জীবনের বাঁকে বাঁকে

সব নারীসত্তায় বিকশিত হোক এই শুদ্ধতা

‘হাঁটু জলে নেমে কন্যা হাঁটু মাছন করে, তাই না দেখে সেই কন্যার প্রেমে গেছি পড়ে, ভালোবাসবে সে কি আমারে’ ওয়াসিমের এমন গান যখন বাজছিল, সিনেমায় শাবানা তখন হাঁটুর পর কাপড় তুলে হাটু মাছন করছিলেন। পুরনো দিনে অনেক ভালো সিনেমার পাশাপাশি শাবানা এমন অনেক ছবিতেই অভিনয় করেছেন। কিন্তু আজ এগুলো দেখে শাবানা নিজে নিজে যারপর নাই বিব্রত হন।
এমনিতেই শাবানা কোনো অশ্লীল ছবি বা দৃশ্যে অভিনয় করেননি। তার অভিনীত ছবিগুলো ছিল তুলনামূলক অশ্লীলতামুক্ত। তারপরও নিজের ছবি ও চরিত্র সম্পর্কে শাবানার এই উপলব্ধি প্রমাণ করে তার বদলে যাওয়ার মাত্রা। শাবানার এই বক্তব্য এরই মধ্যে ঢালিউড ও তার এককালীন সহ অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যারা সৎ ও নারীজীবনের শুদ্ধতার পথে চলতে চান এবং চলা পছন্দ করেন তাদের জন্যও আশার বাণী হয়ে দেখা দিয়েছে শাবানার এই অভিব্যক্তি।

শুধু এখানেই শেষ নয়, বদলে যাওয়া শাবানা তার বৈপ্লবিক পরিবর্তিত অনুভূতি থেকে দেশের গণমাধ্যমগুলোর কাছে অনুরোধ করেছেন, তার ছবিগুলো যেন আর গণমাধ্যমে প্রদর্শন না করা হয়। তিনি এও বলেছেন, ‘তবে বাণিজ্যিক কারণে যদি তা সম্ভব না হয় অন্তত রমযান মাসে যেন তার কোনো চলচ্চিত্র কোনো গণমাধ্যমে প্রদর্শন না করা হয়।’

চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি শিল্পী শাবানা দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকায় প্রবাস যাপন করছেন। আমেরিকার আধুনিক জীবনেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন হিজাব ও শালীনতার শুদ্ধতায়। বাংলা কমিউনিটির কোনো অনুষ্ঠানেও খুব একটা দেখা যায় না শাবানাকে। একান্ত ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কারও অনুষ্ঠানে হাজিরও হন না তিনি। এক ঘরোয়া আড্ডায় শাবানা জানিয়েছেন, এখন এই বয়সে এসে নিজের এই চরিত্রগুলো দেখলে বিব্রত হতে হয়। এ ছাড়া আমি নিজেও আমার লাইফস্টাইল বদলে নিয়েছি।’

শাবানা আজ তার লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন। তিনি এতদিন যা করেছেন তা নিঃসন্দেহে গুনাহে জারিয়া (চলমান গুনাহ)। আর গুনাহসমূহের মধ্যে গুনাহে জারিয়া খুবই ভয়ানক ও পরকালবিনাশী পাপ। একারণেই গুনাহে জারিয়ার ব্যাপারে বান্দাকে বেশি সচেতন করা হয়েছে। মানুষ ব্যক্তিগত অনেক বড় অপরাধ করেও নিমিষেই আন্তরিক তাওবার মাধ্যমে সেই পাপ থেকে রেহাই পেতে পারে। কিন্তু একটা গুনাহে জারিয়ার দায় শোধ করা খুবই কঠিন। মুনযির ইবন জারীর থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
« مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَمِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ ، وَمَنْ سَنَّ سُنَّةً سَيِّئَةً فَعُمِلَ بِهَا كَانَ لَهُ وِزْرُهَا وَمِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ ».
‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের প্রচলন ঘটাবে এবং অন্যরা সেটার অনুসরণ করবে তবে তার জন্য এর প্রতিদান লেখা হবে এবং এর অনুসরণকারীর অনুরূপ নেকীও লেখা হবে। অথচ তাদের প্রতিদান থেকে এতটুকু কমানো হবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের প্রচলন ঘটাবে এবং অন্যরা সেটার অনুসরণও করবে তবে সেই পাপের অন্য প্রচলনকারীর আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ যে পাপ করবে তার পাপের সামান্য অংশও তাতে হ্রাস পাবে না।’ [ইবন মাজাহ্ : ২০৩; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩০৮]

এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
« وَمَا مِنْ دَاعٍ يَدْعُو إِلَى ضَلاَلَةٍ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِ مِثْلُ أَوْزَارِهِمْ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئًا ».
‘যে ব্যক্তি পাপের দিকে আহ্বান করবে সেই পাপের দায়ভার তার ওপরেও বর্তাবে। অথচ পাপকারীরও পাপের মধ্যে কোনো ঘাটতি হবে না।’ [মুয়াত্তা মালেক : ৫১৩, সহীহ]
এই হাদীসের আলোকে বিখ্যাত হাদীস ভাষ্যকার ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদীসে ভালো কাজের প্রচলন ঘটানোর প্রতি তাগিদ এবং মন্দকাজের প্রচলন ঘটানোর ভয়াবহতা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি কারো কৃতপাপ অন্যরা অনুসরণ করতে থাকলে এবং তা যতদিন চলবে ততদিন সে ওই পাপের ভাগী হবে। এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত চললে পাপও হবে কেয়ামত পর্যন্ত। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, শুধু মৃত্যুর পরেই নয়, জীবদ্দশাতেও সেই পাপগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
معناه إن سنها سواء كان العمل في حياته أو بعد موته والله اعلم
‘হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যে ব্যক্তি পাপ করে ও পাপের প্রচলন ঘটায় এবং অন্যরা তার অনুসরণ করে তবে তার জীবদ্দশা ও মরণের পর তার আমলনামায় ওই পাপ যুক্ত হতে থাকে।’ [শরহে নববী]

কাযী ইয়াজ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وهذا أصل فى أن المعونة على مالا يحل لاتحل ، قال الله تعالى : وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ  وقد جعل الدال على الخير كفاعله  وهكذا الدال على الشر كفاعله
‘এটাই মূলনীতি যে, হারাম কাজে কাউকে সহযোগিতা করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, তোমরা একে অপরকে পাপের কাজে সহযোগিতা করবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা ভালো কাজের সহযোগীকে ভালোকাজের কর্তা এবং অনুরূপভাবে খারাপ কাজের সহযোগীকে খারাপ কাজের কর্তার অনুরূপ আখ্যায়িত করেছেন।’ [ইকমালুল মু‘লিম]

জনৈক কবি বলেন,
وَالمَرْءُ في مِيزانِه أتْباعُهُ
‘মানুষ কেয়ামতের ময়দানে তার আমলনামায় স্বীয় অনুসারীদেরকে দেখতে পাবে।’
বিব্রত ও পরিবর্তিত মানসিকতার শাবানা পাপের যে ধারা চালু করেছিলেন এর ভয়াবহ পরিণামের কথা চিন্তা করে তিনি তা থেকে আজ পালানোর চেষ্টা করছেন। তার এই পলায়নপরতা তীব্র ও গতিময় হোক, আমরা সেটাই কামনা করি। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, শাবানার ব্যক্তিগত অভিমতের ওপরে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর কারো কাছ থেকেই তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই তো তিনি আকুলভাবে আবেদন জানাচ্ছেন, অন্তত রমজান মাসের সম্মানেও যেন তার ছবিগুলো প্রকাশ না করা হয়। কিন্তু অর্থলিপ্সায় বিভোর গণমাধ্যম কি সাড়া দেবে তার মানবিক আবেদনে? বিশেষত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার কাঠিটা যে তলানীতে ঠেকেছে তাতে তার এই পরকালীন ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ব্যবসায়ীদের সাড়া দেওয়াটা কেন যেন আমার কাছে অসম্ভবই মনে হয়।

কিন্তু যারা শাবানার ভক্ত বলে দাবি করেন, তারা কি পারবেন শাবানাকে পাপের হাত থেকে বাঁচাতে? যারা ভক্ত বলে দাবি করে তার ছবিগুলো পরম আগ্রহ ভরে সিনেমা হলে কিংবা টিভির সামনে বসে দেখেছেন, আজ তার বিনীত আবেদন এবং পাপ থেকে বাঁচার আকুতির সম্মানেই না হয় ছবিগুলো দেখা বাদ দিন। এভাবে সবাই যদি তার ছবিগুলো বয়কট করেন তবে মুনাফাখোর মিডিয়া ব্যবসায়ীরা চাইলেও তার পাপের বোঝা দীর্ঘ করতে পারবেন না। ভক্তি ও ভক্তের পরীক্ষা আসলে এখানেই। একজন পরিবর্তিত ও নতুন পথ পাওয়া নারীকে পাপ থেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করা কি অপর মুসলমানের কর্তব্য নয়?

আমরা বিশ্বাস করি, একজন ফেরারী নারীর ঘরে ফেরাটা সকল মুসলিমের জন্য শুভ সংবাদ। এই সংবাদটার মর্ম সকলের হৃদয়ে আকুলতা সৃষ্টি করুক, অন্যদেরও ঘরে ফেরার আগ্রহ তীব্র হোক এবং ঘরফেরত নারী তার আপন নীড়ে থিতু হওয়ার স্বাদ অনুধাবন করুক- এই প্রত্যাশা করি মনেপ্রাণে।

নরকচিতায় হকের ঝাণ্ডাবাহী একজন সাহসী কুলকার্নি
বলিউডের এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরে অবস্থান করে দর্শকদের রীতিমতো হতাশ করছিলেন। দর্শকরা সময়ের এই হিট নায়িকার শুভ প্রত্যাগমনের দিন গুণছিল। কবে তিনি মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে ‘ফিরে আসার সময় হলো’ বলে একটা সাক্ষাৎকার দিবেন ভেবে দর্শকরা রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করছিল। তিনি সেই সাক্ষাতকার দিলেন বটে কিন্তু তাতে শুধু ভারতবাসীই নয়; বিশ্ববাসীও সমান চমকে উঠেছেন। নব্বইয়ের দশকের এই জনপ্রিয় নায়িকা জানালেন, তিনি মুসলিম হয়েছেন! এমনকি দুইবছর আগে তার স্বামীও মুসলিম হয়েছেন!

বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি জানার চেষ্টা করছি আসলে মানুষের মূল গন্তব্য কোথায়? আমরা আসলে কী? আমাদের কী করা উচিত? সেই চেষ্টা থেকেই আমি হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আবার চলচ্চিত্রে ফেরা সম্পর্কে বলেন, ঘি আবার দুধে পরিণত হতে পারে। ঋষি বাল্মিকি ফিরে আগের ভিল্লা হতে পারে। নায়ক শাহরুখ, আমির, সালমানও বদলে যেতে পারে। কিন্তু মমতাকে আর মিডিয়ার পর্দার সামনে পাওয়া যাবে না। এটা একেবারেই অসম্ভব।’ [তথ্যসূত্র : পার্বত্য নিউজ, খবরনামা]

এমন একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর আলোর পথে ফিরে আসা সত্যিই মুগ্ধকর, আশাজাগানিয়া। আরো অবাক বিষয় হচ্ছে তাঁর সাহসিকতা ও মনোবলের দৃঢ়তা। তিনি বলছেন, ‘মমতাকে আর মিডিয়ার পর্দার সামনে পাওয়া যাবে না। এটা একেবারেই অসম্ভব।’

মমতা যেন হাদীসের বাক্যেরই প্রতিধ্বনি করছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا ، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ » .
‘তিনটি বস্তু যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হওয়া। দুই. মানুষকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই ভালোবাসা এবং তিন. কুফর থেকে ফিরে আসার পর পুনরায় কুফরে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দ করা।’ [বুখারী : ১৬; মুসলিম : ৬০]

বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা যখন কারো অন্তর খুলে দেন তখন তার জন্য পৃথিবীর যাবতীয় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা সহজ ও সম্ভব হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সকল তাগুতী শক্তির কাছে তিনি থাকেন অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। সচেতন নাগরিকমাত্রই জানেন হিন্দুস্তান একটি অতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দেশ, যেদেশের বাসিন্দারা মুসলিমদেরকে সহ্য করতে পারে না, এমনকি কোনো মুসলিম তাদের গাড়ি-বিমানে উঠে আল্লাহ তা‘আলার নাম নেয়াও বরদাশত করে না। পাঠকদের মনে আছে কিনা জানি না, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক উড়োজাহাজ কোম্পানির হিন্দুস্তানী মালিক তাদের এয়ারবাসে ‘ইনশাআল্লাহ’, ভ্রমণের দু‘আ ‘বিসমিল্লাহ ওয়া মাজরিহা’ তথা ইসলামী আচরণ ও যাবতীয় দু‘আ-দরূদ নিষিদ্ধ করেছিল। ভারতের শাসনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং নাগরিকরাও পছন্দ করে এমন লোকদেরকে, যারা মুসলিম শিশু বাচ্চাকে তার মায়ের পেট থেকে কেটে বের করে মায়ের সামনে টুকরো টুকরো করতে পারে। এমন উগ্র হিন্দুদেরকে ভারতবাসী শ্রদ্ধা করে, যারা মুসলিম নারী-পুরুষকে জোর করে পেট্রোল খাইয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পেট্টোলবাহী জীবন্ত মানুষটার তাজা দেহ ভস্মিভূত হওয়ার তীব্র ও ভয়ানক করুণ দৃশ্য দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ভারতে প্রায় পঞ্চাশটির মতো এমন উগ্র ও হিংস্র সংগঠন, সংস্থা ও রাজনৈতিক দল আছে যারা সর্বদা মুসলিমের রক্ত, লাশ ও অগ্নিদগ্ধ পোড়া দেহের গন্ধে নিজেদেরকে আপ্লুত দেখতে চায়। গুজরাটের দাঙ্গা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের চিত্র এবং বিশ্ব ইতিহাসের বড় বড় সব দাঙ্গার জন্ম দেওয়া হিন্দুস্তান সেগুলোর রাজসাক্ষী।
সুতরাং এমন একটি উগ্রবাদী ও কট্টর হিন্দুরাষ্ট্রে খোদ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে একজন জনপ্রিয় ও দর্শকনন্দিত অভিনেত্রীর আলোর পথে আসা এবং প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেওয়া নিতান্ত সাধারণ ব্যাপার নয়। আজকের মমতা, আমার বোন, মুসলিমের এক নতুন সদস্য যেন ফিরআউনের জাদুকরদের মতোই সাহসী হয়ে উঠেছেন। জাদুকররা বিশাল-বিস্তৃতি মাঠে আল্লাহ হওয়ার দাবিদার ফিরআউন ও তার বিশাল বাহিনীর সামনে হকের দাবি নিয়ে দণ্ডায়মান এক মুসা ‘‘আলাইহিস সালামের অবিচলতা দেখে বিস্মিত, বিমোহিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে এটা ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়, অসম লড়াই। কারণ ফিরআউন তৎক্ষণাত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ডান হাত ও বাম পা কর্তন করে তাদেরকে চিরতরে পঙ্গু করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার যে, যারা এক মুহূর্ত আগে স্রষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছিল তারাই এখন মুসা ‘আলাইহিস সালামের ঈমানী শক্তির বদৌলতে নকল স্রষ্টার বিরুদ্ধে, কাট্টা কাফেরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন!

মমতা এপর্যন্ত বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়লাম ও কানাড়ি শিল্পে প্রায় অর্ধশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ অভিনীত ছবি ছিল ২০০২ সালে। বলিউডে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আবেদনময়ী নায়িকা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। সেই মমতার পক্ষে এমন একটা প্লাটফর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করার মতো দুঃসাহস দেখানো নিঃসন্দেহে নারীজাতির দীপ্তপদচারণার নজির হয়ে থাকবে।

অনেক সময় পথভ্রষ্ট করার চক্রান্ত পথহারা পথিকের সুপথ পাওয়ার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। এর নজির আমরা জানতে পারি ইসলামের ইতিহাসে, মক্কার কুরায়শদের কুচক্রান্তের ঘটনায়। রাসূসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় হজ করতে আসা লোকদেরকে দীনের দাওয়াত প্রদান করবেন এই আশঙ্কায় মক্কার অলিতে গলিতে আগে থেকেই লোক বসিয়ে দেওয়া হয় তাঁর নামে কুৎসা রটনা করতে। নেতাদের আদেশ মোতাবেক এই চেলা-চামুন্ডারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর আনীত দীনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতে থাকে। এতে হিতে বিপরীত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে আগত লোকেরা এই নতুন ধর্মের প্রবর্তক নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং এভাবেই অসংখ্য মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কার কুরাইশরা কুৎসা রটনা না করলে তারা নবী সম্পর্কে জানতেনই না এবং ইসলাম গ্রহণেরও সুযোগ মিলত না।

ঠিক কুরাইশদের দেখানো পথেই হাঁটছে আজকের ইসলামবিদ্বেষীচক্র। ওরা বিভিন্নভাবে নারী সমাজকে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষীপ্ত করতে গিয়ে অনেক বিধর্মী নারীকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে, ইসলামকে মানতে অনুপ্রাণিত করছে। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে নারীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রবণতা এমন সব রাষ্ট্রে বেশিমাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেখানে ইসলামের বিরুদ্ধে, পর্দার বিরুদ্ধে অলঙ্ঘনীয় সংবিধান চালু করে রেখেছে! ইনশাআল্লাহ, শত্রুরা না চাইলেও এভাবেই অব্যাহত থাকবে ইসলামের অগ্রযাত্রা, বিজয় নিশান। ভারতের মতো ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলোতেও ফিরআউনের জাদুকরদের মতো গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে মমতা কুলকার্নির মতো নারীরা ইসলামের পতাকাতলে আশ্রিত হবেন। তাই নারীরা শুধু অবলার দুর্বলতায় অভিযুক্তই নয়; সাহসের উপমা হিসেবেও সমান দক্ষ। সালাম, মমতা তোমাকে!

————
– আবু বকর সিরাজী

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button