা কোনো সৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা করি। এধরনের দার্শনিক প্যাঁচ, ক্বদরকে যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা নিয়ে হাজারো সমস্যা —এসবের মূল কারণ হচ্ছে: আমাদের পরিচিত এই ত্রিমাত্রিক জগৎ (সাম্প্রতিক আবিষ্কার ১১ মাত্রিক জগৎ, স্ট্রিং থিওরি অনুসারে) এবং সময় দিয়ে আল্লাহকে ﷻ এবং তাঁর কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা করা, ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা, যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা। আল্লাহর ﷻ জ্ঞান এবং সিদ্ধান্তকে আমরা যদি সময়ের বাইরে চিন্তা করতে পারতাম, আমরা বুঝতে পারতাম যে, মানব যুক্তি, ধারণা কোনোটাই সময়ের বাইরে থাকা কোনো সত্তার জন্য প্রযোজ্য না। তখন আর আমাদের ক্বদর মেনে নিতে সমস্যা হতো না।
আল্লাহ ﷻ আল-হাইই, তিনি অনন্ত বিদ্যমান — এটা গভীরভাবে বুঝতে পারলে বহু দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
আল-ক্বাইয়ুম
আল-ক্বাইয়ুম الْقَيُّوم — তিনি সবকিছুর ধারক। আল-ক্বাইয়ুম শব্দের অর্থ যিনি নিজে থেকেই প্রতিষ্ঠিত, বাকি সবকিছুর অস্তিত্ব নির্ভর করে তাঁর উপর। আল্লাহর ﷻ অস্তিত্ব কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে না, বরং সবকিছুর অস্তিত্ব নির্ভর করে তাঁর উপর।[৭][৩৮৭][১১] তিনি কোনো কিছুর অস্তিত্ব ধরে না রাখলে তা অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। আমরা প্রতিমুহূর্তে শ্বাস নেই, কারণ তিনি শ্বাস নেওয়ান। আমাদের হৃদপিণ্ড চলে, কারণ তিনি চালান। আমরা হাত-পা নাড়াতে পারি, কারণ তিনি নাড়ান। আমাদের চারপাশের প্রতিটি জিনিস অস্তিত্ব নিয়ে আছে, কারণ আল্লাহ ﷻ সক্রিয়ভাবে, ইচ্ছে করে সেগুলোর অস্তিত্ব ধরে রেখেছেন। প্রতি মুহূর্তে তাঁর ইচ্ছা কাজ করছে। এমন না যে, তিনি বহু আগে ইচ্ছে করেছিলেন, তারপর থেকে সকিছু এমনিতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে। এটা হচ্ছে এরিস্টটলের ধারণা। তিনি এই ধারণার প্রচলন করেন যে, মহাবিশ্বের স্রষ্টা এই বিশাল মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে তা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আর এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত নন। সৃষ্টি জগৎ এখন এমনিতেই চলছে। — এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আল্লাহ ﷻ বলেছেন তিনি হচ্ছেন আল-ক্বাইয়ুম — তিনি প্রতি মুহূর্তে সক্রিয়ভাবে সবকিছুর অস্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আমরা যদি গভীরভাবে আল-ক্বাইয়ুম ধারণাটি উপলব্ধি করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন বদলে যাবে। একটি উপমা দেই। ধরুন, আপনার হৃদপিণ্ড অসুস্থ। একটি যন্ত্র লাগানো আছে, যা আপনার হৃদপিণ্ডকে সক্রিয় রেখেছে। সেই যন্ত্রটা আপনার মা গভীর ভালোবাসায় সবসময় এক হাতে শক্ত করে চেপে রাখেন। তিনি চাপ ছেড়ে দিলেই যন্ত্রটা বন্ধ হয়ে আপনার হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার ফুসফুসের অবস্থাও একই। আরেকটি যন্ত্র ক্রমাগত আপনার ফুসফুসে বাতাস ঢোকাচ্ছে এবং বের করছে। সেই যন্ত্রটা আপনার মা পরম মমতায় আরেক হাতে শক্ত করে চেপে রেখেছেন। চাপ ছেড়ে দিলেই সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। দুই হাতে এই দুটো যন্ত্র নিয়ে আপনার মা সবসময় আপনার সাথে থাকেন। এক মুহূর্তের জন্য তিনি যদি একটা যন্ত্র ছেড়ে দেন, তাহলে আপনি শেষ।
এই অবস্থায় আপনি কি কখনো আপনার মা-কে ভুলে গিয়ে এমন কিছু করবেন, যা তাকে রাগিয়ে দেবে? তার সামনে বসে কখনো অন্যের বিরুদ্ধে কুটনামি করবেন? অন্যায় করে মানুষের টাকা মারবেন? মোবাইল, টিভি, কম্পিউটারে বসে অশ্লীল জিনিস দেখবেন? — করতে পারেন। আপনি ভাববেন: হাজার হোক, আমার মা-ই তো। সে তো আর কখনো আমার ক্ষতি করবে না। —কিন্তু আপনার মা’রও ধৈর্যের সীমা আছে। একহাতে আপনার হৃদপিণ্ডের সুইচ, আর আরেক হাতে আপনার ফুসফুসের সুইচ ধরে রেখে, চোখের সামনে আপনাকে অন্যায় করতে দেখেও তিনি হয়তো বহুবার মাফ করে দেবেন। কিন্তু একসময় তিনি আর সহ্য করতে না পেরে হাত ছেড়ে দেবেন। আপনি তখন শেষ।
প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ ﷻ আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি ﷻ যে কোনো সময় আমাদের অস্তিত্ব শেষ করে দিতে পারেন। তিনি আমাদের হৃদপিণ্ড চালানো বন্ধ করে দিলেই আমরা শেষ। আমাদের মাথার উপর যেই ফ্যান ঘুরছে, সেটা তিনি আর ধরে না রাখলেই মাথার উপর ফ্যান পড়ে আমরা শেষ। বাচ্চারা রাস্তা পার হওয়ার সময়, রাস্তায় অন্য গাড়ির চালকদের মনোযোগ তিনি ধরে না রাখলেই বাচ্চারা শেষ। স্ত্রী গাড়ি নিয়ে বাইরে গেলে, ড্রাইভারকে সাবধান না রাখলেই স্ত্রী শেষ। এসব যদি আমরা সবসময় মাথায় রাখি, তাহলে আমাদের বহু অন্যায় কাজ, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে দূরে থাকা সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহর ﷻ প্রতি সব সময় সাবধান সচেতনতা, যাকে তাকওয়া বলে, তা বজায় রাখার সহজ হয়ে যাবে।
শুধু খারাপ দিকগুলো নয়, আপনি ভালো দিকগুলোও চিন্তা করুন। আপনার সামনে প্লেটে সুস্বাদু খাবার রাখা আছে। আল্লাহ ﷻ শস্য ক্ষেতের শস্যগুলোকে বহু মাস আলো, বাতাস, পানি দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিলেন, পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন দেখেই আপনার প্লেটে এখন ভাত, শাকসবজি আছে। তিনি বিশাল সমুদ্র থেকে পানি চক্রের মাধ্যমে মেঘ তৈরি করে, মেঘ থেকে বৃষ্টি ঘটিয়ে পাহাড় বেয়ে পানি ধারা নেমে নদী হয়ে, তাতে মাছের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন দেখেই আপনার প্লেটে এখন মাছের টুকরোটি রয়েছে। তিনি প্রতি মুহূর্তে কোটি কোটি প্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করছেন, কোটি কোটি বছর থেকে তা সুষ্ঠুভাবে করে আসছেন, আর একারণেই আজকে আমরা খাবার পাচ্ছি। তিনি যদি আল-ক্বাইয়ুম না হতেন, তাহলে সৃষ্টিজগৎ টিকে থাকতো না।
আল-ক্বাইয়ুম এই ধারণাটি ঠিকমতো বুঝতে পারলে আমরা অনেকেই তাক্বওয়াবান এবং আল্লাহর ﷻ প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবো।
তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না
এখানে আল্লাহ ﷻ বলেননি যে, তিনি তন্দ্রা যান না, বা তিনি ঘুমান না। কারণ তাহলে বলা যেত যে, তিনি ইচ্ছা করে তন্দ্রা যান না, বা তিনি ইচ্ছা করে ঘুমান না। তবে তন্দ্রা বা ঘুম তাঁকে কাবু করে ফেলতে পারে। সেই সুযোগ যেন না থাকে, সেজন্য তিনি বলেছেন, তন্দ্রা বা ঘুম তাকে স্পর্শ করে না।
তন্দ্রা এবং ঘুমের মধ্যে শিরক থেকে দূরে থাকার শিক্ষা আছে। আমরা যে সব পির, দরবেশ, অতিমানবের আরাধনা করি, তাদের কাছে তদবির করি, সেই সব পির, দরবেশ, অতিমানব একবার ঘুম আসলেই শেষ। তন্দ্রার মতো একটা সহজ ব্যাপারও তারা জয় করতে পারেনি। ঘুমের কাছে তারা হেরে গেছে। অথচ আমরা মনে করি যে, তারা আমাদের অসুখ সারিয়ে দেবে, জীবন থেকে বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, কিয়ামতের দিন আমাদের গুনাহ মাফ করিয়ে দেবে। রাত আসলে যেই লোক আর চোখ খুলে রাখতে পারে না, তাকে আমরা মাথায় তুলে কত সম্মান করি।
মানুষের সর্বোচ্চ না ঘুমিয়ে থাকার রেকর্ড ২৬৫ ঘন্টার মতো। কেউ যদি নিজেকে অতি-মানব প্রমাণ করতে চায়, তাহলে আগে নিজের তন্দ্রা এবং ঘুমকে জয় করে দেখাক। বোঝা যাবে কত ধানে, কত চাল।
আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর
আল্লাহ ﷻ এখানে বিশেষভাবে জোর দিয়ে (لهُ-কে আগে এনে) বলেছেন যে, আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর, অন্য কারো কোনো অংশীদারিত্ব নেই। কেউ যেন কখনো সচেতন বা অবচেতনভাবে কখনো মনে না করে যে, তার চোখের সামনে যা কিছু সে দেখতে পাচ্ছে, উপভোগ করছে, তার কোনোটাই তার সম্পত্তি। বরং সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর ﷻ সম্পত্তি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু ঘটনার সাথে এই আয়াতের সম্পর্ক কোথায়, তার কিছু উদাহরণ দেই—
হাসান সাহেবের বাবা একজন পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সব রোজা রাখতেন। গরিব আত্মীয়স্বজন তার কাছে এসে কিছু চেয়ে কখনো খালি হাতে ফেরত যেত না। কিন্তু একদিন তার ক্যান্সার হলো। এক প্রচণ্ড কষ্টের ক্যান্সার। তিনি প্রায় একবছর বিছানায় শুয়ে ভীষণ কষ্ট করতে করতে একসময় মারা গেলেন। হাসান সাহেব এই ঘটনায় একেবারে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। তিনি কোনোভাবেই নিজেকে বোঝাতে পারছেন না: কেন তার বাবার সাথে এরকম হলো? কেন তার বাবা সুস্থ অবস্থায় আর দশজনের মত মারা গেলেন না? কেন আল্লাহ ﷻ তার সাথে এমন করলেন? তাদের মত এত ভালো একটা পরিবারের সাথে তো আল্লাহর ﷻ এমন করার কথা নয়?
এর উত্তর রয়েছে এই আয়াতে—
আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর
আমরা ভুলে যাই যে, আকাশে এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু আল্লাহর ﷻ সম্পত্তি। আমি আল্লাহর ﷻ সম্পত্তি। আমার বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রী — সবাই আল্লাহর ﷻ সম্পত্তি। তিনি অনুগ্রহ করে কিছু দিনের জন্য তাঁর সম্পত্তিগুলো আমাকে উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, আমি সেগুলোর মালিক হয়ে গেছি, বা সেগুলোর উপরে আমার কোনো দাবি বা অধিকার রয়েছে। আল্লাহ ﷻ যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা তাঁর সম্পত্তি তাঁর কাছে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে আমার দাবি করার কিছুই নেই।
শুধু তাই না, আল্লাহ ﷻ তাঁর সম্পত্তির ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক বেশি জানেন। আমরা আমাদের বাবাকে, মা-কে কয়দিন দেখেছি? তাদের পুরো জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি কাজ — সবকিছু আল্লাহ ﷻ তাদের থেকেও ভাল করে জানেন। তারা বেঁচে থাকলে কী করতেন, আর কয়েকবছর আগে চলে গেলে কী সব গুনাহ করা থেকে বেঁচে যেতেন, সেটা আমরা তো দূরের কথা, তারা নিজেরাও জানেন না। অথচ আল্লাহ ﷻ ঠিকই জানেন। আমরা কোথাকার কে যে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহর ﷻ কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছি?
আমরা আমাদের বাবা-মাকে সৃষ্টি করিনি। আমরা অর্থ উপার্জন করে, তারপর তা খরচ করে আমাদের সন্তানদেরকে কিনে আনিনি। আমরা পৃথিবীতে আসার আগে আল্লাহর ﷻ সাথে চুক্তি করে আসিনি যে, আমাদের বাবা-মা যদি সারাজীবন সুস্থ সবল থাকেন, আমাদের স্ত্রী-সন্তানদের যদি কোনোদিন অসুখ না হয়, তাহলে আমরা পৃথিবীতে যাবো, না হলে যাবো না। বরং আমরা যদি একদিনও আমাদের বাবাকে সুস্থ অবস্থায় পাই, একদিনও আমাদের মা’র সাথে হাসিমুখে কাটাতে পারি, আমাদের সন্তানের হাসি একদিনের জন্যও দেখতে পারি, তাহলে সেটা পুরোটাই আমাদের উপরে আল্লাহর ﷻ বিরাট অনুগ্রহ। আমরা আল্লাহকে ﷻ কিছুই দেইনি এগুলো আমাদেরকে উপভোগ করতে দেওয়ার জন্য। আমরা জীবনে যা কিছুই উপভোগ করেছি, সেটা যত অল্প সময়ের জন্যই হোক না কেন, তার সবকিছু তিনি নিজে থেকেই আমাদেরকে দিয়েছেন।
কে আছে যে তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাদের দৃষ্টির সামনে এবং দৃষ্টির অগোচরে যা কিছুই আছে, তিনি তাঁর সব জানেন
অনেকে মনে করেন: কোনো পির, দরবেশ বা হাজি সাহেবকে গিয়ে যদি অনুরোধ করেন, যেন তারা আল্লাহর ﷻ কাছে তার চাকরি, ব্যবসা, চিকিৎসা, সন্তান, স্ত্রী বশ করার জন্য সুপারিশ করে, তাহলে আল্লাহ ﷻ তাদের কথা শুনে ব্যবস্থা করে দেবেন। হাজার হোক, পির, দরবেশ, হাজি সাহেব আল্লাহর ﷻ অনেক কাছের মানুষ। তাদের কথা কি আল্লাহ ﷻ ফেলতে পারেন? সে নিজে যতই অন্যায় করে মানুষের সম্পত্তি মারুক, যতই দিনরাত অশ্লীল কাজ করুক, যতই কবিরা গুনাহ করতে থাকুক, যতই নামাজে ফাঁকি দিক, পবিত্র কিছু মানুষের সুপারিশে তার কপাল রাতারাতি বদলে যাবে। এজন্য তারা মোটা অঙ্কের দক্ষিণা নিয়ে এসব গুরুদের কাছে গিয়ে নিয়মিত ধর্না দেবে। কিন্তু নিজেরা তাওবাহ করে অন্যায় করা বন্ধ করে, আরও বেশি করে আল্লাহর ﷻ ইবাদাত করে সরাসরি তাঁর কাছে চাইবে না।
এধরনের কাজ যে অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত মানুষরা করে তাই না, অনেক উচ্চশিক্ষিত, ধনী মানুষদেরকেও দেখা যায় এসব করতে। অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ পাথরের আংটি পরে, বা তাবিজ লাগিয়ে মনে করে যে, এই আংটি, তাবিজ তাকে প্রমোশন এনে দেবে, ব্যবসায় ক্ষতি থেকে বাঁচাবে, শরীর, মন, স্বাস্থ্য ভালো রাখবে, সংসারে কুফা, অশুভ চোখ, অপছায়া থেকে বাঁচাবে ইত্যাদি। অনেক উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবীকে দেখা যায় এই সব দুই নম্বরি করে কোটিপতি হয়ে যাওয়া পির, দরবেশ, ঝাড়ফুঁকওলাদের আলিশান ভবনে গিয়ে নিয়মিত ধর্না দিয়ে তাদের যাবতীয় সমস্যা নিরাময় করার প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসতে।
আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যে সব মানুষের কাছে গিয়ে তারা ধর্না দেয়, সেই মানুষরা নিজেরাও আদর্শ মুসলিম না। তারা নিয়মিত নিষ্ঠার সাথে নামাজ পড়ে না, যাকাত দেয় না, সাদাকাহ দেয় না, হাজ্জ করে না, প্রচুর নফল ইবাদতে নিজেকে সবসময় মশগুল রাখে না। তারা নিজেরাই সাধারণ পর্যায়ের মুসলিম। অথচ মানুষ আশা করে তারা আল্লাহর ﷻ সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
আমরা যখন এই সব গুরুদের কাছে সুপারিশের জন্য যাই, তখন ব্যাপারটা এটাই দাঁড়ায় যে, আমরা অনেকটা গুরুদের কাছে গিয়ে অভিযোগ করছি যে, আল্লাহ ﷻ আমার কথা শোনেন না, আমি যা চাই তা দেন না। গুরুদের যেহেতু অনেক ক্ষমতা, তাই তারা যদি কিছু একটা করে, তাহলে আল্লাহ ﷻ আরও বেশি করে শুনবেন, বেশি করে বুঝবেন। আমি নিজে চাইলে আল্লাহ ﷻ অতটা শুনবেন না, আমার অবস্থা ঠিকভাবে বুঝবেন না। অথবা এই সব গুরুরা আল্লাহর ﷻ সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করে মহাবিশ্বে কিছু ঘটানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে। আল্লাহ ﷻ না চাইলে কী হবে, এই সব গুরুরা ঠিকই আল্লাহর ﷻ অগোচরে আল্লাহরই ﷻ সৃষ্টিজগতে পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহ ﷻ পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, এই সব গুরুরা যা শুনে, দেখে, জানে, তার সবই তিনি ﷻ জানেন। এদের কাছে গিয়ে আমরা কী বলছি, কী নিয়ত করে তাদের কাছে যাচ্ছি, তার সবই তিনি দেখছেন। আর এরা যা দেখে না, শোনে না, জানে না, কোনোদিন জানতেও পারবে না, সেটাও তিনি ﷻ জানেন। এরা নিজেরাই জানে না তাদের ভবিষ্যৎ কী। তাহলে তাঁকে বাদ দিয়ে কোন বুদ্ধিতে আমরা এই সব গুরুদের কাছে গিয়ে সুপারিশ চাইছি?
সাধারণ মানব অভিজ্ঞতা হলো যে, ক্ষমতাবান যারা আছে, তাদের সুনজর পাওয়ার জন্য সুপারিশ করার দরকার হয়। রাজা, বাদশাহদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য তার উজিরদের সুপারিশ দরকার। একারণে সাধারণ মানুষ উজিরদের হাত করার জন্য অনেক চেষ্টা করে, টাকা খরচ করে। আবার আজকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য মন্ত্রীদের সুপারিশ দরকার হয়। মন্ত্রীদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য তাদের পিএস-দের সুপারিশ দরকার হয়। অফিসের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য ম্যানেজারদের সুপারিশ দরকার হয়। বাবা’র কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য মা’র সুপারিশ দরকার হয়। যেদিকেই তাকাই দেখা যায় সুপারিশ ছাড়া বড় কিছু পাওয়া যায় না। এভাবে মানুষ সুপারিশে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, সে বিশ্বাস করা শুরু করে যে, আল্লাহর ﷻ কাছ থেকে বড় কিছু পেতে হলে নিশ্চয়ই সুপারিশ লাগবে।
অনেকের মনে হতে পারে এই সুপারিশ-টুপারিশ বোধহয় সেকেলে ব্যাপার-স্যাপার। অথবা এটা বাংলাদেশের মতো গরীব দেশগুলোর সমস্যা যেখানে টাকা এবং ক্ষমতা ছাড়া কোনো কাজ-ই হয় না। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল।
অ্যামেরিকাতে প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে কংগ্রেস, এবন অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে শুধুমাত্র সুপারিশ করবে বলে রেজিসট্রেশন নেওয়া লবিস্ট এর সংখ্যা দশ থেকে পনের হাজার। এদের পেশা সুপারিশ করা। এরা সুপারিশ করে ওষুধ এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, বিভিন্ন গরীব দেশগুলোতে সাহায্যের নামে মানুষের ওপরে পরীক্ষা করাকে জায়েজ বানিয়ে নেয়, বিভিন্ন আইন পাশ করিয়ে নেয় — এমনকি কোন দেশে কে ক্ষমতায় বসবে সেটা নিয়েও তদ্বির করে।
আয়াতুল কুরসী আমাদেরকে শেখায় যে, আল্লাহর ﷻ জ্ঞান রাজা, বাদশাহ, মন্ত্রীদের মতো সীমিত নয়। কাউকে দিয়ে তাঁকে কিছু বলাতে হবে না। তিনি ﷻ নিজেই সব জানেন। তাকে ﷻ কী বলা হবে, কী বলা হবে না, কী গোপন রাখা হবে — তার সবই তিনি ﷻ জানেন।
আয়াতুল কুরসি আমাদের আরো শেখায় পৃথিবীতে যেমন ক্ষমতা এবং টাকার জোরে প্রভাবশালীরা অনেক অন্যায় করে পার পেয়ে যেত, আল্লাহর ﷻ সামনে সেটি হবে না। পৃথিবীতে ড্রাগস চোরাচালানকারীরা ধরা পরার পরে একটি ফোনের তদ্বিরে বেরিয়ে যেতেই পারে, কিন্তু আল্লাহর ﷻ সামনে সেটি হবার নয়। হবার তো নয়ই, বরং আল্লাহর ﷻ কথায় সূরে বোঝা যায়: সুপারিশ তো দূরের কথা, কারো সাহস বা সাধ্য হবে না আল্লাহর ﷻ সামনে মুখ খোলার।
তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না
মানুষের কোনোই ক্ষমতা নেই আল্লাহর ﷻ জ্ঞানের কোনো কিছু অর্জন করার, যদি না আল্লাহ ﷻ মানুষের কাছে তা প্রকাশ করে না থাকেন। আল্লাহ ﷻ মানুষের কাছে নবী, রাসুলের মাধ্যমে তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান প্রকাশ করেছেন। আমরা নবী, রাসুলদের মাধ্যমে জেনেছি আল্লাহর ﷻ গুণগুলো, তাঁর দেওয়া বিধি নিদেশ, উপদেশ এবং যাবতীয় ধর্মীয় জ্ঞান। আকাশ এবং পৃথিবীর যা কিছুই আমরা জেনেছি বিজ্ঞানের মাধ্যমে, এসবই সম্ভব হয়েছে আল্লাহর ﷻ ইচ্ছায়। তিনি ইচ্ছা না করলে আমরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তির কিছুই অর্জন করতাম না।
আল্লাহ ﷻ যখন ইচ্ছা করেন, তখন তিনি মানুষের কাছে জ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রকাশ করেন। যেমন, পেনিসিলিন আবিষ্কারের আগে বিভিন্ন ইনফেকশনে প্রতি বছর অনেক মানুষ মারা যেত। বিজ্ঞানী ফ্লেমিং সহ অনেকে চেষ্টা করছিলেন এন্টিবায়োটিক তৈরি করার। একদিন বিজ্ঞানী ফ্লেমিং ছুটি থেকে ঘুরে এসে দেখেন তার গবেষণাগারে এক পাত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া রাখা ছিল, সেগুলো কীভাবে যেন মারা গেছে। তিনি খুঁজতে গিয়ে দেখেন, তিনি জানালা খুলে রেখে গিয়েছিলেন এবং সেই জানালা থেকে এক ধরনের ফাঙ্গাস এসে পাত্রে পড়ে আশেপাশের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলেছে। এভাবে ‘দৈবক্রমে’ তিনি পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন, যা কোটি কোটি মানুষকে জটিল ইনফেকশন জনিত মৃত্যু হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে, এন্টিবায়োটিক যুগের সূচনা করেছে।
একসময় মানুষের জ্বালানী ছিল কাঠ পোড়ান। দৈনন্দিন কাজ, যানবাহন এবং কলকারখানা চলতো কাঠ পুড়িয়ে আগুন থেকে। কিন্তু এর জন্য বিপুল পরিমাণে গাছ কাটার দরকার হতো। মানুষ বহু যুগ ধরে এভাবে গাছ কেটে জ্বালানী দিয়ে চলতে পেরেছিল। কিন্তু একসময় গিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বন উজাড় শুরু হলো, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে থাকলো। যদি গাছ কেটে জ্বালানী সরবরাহ শীঘ্রই বন্ধ না করা হতো, তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য এমনভাবে নষ্ট হয়ে যেত, যে আর তা ফিরিয়ে আনা যেত না। কিন্তু গাছ কাটা বন্ধ করে দিলে তো মানুষের জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। মানবজাতির প্রযুক্তি, উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে মানুষ কী করবে? পরিবেশ বাঁচাবে নাকি সভ্যতা বাঁচাবে?
তখন মানুষ খনি খুঁড়তে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে কয়লা আবিষ্কার করলো। বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে কয়লার ভাণ্ডার খুঁজে পেয়ে মানুষের জ্বালানী সমস্যা দূর হয়ে গেল। বিরাট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলো। কিন্তু কয়লা পোড়ালে বায়ু দূষণ হয়। ১৯ শতকের দিকে যানবাহন এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলো বিপুল পরিমাণে কয়লা পোড়ানোর কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলতে লাগলো। যদি মানুষ কয়লা পোড়ানো বন্ধ না করে, তাহলে পরিবেশের এমন ক্ষতি হয়ে যাবে যে, আর পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাহলে মানুষ কী করবে? পরিবেশ বাঁচাবে, নাকি সভ্যতা বাঁচাবে?
তখন একজন বিজ্ঞানী কাকতালীয়ভাবে এক কয়লার খনি থেকে তেল পড়তে দেখলেন। তিনি অনেক গবেষণা করে কুপ খনন করে তেল বের করার পদ্ধতি বের করলেন। এই প্রযুক্তি মানব সভ্যতাকে পাল্টে দিলো। রাতারাতি সারা পৃথিবীতে তেল কুপ খনন শুরু হয়ে গেল। মানুষ বিপুল পরিমাণের জ্বালানী উৎস খুঁজে পেলো। সভ্যতার অগ্রগতি আরও তরান্বিত হলো।
মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই অদ্ভুত সব জায়গা এবং ঘটনা থেকে নানা অসুখের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে। বহু প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে নানা দুর্ঘটনার মাধ্যমে। অবশ্যই এগুলোর কোনোটাই দুর্ঘটনা নয়। আল্লাহ ﷻ যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানুষকে কোনো একটি জ্ঞান এবং প্রযুক্তি দেবেন, তখনি তিনি সেটা প্রকাশ করেছেন। মানুষের কাছে মনে হয়েছে যে, মানুষ কাকতালীয়ভাবে আবিষ্কার করেছে।
তাঁর কুরসী আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে
তাঁর কুরসী আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। كُرْسِي এসেছে كرس থেকে। كرسى এর মূল অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। একারণেই ছোট ছোট কিতাবকে كَرَّاسَةُ বলা হয়। কেননা, এর মধ্যে জ্ঞান লিপিবদ্ধ থাকে। আবার উলামাগণদের كراسى বলা হয়, কারণ তারা জ্ঞানের ধারক। কোনো বস্তুর সার বা মূলকে كرس বলে। একই সাথে কুরসী অর্থ দেওয়াল, সিংহাসন, চেয়ার, বসার টুল বা যে কোনো ধরনের আসন হয়।[১২]
কুরসী এর বহু ধরনের অর্থ করা হয়েছে। তবে আমরা সরাসরি রাসুল ﷺ এর কাছ থেকে এর কোনো সংজ্ঞা পাইনি। যাবতীয় ব্যাখ্যা এসেছে সাহাবা, তাবিইনদের কাছ থেকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলিম একে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।[৪] অনেকে এমন সব ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যার সাথে গ্রিক এবং হিন্দু পুরাণের হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে ইবন আব্বাস (রা) কাছ থেকে জানা গেছে যে, কুরসী হচ্ছে আল্লাহর ﷻ জ্ঞান এবং ক্ষমতা, যা দিয়ে তিনি আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে পরিচালনা করেন।[১৪] এর আকৃতি, সরূপ, এসব নিয়ে নানা ধরনের বিতর্কিত বর্ণনা রয়েছে, যেদিকে না যাওয়াই ভালো। আমাদের কোনোই লাভ নেই কুরসী দেখতে কেমন, সেটা কত বড়, এসব নিয়ে গবেষণা করে।
সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে কখনো ক্লান্ত করে না
ক্লান্তি হচ্ছে সৃষ্টির দুর্বলতা। সৃষ্টিকর্তার কখনো ক্লান্তি থাকতে পারে না। ক্লান্তি তাদেরই আসে, যাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। মানুষ যাদেরকে মাথায় তুলে আরাধনা করে, তারা কেউ ক্লান্তি জয় করতে পারেনি। একনাগাড়ে এক দিনও তারা কাজ করতে পারে না, ক্লান্ত হয়ে যায়। আর আল্লাহ ﷻ সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অনন্ত সৃষ্টিজগৎ পরিচালনা করছেন হাজার কোটি বছর ধরে। তিনি কখনো ক্লান্ত হন না।
অনেকে দুই নম্বরি করার সময় বলেন, “ভাই, আল্লাহ ﷻ এত বড় সৃষ্টিজগৎ চালাচ্ছেন। আমার দিকে খেয়াল করার তাঁর সময় কোথায়? আল্লাহ ﷻ আমার মতো মামুলি মানুষকে ধরবেন না।” — এই ধরনের চিন্তাভাবনার কারণ হচ্ছে মনে করা যে, আল্লাহর ﷻ কোনো গুণের বা ক্ষমতার একটা সীমা রয়েছে। যেমন, হয়তো তাঁর মনোযোগের সীমা আছে, বা তিনি হয়তো এত মানুষের এত পাপের বিচার করতে করতে বিরক্ত হয়ে যান, বা কোটি কোটি সৃষ্টির দিকে তিনি একইরকম মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না ইত্যাদি। এগুলো সবই মানুষের উর্বর মস্তিষ্কের ফসল। একজন সৃষ্টিকর্তার কোনো গুণ বা ক্ষমতার কোনো ধরনের সীমা থাকতে পারে, এটা মনে করাটা স্থূল বুদ্ধির লক্ষণ। সৃষ্টিকর্তা হতে হলে কী পর্যায়ের ক্ষমতাবান হওয়া দরকার, এটা কেউ ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বুঝতে পারে যে, আল্লাহর ﷻ কোনো গুণের বা ক্ষমতার কোনো ধরনের সীমা থাকার প্রশ্নই আসে না।
তিনি সবার ঊর্ধ্বে, সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান
আল্লাহ ﷻ হচ্ছেন الْعَلِيّ – আল-আ’লিই — তিনি সবার উপরে। তাঁর উপরে আর কেউ নেই। অবশ্যই উপরে বলতে মাথার উপরে বোঝায় না। বরং ঊর্ধ্বে শব্দটা বেশি যুক্তিযুক্ত। আমরা যখন কাউকে ঊর্ধ্বতন বলি, তার মানে এই নয় যে, সে আমাদের মাথার উপরে বসে আছে। সে আমাদের উপর কর্তৃত্ব রাখে দেখেই তাকে আমাদের ঊর্ধ্বে বলা হয়। আল্লাহ ﷻ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি সৃষ্টিজগতের ঊর্ধ্বে। তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। কারো ক্ষমতা নেই তাঁর সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করার, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার।
আল্লাহ ﷻ হচ্ছেন الْعَظِيم — আল-আযীম। এর সরাসরি অর্থ করা মুশকিল। এটি এসেছে عظم থেকে যার অর্থ শক্তিশালী, প্রকাণ্ড, প্রচণ্ড, বিকট, প্রকট ইত্যাদি চরম পর্যায়ের ধারণা। যেমন, আরশ হচ্ছে আল-আযীম, কারণ সেটি প্রকাণ্ড। জাহান্নামের শাস্তি হচ্ছে আল-আযীম, কারণ সেটি বিকট, প্রকট, প্রচণ্ড শাস্তি। আল-আযীম হচ্ছে যেটার সাথে তুলনা করার মতো আর কিছু নেই, সেটিই চরম পর্যায়। আল্লাহ ﷻ আল-আযীম কারণ তাঁর সবকিছুই পরম এবং চরম পর্যায়ে। তাঁর ক্ষমতা চরম পর্যায়ের। তাঁর গুণগুলো পরম পর্যায়ের। তাঁর সৃষ্টি প্রকাণ্ড। তার শাস্তি প্রচণ্ড।
উপসংহারে বলবো, আয়াতুল কুরসী’র বাণী অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা সময় নিয়ে গভীরভাবে এই আয়াত নিয়ে চিন্তা করলে অনেক শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারব। জীবনের কঠিন সময়গুলো ঈমানের সাথে মোকাবেলা করার মানসিক শক্তি খুঁজে পাবো। সৃষ্টিজগতের উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে এবং নিজেকে সৃষ্টির প্রতি অতিরিক্ত নিবেদিত করে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়ে, তারপর হতাশ হওয়ার বেদনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। বরং সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজেকে আরও বেশি সঁপে দিয়ে প্রশান্তি অর্জন করার অনুপ্রেরণা পাবো।
সূত্র:
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [৩৮৭] শাইখ উছাইমিন-এর আয়াতুল কুরসি তাফসীর — https:/abdurrahmanorg.files.wordpress.com/2011/11/tafseer-ayatul-kursi-shaykh-ibn-uthaymeen-dr-saleh-as-saleh.pdf
চমৎকার লিখা 🙂