ছোটগল্প/উপন্যাস

ছোট ছোট বালুকণা

সামিয়া ছিল একেবারেই অন্য ধাঁচের একটা মেয়ে। শিক্ষক পিতার সন্তান বলেই হয়ত ওর মাঝে পার্থিব কামনা বাসনার উর্ধ্বে স্থান পেয়েছিল মানবিকতাবোধ এবং পরোপকারের অদম্য ইচ্ছা। যেখানে ওর সহপাঠিনীরা স্বপ্ন দেখত কোন বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করে লন্ডন প্যারিস অ্যামেরিকা ঘুরে ঘুরে জীবন কাটিয়ে দেয়ার, সামিয়ার জীবনের লক্ষ্য ছিল এমন কাউকে বিয়ে করার যার জীবনের সকল অভাব এবং শূন্যতাবোধ সে ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দেবে। মনের সঙ্গোপনে ওর একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল ওর বাবার প্রিয় ছাত্র আবদুল্লাহ ভাইকে বিয়ে করার। ছেলেটি জীবনের কাছে কিছুই পায়নি। বাবামা ছিলোনা, মানুষ হয়েছে চাচা চাচীর কাছে। একটা বিয়ে করেছিল, বউটা মরে গেল এক বছরের মাথায়। মেধার অভাব ছিলোনা মোটেই, কিন্তু তদবীর করার কেউ ছিলোনা, সামান্য একটা চাকরী করে, চলে কোনক্রমে। ওর শার্টের ছেঁড়া পকেটটা দেখলে সামিয়ার ইচ্ছে করে সেলাই করে দিতে। ওর ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত, বিষন্ন মুখটা দেখলে সামিয়ার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে, ইচ্ছে করে আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিতে। আবার আবদুল্লাহ যখন নামাজে দাঁড়িয়ে সুমধুর স্বরে তিলাওয়াত করে তখন ওর মনটা এক স্নিগ্ধ প্রশান্তিতে ভরে যায়। আবদুল্লাহ কখনো ওর দিকে তাকায়না, চোখ পড়লে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়, কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠেনা। এতে বরং আবদুল্লাহর প্রতি ওর শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তবে সামিয়া নিজেও ওর বাবার ছাত্রদের সামনে তেমন আসেনা।

শুধু একজনের সাথে সে পেরে ওঠেনা – মাসরুর ভাই। এই ছাত্রটি যেমন আমুদে তেমন গপ্পবাজ। বাবা না থাকলে রান্নাঘরে এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। সামিয়া মাকে সাহায্য করতে গেলে ওর সাথেও গল্প শুরু করে দেয়, সে হুঁ হাঁ করে পালিয়ে বাঁচে। বিরাট বড়লোকের ছেলে মাসরুর। কিন্তু সেটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়, অল্প বয়সেই সে নিজেও প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। দেখতে সুন্দর, ভাল পোশাক আর সুগন্ধী তাকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। সামিয়াদের বাসার সামনে মাসরুরের গাড়ী দেখলেই কিভাবে যেন পাড়ার চাচী, খালা, ফুপুরা দলে দলে তাদের মেয়ে, ভাগনী, ভাতিজিদের নিয়ে ওদের বাসায় বেড়াতে আসতে থাকে। বাসায় কাজ বাড়ে প্রচুর। তাই মাসরুরের আসাটা সামিয়ার পছন্দ নয়। বান্ধবীরা বলে, ‘আহা, উনি আমাদের বাসায় এলে আমরা ধন্য হয়ে যেতাম! তুই একটা নিরামিষ’।

একদিন বিকালে মাসরুর বেড়াতে এসেছে ওর মা বাবাকে নিয়ে। মেহমান দেখেই সামিয়া রান্নাঘরে ছুটলো মাকে সাহায্য করতে। গিয়ে দেখে মা ফ্রিজ থেকে সেমাই, মিষ্টি, দই ইত্যাদি বের করছেন। বুঝলো মাসরুর মাকে আগে জানিয়েছে। যাক, লোকটার কিছু হুঁশজ্ঞান আছে তাহলে! সামিয়াকে দেখে মা বললেন, ‘তুই একটা ভাল কিছু পর, মাসরুরের আম্মাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে বসাই। আর শোন, সাইফ সাইদকে বল বাসায় মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে গিয়ে বসতে’।

সামিয়া আঁতকে উঠে বলে, ‘ও মাগো! আমি ভাইয়াদের কিছু বলতে পারবনা। ওরা দু’জনই পড়ছে, কিছু বলতে গেলে হত্যাকান্ড হয়ে যাবে! বসার ঘরে আব্বুর গলা শুনেছি, ওদের যেতে হবেনা। ’

মা জোর দিয়ে বললেন, ‘বল, আমি বলেছি সামনের ঘরে যেতে, কিছু বলবেনা’।

বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটার ধড়াস ধড়াস শব্দ যেন কানে শুনতে পাচ্ছে সামিয়া। দুই ভাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সাহস করে বলে ফেলল, ‘ভাইয়া, মা বলেছে ঘরে মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে যেতে’। চোখ খুলে দেখে সাইদ আয়নার সামনে চুলে চিরুনী বুলাচ্ছে, সাইফ পাশে দিয়ে যেতে যেতে মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। যাক, তবু বকা তো দেয়নি!

নিজের ঘরে গিয়ে কাঠের আলমারিটা খুলল সামিয়া। এককালে এটা ওর দাদীর ছিল, এখন এটা ওর সম্পত্তির আধার। আলমারীর অর্ধেকটা জুড়ে বই। বাকীটায় ক’খানা জামাকাপড় আর কিছু ইমিটেশনের গহনা, নিজের আঁকা কিছু ছবি আর কিছু ডায়রী যার পাতায় পাতায় ওর লেখা কবিতা। গতকাল যে জামাটা নাবিহার বাসায় পরে গেছিল সে জামাটা ভাঁজ করা হয়ে ওঠেনি, ওটাই গায়ে চাপিয়ে নিলো সে। কাপড় বদলে রুমের দরজা খুলতেই দেখে মাসরুরের মাকে নিয়ে আম্মু হাজির। সালাম দিয়ে ওনাকে বিছানায় বসার ব্যাবস্থা করে দিয়ে চলে যাচ্ছিল সামিয়া, মা ডেকে বললেন, ‘তুই ওনার সাথে গল্প কর, আমি নাস্তা দিয়ে আসছি’।

সামিয়া বলল, ‘আমি ভাইয়াদের দিয়ে সামনের ঘরে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওনার সাথে বোস’।

কিন্তু মা ওকে বসিয়ে রেখে চলে গেলেন। সামিয়া মাসরুরের মায়ের সাথে কি কথা বলবে? উনি নানারকম কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কি পড় কি কর জাতীয়,যা সচরাচর মুরুব্বীরা জিজ্ঞেস করে থাকেন, সে উত্তর দিয়ে গেল।

খাওয়া দাওয়া গল্পগুজব শেষ, মেহমান চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বাবা এসে সামিয়াকে ডাকলেন, ‘মা, কি করিস?’

‘কিছু না আব্বু, পড়তে বসব’।

‘আচ্ছা। আগে চল তোর সাথে কিছু কথা বলি। তুই এখানে আমার সামনে বস’।

বাবাকে বিছানায় বসতে দেখে সামিয়া সামনে দাঁড়িয়ে রইল। বাবা ওকে হাত ধরে পাশে বসালেন।

‘শোন মা, মেয়ে বড় হলে বাবামায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা – একটা ভাল ছেলে পাব তো? শ্বশুরবাড়ীতে মেয়েটাকে আদর যত্ন করবে তো? মেয়েটা ভাল থাকবে তো? আল্লাহ আমাদের চিন্তা শুরু করার আগেই সেই চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন। মাসরুরের আগে ওর বাবা আমার ছাত্র ছিল। তখন আমি মাত্র শিক্ষকতা শুরু করেছি। সে ছিল আমার বছর চারেকের ছোট। ওর বিয়ে, মাসরুরের জন্ম সব আমার চোখের সামনে। ওর মা খুব ভাল মেয়ে রে। আজ ওরা যখন মাসরুরের জন্য তোকে চাইল আমি তোর সাথে কথা না বলেই হ্যাঁ করে দিলাম। তোর মা, সাইফ, সাইদ সবাই খুশি। কি রে মা? আমরা তোকে জিজ্ঞেস না করেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম বলে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিস?’

সামিয়ার পাংশুটে মুখ দেখে বাবা ভাবলেন ওর সাথে আলাপ না করেই সিদ্ধান্ত দেয়ায় সে মর্মাহত হয়েছে। কিন্তু তিনি বুঝলেন না ঐ মূহূর্তে সামিয়ার সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গেল, সে তো রাজরানী হতে চায়নি কখনো, চেয়েছিল ঘুঁটেকুড়ানী হতে! কিন্তু ওর ভুল হয়েছিল এই ভেবে যে পরিবারের সবাই ওর মত করে ভাববে। কিন্তু ওদেরই বা দোষ কোথায়? যার জন্য ঘুঁটেকুড়ানী হতে পারে তেমন কেউ তো আজও আসেনি! রাজা রানী যদি যেচে রাজপুত্রের জন্য ঘুঁটেকুড়ানীকে নিতে চায় তাহলে কোন স্বাভাবিক পরিবার কোন যুক্তিতে মানা করবে? সে জানে মাসরুরের বাবা মা ওর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাবশত ওকে বৌ করে নিতে চেয়েছেন, নইলে আর্থিক এবং সামাজিক দিক থেকে ওদের পার্থক্য আকাশ পাতাল। কিন্তু যে মাসরুরের জন্য দুনিয়ার সুন্দরী মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে কেন ওকে বিয়ে করতে রাজী হোল সেটা কিছুতেই ওর মাথায় এলোনা।

‘কি মা, কিছু বলবিনা?’

বাস্তবতায় ফিরে এলো সামিয়া। মাথা নাড়লো, ‘তোমরা যা ভাল মনে কর আব্বু’।

সামিয়ার বিয়ে হয়ে গেল মাসরুরের সাথে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মাসরুরকে দেখে মনে হচ্ছিল সে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে, কিন্তু সামিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল ওর আকাশের চাঁদটা কোথাও খোয়া গিয়েছে। ব্যাপারটা সবাই নববধূর স্বাভাবিক লজ্জাবোধ মনে করলেও মাসরুরের দৃষ্টি এড়ায়নি। রাতে শ্বশুরবাড়ীতে নিজের রুমে বসে ননদ মারযানের সাথে কথা বলছিল সামিয়া। মারযানের নতুন ভাবীর সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সামিয়াকে প্রচন্ড ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ভাইয়াকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে কেটে পড়ল মারযান। সামিয়া সচকিত হয়ে সোজা হয়ে উঠে বসল। মাসরুর ঘরের দরজা বন্ধ করতে গিয়ে সামিয়ার বিচলিত চেহারা দেখে আধখোলা রেখে দিলো। ওর মায়া হোল সামিয়ার জন্য। বেচারী না জানে বাসর রাতের ব্যাপারে কি ভয়ানক সব কথা শুনে এসেছে! সে কাছে এসে বলল, ‘সামিয়া, আমি জানি তুমি খুব ক্লান্ত, আমি নিজেও টায়ার্ড। চল আমরা জামাকাপড় বদলে এশার নামাজটা পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর তুমি যদি চাও তাহলে আমরা কিছুক্ষণ গল্প করতে পারি। তুমি তো জানোই আমি গপ্পবাজ মানুষ!’

তারপর একটু ইতস্তত করে বেদনার্ত কন্ঠে বলল, ‘আর শোন, তোমার ভয় পাওয়া চেহারাটা দেখে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। সামিয়া, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী, আমরা সারাজীবন একসাথে থাকব। আমরা একে অপরকে জেনে বুঝে বন্ধু হবার সময় নিই। বাকীটা যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে’।

কাপড় বদলাতে বাথরুমে চলে যায় মাসরুর। অবাক হয় সামিয়া। মাসরুরের খোলামেলা স্বভাব দেখে প্রকৃতপক্ষে মনের গোপন কুঠুরীতে এমনই একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল সামিয়ার, কিন্তু ওর প্রকৃত মানসিকতা বুঝতে পেরে মনে মনে লজ্জাই পায় সে।

দু’জনে নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসেই গল্প শুরু করে। মাসরুর দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে, সামিয়া দুই হাঁটুর ওপর মুখ গুঁজে বসে। মাসরুর জানায় ওর বাবামা ভাই বোন কি কি পছন্দ করে, কি তাদের অপছন্দ, যেন সামিয়া তাদের বুঝতে পারে। ওর কথাবার্তায় সামিয়ার বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। নিজের কথা শেষ করে মাসরুর সামিয়াকে বলে, ‘এবার তোমার ব্যাপারে কিছু বল যা আমি জানিনা’।

সামিয়া লজ্জা পায়। ওর কথা তো কেউ কখনো জানতে চায়নি! কিন্তু মাসরুরের বন্ধুসুলভ আচরনে ওর মনের কথাগুলো ভুরভুর করে বেরিয়ে আসে যা সে নিজের বাবাকেও বলতে পারেনি, ‘জানেন, আমি না স্বপ্ন দেখতাম আমি কোন দরিদ্র হতভাগা লোককে বিয়ে করব, ধরেন আবদুল্লাহ ভাইয়ের মত। তারপর আমার যত্ন দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে তার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট মুছে দেব। কিন্তু আমার তাক্কদীরে ছিলেন আপনি যার কোন অভাবই নেই! আপনার সাথে বিয়ের কথা আমি কোনদিন কল্পনাই করিনি!’

‘আমার কথা তোমার কল্পনায়ও আসেনি! কেন সামিয়া?’

সামিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল, ‘নাহ! ভাবিইনি কোনদিন। আপনার জন্য বুঝি মেয়ের অভাব হত? তাছাড়া আপনারা অনেক বড়লোক, আমরা গরীব; আপনি দেখতে ভাল, আমি খুবই সাধারন; আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি- সব মিলেই ভাবিনি আমাদের বিয়ে হবার কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে’।

মাসরুর আর কথা বাড়ালোনা, বলল, ‘অনেক রাত হয়েছে, চল শুয়ে পড়ি’।

সামিয়া জায়নামাজ ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে পেছন ফিরে দেখে মাসরুর কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও মাসরুরের দেখা নেই। একসময় সে বসা অবস্থাতেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

ঘুম ভাঙ্গলো ফজরের আজান শুনে। তখনও মাসরুরের হদিস নেই। সামিয়া বুঝে পায়না একটা লোক বিয়ের রাতে বৌকে কিছু না বলে কোথায় হাওয়া হয়ে যেতে পারে? নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কুর’আন তিলাওয়াত করে সামিয়া। মনটা একটু শান্ত হয়ে আসে, যদিও সে জানেনা ওর বিবাহিত জীবনের প্রথম লগ্নেই এমন অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে। এমন সময় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে মাসরুর, চোখেমুখে গভীর ঘুমের চিহ্ন। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সামিয়া, কিন্তু সে মনে হোলনা খেয়াল করল। বাথরুমে ওজু করে এসে নামাজে দাঁড়াল সে। সামিয়া ভাবল নামাজ শেষ হলে কথা বলবে, মনকে শান্ত রাখার জন্য আবার কুর’আন পড়ায় মনোযোগ দিল সে। একটু পর চোখ তুলে দেখে আবার মাসরুর উধাও!

ঘুম আর নির্ঘুমের মাঝে এক অদ্ভুত অবস্থায় কাটল সামিয়ার পরবর্তী কয়েক ঘন্টা। সাতটার সময় মাসরুরের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো সামিয়ার, ‘সামিয়া, আমি জানি গত রাতে নিশ্চয়ই তোমার ভাল ঘুম হয়নি। নতুন জায়গায় গেলে প্রথম প্রথম ঘুমোতে একটু কষ্ট হয়। তবু অনুরোধ করব উঠে রান্নাঘরে যাও। মা নাস্তা বানাচ্ছেন। তোমার কিছু করতে হবেনা, মা তোমাকে কিছু করতে দেবেনও না। তুমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে ওনার সাথে কথাবার্তা বল। এটা তোমাদের মাঝে গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরী করার একটা ভাল সুযোগ। এখন সবাই ঘুম। তোমাদের কথাবার্তায় কেউ ডিস্টার্ব করবেনা’।

সামিয়া ভালভাবে চোখ খোলার আগেই আবার মাসরুর উধাও। লোকটা বার বার যায় কোথায়?

সে জামা পাল্টে রেডি হবার একটু পরই দরজা ঠেলে মাসরুর ঘরে ঢুকল, ‘চল, আমি তোমাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিচ্ছি’।

রুম থেকে বেরিয়ে সামিয়া দেখল ওর ঘরটা আসলে একটা সুইটের মত। গতরাতে এত বড় বাড়ীর আগামাথা ঠাহর করতে পারেনি, সবকিছু দেখতে দেখতে কেমন ধাঁধাঁ লেগে গেছিল। ওর ঘর দু’টো রুম আর একটা বাথরুম মিলিয়ে। বাইরের অংশে মাসরুরের অফিস – রুমের মধ্যখানে একটা বড় টেবিল, টেবিলের একপাশে একটা আরামদায়ক রিভলভিং চেয়ার আরেকপাশে দু’টো গেস্ট চেয়ার, রিভলভিং চেয়ারের পেছনে ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু একটা বুকশেলফ নানান রকম বইপত্রে ঠাঁসা, টেবিলের ডানপাশে একটা সোফা আর বাঁপাশে একটা সিঙ্গেল খাট যেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতে মাসরুর কোথায় ছিল। সামিয়া ধরে নিল ওকে লজ্জা পেতে দেখে ওকে আশ্বস্ত করার জন্য মাসরুর এখানে ছিল। সুতরাং, সে আর কোন প্রশ্ন করলনা।

রান্নাঘরে গিয়ে তো সামিয়া পুরাই হতভম্ব! এই ভোর সকালেই পুরো রান্নাঘর লোকে গমগম করছে। রান্নাঘরের দু’টো দরজা- একটা খাবার ঘরের সাথে, আরেকটা বাড়ীর পেছনে উঠোনে। উঠোনে বটি নিয়ে বসে একজন মুরগী কাটছে, একজন মাছ, একজন নানান জাতের সব্জী। দরজায় বসে একজন মসলা বাটছে। রান্নাঘরের ভেতর একজন রুটি বেলছে, একজন চিরল চিরল করে আলু কাটছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাজি করা হবে। মধ্যখানে চুলোর পাশে বসে ওর শাশুড়ি এক চুলোয় রুটি ভাজছেন, আরেক চুলায় কড়াইয়ে তেল দেয়া, আলুভাজির জন্য প্রস্তুত- কিছুক্ষণ পর পর একে ওকে ডেকে কাজের তাড়া দিচ্ছেন। সামিয়াকে দেখে তিনি ভীষণ অবাক হলেন, তারপর ওর পেছনে থেকে মাসরুরকে সরে যেতে দেখে সব বুঝে নিলেন। তিনি একজনকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘শায়লা, তোর ভাবীকে একটা মোড়া দে তো!’

সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, আমার ছেলেটা বেশি বেশি করে। এটা তো তোমারই সংসার, তুমি আস্তেধীরে সব বুঝে নেবে। কিন্তু এখনই রান্নাঘরে নিয়ে আসার কি হোল? তুমি চুপচাপ বোস, আমরা কথা বলি’।

সামিয়া মোড়ায় বসে বলল, ‘মা, আম্মু কাজ করার সময় আমি সবসময় হাত লাগাতাম। সবাই কাজ করছে, এর মধ্যে আমি চুপ করে বসে থাকলে কি করে হবে? আমি অন্তত রুটিগুলো ভাজি!’

শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ছেলের কান্ডে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি সায়মাকে সস্নেহে বললেন, ‘মা, চল তোমাকে আগে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই’।

শায়লাকে রুটি দেখতে বলে তিনি সামিয়াকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। সামিয়া দেখল উঠোনে নানান জাতের সব্জীর বাগান আর বাড়ীর দু’পাশে ফলের বাগান, বাড়ীর সামনে ফুলের বাগান গতকাল এই বাড়ীতে ঢোকার সময়ই চোখে পড়েছে। উঠোনের ওপাশে কতগুলো ঘর দেখা গেল, একই বাউন্ডারীর ভেতর। গ্যারেজ আর দারোয়ানের ঘর বাড়ীর দু’পাশে। সুতরাং, ওগুলো কিসের ঘর সে বুঝতে পারলনা। আনোয়ারা বেগম সবাইকে প্রতিবেশী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও সামিয়া বুঝতে পারল এরা সবাই এই বাসার কাজ করে- কিন্তু তাঁর ব্যাবহার থেকে সামিয়ার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল এদের সাথে কেমন আচরন করতে হবে, ওর খুব ভাল লাগল শাশুড়ি মায়ের এই অভ্যাসটি। সে সবার সাথে অল্পসল্প কথা বলে শাশুড়ির সাথে চুলোর কাছে ফিরে এলো। কিছু না বলেই শায়লার কাছ থেকে খুন্তি নিয়ে রুটি ভাজতে শুরু করল। আনোয়ারা বেগম আর কিছু বললেন না। তিনি ভাজির জন্য তেলে পেঁয়াজ দিলেন।

হঠাৎ কে যেন সামিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চটাস চটাস দুই গালে চুমো দিল। সামিয়া অবাক হয়ে পেছন ফিরে মারযানকে দেখে হেসে ফেলল। ননদিনি যে কখন চুপি চুপি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সামিয়া টেরই পায়নি! সামিয়া আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এই সুযোগে আনোয়ারা বেগম ওর হাত থেকে খুন্তিটা নিয়ে মারযানকে বললেন, ‘তোরা দু’জন গিয়ে টেবিলে বস। মাসউদকে বল মাসরুরকে ডেকে আনতে, ওকে বল এত কাজ করতে হবেনা। একটা দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে আর বৌটাকে রান্নাঘরে ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে!’

মারযান ভাবীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল, ‘মা ভালই ক্ষেপেছে। ভাইয়া মনে হয় কাজ ছাড়া কিছু বোঝেনা। কোথায় বাগানে বসে তোমাকে নিয়ে গল্প করবে, আমরা চা নিয়ে যাবার ভান করে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করব! বেরসিক একটা …’

ডাইনিং রুমে এক কোণে চুপচাপ ছায়ামূর্তির মত বসে থাকা ছেলেটাকে খেয়ালই করতনা সামিয়া সে সালাম না দিলে। মারযান বলল, ‘এই নাও ভাবী, তোমার দেবর মহাশয়, মাসউদ উল হাসান। যা, এবার গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়’।

মাসউদকে বিয়েতে দেখেছে বলে মনে করতে পারেনা সামিয়া। বয়স চৌদ্দ হবে হয়ত, নতুন গোঁফ গজাচ্ছে, তাই হয়ত লজ্জায় কারো সামনে আসেনা, ওকে দেখেই বোঝা যার ছেলেটা খুব লাজুক টাইপের, এই ছাড়া সে যেন মাসরুরের ছোটবেলার সংস্করণ। বোনের কথামত ভাইকে ডাকতে চলে গেল মাসউদ।

মারযান বলল, ‘ভাগ্য ভাল, তুমি ছিলে। নইলে সে আমার চুল টেনে দিত হুকুম দেয়ার অপরাধে। আমি ওর তিনবছরের বড়, কিন্তু একটুও মানতে চায়না আমাকে’।

ননদের পাকা পাকা কথা শুনে হাসি পায় সামিয়ার। ভাবখানা যেন সে মাসরুরের বড় বোন!

মাসরুরের সাথে ওর বাবাও এলেন, ছেলের হাত ধরে, কিঞ্চিত ভর ছেলের গায়ে ছেড়ে দিয়ে। তাঁর চলাফেরা তেমন স্বচ্ছন্দ নয়। পেছন পেছন মাসউদ এলো বাবার উইলচেয়ার নিয়ে। মারযান সামিয়াকে কানে কানে বলল, ‘বাবার উইলচেয়ারে বসা ভাইয়ার একদম পছন্দ না। ভাইয়া থাকলে বাবা না হেঁটে পার পায়না। কিন্তু আবার বাবা উইলচেয়ার ছাড়া সাহস পায়না বলে ওটা কেউ পেছন পেছন নিয়ে আসে। বাবা ভাইয়ার উপর প্রচন্ড ক্ষেপলেও আসল কথা হোল বাবার স্ট্রোকের পর যেখানে আমরা ভেবেছিলাম বাবা বিছানা থেকেই কোনদিন উঠতে পারবেনা, সেখানে আজ বাবা হাঁটতে পারছেন!’

সামিয়ার আবছা আবছা মনে পড়ে, সম্ভবত বছর দশেক আগে সে ভাইদের সাথে লুডো খেলার সময় শুনতে পায় বাবা মায়ের কাছে আহাজারি করছেন, ‘আহারে! ছেলেটা এই বয়সেই সব হারিয়ে ফেলল! বিজনেসের লস তো তবু পোষানো যেত, কিন্তু এই বয়সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে সে কিভাবে সংসার চালাবে? তিনটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আনোয়ারা এখন কি করবে?’

সবাই খেতে বসে। সামিয়ার শ্বশুর টেবিলের মাথায়, একপাশে স্ত্রী একপাশে বড়ছেলে, স্ত্রীর পাশে ছোটছেলে, মারযান অভ্যাসবশত বড় ভাইয়ের পাশে বসতে গিয়ে জিভ কেটে উঠে দাঁড়ায়, সামিয়াকে হাত ধরে টেনে এনে বলে, ‘আরে ভাবী, এটা তো তোমার জায়গা!’ ওর আত্মত্যাগ সামিয়ার দৃষ্টি এড়ায়না। সে আপত্তি জানালে মারযান চোখ টিপে বলে, ‘টেবিলের মাথায় বসার শখ আমার বহুদিনের। তুমি আসতে দেরী করছিলে বলেই তো এতদিন বসতে পারিনি। এখনও যদি বসতে না দাও!’ আসিয়া রুটি নিয়ে সবার প্লেটে দিতে শুরু করেন, মাসরুর আলুভাজি বেড়ে দিতে থাকে। আনোয়ারা প্রথম রুটিটা দেন স্বামীকে, তারপর সামিয়াকে, তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁর তিন সন্তানকে, সব শেষে নেন নিজের পাতে, ছেলেও তাঁকে অনুসরন করে। সামিয়া একটু লজ্জাই পায়, কিন্তু এই পরিবারে সবার পরার্থপরতা ওকে মুগ্ধ করে। খাবার বাড়া শেষ হতেই শুরু হয় গল্প। শ্বশুর সাহেব প্রথম শুরু করেন সামিয়ার বাসায় নাস্তায় কি খাওয়া হয়, ক’টায় নাস্তা খাওয়া হয় ইত্যাদি প্রশ্ন দিয়ে। উত্তর দিতে দিতে সামিয়া খেয়াল করে শাশুড়ি শ্বশুরের প্লেটের দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলেন, সম্ভবত রুটি ছিঁড়ে দেয়ার জন্য, কিন্তু মাসরুরের চোখের ইশারায় তিনি আবার হাত সরিয়ে নেন।

খাওয়া শেষে মাসরুর আর মাসউদ আগের পদ্ধতিতেই বাবাকে নিয়ে যায় সামনের আঙ্গিনায়, ফুলবাগানে হাঁটতে। মারযান বলে, ‘চল ভাবী, তোমার জিনিসগুলো স্যুটেকেস থেকে আলমারীতে তুলতে সাহায্য করি’। কিন্তু শাশুড়ি বলেন, ‘আমাকেও কিছু কথা বলার সুযোগ দিবি তো! মেয়েটা এসেই লেগে গেল রান্নাঘরে! তুই যা, নিজের রুম গুছিয়ে এসে তোর ভাবীকে নিয়ে যা’।

মারযান চলে গেলে তিনি সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, তুমি আমার কাছে আমার তিনটা সন্তানের চেয়ে আলাদা নও। তুমি আসার আগেও ত্রিশ বছর আমার সংসারের সব কাজকর্ম চলেছে, আরো কিছুদিন এভাবে চললে কোন ক্ষতি নেই। এখন তোমার প্রয়োজন ঘরের সবার সাথে বন্ধুত্ব করার, সবার পছন্দ অপছন্দ বুঝে নেয়ার, আমাদের তোমার পছন্দ অপছন্দ বুঝার সুযোগ দেয়ার, বিশেষ করে মাসরুরের সাথে অ্যাডজাস্ট করার’।

নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায় তাঁর, ‘আট বছর আগে মাসরুরের বাবা ব্যাবসায় বিরাট লস করেন। কিন্তু নিজের ক্ষতির চাইতেও তাকে পীড়া দিতে থাকে শেয়ার হোল্ডারদের লস, কর্মচারীদের কি হবে এইসব ভাবনা। একদিন সারারাত চিন্তা করার পর সকালে উঠে দেখেন আর হাতপা নাড়তে পারছেন না। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওরা বলল রাতে কোন একসময় স্ট্রোক হয়েছে, বেঁচে আছেন এটাই বেশি, হয়ত সুস্থ হবেন, কিন্তু আর কোনদিনই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। ভাবলাম ব্যাবসা বাণিজ্য সব বিক্রি করে দেই, যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে হয়ত মাসরুরের লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সংসার চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু ছেলে আমার বেঁকে বসল। বলল, ‘না মা, মানুষের টাকা কর্জ থাকা পর্যন্ত বাবা সুস্থ হবেন না। তাছাড়া এতগুলো পরিবার আমাদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের কথা ভুলে গেলেই বা কিভাবে চলবে?’ ছেলে সব ছেড়েছুড়ে ব্যাবসার হাল ধরল, হাল ধরল পরিবারেরও। কুড়ি বছর বয়স ছিলো ওর, হুট করেই বড় হয়ে যেতে হোল ছেলেটাকে। সেই থেকে পরিশ্রম করে ব্যাবসাটাকে আবার টেনেটুনে ঠিক করল, সবার ধার দেনা শোধ করল, ব্যাবসা বর্ধিত করল, নিজে আরেকটা নতুন ব্যাবসা শুরু করল, যেসব কর্মচারীরা এই বিপদের দিনে আমাদের পাশে ছিলো তাদের সবার জন্য বাড়ীর পেছনে ঘর করল, এখন ওরা আমাদের পরিবারেরই অংশ। পরিবারের গায়েও আঁচড়টি লাগতে দেয়নি আমার মাসরুর। বছরের পর বছর আমরা ডাল ভাত ভর্তা খেয়ে সংসার চালিয়েছি ঋণের টাকা শোধ করার জন্য, ঈদেও একটা কাপড় কিনতে পারিনি; কিন্তু ওর বাবার চিকিৎসা কিংবা ভাইবোনদের লেখাপড়ার জন্য কখনও টাকার অভাব বুঝতে দেয়নি মাসরুর। আমার ছেলেটা সারাদিন পরিশ্রম করে এসে বাবার মাথায় হাত না বুলিয়ে, ভাইবোনদের সাথে খুনসুটি করে তাদের মুখে হাসি না ফুটিয়ে কোনদিন ঘুমাতে যেতনা। ক্লাসের প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র ছিলো আমার ছেলে। ব্যাবসার ফাঁকে ফাঁকে, রাত জেগে পড়ে অনার্সটা তো শেষ করল, কিন্তু মাস্টার্সটা করব করব করেও এখনো করা হোলনা’।  

আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি, ‘মাগো, কেউ যখন সবার মাথার ওপর ছাতা হয়ে তাদের নিরাপদ রাখতে যায়, তখন রোদ বৃষ্টি তুফানের ঝাপ্টা সব তার ওপর দিয়েই যায়। আমার ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি, কিন্তু ওর মনের কষ্টগুলো সে আমাকেও বলেনা; সারাক্ষণ বকবক করে, কিন্তু এর মাঝে নিজের কথা একটিও বলেনা, সব অন্যের সুবিধা অসুবিধার কথা। তুমি যদি ওর মনের গোপন কুঠুরীতে সঞ্চিত কষ্টগুলো বের করে এনে ওখানে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারো, সেটাই হবে আমার পরম পাওয়া। তোমার কাছে আমি এর বাইরে আর কিছুই চাইনা’।

তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে সামিয়া খেয়ালই করেনি কখন মারযান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের সামিয়ার রুমে গিয়ে জিনিসপত্র গুছাতে বলে আনোয়ারা বেগম বাগানে যান যেখানে তাঁর স্বামী ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে একটা ফুটবলে লাথি মারতে পেরে আনন্দে কিশোরদের মত হুঙ্কার ছাড়ছেন!

নিজের রুমে যেতে যেতে সামিয়ার মনটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সে গতরাতে মাসরুরকে বলেছে, ‘আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি’। অথচ এখন সে বুঝতে পারছে টাকা সে নিজের জন্য উপার্জন করেনা, বা লেখাপড়ার প্রতি ওর আগ্রহ নেই এই কথাটাও সত্য নয়। না জেনে কত বড় একটা আঘাত দিয়ে ফেলেছে সে! একজন কষ্ট হরণকারীকে কষ্ট দিয়ে ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছে সামিয়া। কিন্তু কথাটা সে বলবে কি করে?

তিনমাস কেটে যায়। সামিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ এমনকি প্রতিবেশীরাও ওকে ভীষন ভালোবাসে, ওদের উদারতা ওকে আপ্লুত করে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এই ভালবাসা সে পাচ্ছে তার মতিগতি সে কিছুই বুঝতে পারেনা। মাসরুর ওর সুবিধা অসুবিধা খেয়াল রাখে, বাড়ীর সবার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার ব্যাপারে উপদেশ উৎসাহ দেয়, বাপের বাড়ী বা কলেজে আসা যাওয়ার সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে। কিন্তু এর বাইরে সে সামিয়ার সাথে কোন কথাই বলেনা, ঘুমায় অফিসরুমের সেই সিঙ্গেল খাটে। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, সারাদিন কাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে পড়তে বসে। ভোরবেলা নামাজের আগে কুর’আন পড়ে, নামাজ পড়ে ঘুমায়। সামিয়া সুযোগ পায়না কোন কথা বলার, আবার লজ্জাবোধের কারণে বলতে পারেনা ভেতরে এসে ঘুমোতে। এক অস্বস্তিকর পরিবেশে কাটতে থাকে তার দিনরাত। ঘরের কেউ কিছু টের না পেলেও মারযান বুঝতে পারে কিছু একটা অমিল হচ্ছে, কিন্তু সে ঠিক ধরতে পারেনা সেটা কি।

একদিন কলেজে গিয়ে সামিয়া জানতে পারে আজ ক্লাস হবেনা। বাসায় চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। এমন সময় একটা মেয়ের সাথে দেখা। সামিয়া আর্টসে পড়ে আর ঐ মেয়েটা সায়েন্সে। কিছু ক্লাস ওদের একসাথে হলেও অধিকাংশই ওদের দেখা হয় বারান্দায় বা মাঠে, কথা হয় কালেভদ্রে। আজ হাতে সময় আছে। দু’জনে গল্প করতে করতে হঠাৎ সামিয়া নিজের বিবাহপূর্ব স্বপ্ন থেকে বর্তমান অচলাবস্থা পর্যন্ত সবকিছু উগড়ে দেয় অকপটে। সে নিজেই অবাক হয়, যে কথা সে তার বাবামা ভাইদের বলেনি, এমনকি একসাথে থেকেও বাড়ীর কেউ টের পায়নি, তা সে কেন ওকে বলতে গেল। সম্ভবত যাদের সাথে লেনাদেনা থাকে তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে মানুষ অনেক কথাই বলতে পারেনা, কিন্তু একজন অপরিচিতের সাথে সেটা শেয়ার করা যায় নির্দ্বিধায়। নাকি কারো কারো চেহারা দেখলেই মনে হয় তাকে বিশ্বাস করা যায়? সে কথাগুলো বলল নিজেকে নির্ভার করার জন্য, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা ব্যাপারটাকে খুব সুন্দর করে বিশ্লেষণ করে ওকে বুঝিয়ে দিলো সমস্যাটা ঠিক কোথায় এবং এর সমাধানের ব্যাপারেও একটা দিকনির্দেশনা দিলো। সব শুনে মেয়েটির কথাগুলো ওর কাছে যৌক্তিক মনে হোল। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? বাঁধার প্রাচীর পেরোনোর জন্য কথা বলার বিকল্প নেই। কিন্তু সেই কথাই তো সে বলতে পারছেনা আজ তিনমাস ধরে!

বান্ধবীর পরামর্শমত সামিয়া প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল। সাতদিন পর, রাতে খাবার পর যথারীতি বাবাকে রুমে দিয়ে এসে মাসরুর অফিস রুমে পড়তে বসল। ওদিকে সামিয়া আর মারযান রান্নাঘরের খাবার গুছিয়ে গল্প করতে করতে যার যার রুমের দিকে এগোলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মারযান হঠাৎ সামিয়াকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা ভাবী, একটা প্রশ্ন করি? তুমি কিছু মনে করবেনা তো?’

সামিয়া ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তোর সাথে কি আমার কিছু মনে করাকরির  সম্পর্ক? বল, কি বলবি?’

মারযান কিঞ্চিত ইতস্তত করে বলে, ‘তোমাদের বিয়ে হয়েছে তিনমাস। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভাইয়া আর তোমাকে একসাথে থাকতে দেখিনি। তোমাদের মাঝে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?’

প্রমাদ গোণে সামিয়া, তারপর মুখে হাসি টেনে বলে, ‘না তো! তোর ভাইয়া রাত জেগে পড়ে, আবার ভেতরে যেতে গেলে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ওখানেই শুয়ে যায়। সমস্যা না করার স্বার্থেই এই ব্যাবস্থা’।

মারযান হাসল, কিন্তু বিশ্বাস করল বলে মনে হোল না।

সামিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এবার সাহস করে মাসরুরের সাথে কথা বলতেই হবে, আর এভাবে চলতে পারেনা। তবে বান্ধবী পরামর্শ দিয়েছে সুস্থিরভাবে কথা বলতে হবে, কারণ ঝগড়ার মুডে চলে গেলে দু’জনই কথা বলতে থাকে, কিন্তু কেউ কারো কথা শোনেনা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট ভেবে নেয় সামিয়া কিভাবে কথা শুরু করা যায়, তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। মাসরুর মাথা তুলেও তাকায়না। ঢোঁক গিলে সামিয়া। তারপর গলাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে, ‘আপনার পড়া শেষ হলে একবার ভেতরে আসবেন প্লিজ। কথা আছে’।

মাসরুর অবাক হয়ে তাকায়, ‘কি কথা? এখনই বলতে পারো’।

সামিয়া মাথা দুলিয়ে বলে, ‘নাহ। আপনি শেষ করেই আসুন’।

মাসরুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সামিয়া। পাঁচ মিনিট পর দেখে মাসরুর এসে উপস্থিত। অভাবনীয় এই ঘটনায় বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে বেচারাকে।

দরজার দুই ইঞ্চি ভেতরে দাঁড়িয়ে মাসরুর জিজ্ঞেস করে, ‘কোন সমস্যা হয়েছে সামিয়া?’

সামিয়া মুচকি হেসে বলে, ‘আহা, এভাবে কি কথা বলা যায়? আসুন, এখানে এসে বসুন। নইলে যে চিৎকার করতে হবে!’

মাসরুর এসে বিছানার পায়ের কাছে বসে। সামিয়ার মাথায় দুষ্টুমী চাপে, বলে, ‘আরাম করে বসুন প্লিজ। ভয় পাবেন না, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব’।

এবার মাসরুরের গম্ভীর মুখেও হাসি ফোটে।

সামিয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি আমি কিছু একটা অন্যায় করেছি, কোনভাবে আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন আপনি আমাকে চার্জ গঠন, তদন্ত বা সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শাস্তি দিয়ে যাবেন এটাও তো কোন কাজের কথা না। আপনি যদি আমাকে খোলাখুলিভাবে বলতেন আমার কোন জিনিসটি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাহলে আমি অন্তত নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেতাম। এটুকু অধিকার তো আমার থাকা উচিত, না’কি?’

মাসরুর অবাক হয়, ‘শাস্তি?!’

‘আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ তিনমাস। আপনি আমার সাথে কাজের বাইরে ক’টা কথা বলেছেন? আমরা একসাথে কবে কোথায় বেড়াতে গিয়েছি? মারযান আজ জিজ্ঞেস করছিলো আমরা আলাদা থাকি কেন। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, কারণ আমি নিজেই জানিনা …’

মাসরুর মনের ভেতর কথাগুলো গুছিয়ে নেয়, তারপর ধীরে ধীরে বলে, ‘সামিয়া, বিশ্বাস কর, বিয়ের রাতেই প্রথম আমি বুঝতে পারি আমার কারণে তোমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তখন আমার আর কিছুই করার ছিলোনা, তোমার অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া। একদিন আগেও যদি তুমি আমাকে জানাতে তাহলে আমি নিজে তোমাকে আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তখন আর আমার পরিবারকে এসব কথা জানানো সম্ভব ছিলোনা। তাই আমি চেষ্টা করেছি এখানে সবার সাথে যেন তুমি মিলেমিশে থাকতে পারো, এতে হয়ত তোমার এখানে মানিয়ে নেয়াটা সহজ হবে। ওদের আমি তোমার কষ্ট বোঝাতে পারতাম না, কিন্তু অন্তত চেষ্টা করেছি আমার নিজেকে তোমার ওপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে না দিতে …’।

রাগে মুখ লাল হয়ে যায় সামিয়ার, ‘আপনি কি ভেবেছেন, ভেবেছেন কি আপনি? আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো? আমি আপনাকে আমার মনের কথা খুলে বললাম যেন আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়, আপনাকে আমার গোপন ইচ্ছার কথা জানালাম যা আমি কোনদিন আমার বাবামার সাথেও শেয়ার করিনি। আপনাকে উদাহরণ হিসেবে একজন চালচুলোহীনের কথা বললাম, যে এমন কেউ হলে হয়ত আমি তাঁর অভাব পূরণ করতে পারতাম, আর ওমনি আপনি ধরে নিলেন …’

বেশি রেগে গেলে সামিয়ার মুখে কথা জোগায়না, মাসরুরের মনোযোগী ভঙ্গিতে কথা শোনা ওকে আরো ক্ষেপিয়ে তোলে, নিজের অক্ষমতায় চোখের কোণে জল জমতে থাকে ওর, কিন্তু সে দাঁতে দাঁত চেপে সামলাতে থাকে, এই মূহূর্তে কিছুতেই দুর্বলতা প্রকাশ করা চলবেনা।

মাসরুর সব শুনে বলে, ‘সরি, এখন বুঝতে পারলাম আমি তোমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম। কিন্তু  তুমিও তো আমার অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে আমাকে ভুল বুঝেছ! তুমি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন না করে টাকায় মেপেছ, যেন যার টাকা আছে তার আর কিছুর অভাব থাকতে পারেনা! সামিয়া, আবদুল্লাহ ভাইয়ের অনেক কিছুর অভাব ছিলো যা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু তুমি কি একবারও ভাবোনি প্রাচুর্যের মাঝেও আমার কিছু অভাব থাকতে পারে, একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন থাকতে পারে যার কাছে আমি আমার মনটাকে মেলে ধরতে পারি যেন সেখানে তুমি তোমার মমতার পরশ বুলিয়ে কষ্টগুলো মুছে দিতে পারো?’

সামিয়া মুখ নামিয়ে নীচুস্বরে বলে, ‘আমি আমার ভুলটা পরদিনই বুঝতে পেরেছি, আপনাকে না বুঝে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রতিটা দিন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আপনার গড়ে তোলা প্রাচীর পেরিয়ে আপনার কাছে স্বীকার করতে পারিনি’।

কিছুক্ষণ দু’জনই চুপ। সন্দেহের ছোট ছোট যে বালুকণাগুলো এতদিন ওদের হৃদয়ের কোমল আঙ্গিনায় সুঁচের মত বিঁধে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করছিলো সেগুলো একে একে নিশ্চিহ্ন হতে থাকে। এই ক্ষতগুলো দুই হৃদয়ের মাঝে বন্ধনকে আরো মজবুত করে। কিন্তু অনেকেই বোঝেনা, অনেক সময় দাম্পত্য সম্পর্কের ভালো অংশটুকু আসে কিছু বেদনার পর। অনেকেই ভড়কে যায়। কিন্তু একটু ধৈর্য্য ধরতে পারলে সেই বেদনা মানুষকে নিজেকে চিনতে, পুণর্গঠিত করতে, পরস্পরকে বুঝতে এবং একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করে। দু’জনে পরস্পরের মন্দটুকু দেখে নেয়ার পর আর কিছুই তাদের পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনা। নিকষ কালো আঁধার রাতের পরই ফুটে ওঠে ভোরের সোনালী আলো।

সময়টা উপযোগী নয় বুঝেও সামিয়া এতদিন চেপে রাখা কৌতুহলটা আর চেপে রাখতে পারেনা, ‘একটা জিনিস আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে। আপনি আমার মত একটা সাধারন আর বোকা মেয়েকে কি দেখে বিয়ে করেছিলেন বলেন তো? আপনি তো চাইলে নায়িকা বিয়ে করতে পারতেন!’

মাসরুর দুষ্ট হাসি হেসে বলে, ‘নায়িকা বিয়ে করলে তো তার সৌন্দর্য্য সবাই উপভোগ করত, আমি চেয়েছি আমার বৌয়ের সাহচর্য শুধু আমিই উপভোগ করব’।

তারপর বুঝানোর ভঙ্গিতে বলে চলে, ‘আমি চেয়েছি এমন একটা সহজ সরল মেয়ে যে আমার পরিবারকে ভালবেসে গ্রহণ করবে, যার পরিবারকে আমি গ্রহণ করতে পারব; যে আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, যার কাছে আমি মনের কথা খুলে বলতে পারব; যে আমাকে আমার সমস্ত দৈন্যসহকারেই গ্রহণ করবে এবং আমাকে পরিপূর্ণ করে নেবে। আমি তোমার মাঝে এই যোগ্যতা দেখতে পেয়েছিলাম, তাই তোমাকে পেয়ে এত খুশি হয়েছিলাম’।

সামিয়ার চেহারায় বেদনার ছাপ ফুটে ওঠে, ‘বিনিময়ে আমি আপনাকে কষ্টই দিলাম!’

‘কই, নাতো! সামিয়া, অল্প বয়সে দুনিয়াদারীতে জড়িয়ে যাওয়ায় আমার মাঝে অনেক ত্রুটির বিস্তার ঘটেছিল। আমি একসময় নামাজের ব্যাপারে অনিয়মিত হয়ে পড়ি, তোমাকে দেখে আমি আবার নিয়মিত নামাজ পড়তে শুরু করি। কুর’আনের সাথে সম্পর্ক তো প্রায় তালাকের পর্যায়ে চলে যায়, তোমার সুমধুর তিলাওয়াত শুনে আমি আবার কুর’আনের কাছে ফিরে আসি। তোমাকে ইম্প্রেস করার জন্য মাস্টার্সে ভর্তি হলাম, নইলে যদি বল এই জামাই আমার চলবেনা! হা হা হা। কিন্তু আসল কথা হোল, তুমি আমাকে দুনিয়ার কাছ থেকে টেনে এনে একটি বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছ। আর এ’ সবই তুমি করেছ আমার সাথে বিশেষ কথাবার্তা না বলেই। তাহলে কল্পনা কর তো আমরা একসাথে হলে আরো কত কি করতে পারি!’

হাত বাড়িয়ে দেয় সামিয়া, ‘এবার বলুন, আমার সমস্ত দৈন্যসহকারে আপনি আমাকে একজন পরিপূর্ণ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন কি’না যাকে আপনি মনের সব কথা খুলে বলবেন, যার ত্রুটিগুলো আপনি চুপ করে না থেকে সংশোধন করতে সহযোগিতা করবেন, যার কোন ব্যাপারে সন্দেহ হলে আপনি চুপ করে না থেকে তাকে জিজ্ঞেস করবেন?’

মাসরুর দু’হাত পেতে গ্রহন করে নেয় সামিয়ার বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ। আকাশের তারারাও আনন্দে ঝিকমিক করে ওঠে ওদের মুখের হাসি দেখে।

—————–
– রেহনুমা বিনতে আনিস

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button