হারাম-হালাল

ঘুষ গ্রহণ বা প্রদান করা হারাম

কারো হক বিনষ্ট করা কিংবা কোন অন্যায়কে কার্যকর করার জন্য বিচারক কিংবা শাসককে ঘুষ দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। কেননা ঘুষের ফলে বিচারক প্রভাবিত হয়, হকদারের প্রতি অবিচার করা হয়, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় ধস নেমে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلاَ تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ হতে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে উহার আরযী পেশ করো না’ (বাক্বারাহ ১৮৮)

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, لَعَنَ اللهُ الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ فِى الْحُكْمِ ‘বিচার-ফায়ছালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন’।[1]

তবে যদি ঘুষ প্রদান ব্যতীত নিজের পাওনা বা অধিকার আদায় সম্ভব না হয় কিংবা ঘুষ না দিলে যুলুম-অত্যাচারের শিকার হতে হয় তবে ঐ অধিকার আদায় ও যুলুম নিরোধ কল্পে ঘুষ দিলে ঘুষদাতা উক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে না।

বর্তমানে ঘুষের বিস্তার রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনকি অনেক চাকুরের নিকট মূল বেতনের চেয়ে তা রীতিমত আয়ের এক বড় উৎস। অনেক অফিস ও কোম্পানী নানা নামে-উপনামের ছদ্মাবরণে ঘুষকে আয়ের বাহানা বানিয়ে নিয়েছে। অনেক কাজই এখন ঘুষ ছাড়া শুরু ও শেষ হয় না। এতে গরীব ও অসহায়রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ঘুষের কারণে ভঙ্গ হয়ে যায়। ঘুষ না দিলে ভাল সার্ভিসের আশা করা বাতুলতা মাত্র। যে ঘুষ দিতে পারে না তার জন্য নিকৃষ্ট মানের সার্ভিস অপেক্ষা করে। হয়ত তাকে বারবার ঘুরানো হয়, নয়ত তার দরখাস্ত বা ফাইল একেবারে গায়েব করে দেওয়া হয়। আর যে ঘুষ দিতে পারে সে পরে এসেও ঘুষ দিতে অক্ষম ব্যক্তির নাকের ডগার উপর দিয়ে বহু আগেই কাজ সমাধা করে চলে যায়। অথচ ঘুষের কারণে যে অর্থ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা ছিল তা তাদের হাতে না পৌঁছে বরং ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটস্থ হয়।

এসব নানাবিধ কারণে নবী করীম (ছাঃ) ঘুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الرَّاشِى وَالْمُرْتَشِى ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর লা‘নত’।[2]

মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 


[1]. আহমাদ হা/৯০১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯৩।

[2]. ইবনু মাজাহ হা/২৩১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১১৪।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button