নও মুসলিম

মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবি মার্ক শেফার-এর ইসলাম-গ্রহণের কাহিনী

গত ২৪ অক্টোবর ২০০৯ শনিবার প্রখ্যাত মার্কিন এ্যাডভোকেট ও মিলিয়নিয়ার মার্ক শেফার তার দশদিনের সৌদি ভ্রমণ শেষে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। জনাব শেফার আমেরিকার লসএঞ্জেলস-এর একজন ডাকসাইটে আইনবিদ ও কোটিপতি। তিনি একজন খ্যাতনামা অর্পিতসম্পত্তি আইন বিশেষজ্ঞ। সর্বশেষ তিনি মৃত্যুর এক মাস আগে মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির বিরুদ্ধে লড়েছেন।

জনাব মার্কের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ব্যক্ত করতে গিয়ে সৌদি ট্রাভেল গাইড জাবি বিন নাসির শরীফ বলেন, মার্ক শেফার সৌদি আরব পৌঁছার পর থেকেই ইসলাম সম্পর্কে, ইসলামের অন্যতম রুকন সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুরু করেন। রিয়াদে আমরা দুদিন অবস্থান করি। সেখানেও তিনি ইসলামের খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস অব্যাহত রাখেন। তারপর আমরা গেলাম নাজরান। সেখান থেকে আবহা আবার সেখান থেকে উলায় গেলাম। উলায় পৌঁছার পর ইসলামের ব্যাপারে তার কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। এখানে একবার আমরা ঘুরতে বেরুনোর পর উলায় আমাদের সঙ্গে আসা তিনজন সৌদি যুবকের প্রশান্তচিত্তে মরুবালুকার ওপর নামায পড়ার দৃশ্য তার হৃদয়কে প্রবলভাবে আন্দোলিত করে।

দু’দিন উলায় কাটিয়ে আমরা যাই জাউফ নামক স্থানে। জাউফে গিয়ে মার্ক শেফার আমার কাছে ইসলাম সম্পর্কিত যে কোনো গ্রন্থ চাইলেন। আমি তাকে ইসলাম ধর্মের ওপর লিখিত কয়েকটি পুস্তিকা সরবরাহ করি। তিনি মনোযোগসহ সেসব পড়া শুরু করলেন। ভোরবেলা তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, নামায কীভাবে আদায় করতে হয়? আমি তাকে নামায কিভাবে পড়তে হয়, অযু করতে হয় কিভাবে— তা ব্যাখ্যা করলাম। তৎক্ষণাৎ তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমার সঙ্গে নামায আদায় করলেন। নামায পর আমাকে জানালেন, তিনি নামায পড়ে খুব প্রশান্তি লাভ করেছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমরা জেদ্দায় ফিরে এলাম। তিনি কিন্তু পুস্তিকাগুলোর ওপর চোখ বুলানো অব্যাহত রেখেছেন। শুক্রবার সকালে আমরা পুরান জেদ্দায় গেলাম। জুমার নামাজের সময় ঘনিয়ে এলে আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। সবাইকে জানালাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি জুমার নামায পড়তে যাব। মার্ক বললেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে যেতে চাই। আমি তোমাদের নামায পড়া দেখব।’ আমি তাকে স্বাগত জানালাম। মসজিদে গেলাম এবং সমবেত অনেক মুসল্লির সঙ্গে মসজিদের বহির্প্রাঙ্গণে জুমার নামায আদায় করলাম। অনতিদূর থেকে সবই লক্ষ্য করছিলেন মার্ক শেফার। নামায পর সব মুসল্লি একে অন্যকে সালাম-সম্ভাষণ জানাচ্ছেন। সবার মুখে এক অপার্থিব খুশির দীপ্তি। এসব দৃশ্য তাকে খুবই মুগ্ধ করলো।

আমরা যখন হোটেলে ফিরে এলাম, তিনি বললেন, ‌’আমি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে চাই।’ আমি তাকে গোসল করতে বললাম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গোসল করলেন। আমি তাকে কালেমায়ে শাহাদাতের তালকিন দিলাম। তিনি পড়লেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’। তারপর তিনি দু’রাকাত নামায পড়লেন। নামায বাদ তিনি আমাকে বললেন, আমি সৌদি ত্যাগ করার আগে পবিত্র মক্কার হারাম শরীফে যাবার বাসনা রাখি। শনিবার সন্ধ্যায় হারাম শরিফে গিয়ে তিনি সালাত আদায় করলেন। তারপর আমরা হামরায় অবস্থিত “দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ” অফিসে গেলাম। সেখানে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাকে ইসলাম গ্রহণের সাময়িক সনদ দেয়া হল। শনিবার সন্ধ্যায় তার আমেরিকান সঙ্গীরা যেহেতু চলে যাবেন তাই প্রফেসর তুরকিস্তানি মার্ক শেফারকে হারাম শরিফে পৌঁছানোর দায়িত্ব নিলেন।

স্যার মার্ক শেফারের হারাম শরীফ গমন সম্পর্কে প্রফেসর মুহাম্মদ আমিন তুরকিস্তানি বলেন, সাময়িক সনদ গ্রহণের পর মার্ক শেফার এবং আমি মক্কার হারাম শরিফে গেলাম। হারাম শরীফ দর্শন মাত্র তার চেহারায় ফুটে উঠল এক অনাবিল লাবণ্য। তার কপাল ও কপোল উদ্ভাসিত হল সৌভাগ্যের এক বিরল বৈভবে। আমরা যখন হারামে প্রবেশ করলাম। সরাসরি পবিত্র কাবা দেখতে পেলাম। তখন তার আপাদমস্তকে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল। প্রাপ্তি ও তৃপ্তিতে ভরে উঠলো যেন তার মন। আল্লাহর শপথ! আমি সে দৃশ্যের বর্ণনা দিতে অক্ষম। মার্ক শেফার কাবা তাওয়াফ করলেন। আমরা নামায পড়লাম। যখন ফিরছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, এ ঘর তার কত আপন! কত চেনা! কাবাকে ছেড়ে তার মন যেন কিছুতেই ফিরে আসতে চাইছিল না।
‘আমি যেন নব জীবন লাভ করেছি।’
ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেবার পর রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্ক শেফার তার ইসলাম কবুলের সৌভাগ্যের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমার পক্ষে এ মুহূর্তের অনুভূতি ব্যক্ত করা আসলেই সম্ভব নয়। শুধু এতোটুকু বলতে পারি যে, আমি এক নব জীবন লাভ করেছি। আজ আমার নতুন জীবনের সূচনা ঘটলো।’
তিনি আরও বলেন, আমি তো সৌভাগ্যের চূড়ায় উপনীত হয়েছি। যখন হারাম শরীফে প্রবেশ করলাম, পবিত্র খানায়ে কাবা দেখলাম— সে যে কী প্রাপ্তি ও তৃপ্তির পূর্ণতার মুহূর্ত ছিল, তা আমি আপনাদের সামনে ব্যক্ত করতে সক্ষম নই।

পরবর্তীতে তিনি কী করবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে মার্ক শেফার বলেন, ‘আমি ইসলাম সম্পর্কে আরও বেশি বেশি জানার চেষ্টা করব। আল্লাহর দীন সম্পর্কে গভীরতায় পৌঁছার প্রয়াস চালাব এবং পবিত্র হজ সম্পাদনের জন্য অচিরেই আবার সৌদি আরবে ফিরে আসব।’
ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হলেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ইসলাম সম্পর্কে খুব অল্পই জানা-শুনা ছিল। আমি যখন সৌদি আরব ভ্রমণ করলাম, সেখানকার মুসলিমদের জীবন যাপন প্রণালী দেখলাম, বিশেষত তাদেরকে প্রশান্তচিত্তে সালাত আদায় করতে দেখলাম, তখন ইসলাম সম্পর্কে জানতে প্রবলভাবে আগ্রহ বোধ করলাম। ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করা মাত্রই আমার প্রবল বিশ্বাস জন্মাল যে, এটি সত্য ধর্ম।
রোববার প্রভাতে স্যার মার্ক আমেরিকার উদ্দেশে জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পর্ব অতিক্রম করার সময় ধর্ম ঘরে লিখেন ইসলাম।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button