হারাম-হালাল

ছালাতে ইচ্ছাপূর্বক ইমামের আগে মুক্তাদীর গমন হারাম

যে কোন কাজে তাড়াহুড়া করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, كَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا ‘মানুষ খুব দ্রুততা প্রিয়’ (বণী ইসরাঈল ১১)। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, اَلْأَنَاةُ مِنَ اللهِ وَالْعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে’।[1]

জামা‘আতের মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ডানে-বামে অনেক মুছল্লী ইমামের রুকূ-সিজদায় যাওয়ার আগেই রুকূ-সিজদায় চলে যাচ্ছে। এমনকি লক্ষ্য করলে নিজের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যায়। উঠা-বসার তাকবীরগুলিতে তো এটা হরহামেশাই হতে দেখা যায়। এমনকি অনেকে ইমামের আগে সালামও ফিরিয়ে ফেলে। বিষয়টি অনেকের নিকটই গুরুত্ব পায় না। অথচ নবী করীম (ছাঃ) এজন্য কঠোর শাস্তির হুমকি শুনিয়েছেন। তিনি বলেন,

أَمَا يَخْشَى الَّذِى يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ

‘সাবধান! যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা তোলে তার কি ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার মাথাটা গাধার মাথায় রূপান্তরিত করতে পারেন?’[2]

একজন মুছল্লীকে যখন ধীরে-সুস্থে ছালাতে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তাড়াতাড়ি বা দ্রুত পায়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে[3], তখন স্বীয় ছালাত যে ধীরে-সুস্থে আদায় করতে হবে তাতে আর সন্দেহ কি? আবার কিছু লোকের নিকট ইমামের আগে গমন ও পিছনে পড়ে থাকার বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে যায়। তাই মুজতাহিদগণ এজন্য একটি সুন্দর নিয়ম উল্লেখ করেছেন। তা হ’ল, ইমাম যখন তাকবীর শেষ করবেন মুক্তাদী তখন নড়াচড়া শুরু করবে। ইমাম ‘আল্লাহু আকবার’ এর ‘র’ বর্ণ উচ্চারণ করা মাত্রই মুক্তাদী রুকূ-সিজদায় যাওয়ার জন্য মাথা নীচু করা শুরু করবে। অনুরূপভাবে রুকূ হতে মাথা তোলার সময় ইমামের ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’-এর ‘হ’ বর্ণ উচ্চারণ শেষ হলে মুক্তাদী মাথা তুলবে। এর আগেও করবে না, পরেও না। এভাবে সমস্যাটা দূর হয়ে যাবে।

ছাহাবীগণ যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগে চলে না যান সে বিষয়ে খুব সতর্ক ও সচেষ্ট থাকতেন। বারা বিন আযিব (রাঃ) বলেন, ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করতেন। যখন তিনি রুকূ হতে মাথা তুলতেন তখন আমি এমন একজনকেও দেখিনি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কপাল মাটিতে রাখার আগে তার পিঠ বাঁকা করেছে। তিনি সিজদায় গিয়ে সারলে তারা তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।[4]

নবী করীম (ছাঃ) যখন একটু বুড়িয়ে যান এবং তাঁর নড়াচড়ায় মন্থরতা দেখা দেয় তখন তিনি তাঁর পিছনের মুক্তাদীদের এই বলে সতর্ক করে দেন যে, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ بَدَّنْتُ فَلاَ تَسْبِقُونِى بِالرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ ‘হে লোকেরা! আমার দেহ ভারী হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা রুকূ-সিজদায় আমার আগে চলে যেও না’।[5]

অপরদিকে ইমামকেও ছালাতের তাকবীরে সুন্নাত মুতাবেক আমল করা যরূরী। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে,

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ يُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْكَعُ ….. ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَهْوِى ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَسْجُدُ ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ ، ثُمَّ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى الصَّلاَةِ كُلِّهَا حَتَّى يَقْضِيَهَا ، وَيُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ مِنَ الثِّنْتَيْنِ بَعْدَ الْجُلُوسِ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতে দাঁড়াতেন তখন শুরুতে তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকূতে যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। অতঃপর যখন (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন, সিজদা থেকে মাথা তুলতে তাকবীর বলতেন। এভাবে ছালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। আর দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক শেষে দাঁড়ানোর সময়ও তাকবীর বলতেন’।[6]

সুতরাং এভাবে ইমাম যখন ছালাতে উঠা-বসার সঙ্গে তার তাকবীরকে সমন্বিত করে একই সাথে আদায় করবেন এবং মুক্তাদীগণও উল্লিখিত নিয়ম মেনে চলবে তখন সবারই জামা‘আতের বিধান ঠিক হয়ে যাবে।

– মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 


[1]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৯৫।

[2]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১১৪১।

[3]. বুখারী হা/৬৩৬, আহমাদ হা/১০৯০৬।

[4]. মুসলিম হা/৪৭৪।

[5]. বায়হাক্বী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭২৫।

[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯৯।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button