কুরআন

বিজ্ঞানময় আল-কুরআন : কতিপয় দিক

কুরআন মাজীদের অপর নাম ‘The complete code of life’. এর মধ্যে সবকিছুই বিদ্যমান। তার মধ্যে কতগুলো আমরা বুঝতে পারি আর কতগুলো বুঝতে পারিনা। এই কুরআন মাজীদে অনেক কিছুই বিশদ ব্যাখ্যা না করে শুধুমাত্র ইশারা দেয়া হয়েছে। যা মানুষের নিত্য-নতুন আবিষ্কার ও গবেষণার পথ খুলে দেয়। তাই কুরআন শুধু তেলাওয়াতের জন্য নয়, এটি গবেষণার জন্যও একটি উত্তম নির্দেশক। ফ্রান্সের বিখ্যাত সার্জন, বৈজ্ঞানিক ও গবেষক ডা. মরিস বুকাইলী কুরআন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি কুরআনের অনেক বৈজ্ঞানিক দিক বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর তিনি ১৯৭৬ সালে ‘বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামে একখানা সাড়াজাগানো গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সাথে বর্তমান বাইবেলের অসঙ্গতি ও কুরআনের সঙ্গতি তুলে ধরেন। সর্বকালের সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী আলবার্ট আইনস্টাইনের মতে, ‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু, বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ’। সুতরাং আমাদেরকে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে ও বুঝতে হবে।

চোখের ড্রপ :

সূরা ইউসুফ এর ৮৪ এবং ৯৩-৯৬ আয়াতগুলি গবেষণা করে মিশরের সরকারী ‘National centre of researches in Egypt’ এর মুসলিম বিজ্ঞানী ডা. আব্দুল বাসিত মুহাম্মাদ মানুষের দেহের ঘাম পরিশোধন করে একটি ‘আইড্রপ’ আবিষ্কার করেন, যা দিয়ে ২৫০ জন রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, কোনরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ৯০% এর বেশী চোখের ছানি রোগ সেরে যায় ও তারা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ইতিমধ্যে এই ঔষধটি ‘ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল প্যাটেন্ট ১৯৯১ এবং ‘আমেরিকান প্যাটেন্ট ১৯৯৩’ লাভ করেছে। এছাড়া একটি সুইস ঔষধ কোম্পানীর সাথে তাঁর চুক্তি হয়েছে এই মর্মে যে, তারা তাদের ঔষধের প্যাকেটের উপর ‘Medicine of Quran’ লিখে তা বাজারে ছাড়বে। -সূত্র : ইন্টারনেট।

উক্ত গবেষণার মূল সূত্র ছিল ইউসুফ (আঃ)-এর ব্যবহৃত জামা মুখের উপরে রাখার মাধ্যমে তাঁর পিতা ইয়াকুব (আঃ)-এর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার কুরআনী ঘটনা। এটি কুরআনের বিজ্ঞানময়তা প্রমাণ করে।

সূরা বাক্বারার ১৭৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক নিরূপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু’। নিম্নে উক্ত আয়াতের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণগুলো তুলে ধরা হলো।

শূকরের মাংস :

শূকরের গোশত ভক্ষণ সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ‘Trichiniasis’ নামক জীবাণুর সংক্রমণ শূকরের মাংসের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং ‘Trichinela spiralis’ নামক গোলকৃমির মাধ্যমে মানুষ আক্রান্ত হয়। যার ফলে সোয়াইন ফ্লুর (H1 N1) মত মহামারী দেখা দিতে পারে ও মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে। কাঁচা কিংবা ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া শূকরের মাংস খেলে মানুষের দেহ ‘Encysted’  জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জীবাণু হৃদপেশী আক্রমণ করে ও সেখানে ‘Myocarditis’ রোগ সৃষ্টি করে। যার ফলে হৃদপিন্ডের ক্রিয়া হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া শূকরের মাংসে ‘Taenia Solium’ বা ফিতাকৃমির জীবাণু থাকে। এর প্রভাবে মাংসপেশী,  মস্তিষ্ক, চোখ, স্নায়ু ইত্যাদি আক্রান্ত হয়। বর্তমান বিশ্বে ফিতাকৃমি আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ মিলিয়নেরও বেশী, যাদের অধিকাংশই শূকরের মাংস ভক্ষণকারী।

সম্প্রতি ‘সাটক্সিন’ নামক এক প্রকার প্রোটিন শূকরের মাংস থেকে সনাক্ত হয়েছে। যা বিভিন্ন প্রকার এলার্জি, এ্যাকজিমা ও হাঁপানীর জন্য দায়ী। কৃত্রিমভাবে সামান্য পরিমাণেও ‘সাটক্সিন’ গ্রহণ করলে দৈহিক অসারতা ও বিভিন্ন গ্রন্থিতে ব্যথার সৃষ্টি করে। এছাড়াও শূকরের গোশত উচ্চমাত্রায় চর্বি থাকে, যা নিয়মিত খেলে শরীরে Vitamin-E এর অভাব দেখা দেয়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শূকরের মাংস ভক্ষণ সম্পর্কিত আল্লাহ্র বিধান সত্যই তাৎপর্যপূর্ণ ও বিজ্ঞানময়।

মৃত প্রাণী :

আল্লাহ তা‘আলা মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই বিধানটিও সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত। যা নিম্নের তথ্যগুলো দ্বারা প্রমাণিত হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মৃত প্রাণী সাধারণ বিষপানে কিংবা ভাইরাস বা এ্যানথ্রস ‘Anthrax’ এর প্রভাবে মারা যেতে পারে। প্রাণীর ‘Anthrax’ একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে জীবাণু। এটি এতই সংক্রামক যে, এ রোগে মৃত প্রাণীর মাংস হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করাও বিপদজনক।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মনে করে জীব হত্যা মহাপাপ। পশু-পাখি আপনা থেকে মারা গেলেই কেবল তাদের মাংস ভক্ষণ করে। যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও ঝুকিপূর্ণ পদ্ধতি।

রক্ত :

প্রাণী জবাই করার পর যে রক্ত বের হয়ে আসে তাতে থাকে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান, জমাট বাধার উপাদান (Heparin), Toxin ও বিভিন্ন ‘Pathogenic micro-organism’ রক্তের এসব পদার্থ খুবই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। অবশ্য এগুলো প্রাণীদেহের ভিতরে থাকা অবস্থায় প্রাণীদেহের কোন ক্ষতি করেনা। এ কারণেই আল্লাহ পাক রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ পশু-পাখি তাঁর নামে জবাই করে রক্ত বের করে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। মূলত ওইসব বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়ার জন্যই। এজন্য জবাই হচ্ছে সর্বোত্তম বৈজ্ঞানিক পন্থা, যা ইসলামী নিয়মে করা হয়ে থাকে।

এ সম্পর্কে Dr. Lord Horder বলেছেন, ‘আমি জবাই পদ্ধতি ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি। এ পদ্ধতিতে প্রাণীর ঘাড়ের সব রক্তনালী, শ্বাসনালী ও অন্ননালীসহ শিরদাঁড়ার হাড়ের আগ পর্যন্ত সকল নরম গঠন কেটে ফেলা হয়। এর ফলে প্রাণী সহজেই চেতনা হারায়। এ পদ্ধতির চেয়ে সহজ, ব্যথাহীন ও তাৎক্ষণিক কোন পদ্ধতি নেই। জবাইয়ের কয়েক মুহূর্ত পরে প্রাণী আর নড়াচড়া করতে পারেনা, কেবল শরীর দাপাদাপি করতে থাকে। শরীরের এ দাপাদাপি এক মিনিটের মধ্যে স্তিমিত হয়ে যায়।

উপরোক্ত কয়েকটি বিষয় থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুরআনে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ সমূহ যুক্তিসংগত ও বিজ্ঞানময়। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারগুলো সম্প্রতি হচ্ছে অথচ কুরআন এগুলোর সূত্র (Clue) ১৪০০ বছর আগেই ঘোষণা করেছে। এটা যে কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয়, সরাসরি সৃষ্টিকর্তার বাণী তা এর দ্বারাই দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী দ্বীনের পথ বুঝা ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!!

– আ.স.ম. ওয়ালীউল্লাহ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button