সংবাদ

“জ্যোতিষবিদ” লিটন দেওয়ানের প্রতারণা বাণিজ্য

নাম লিটন দেওয়ান; ওরফে পাগলা দেওয়ান, ওরফে লিটন চিশতি, ওরফে আধ্যাত্মিক গুরু লিটন। পাঠক, নামের এমন ফিরিস্তি শুনে মনে হতে পারে, একজন ব্যক্তির কখনও এত্তগুলো নাম হওয়া সম্ভব? কিন্তু এটাই বাস্তব। তবে সমাজের বেশির ভাগ লোক তাকে চেনে ‘লিটন দেওয়ান’ নামে। একেবারে অজোপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা এক সময়ের অখ্যাত মানুষটি এখন বিলাসবহুল চেম্বার খুলে বসেছেন খোদ রাজধানীতে। একটি অভিজাত স্বনামধন্য বিপণিবিতানে রয়েছে তার জ্যোতিষশাস্ত্রের দফতর। এটি আবার সব মুসকিল আসান দফতর নামেও পরিচিত। কেউ কেউ বলেন, জিন্দা পীরের দরবার। ভক্তদের কেউ আবার পাগলা বাবার দরবার বলতেও পছন্দ করেন।

কিন্তু নাম যাই হোক না কেন, কাজ নিয়ে রয়েছে ভয়াবহ সব তথ্য ও প্রমাণ। এখানে মূলত মানুষের মাঝে প্রচলিত কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাসকে পুঁজি করে লিটন দেওয়ান রীতিমতো বিখ্যাত উপন্যাস ‘লালসালুর’ কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের মতো ‘মাজার’ খুলে বসেছেন। নিজেকে বিখ্যাত জ্যোতিষবিদ দাবি করে দু’হাতে খালি করে চলেছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পকেট। আবার সম্মানের ভয়ে মুখ না খুললেও বহু নারী তার হাতে বিপজ্জনক শিকারে পরিণত হয়েছেন।

তথ্যপ্রমাণসহ লিটন দেওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি আসলে একজন ভণ্ড এবং প্রতারক। প্রতারণাই তার আসল ব্যবসা। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তিনি সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর টাকার জোরে আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখেও ধুলো দিতে সক্ষম হয়েছেন। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এই ভণ্ড প্রতারকের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে এসেছে।

লিটনের আখড়ায় সরেজমিন : বড় অংকের লটারি ও চাকরি পাইয়ে দেয়া, মামলায় জেতানো, ভালো লাগার মানুষ ও পরস্ত্রীকে বশে আনা, বিদেশ যেতে বাধা দূর করাসহ সব ধরনের সমস্যার সমাধান দেন লিটন দেওয়ান। এক কথায়, এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান লিটনের কাছে নেই। খবরের কাগজে ও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দিনরাত মিথ্যার বেসাতির মতো লিটন দেওয়ানের গুণগান ও মহত্ত্বকথা ছড়িয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। লিটনের সাক্ষাৎকার ছাপানো হচ্ছে অখ্যাত বিভিন্ন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনেও। আবার শুধু টাকার জন্য এই প্রতারকের বিজ্ঞাপনে মডেল হতে দেখা গেছে নামিদামি অভিনেতাকেও।

তাই বিস্তর অনুসন্ধান শেষে সরেজমিন প্রকৃত অবস্থা দেখতে ১৮ মার্চ দুপুরে যুগান্তরের অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা হাজির হন রাজধানীর পান্থপথে লিটনের কথিত চেম্বারে। বেলা তখন সাড়ে ১২টা। দেখা গেল, ডাক্তারের ফি’র মতো লিটন দেওয়ানের কর্মচারীরা সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নাম খাতায় এন্ট্রি করে প্রত্যেকের কাছ থেকে আগাম ফি নিচ্ছেন। জনপ্রতি ৫শ’ টাকা। ওই ভরদুপুরে সিরিয়াল নম্বর ৭৫ দেখে তো অনুসন্ধানী টিমের চক্ষু চড়ক গাছ। ‘৭৬ নম্বরে সিরিয়ালে সাক্ষাৎ পেতে হলে রাত ১১টাও বেজে যেতে পারে।’ তাই বাধ্য হয়ে ভিন্ন উপায়ে সিরিয়াল কমিয়ে ৫৪ করা হল। এবার দীর্ঘ অপেক্ষা।

লিটন বসে আছেন কাচঘেরা বিশেষ একটি সুসজ্জিত কক্ষে। অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ। সমস্যাগ্রস্ত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ চেম্বারের বাইরে অপেক্ষমাণ। আগে-পরে ঢোকা নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় রীতিমতো ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়া সামাল দিচ্ছেন লিটনের ব্যক্তিগত কর্মচারীরা। একজন নারী দর্শনার্থী লিটন দেওয়ানের ব্যক্তিগত কর্মচারীদের উদ্দেশ করে বলেন, গত মাসেও এসেছিলাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে ‘বাবার’ সাক্ষাৎ পাইনি। এবার একটু তাড়াতাড়ি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। এ অনুরোধ শুনে একজন কর্মচারী রীতিমতো কড়া ধমক দেন। বলেন, দেখছেন না কত ভিড়। আপনাকে আগে পাঠালে অন্যরা কি বলবে। চুপচাপ বসে থাকেন। সিরিয়াল এলে তবেই ভেতরে ঢুকতে পারবেন। ধমক খেয়ে চুপ করে যান ওই নারী।

মুন্সীগঞ্জ থেকে এক নবদম্পতি এসেছেন লিটনের সাক্ষাৎ পেতে। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে সমস্যা জানতে চাইলে তারা জানালেন, মাত্র এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে সুখী নন। নানা সমস্যা হচ্ছে। জিন-পরীর কুনজর পড়েছে মনে করে তারা ‘লিটন বাবা’র কাছে ‘তদ্বির’ নিতে এসেছেন। আরেকজন কানাডা প্রবাসী নারী দর্শনার্থী এসেছেন। পরকীয়ার কারণে তার সংসার ভেঙে যাচ্ছে। প্রতিকার পেতে তিনি বাবার আস্তানায় এসেছেন। একজন ব্যবসায়ী এসেছেন তার ব্যবসা ভালো করার তদবির নিতে। লিটন দেওয়ান এসব দর্শনার্থীর কাছ থেকে একের পর এক এসব সমস্যার কথা শুনে সমানে সরকারি হাসপাতালের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দেয়ার মতো পাথর, আংটি ও তাবিজ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, ১০০ পার্সেন্ট গ্যারান্টি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

সন্ধ্যা ৭টায় ৫৪ নম্বর সিরিয়ালের ডাক পড়ল। পরিচয় গোপন করে চেম্বারের ভেতরে লিটন দেওয়ানের মুখোমুখি যুগান্তরের অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা। কিন্তু তার কক্ষে ঢুকে অনেকটা বিস্মিত হতে হল। ঘরময় নানা ধরনের পুরস্কার, ক্রেস্ট আর মন্ত্রী-এমপিসহ গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে লিটনের তোলা ছবি দিয়ে সাজসাজ অবয়ব। ঘরে বড় করে টানানো আছে আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লিটনকে দেয়া সম্মাননা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট। বিশাল এক বিলাসবহুল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন কথিত জ্যোতিষ রাজ লিটন। পরনে সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি। মাথায় কালো টুপি। কক্ষের ভেতরে ঢোকামাত্র বিশেষ ভঙ্গিতে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তিনি। ইশারায় বসতে বললেন। সালাম ও নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিটন দেওয়ানকে বলা হল, ‘চাকরির বয়স শেষ। যেভাবেই হোক এবার বিসিএস পরীক্ষায় চান্স পাওয়াতেই হবে। সমস্যা শুনে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেললেন লিটন। বললেন, তোর সমস্যা অনেক জটিল। তবে আমি সবাধান দেয়ার অছিলা মাত্র। সব সমাধান দেবেন (উপরের দিকে একটা আঙুল তুলে) তিনি। কোথায় থাকি, নাম পরিচয়, বাবার নাম ইত্যাদি জানতে চাইলেন। এরপর রাশি নির্ধারণের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে আতশি কাচ দিয়ে উল্টেপাল্টে হাত দেখলেন। এরপর বললেন, শনির রাহু গ্রাস করেছে। রাহু কাটাতে নীলার (পাথর) আংটি পরতে হবে। আংটির দাম ১৫ হাজার টাকা। এই আংটি পরলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

সবকিছু শুনে খুশি হওয়ার ভান করল যুগান্তরের অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা। এরপর আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসতেই বাইরে থাকা লিটনের কর্মচারীরা ঘিরে ধরলেন। তাদের বক্তব্য-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ, এখন টাকা দেন, পাথরের আংটি নিয়ে যান।’ এত টাকা সঙ্গে নেই জানিয়ে কিছুক্ষণ পরে আসার কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা গেল।

জানা গেল, প্রতিদিন লিটন দেওয়ানের কাছে গড়ে দেড়শ’ সমস্যাপীড়িত মানুষ সাক্ষাৎ করতে আসেন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে শুধু দর্শনী ফি বাবদ দৈনিক আদায় করা হয় ৭৫ হাজার টাকা। মাসের হিসাবে এই অংক সাড়ে ২২ লাখ। বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা। লিটন নিজেই যুগান্তরকে বলেছেন, ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন তিনি।

প্রলোভনের বিজ্ঞাপন : লিটন দেওয়ানের বিজ্ঞাপনে অনেক নামিদামি চিত্রতারকারা বলেন, তারা ‘দেওয়ান সাহেব’র কাছে এসে উপকৃত হয়েছেন। তাদের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।’ এসব চিত্রতারকার মধ্যে আছেন শীর্ষস্থানীয় চিত্রপরিচালক কাজী হায়াৎ, খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ, চিত্র নায়িকা রত্না, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার, রিনা খান, চিত্রনায়ক হেলাল খান ও অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন দৃশ্যে চিত্রনায়ক হেলাল খানকে বলতে দেখা যায়, ‘আমাকে উনি (লিটন দেওয়ান) একটা পাথরের আংটি দিয়েছেন। আমি উপকার পেয়েছি। আপনারাও আসুন, আমার মনে হয় উপকার পাবেন।’ বিশিষ্ট অভিনেত্রী রিনা খান বিজ্ঞাপনে বলছেন, ‘জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ানের কাছ থেকে এই পাথর কিনে ব্যবহার করি। এই পাথর ব্যবহার করার পরে আমার জীবনে সুখশান্তি ফিরে আসে। আপনারাও এই পাথর ব্যবহার করুন। এই পাথর আসল পাথর। জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান মানুষের মুখ দেখেই তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন।’ বর্ষীয়ান অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরীকে বিজ্ঞাপনে বলতে দেখা যায়, ‘কোন সমস্যায় কি সমাধান দিতে হবে এটাই তার সাধনা। আপনার সমস্যাগুলো তাকে বলুন। নিশ্চয় আপনি উপকৃত হবেন।’ চিত্রপরিচালক কাজী হায়াৎকে বলতে দেখা যায়, ‘লিটন দেওয়ান একজন নামকরা জ্যোতিষ। তার কাছ থেকে একটি পাথর নিলাম। দেওয়ান সাহেব বললেন, আপনি এই পাথরটি পরবেন। আপনার জীবনে সাফল্য আসবে।’ চিত্র নায়িকা রত্নাকে বলতে দেখা যায়, ‘আমি আমার জীবনের নানা সমস্যা উনাকে (লিটন দেওয়ান) বললাম। সব শুনে তিনি আমাকে দুটি আংটি দিলেন। আংটি দুটি আমি ব্যবহার করছি। এখন আমি অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছি।’ খল অভিনেতা আহেমদ শরীফ বলছেন, লিটন দেওয়ান একজন গুণী ব্যক্তি। তার পিতাও একজন বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তার পিতার মাজার শরিফের ঔরস অনুষ্ঠানে আমি নিজে যাই। আপনারাও যাবেন। লিটন দেওয়ানের কাছে এসে আমি উপকৃত হয়েছি।’ বিজ্ঞাপন চিত্রে ঢাকায় চলচ্চিত্রের একজন বর্ষীয়ান অভিনেতাকে পাথরের আংটিতে চুমু দিতে দিতে লিটন দেওয়ানের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। বিজ্ঞাপনের আরেকটি দৃশ্যে দেখা যায়, লিটন দেওয়ান একজন সুন্দরী তরুণীর হাত ধরে তার মুখের দিকে চেয়ে বসে আছেন। এ সময় ওই তরুণীকেও লিটন দেওয়ানের দিকে তাকিয়ে রোমান্টিক ভঙ্গিতে হাসতে দেখা যায়।

যা বললেন অভিনেতারা : এসব চিত্র অভিনেতা কি সত্যি উপকার পেয়ে এসব কথা বলছেন? নাকি শুধু টাকার জন্য শেখানো কথাগুলো ক্যামেরার সামনে মডেল হিসেবে অভিনয় করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট কয়েকজন অভিনয় শিল্পীর মুখোমুখি হন। এদের মধ্যে অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, অভিনয়ই তার পেশা। তবে একটা মান বজায় রেখেই তিনি অভিনয় করেন। লিটন দেওয়ানের বিজ্ঞাপনেও তিনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অভিনয় করেছেন মাত্র। কিন্তু অভিনয়ের সময় তারা তাকে দিয়ে যা বলাতে চেয়েছিল তার সবকিছু তিনি বলেননি। যেটুকু যৌক্তিক মনে করেছেন সেটুকুই বলেছেন।

অভিনেত্রী রীনা খানের কাছে একই বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অভিনেত্রী। অভিনয় করাই আমার কাজ। তবে এই বিজ্ঞাপনে তিনি একা নন, আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। এ বিষয়টাতে সবাই যে বক্তব্য দেবেন তারও একই বক্তব্য। অভিনেতা হেলাল খান এখন কারাগারে আছেন। তাই তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। চিত্রনায়িকা রত্না যুগান্তরের প্রশ্নের উত্তরে কোনো সাড়া দেননি। বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করায় পরিচালক কাজী হায়াতের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তি : প্রতারণার অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ আগস্ট লিটন দেওয়ানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম ও শামীম নামের লিটন দেওয়ানের দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর নিজের সব অপরাধের কথা অকপটে স্বীকার করেন লিটন দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জ্যোতিষ লাইনটা, এই যে পীর ফকিরী এইটা ভণ্ডামি। যারাই করতাছে সব ভণ্ডামি। আমরাও ভুলের কারণে জড়াইয়া গেছিলাম।’ চিকিৎসার জন্য আসা নিঃসন্তান নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্তান মহিলারা আমাদের কাছে কম আসে। তবে বিভিন্ন বয়সী মহিলারা আমাদের কাছে আসে। অনেক সময় আমাদের সান্নিধ্য পেতেও চায়। আমরাও লোভ-লালসায় জড়ায়ে যাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই লাইন ছেড়ে দেব। আমি অনুতপ্ত।’ র‌্যাব-৩ এর তৎকালীন অধিনায়ক উইং কমান্ডার সুলতান মাহমুদ নূরানী সে সময় সাংবাদিকদের জানান, আধ্যাত্মিক শক্তির দাবিদার এই প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে বহু মানুষ। সে অলৌকিক নানা শক্তি প্রদর্শন করতে পারে বলে প্রচার করত। বলা হতো, তার ঘরের ছাদের ওপর থেকে রক্তের ফোঁটা পড়ে। পরে তাদের তদন্তে দেখা গেল, সে বিশেষ কৌশলে কেমিক্যাল দিয়ে এসব প্রতারণার আশ্রয় নিত।

এদিকে তার প্রতারণার বিষয়ে অনুসন্ধান চলাকালে ১৯ মার্চ লিটন দেওয়ান যুগান্তর প্রতিবেদককে ফোন করে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘ভাই, নিউজ টিউজ কইর‌্যা কি হইব? আমি তো একা খাই না। সবাই মিল্ল্যা জুল্ল্যা খাই। একদিন আমার অফিসে আসেন। চা খান।’

বক্তব্য : ১৮ মার্চ লিটন দেওয়ান তার কার্যালয়ে বসে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে যুগান্তরের অনুসন্ধান সেলের কাছে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। প্রতারণা বা ভণ্ডামি করলে তিনি এতদিন টিকে থাকতে পারতেন না। তবে এ দীর্ঘ সময়ে তাকে র‌্যাব, পুলিশের নানা ধরনের ঝামেলা সহ্য করতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন ২০০৮ সালে র‌্যাব তাকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ না থাকায় মাত্র ১৬ দিনের মাথায় তিনি জামিনও পান। দায়েরকৃত মামলাও আদালতে প্রমাণিত হয়নি। সব অভিযোগ থেকে তিনি সম্পূর্ণ খালাস পেয়েছেন। টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা তার ব্যবসা। ব্যবসার প্রচার-প্রসার বাড়ানোর জন্য সবাই যেভাবে বিজ্ঞাপন দেয় তিনিও তাই দিচ্ছেন। এটা অন্যায়ের কিছু নয়। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা এভাবে প্রদর্শন করার মধ্যে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে হাত দেখিয়েছে তাদের সঙ্গেই আমার ছবি আছে। এতে প্রতারণার কিছু নেই।

কথিত জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ানের প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল জিয়াউল আহসান যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের জ্যোতিষ, জিনের বাদশাকে র‌্যাব বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে সহজেই তারা জামিনে বেরিয়ে যায়। প্রতারকদের চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতারকদের হাতে যারা প্রতারিত হয়েছেন তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে র্যাব।

যুগান্তর

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button