বিদ্বানগণের উক্তি

‘জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা’ সম্পর্কিত বিদ্বানগণের উক্তি

  1. লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে বলেন, হে বৎস! তুমি এ জন্য জ্ঞানার্জন করো না যে তুমি জ্ঞানীদের সাথে অহংকার করবে কিংবা মূর্খদের উপর নিজেকে জাহির করবে অথবা বিভিন্ন মজলিসে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করবে। তুমি জ্ঞানকে উদাসীনতায় পরিত্যাগ করো না বা মূর্খতার মাঝে নিক্ষেপ করো না। হে বৎস! তুমি আপন চোখ দিয়ে দ্বীনী মজলিস বাছাই করে নাও। যখন কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। তুমি যদি আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখ তাহলেও তা তোমার জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি তা তোমার অজানা থাকে তবে তোমার নতুন কিছু জানা হবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর রহমত নাযিল করবেন যার একটি অংশ তুমিও প্রাপ্ত হবে। আর যে দল আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের সাথে বসবে না। কেননা যদি আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তা তোমাকে কোন ফায়দা দেবে না। পক্ষান্তরে যদি তা তোমার অজানা থাকে তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট ও অক্ষম করে ফেলবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন যা তোমাকেও স্পর্শ করবে (আহমাদ হা/১৬৫১, দারেমী হা/৩৭৭, সনদ হাসান)।
  2. আলী (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্থ-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকেই পাহারা দেয় কিন্তু অর্থকে পাহারা দিতে হয়। অথচ জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হলো শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায় (গায্যালী, ইহয়াউল উলূম, ১/১৭-১৮)।
  3. মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাঁকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাংখা করা ইবাদত। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবীহ। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া ছাদাকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ধ্রুবক, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে (আল-আজুরী, আখলাকুল ওলামা, পৃঃ ৩৪-৩৫)।
  4. আবু দারদা (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপার্জিত হয় যেমন ধৈর্য ধৈর্যধারণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি কল্যাণের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয় সে কল্যাণ লাভ করে। যে অকল্যাণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সে অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)।
  5. তিনি বলেন, কোন মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)।
  6. হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, অজ্ঞ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী করে। অতএব তুমি জ্ঞানার্জন কর এমনভাবে যাতে তা ইবাদতকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, আবার ইবাদত কর এমনভাবে যেন তা জ্ঞানার্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একদল লোক এমনভাবে ইবাদতে ডুবে থাকে যে তারা জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায় না, অথচ তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর তরবারী চালিয়ে দেয়। যদি জ্ঞান থাকত তাহলে তারা এরূপ কর্মে লিপ্ত হতে পারত না।
  7. মুজাহিদ বিন জুবায়ের বলেন, লজ্জা ও ভয় হলো জ্ঞানার্জনের প্রতিবন্ধকতা (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী , ১/২২৮ পৃঃ)।
  8. ইবনে শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, ইলম হলো সংরক্ষিত সম্পদ, আর এই সম্পদ ভান্ডারটির চাবী হলো প্রশ্ন।
  9. ইয়াহইয়া বিন খালেদ বলেন, তুমি অল্প হলেও জ্ঞানের প্রতিটি শাখাকে আয়ত্ব করো। কারণ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞানলাভ মানুষকে উচ্চকিত করে। আর যে বিষয়টি তোমার নিকট অজ্ঞাত তা তোমার জন্য শত্রুস্বরূপ। জ্ঞানের মাধ্যমেই তুমি তার হাত থেকে নিরাপদ হতে পার।
  10. মাসরুক (রহঃ) বলেন, একজন ব্যক্তির জ্ঞানী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে আল্লাহকে ভয় করে আর মূর্খ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজের জ্ঞান নিয়ে চমৎকৃত হয়।
  11. আওন বিন আব্দুল্লাহ বলেন, তোমার যদি জ্ঞানী হওয়ার সাধ্য থাকে জ্ঞানী হও, যদি সাধ্য না থাকে তাহলেও জ্ঞানান্বেষী হও। যদি জ্ঞানান্বেষী হওয়ার সাধ্যও না থাকে তবে জ্ঞানীদের প্রতি ভালবাসা রাখ, তাও যদি না পার কমপক্ষে তাদেরকে ঘৃণা করো না।
  12. ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, তুমি যখন কোন বিষয় জানবে, তোমার চেহারায় তার চিহ্ন, প্রভাব, প্রশান্তি, মর্যাদা ও ধৈর্যশীলতা ফুটে উঠবে। জ্ঞানীরা কখনো বাচালের মত কথা বলেন না, মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা একমাসের কথা এক ঘণ্টায় বলে (ইবনুল হাজ, আল-মাদখাল, ২/১২৪)।
  13. মুহাম্মাদ ইবনুল ফাযল (রহঃ) বলেন, বহু মূর্খ ব্যক্তি রয়েছে যার কাছে জ্ঞান উপস্থিত হয়েছে কিন্তু সে তা দূরে নিক্ষেপ করেছে। বহু দুনিয়াত্যাগী আমলকারী রয়েছে যে জাহেলিয়াতের আমল করে তার আমলগুলো নষ্ট করে ফেলেছে। মানুষের সর্বপ্রথম বের হওয়া জিনিসটি হলো তার জিহবা (কথা বলা) আর জ্ঞান থেকে বের হওয়া প্রথম জিনিসটি হল ধৈর্য (শু‘আবুল ঈমান ৭/৪২৮)।
  14. ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, খাদ্য, পানীয়ের চেয়ে জ্ঞানের গুরুত্ব অধিক। কেননা খাদ্য দিনে একবার বা দু’বার প্রয়োজন হয়। কিন্তু জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে প্রতিটি নিঃশ্বাসের সমপরিমাণে (মাদারিজুস সালেকীন ২/৪৭০)।
  15. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, যে বিষয় আমি জেনেছি তা যদি আমল করি তবেই আমি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী, আর যদি প্রাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করি তবে দুনিয়ার বুকে আমার চেয়ে অজ্ঞ আর কেউ নেই।
  16. ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মু’মিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে।
  17. জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেন, জ্ঞান হলো আমলের দাস। আর আমল হলো জ্ঞানের চূড়ান্ত লক্ষ্য। যদি আমলের প্রয়োজন না থাকত তবে জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন হত না। যদি জ্ঞান না থাকত তবে আমলেরও প্রয়োজন হত না। তাই সত্য জানার পর তা পরিত্যাগকারীর চেয়ে সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি অধিক উত্তম।
  18. ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং যথার্থ স্থানে তাকে রাখতেন তবে তাঁরা দুনিয়াবাসীর উপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তাঁরা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তাঁরা অপদস্ত হয়েছেন।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button