জীবনের বাঁকে বাঁকে

গতকালকে প্রায় চার হাজার বাচ্চা মারা গেছে

গতকালকে প্রায় চার হাজার বাচ্চা মারা গেছে। শুধু তাই না, আজকে সকাল থেকে যতক্ষনে আপনি এই আর্টিকেলটা পড়বেন ততক্ষনে আরও হাজার খানেক বাচ্চা মারা গেছে এবং রাত হতে হতে মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় চার হাজারে। আগামী কালকে আরও চার হাজার বাচ্চা তার বাবা-মার চোখের সামনে মারা যাবে – পেটের ব্যাথায় ছট ফট করতে করতে, বমি করতে করতে করতে।

প্রতিদিন গড়ে চার হাজার বাচ্চা মারা যায়। না খেয়ে নয়, অসুস্থতায় নয়, যুদ্ধে নয় – বরং ময়লা পানি খেয়ে।

শুধু তাই না, প্রতিদিন ১৬ হাজার বাচ্চা মারা যায় না খেতে পেয়ে। ক্ষুধায় মারা যেতে কেমন লাগে জানেন? একদিন সেহরি না করে সারা দিন রোজা রাখুন, দেখবেন মাত্র ১৮-২০ ঘণ্টা খেতে না পারার কষ্ট কতখানি। সেখানে এই বাচ্চাগুলো দু’দিন, তিনদিন, এমনকি চার দিন পর্যন্ত না খেতে পেরে ধুকে ধুকে কষ্টে মায়ের কোলে মারা যায়। মারা যাবার আগে একবার মা ডাকার মত শক্তিও তাদের থাকে না। সেই মা গুলোর শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ।

আমরা কেমন করে এটা হতে দেই?

আমি আপনাদেরকে একটা পাথরের ঘটনা বলি। আমার অফিসের এক কলিগ, মুসলমান কলিগ। তাকে আমি একদিন এই ছবি গুলো দেখালাম, কিছু পরিসংখ্যান দেখালাম। তার প্রতিক্রিয়াঃ

সেঃ ভাই, এগুলো সব বানানো। বাড়াবাড়ি করে দেখায় মানুষকে গলানোর জন্য।

আমিঃ না ভাই, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের রিপোর্ট দেখেন, WFP রিপোর্ট দেখেন, ওয়িকিপিডিয়া দেখেন। সবাই একই জিনিস বলছে। একসাথে সবাই প্রতারণা করতে পারেনা।

সে অনেকক্ষণ ঘাটাঘাটি করে দেখল।

সেঃ হুমম, ঠিক কথাই তো মনে হচ্ছে। মানুষের অবস্থাতো সত্যিই খারাপ।

আমিঃ আসেন না আমরা কিছু ডোনেট করি। চলেন প্রতি মাসে মাত্র বিশ পাউন্ড হলেও ডোনেট করি। যে কোন একটা চ্যারিটির ওয়েব সাইটে যান, পাচ মিনিটও লাগবে না।

সেঃ বিশ পাউন্ডতো অনেক! আগে পাচ পাউন্ড দিয়ে শুরু করি।

আমিঃ ভাই, আপনি আপনার পরিবার নিয়ে একবার সিনেমা দেখতে গেলেই বিশ পাউন্ড উড়ে যায়। আর আপনি মাসে একটা সিনেমার টাকা বাঁচিয়ে দশটা গরিব মানুষকে একমাসের জন্য তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন না?

সেঃ আচ্ছা, আচ্ছা, আজকে রাতে চিন্তা করে দেখি। বউয়ের সাথে কথা বলি আগে। কালকে আপনাকে জানাব।

আমি গভীর আগ্রহে রাত পার করি আগামী কালকের জন্য। বড় আশা তাকে আগামী কালকে রাজি করাতে পারবো ডোনেট করার জন্য।

সেঃ ভাই, রাতে অনেক চিন্তা করলাম। আমার অবস্থা বেশি ভালো না ভাই। আমার মাস্টার্সের খরচ দিতে হচ্ছে। প্রত্যেক মাসে বাড়ির মর্টগেজ দিতে হয়। আমার ছেলেরা বড় হচ্ছে। দশ বছর পরেই ওদেরকে ইউনিভার্সিটিতে দিব। অনেক পড়ার খরচ দিতে হবে। আর এই বছর দেশেও যাওয়া দরকার। যতটুকু পারি পাউন্ড জমানোর চেষ্টা করছি।

আমিঃ কি বলেন ভাই? আপনার মাসে মাত্র বিশ পাউন্ড দিলে এগুলো সব বন্ধ হয়ে যাবে?

সেঃ বলা তো যায় না। মাসে বিশ পাউন্ড মানে বোঝেন? বছরে আড়াই’শ পাউন্ড। একজনের প্লেনের টিকেট হয়ে যায়।

আমিঃ একবার না বেড়িয়ে সেই টাকা দিয়ে দশটা মানুষকে পুরো এক বছর তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন না? দশটা মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। এতে আপনার কিছুই যায় আসে না?

সেঃ আমার টাকাগুলো তাদের কাছে যাবে তার গ্যারান্টি কি? দেখবেন এর মধ্যে দশ পাউন্ড সব কর্মচারীদের বেতন, যাতায়াত খরচ হাবিজাবিতে খরচ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো সবই ব্যবসা।

আমিঃ তাতে কি? সেটাও তো দরকার। না হলে এই টাকাগুলো গরিব লোকদের কাছে যাবে কি করে? আপনি আমি তো নিজেরা প্লেনে করে আফ্রিকায় গিয়ে গরিবদের হাতে তুলে দিব না। কাউকে তো যেতে হবেই নাকি?

সেঃ নাহ, আমার ঠিক মন টানছেনা। মনে হচ্ছে বিপদের জন্য টাকা গুলো রেখে দেওয়া দরকার। আপনার বাচ্চা হলে বুঝবেন কত যন্ত্রনা জীবনে। ঈদে ওদেরকে জামা কাপড় কিনে দিতে হবে। এর জন্য টাকা বাঁচাচ্ছি।

আমিঃ আপনার একটা প্যান্টের দাম কমপক্ষে বিশ পাউন্ড। এবার ঈদে একটা প্যান্ট না কিনে তিনটা মানুষকে বাঁচান?

সেঃ ঈদেও নতুন জামা কাপড় কিনব না কি বলেন। একই কাপড় পড়ে মানুষের বাসায় বেড়াতে যাবো, লোকে কি বলবে?

আমিঃ আমি এই খয়েরি প্যান্টটা পড়ে গত দুই মাস ধরে অফিস করছি। একবারও খেয়াল করেছেন সেটা? আমার কি মান সন্মান চলে গেছে, বা ডিমোশোন হয়েছে, বা আমাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে?

সেঃ সবাই এক না ভাই। আপনি এক রকম, আমি আরেক রকম। আপনার পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না, আমার অনেক দায়িত্ব।

আমিঃ ভাই একটা বার চিন্তা করেন। আপনার বাচ্চা দু’টা যদি তিন দিন খেতে না পেরে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, দুর্বল হয়ে আপনাকে শব্দ করে বাবা পর্যন্ত ডাকতে না পারে,  চুপ করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার কোলে একসময় মারা যায়, আপনার কেমন লাগবে?

সেঃ কি সব বাজে কথা বলছেন আপনি? আস্তাগ ফিরুল্লাহ!

আমিঃ মাফ চাচ্ছি। কিন্তু একটা বার ঠাণ্ডা মাথায় ভাবেন। আপনার তো বাচ্চা আছে, আপনার তো বোঝা উচিৎ। আপনার কি মনে হয়না আজকে যে চার হাজার বাচ্চা তাদের বাবা-মায়ের চোখের সামনে মারা যাবে, তাদের একজনকে হলেও আপনার বাঁচানো উচিৎ? মাত্র একজন?

সেঃ ভাই, আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। এমনিতেই টাকা পয়সার টানাটানি যাচ্ছে। ছেলে বড় হচ্ছে, বিয়ে করবে, তার জন্য আরেকটা বাড়ি কিনতে হবে। আগে নিজের পরিবার বাঁচাই, তারপর অন্যকে বাঁচাব।

সে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, মানুষ এতো পাথর হয়?

এই ঘটনার পরেও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে, পাথরের মত, না তার চেয়েও কঠিন। কারণ পাথরের মধ্যেও এমন আছে যার থেকে পানির ধারা বের হয়, কিছু আছে যা ভেঙে ফেললে তা থেকে পানি বের হয়, কিছু আছে যা আল্লাহর ভয়ে নিচে পড়ে যায়। তোমরা কি কর তা আল্লাহর কাছে অজানা নয়। (২:৭৪)

তিনটা লিঙ্ক দিচ্ছি আপনাদেরকে। এর বেশি কিছু বলবো না।

http:/muslimhands.org.uk/

http:/www.muslimaid.org/ramadan-2012/

http:/islamicrelief.com/

বিঃদ্রঃ ২০১০ সালে ৪০০০ ছিল। এখন ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান অনুসারে প্রতিদিন ২০০০ বাচ্চা ময়লা পানি খেয়ে মারা যায়।

– ওমর আল জাবির

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button