ছালাত, দো'আ ও যিকর

সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

‘সিজদা’ এক অনন্য বা অদ্বিতীয় সম্মাননা, যা শুধু আল্লাহরই প্রাপ্য। মহান আল্লাহ বলেন, وَاسْجُدُوا لِلَّهِ ‘তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৭)। সিজদা দ্বারা মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)-কে প্রথম অভ্যর্থনা জানান হয়। এর দ্বারা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।-

সিজদার সূচনা :

আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের প্রতি আদম (আঃ)-কে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন’ (হা-মীম-সিজদাহ ৪১/১১)। ইবলীস ব্যতীত ফেরেশতারা সকলে তাঁকে সিজদা করল। অহংকারবশত সে ভুল করল এবং পথভ্রষ্ট হ’ল। আল্লাহ ইবলীসকে জিজ্ঞেস করলেন, আদমকে সিজদা না করার কারণ কি? ইবলীস বলল, আদম মাটির তৈরী আর আমি আগুনের তৈরী, কাজেই মাটির তৈরী মানুষকে আগুনের তৈরী জিন সিজদা করতে পারে না’ (অর্থাৎ সে অহংকার করল)। আল্লাহ তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হ’লেন এবং তার প্রতি চিরতরে অভিশম্পাত করলেন।

মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইবাদত করার জন্যই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর মানব জাতির প্রতি অসামান্য ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে সিজদার মত গুরুত্বপূর্ণ সম্মান দ্বারা আদম (আঃ)-কে বন্ধুরূপে বরণ করে নেন। অতঃপর ইবলীসের শয়তানী চিন্তা-চেতনা ও সীমালংঘনের বিষয় আদম (আঃ)-কে অবহিত করে তার নিকট থেকে অনেক দূরে ও সাবধানে থাকতে বলেন। আর জান্নাতে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু শয়তান ইবলীস তার মিথ্যা ও লোভনীয় কথা দ্বারা আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে আল্লাহর আদেশ লংঘনে উদ্বুদ্ধ করল। আদম ও হাওয়া (রাঃ) শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা বুঝতে পারেননি, ইবলীসের মিথ্যা কসম ও কথায় বিশ্বাস করে এক পর্যায়ে তারা নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। এজন্য আল্লাহ আদম (আঃ)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং কিছু কালের জন্য তাঁদের পৃথিবীতে নির্বাসন দেন। আল্লাহ শয়তানকেও অভিশপ্তরূপে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন।

মূলতঃ সিজদা কখনোই আদম (আঃ)-এর জন্য ইবাদত ছিল না। বরং তা ছিল মানব জাতির প্রতি অন্যদের সম্মান প্রদর্শন। আসলে সিজদা হ’ল আল্লাহর প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ। আল্লাহ মানব জাতির জন্য ছালাতের মত একটি ইবাদতের বিধান দান করেছেন। অতঃপর সারা বিশ্বের মানুষের সিজদার দিক নির্দেশনা বা প্রতীক হিসাবে বায়তুল্লাহ বা কা‘বা শরীফ নির্ধারণ করেছেন। ফলে সমগ্র জগতের মানুষ আল্লাহর আদেশে বায়তুল্লাহকে কিবলা হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। উল্লেখ্য, ইবলীস জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হ’লেও মানুষের রগ-রেশায় ঢুকে ধোঁকা দেওয়ার ও বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন।[1] আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। শয়তানের ধোঁকা বা প্রবঞ্জনাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে পারলেই মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব বহাল রাখতে পারবে এবং আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়ে পরকালে জান্নাত লাভ করবে। পক্ষান্তরে শয়তানের ধোঁকায় আল্লাহর পথ ছেড়ে দিয়ে শয়তানের পথ ধরলে পরকালে জাহান্নামে থাকতে হবে। সুতরাং শয়তানের সিজদা না করার বিষয়টি  মানুষকে বার বার স্মরণ করে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

পৃথিবী হ’ল মানুষের জন্য সাময়িক পরীক্ষাকেন্দ্র মাত্র। জান্নাত থেকে নেমে আসা মানুষ পৃথিবীর পরীক্ষাস্থলে সুন্দর কাজের মাধ্যমে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যেতে পারবে, অন্যথা ব্যর্থ হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এ বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির কল্যাণে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং সিজদার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করেছেন।

সিজদা আল্লাহর জন্য :

পৃথিবীর সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য সিজদা করে। আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ- ‘আর আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে ও তাদের ছায়াসমূহ সকালে ও সন্ধ্যায় ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়’ (রা‘দ ১৩/১৫)

অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُوْمُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ وَكَثِيْرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ وَمَنْ يُهِنِ اللهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ اللهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ

‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও বহু মানুষ। আর বহু মানুষ (যারা সিজদা করতে অস্বীকার করেছে) তাদের উপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তাই-ই করেন’ (হজ্জ ২২/১৮)। তিনি আরো বলেন,

أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى مَا خَلَقَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُوْنَ، وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِنْ دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ، يَخَافُوْنَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ-

‘তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট বস্ত্তসমূহের প্রতি লক্ষ্য করে না। তাদের ছায়া ডাইনে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় বিনীতভাবে? আসমান ও যমীনে যত প্রাণী আছে, সবই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতাগণ। আর তারা অহংকার করে না’ (নাহল ১৬/৪৮-৪৯)

মানুষ ও জিনের মধ্যে যারা বিনয় ও আনুগত্যের সাথে আল্লাহকে সিজদা করে তারা বিশেষভাবে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করে। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ- ‘কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলো বিশ্বাস করে, যাদেরকে তা স্মরণ করিয়ে দিলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে ও তাদের প্রতিপালকের পবিত্র মহিমা কীর্তন করে এবং অহংকার করে না’ (সাজদা ৩২/১৫)

তিনি আরো বলেন,أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদায় কিংবা দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখেরাতকে ভয় করে ও তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান, যে তা করে না)’ (যুমার ৩৯/৯)

আল্লাহ তা‘আলা কেবল মানব ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তবে উপরে বর্ণিত সিজদা সংক্রান্ত আয়াতগুলি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই তাঁর ইবাদত করে। এমনকি জড় বস্ত্তগুলিও আল্লাহর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করে, আল্লাহকে সিজদা করে। আল্লাহ বলেন, وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ ‘…তারকা ও বৃক্ষাদি সিজদারত আছে’ (আর-রহমান ৫৫/৬)

সিজদা সংক্রান্ত উপরোক্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে দেখা যায় যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই আল্লাহকে সিজদা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, মানুষের মধ্যে অনেকে তাঁকে সিজদা করে, আবার অনেকে সিজদা করে না। এদের সম্পর্কে দয়াময় আল্লাহ বলেন,فَرِيْقًا هَدَى وَفَرِيْقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُوْنَ ‘এক দলকে আল্লাহ হেদায়াত নছীব করেছেন এবং আরেক দলের উপর ভ্রষ্টতা নির্ধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে এবং ভেবে নিয়েছে যে, তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (আ‘রাফ ৭/৩০)

এ পৃথিবী মানুষের জন্য একটা অসাধারণ ও কঠিন পরীক্ষা কেন্দ্র। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ- ‘মহিমাময় তিনি যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষার জন্য যে, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল’ (মুলক ৬৭/১-২)

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে? আমিতো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী। যারা মন্দ কাজ করে তারা কি মনে করে যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে থেকে যাবে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই মন্দ!’ (আনকাবূত ২৯/২-৪)

সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সমস্ত জীব ও জড়বস্ত্ত আল্লাহর ইবাদত করে বা সিজদা করে। কিন্তু মানুষ ও জিন ব্যতীত কারও হিসাব হবে না এবং পরীক্ষাও হবে না। কারণ মানুষ ব্যতীত কোন জীব ও জড় বস্ত্তর ক্ষতি করার কোন শত্রু নেই এবং মানুষের মত তাদের জ্ঞান শক্তিও নেই। মানুষ স্বীয় জ্ঞান দ্বারা তাদের চিরশত্রু শয়তানের মোকাবেলা করে আল্লাহর নিদর্শন সমূহ হ’তে জ্ঞান লাভ করতে পারে অথবা উক্ত জ্ঞান লাভ করে মানুষের এক বিশাল অংশ আল্লাহর দলভুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহকে সিজদা করে। পরকালের পরীক্ষায়ও এই দল আল্লাহর পদতলে সিজদার মাধ্যমে জয়যুক্ত হবে, আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে পরম সুখে অনন্তকালের জান্নাতে বসবাস করবে।

পক্ষান্তরে আরেক দল আল্লাহকে বা আল্লাহর অসীম নিদর্শন সমূহকে অস্বীকার করে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হবেন। তারা আল্লাহকে সিজদাও করবে না, আত্মসমর্পণও করবে না। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ، وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُوْنَ- ‘অতএব তাদের কি হ’ল যে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং যখন তাদের কাছে কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদা করে না’? (ইনশিক্বাক ৮৪/২০-২১)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَإِذَا قِيْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمَنِ قَالُوْا وَمَا الرَّحْمَنُ أَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُوْرًا- ‘তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘রহমান’-কে সিজদা কর, তখন তারা বলে ‘রহমান’ আবার কে? তুমি কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? (এই আচরণে) তাদের বিমুখতাই কেবল বৃদ্ধি পায়’ (ফুরক্বান ২৫/৬০)

আল্লাহকে অস্বীকারকারী এই দল সিজদা না করার কারণে পরকালেও আল্লাহর পরীক্ষায় সিজদা করতে পারবে না। ফলে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এ বিষয়েও পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে,

يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ، خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ، فَذَرْنِي وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَذَا الْحَدِيثِ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ-

‘(স্মরণ করা সেদিনের কথা) যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে, তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে। অথচ যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল, তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহবান জানানো হয়েছিল। অতএব যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদেরকে ধরবো যে, তারা জানতে পারবে না’ (কলম ৬৮/৪২-৪৪)

এ মর্মে হাদীছে এসেছে যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন এক সময় আল্লাহ (লোকদেরকে) বলবেন, আমি তোমাদের রব! সবাই বলবে, হ্যাঁ আপনিই আমাদের রব। (সেই সময়) নবীগণ ছাড়া আর কেউ তাঁর  সাথে কথা বলবে না। আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি কেউ তাঁর কোন চিহ্ন জান? তারা বলবে, সাক বা পায়ের নলার তাজাল্লী। সেই সময় সাক খুলে দেওয়া হবে। তখন সকল ঈমানদার ব্যক্তি সিজদায় পড়ে যাবে। তবে যারা দুনিয়াতে প্রদর্শনীর জন্য আল্লাহকে  সিজদা করত  তারা থেকে যাবে। তারা সেই সময় সিজদা করতে চাইলে, তাদের মেরুদন্ডের হাড় শক্ত হয়ে একটি তক্তার ন্যায় হয়ে যাবে (তাই তারা সিজদা করতে পারবে না)’।[2]

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানব জীবনের প্রতিটি ভাল কাজই ইবাদত। এ ইবাদত অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শেখানো ও সমর্থিত পদ্ধতিতে হ’তে হবে।

‘সিজদা’ একটি ইবাদত। সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যধিক। কারণ সিজদা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি কাজ। মানুষ কেন সিজদা করে, কিভাবে সিজদা করে আল্লাহ তা জানেন। মানুষ জান্নাত হ’তে পৃথিবীতে এসেছে, পৃথিবীতে ইবাদত করে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে। ইবাদতের মাধ্যমে মানুষকে এ পৃথিবী হ’তে জান্নাতে পৌঁছতে হবে। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

ছালাতে সিজদা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আল্লাহর বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَأَنْتُمْ سَامِدُوْنَ، فَاسْجُدُوْا لِلَّهِ وَاعْبُدُوْا ‘… তোমরা তো উদাসীন! বরং আল্লাহকে সিজদা কর ও তাঁর উপাসনা কর’ (নাজম ৫৩/৬১-৬২)। আল্লাহ বিভিন্নভাবে তাঁর অভিমুখী হওয়ার জন্য মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন।

হেদায়াত প্রাপ্ত মানুষ বহুমুখী ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সন্তোষ লাভের চেষ্টা করে। তন্মধ্যে সিজদার স্থান সর্বঊর্ধ্বে। সিজদার সময় মানুষ আল্লাহর সর্বাধিক নিকটে চলে যায় এবং মানুষের আল্লাহভীতি, বিনয় ও নম্রতা বহুগুণে বেড়ে যায়। আসলে সিজদা মানুষকে আল্লাহর দাসত্বের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দেয় এবং মানুষও তখন বিগলিত চিত্তে আল্লাহর শরণাপন্ন হয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ  ‘বান্দা আল্লাহ তা‘আলার অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দো‘আ করতে থাক’।[3]

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় নবী ও রাসূল (ছাঃ)-কে বিশেষভাবে প্রত্যাদেশ করেন, فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِيْنَ، وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ- ‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর, যতক্ষণ না মৃত্যু তোমার নিকট উপস্থিত হয়’ (হিজর ১৫/৯৮-৯৯)

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল ছিলেন। তিনি ছালাত ও সিজদার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণনা করে গেছেন। যার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

(১) মা‘দান ইবনে আবু ত্বালহা ইয়া‘মারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ছাওবান (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হ’ল। আমি বললাম, আপনি আমাকে এমন একটি আমলের সংবাদ দান করুন, যার উপর আমল করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। কিংবা তিনি বললেন, আপনি আমাকে আল্লাহর একটি প্রিয়তম আমলের সংবাদ দিন। তিনি নীরব রইলেন। আমি আবার বললাম, তিনি এবারও কিছু বললেন না। অতঃপর আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক সিজদা কর। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করবে, তখন এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করে দিবেন। রাবী মা‘দান বলেন, আমি আবুদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে একই প্রশ্ন করলাম, ছাওবান আমাকে যা বলেছেন, তিনিও আমাকে অনুরূপ বলেছেন’।[4]

(২) রাবী‘আহ ইবনে কা‘ব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে রাত যাপন করতাম। একদা আমি তাঁর ওযূ ও ইস্তেঞ্জা করার জন্য পানি আনলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পার। তখন আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, فَأَعِنِّى عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ ‘তাহ’লে বেশী বেশী সিজদার দ্বারা তুমি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর’।[5]

(৩) নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার যে কোন উম্মতকে কিয়ামতের দিন আমি চিনে নিতে পারব। ছাহাবীগণ বললেন, এতসব সৃষ্টিকূলের মধ্যে আপনি তাদেরকে কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, তুমি যদি কোন আস্তাবলে প্রবেশ কর যেখানে নিছক কালো ঘোড়ার মধ্যে এমনসব ঘোড়াও থাকে যেগুলোর হাত, পা ও মুখ ধবধবে সাদা, তবে কি তুমি উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না? ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ পারব। তিনি বললেন, ঐ দিন সিজদার কারণে আমার উম্মতের চেহারা সাদা ধবধবে হবে, আর ওযূর কারণে হাত-পা উজ্জ্বল সাদা হবে’।[6]

বস্ত্ততঃ আদম সন্তান পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে। অতঃপর জাহান্নামের আগুন তার সর্বাঙ্গ ভক্ষণ করবে সিজদার স্থান ব্যতীত। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ এদের প্রতিও দয়া করবেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন জাহান্নামীদের কাউকে দয়া করতে চাইবেন, তখন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন ঐ লোকদের বের করার জন্য, যারা আল্লাহর ইবাদত করত। অনন্তর তাঁরা তাদেরকে বের করবেন। তাঁরা তাদেরকে সিজদার চিহ্ন সমূহ দেখে চিনে নিবেন। আল্লাহ আগুনের উপর সিজদার চিহ্ন ভক্ষণ হারাম করে দিয়েছেন। এভাবে তাঁরা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন’।[7]

ঈমানদার ব্যক্তির জন্য সিজদার গুরুত্ব অপরিসীম। মুমিন আল্লাহর পদতলে সিজদা করতে ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে দ্বিধাবোধ করবে না। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, وَظَنَّ دَاوُوْدُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَاب ‘দাঊদ বুঝতে পারল, আমি তাকে পরীক্ষা করলাম। তারপর সে তার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল আর সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং মুখ ফিরাল তাঁর দিকে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৪)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

قُلْ آمِنُوْا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا، وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا، وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا

‘তুমি বলে দাও (হে অবিশ্বাসীগণ!), তোমরা কুরআনের প্রতি ঈমান আন বা না আন, যাদেরকে ইতিপূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে (আহলে কিতাবের সৎ আলেমগণ), যখন তাদের উপর এটি পাঠ করা হয়, তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, মহাপবিত্র আমাদের পালনকর্তা! আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি অবশ্যই কার্যকরী হয়। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরও বৃদ্ধি পায়’ (ইসরাঈল ১৭/১০৭-১০৯)

প্রকৃতপক্ষে সিজদার সময় দয়াশীল ও ক্ষমাশীল আল্লাহর কাছে দয়া-ক্ষমা, করুণা, অনুগ্রহ, রহমত, ভালোবাসা প্রভৃতি লাভ করার আশাও করা হয়। উপরে বর্ণিত আয়াতে দাঊদ (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা ও সিজদায় লুটিয়ে পড়া একটি তাৎপর্যময় উদাহরণ। তিনি একজন নবী হয়েও তাঁর পরীক্ষায় ভীত হয়ে পড়েছিলেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সিজদায় লুটিয়ে পড়েছিলেন।

ফলাফল নির্ভর করে সিজদাকারীর অন্তরের স্বচ্ছতার উপরে। আর এর ফায়ছালাকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি ব্যতীত এ বিষয়ে কারো কোন হাত নেই। সুতরাং আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়েই তাঁর প্রতি দৃঢ় আশা-ভরসা নিয়ে সিজদা ও প্রার্থনা করতে হবে।

সিজদা কত গুরুত্বপূর্ণ ও মহামূল্যবান তা ইবলীস জানত। ইবলীস একজন জিন, তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে ইবাদতের জন্য। সে ছিল খুবই বুদ্ধিমান ও পরহেযগার। এ কারণে ফেরেশতাদের সাথে জান্নাতে থাকত। ফেরেশতাদের সৃষ্টি শুধু আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য। তাই আদম (আঃ)-কে সিজদার আদেশে ফেরেশতাগণ নিঃসংশয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করেছিল। কিন্তু ইবলীস আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণে আদম (আঃ)-কে সিজদা করেনি।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সিজদা করে, শয়তান তখন সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে হায়! তাকে সিজদা করতে বলা হয়েছে, অতঃপর সে সিজদা করেছে, তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সিজদার আদেশ করা হয়েছে, অতঃপর আমি অবাধ্য হয়েছি। তাই আমার জন্য জাহান্নাম ধার্য হ’ল’।[8]

মানুষ আল্লাহকে সিজদা করেও অন্য পাপের কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। অতঃপর এক সময় আল্লাহর দয়ায় সিজদার কারণে জাহান্নাম হ’তে রক্ষা পাবে। কিন্তু যারা জীবনে কোন দিন সিজদা করেনি, তারা কখনও জাহান্নাম হ’তে নাজাত পাবে না। জাহান্নামে চিরস্থায়ী বসবাসের অনেক কারণ বা অপরাধ আছে, তন্মধ্যে আল্লাহকে সিজদা না করা বা আল্লাহকে অস্বীকার করা অন্যতম।

পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহকে সিজদাকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। কিন্তু যারা নামেমাত্র সিজদাকারী অর্থাৎ যাদের সিজদায় আল্লাহ সন্তুষ্ট নন, তারা প্রথমে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। পরে আল্লাহর দয়া ও রহমতে ধীরে ধীরে নিজেদের কর্ম অনুযায়ী জান্নাতে স্থান পাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সকল ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক দান করুন-আমীন!

রফীক আহমাদ
শিক্ষক (অবঃ), বিরামপুর, দিনাজপুর।



[1]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮ ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ওয়াসওয়াসা’ অনুচ্ছেদ

[2]. বুখারী হা/৭৪৩৯

[3]. মুসলিম হা/৪৮২; মিশকাত হা/৮৯৪

[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/৮৩৭

[5]. মুসলিম হা/৪৮৯; মিশকাত হা/৮৩৬

[6]. মুসনাদে আহমাদ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৮৩৬

[7]. বুখারী হা/৮০৬; মুসলিম হা/১৮২; মিশকাত হা/৫৫৮১।

[8]. মুসলিম, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মিশকাত হা/৮৩৫

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button