হারাম-হালাল

মিথ্যা সাক্ষ্যদান করা হারাম

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِحُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِهِ-

‘সুতরাং তোমরা পূতিগন্ধ অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা থেকে দূরে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাক, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে ও তাঁর সঙ্গে শিরক না করে’ (হজ্জ ৩০-৩১)

হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلاَثًا- قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ- قَالَ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ- وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ: أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ– قَالَ فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ

‘আবু বাকরা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মজলিসে ছিলাম। এমন সময় তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! (উত্তরে তিনি বললেন) আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় কথাগুলি বলছিলেন। অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, শুনে রাখ! আর মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে থাকলেন যে আমরা শেষ পর্যন্ত বলে ফেললাম, যদি তিনি এবার ক্ষান্ত হ’তেন!’ [1]

আলোচ্য হাদীছে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভয়াবহতা বুঝাতে পুনঃপুনঃ কথাটি বলা হয়েছে। কেননা মানুষ এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে থাকে। মিথ্যা সাক্ষ্য নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে অনেক কারণও রয়েছে। যেমন শত্রুতা, হিংসা ইত্যাদি। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে ক্ষয়-ক্ষতিও হয় প্রচুর। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কত হক্ব যে বিনষ্ট হয়ে গেছে, কত নির্দোষ লোক যুলুম-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, কত লোক যে জিনিসের উপর তাদের কোন অধিকার নেই তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে, কতজন যে বংশের মানুষ নয় সে বংশের সন্তান গণ্য হচ্ছে- তার কোন ইয়ত্তা নেই।

কিছু লোক বিচার-ফায়ছালার জন্য অন্য লোককে এই বলে স্বপক্ষে টেনে আনে যে, তুমি আমার পক্ষে অমুক বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিবে, তোমার প্রয়োজনে আমিও তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিব। সাক্ষ্য দিতে হলে যেখানে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা অপরিহার্য সেখানে হয়ত এই লোকটির সঙ্গে তার কোর্টের বারান্দায় কিংবা বাড়ীর দহলিজে মাত্র দেখা হয়েছে। মূল ঘটনার সময় হয়ত সে আদৌ উপস্থিত ছিল না। তা সত্ত্বেও সে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে। তার এই মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কোন ভূমি কিংবা বাড়ীর মালিকানা প্রকৃত মালিকের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কিংবা কোন দোষী ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেয়ে যেতে পারে। এসব সাক্ষ্য ডাহা মিথ্যা। সুতরাং না দেখে না জেনে কোন প্রকারেই সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَمَا شَهِدْنَا إِلاَ بِمَا عَلِمْنَا ‘আমরা যা জানি তার বাইরে সাক্ষ্য দিতে পারি না’ (ইউসুফ ৮১)

– মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 


[1]. বুখারী হা/২৬৫৪, ৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button