হারাম-হালাল

সুফারিশের বিনিময়ে উপহার গ্রহণ করা নাজায়েজ

মানুষের মান-মর্যাদা ও পদাধিকার বান্দার উপর আল্লাহর অনুগ্রহরাজির অন্যতম। এই অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য। মুসলমানদের উপকারে তাদের পদ ও মর্যাদাকে কাজে লাগানো উক্ত শুকরিয়ারই অংশবিশেষ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ভাইকে উপকার করতে সক্ষম, সে যেন তা করে’।[1]

যে ব্যক্তি তার পদের মাধ্যমে কোন মুসলিম ভাইকে যুলুম থেকে রক্ষা করে কিংবা তার কোন কল্যাণ সাধন করে এবং তা করতে গিয়ে কোন হারাম উপায় অবলম্বন করে না বা কারো অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না, সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ হলে আল্লাহর নিকট সে পারিতোষিক পাওয়ার যোগ্য। যেমন নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اِشْفَعُوا تُؤْجَرُوا ‘তোমরা সুফারিশ কর, বিনিময়ে তোমরা ছওয়াব পাবে’।[2]

এই সুফারিশ ও মধ্যস্থতার জন্য কোন বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়। আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا

‘সুফারিশ করার দরুন যে ব্যক্তি সুফারিশকারীকে উপহার দেয় এবং (তার থেকে) সে ঐ উপহার গ্রহণ করে তাহলে সে ব্যক্তি সূদের দ্বারদেশগুলোর মধ্য থেকে একটি বৃহৎ দ্বারে উপনীত হয়’।[3]

এক শ্রেণীর মানুষ আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে তাদের পদমর্যাদাকে কাজে লাগাতে চায় বা মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়। যেমন- কোন একজন লোককে চাকরি দেওয়া অথবা কাউকে কোন প্রতিষ্ঠান বা এলাকা হতে অন্য প্রতিষ্ঠান বা এলাকায় বদলি করে দেওয়া, কিংবা কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করে দেওয়া ইত্যাদির জন্য অর্থলাভের শর্ত আরোপ করে। কিন্তু এরূপ স্বার্থের জন্য শর্তারোপ ও তার সুযোগ গ্রহণ করা হারাম। উপরোক্ত হাদীছই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বরং যে কোন কিছু গ্রহণ করাই এই হাদীছের বাহ্যিক দিকের আওতায় পড়ে, চাই পূর্বে কোন কিছুর শর্ত আরোপ না করা হৌক। আসলে ভাল কাজের কর্মীর জন্য আল্লাহর পারিতোষিকই যথেষ্ট, যা সে ক্বিয়ামত দিবসে পাবে।

জনৈক ব্যক্তি কোন এক প্রয়োজনে হাসান বিন সাহলের নিকট এসে তাঁর সুফারিশ প্রার্থনা করে। তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। ফলে লোকটি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। তখন হাসান বিন সাহল তাকে বললেন, ‘কি জন্য তুমি আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ? আমরা তো মনে করি পদেরও যাকাত আছে, যেমন অর্থ-সম্পদের যাকাত আছে’।[4]

এখানে এই পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করা যথার্থ হবে যে, কোন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে পারিশ্রমিক দিয়ে নিযুক্ত করা এবং শর্ত সাপেক্ষে বৈধ মজুরী প্রদান শ্রেণীভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে নিজ পদমর্যাদা ও মধ্যস্থতাকে কাজে লাগিয়ে সুফারিশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটা নিষিদ্ধ। মূলতঃ উভয় প্রক্রিয়া এক নয়।

মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 


[1]. মুসলিম; মিশকাত হা/৪৫২৯।

[2]. বুখারী হা/২৪৩২;আবুদাঊদ হা/৫১৩২।

[3]. আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৫৭।

[4]. ইবনু মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার‘ঈয়্যাহ ২/১৭৬ পৃঃ।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button