আকাইদ

শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার উপায়

মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিভ্রান্ত করার কাজে শয়তান সদা তৎপর। তার প্রতারণা থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও মানুষকে চেষ্টা করতে হবে শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকার জন্য। এ লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কাজগুলি করতে হবে –

(১) আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া :

শয়তান যখনই মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করবে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ বলেন, وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (আ‘রাফ ৭/২০০; ফুছছিলাত ৪১/৩৬)। শয়তান থেকে সব সময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। তবে কুরআন-হাদীছে নিম্নোক্ত কয়েকটি স্থানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

(ক) কুরআন তিলাওয়াতের সময় : কুরআন তিলাওয়াত একটি ইবাদত। কুরআনের প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে ১০টি করে নেকী রয়েছে। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় যাতে শয়তান ধোঁকা দিতে না পারে সেজন্য কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার নিদের্শ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. ‘যখন তুমি কুরআন তিলাওয়াত করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে’(নাহল ১৬/৯৮)।

(খ) পায়খানা-প্রসাবখানায় প্রবেশের সময় : রাসূলুল্লাহ  (ছাঃ) টয়লেটে প্রবেশের সময় বলতেন, بِسْمِ اللهِ اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ- (বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছ)। অর্থ : ‘আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। হে আল্লাহ! আমি পুরুষ ও স্ত্রী জিন হ’তে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।

(গ) যাদুতে আক্রান্ত হ’লে বা নযর লাগলে : আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিন ও ইনসানের নযর লাগা হ’তে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন। কিন্তু যখন সূরায়ে ফালাক্ব ও নাস নাযিল হ’ল, তখন তিনি সব বাদ দিয়ে কেবল ঐ দু’টি সূরা দ্বারা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন’।

(ঘ) মসজিদে প্রবেশের সময় : আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আছ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেন, أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ- (আ‘ঊযুবিল্লা-হিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলত্বা-নিহিল কাদীম মিনাশ শায়তানির রাজীম)। ‘আমি মহান আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হ’তে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যিনি প্রাচীন রাজত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ চেহারার অধিকারী’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যদি তুমি এটা বল, তখন শয়তান বলে, সে আমার কাছ থেকে সারাদিনের জন্য নিরাপত্তা পেয়ে গেল’।

(ঙ) ছালাতে ওয়াসওসা দিলে : ওছমান বিন আবুল ‘আছ (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! শয়তান আমার মধ্যে এবং আমার ছালাত ও ক্বিরাআতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে আমার ক্বিরাআতে জটিলতা সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খিনযাব’ বলা হয়। তুমি তার আগমন অনুভব করলে আল্লাহর নিকট তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং বাম দিকে তিনবার থুক ফেলবে। তিনি (ওছমান) বলেন, এরপর থেকে আমি এমনটি করি। ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন’।

(চ) রাগের সময় : রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। তাই রাগের সময় শয়তান থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। সুলায়মান ইবনু সূরাদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন দু’জন লোক গালাগালি করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগগুলো ফুলে গিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি এমন একটি দো‘আ জানি, এই লোকটি তা পড়লে তার রাগ দূর হয়ে যাবে। সে যদি পড়ে ‘আঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ তবে তার রাগ চলে যাবে। তখন সুলায়মান তাকে বলল, নবী (ছাঃ) বলেছেন, তুমি আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাও। সে বলল, আমি কি পাগল হয়েছি’।

(ছ) খারাপ স্বপ্ন দেখলে : ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللهِ وَالْحُلُمُ مِنَ الشَّيْطَانِ فَإِذَا حَلَمَ أَحَدُكُمْ حُلُمًا يَخَافُهُ فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ وَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ- ‘সৎ ও ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কেউ যখন ভয়ানক মন্দ স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে থুকু ফেলে এবং শয়তানের ক্ষতি হ’তে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় চায়। তাহ’লে এমন স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।

(জ) বাড়ি হ’তে বের হওয়ার সময় : আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ قَالَ يَعْنِيْ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ يُقَالُ لَهُ كُفِيْتَ وَوُقِيْتَ وَتَنَحَّى عَنْهُ الشَّيْطَانُ- ‘যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে ‘বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ তখন তার জন্য বলা হয়, তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে, তুমি রক্ষা পেয়েছ এবং শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়’। অপর একটি হাদীছে এসেছে, فَيَقُولُ لَهُ شَيْطَانٌ آخَرُ كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ  ‘তার জন্য অন্য শয়তান বলে, ঐ লোককে তুমি কিভাবে পথভ্রষ্ট করবে যে ইতিমধ্যে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, তার জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং রক্ষা পেয়েছে’।

(ঝ) স্ত্রী সহবাসের সময় : ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ স্ত্রীর কাছে এসে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا- (বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনা শায়তানা ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা)। অর্থ- বিসমিল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখ। আর আমাদের যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখ’। অতঃপর তাদেরকে যে সন্তান দেয়া হবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।১০

(ঞ) কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় : আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন এবং বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসমাঈল ও ইসহাক্বকে এই বলে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করতেন, أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ- ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীগুলির আশ্রয় নিচ্ছি প্রত্যেক শয়তান ও দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী বস্ত্ত হ’তে এবং প্রত্যেক অনিষ্টকর দৃষ্টি হ’তে’।১১

(২) কুরআন তিলাওয়াত করা :

(ক) সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ- ‘তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়’।১২

(খ) আয়াতুল কুরসী পাঠ করা : আবূ আউয়ূব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁর খেজুর বাগানে ছোট্ট একটি মাচান ছিল। তিনি তাতে শুকনো খেজুর রাখতেন। রাতে শয়তান জিন এসে মাচান থেকে খেজুর নিয়ে যেত। তিনি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে নালিশ করলেন। তিনি বললেন, যাও, এটিকে তুমি যখন দেখতে পাবে তখন বলবে বিসমিল্লা-হ, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাকে ডেকেছেন। রাবী বলেন, জিন আসতেই তিনি তাকে ধরে ফেলেন। সে তখন কসম করে বলল যে, আর কখনও আসবে না। কাজেই তাকে তিনি ছেড়ে দিলেন। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে আসলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বন্দী কি করেছে? তিনি বললেন, সে শপথ করেছে যে, সে আর কখনো আসবে না। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে এবং সে তো মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। রাবী বলেন, এরপর তিনি তাকে আবার ধরলেন। এবারও সে শপথ করে বলল যে, সে আর আসবে না। তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে হাযির হ’লে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি হে! তোমার বন্দীর কি খবর? তিনি বলেন, সে কসম করে বলেছে যে, সে আর আসবে না, এজন্য আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সে এবারও মিথ্যা বলেছে, আর সে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। রাবী বলেন, তিনি আবার তাকে ধরে ফেলেন এবং বলেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে না নিয়ে ছাড়ছি না। সে বলল, আমি আপনাকে একটি বিষয় স্মরণ করাতে চাই। আপনি আপনার ঘরে ‘আয়াতুল করসী’ পাঠ করবেন। তাহ’লে কোন শয়তান বা অন্য কিছু এতে প্রবেশ করতে পারবে না। এবার তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে হাযির হ’লে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বন্দী কি করেছে? রাবী বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে জিনের কথা বললাম। তিনি বললেন, ‘সে মিথ্যাবাদী হ’লেও একথাটি সত্য বলেছে’।১৩ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর ব্যাপারেও এ রকম একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।১৪

(৩) ইখলাছ অবলম্বন করা :

শয়তান সকলকে ধোঁকা দিয়ে জাহান্নামী করতে পারলেও ইখলাছ অবলম্বনকারীকে ধোঁকা দিতে পারে না। শয়তান আল্লাহর কাছে এই ওয়াদা করেছে যে,  قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ- إِلاَّ عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ ‘সে (শয়তান) বলল, হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদের ব্যতীত’ (হিজর ১৫/৩৯-৪০)। অন্য আয়াতে এসেছে, قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ- إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ- ‘সে (শয়তান) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনার কসম, আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদের ব্যতীত’ (ছোয়াদ ৩৮/৮২-৮৩)

(৪) সকালে উঠে ফজর ছালাত আদায় করা :

মানুষ রাত্রে ঘুমানোর পরে শয়তান মানুষকে বেশী ঘুমানের জন্য এবং ফজর ছালাত কাযা করানোর জন্য বহু চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيْلٌ فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَأَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ- ‘যখন তোমাদের কেউ ঘুমায় শয়তান তার মাথার পিছন দিকে তিনটি গিরা দেয় এবং প্রত্যেক গিরার উপর মোহর মেরে বা থাবা মেরে বলে, রাত অনেক আছে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও। যদি সে জাগে ও দো‘আ পড়ে তাহ’লে একটি গিরা খুলে যায়। তারপর সে ওযূ করলে আরও একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর সে ছালাত আদায় করলে অপর গিরাটিও খুলে যায় এবং সে সকালে প্রফুল্ল­ মনে, পবিত্র অন্তরে সকাল করে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলুষিত অন্তর ও অলস মনে’।১৫
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে এবং ওযূ করে তখন তার উচিৎ তিনবার নাক ঝেড়ে ফেলা। কারণ শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত কাটিয়েছে’।১৬
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল, যে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটিয়েছে, ছালাতের জন্য (যথাসময়ে) জাগ্রত হয়নি, তখন তিনি বললেন, ‘শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে’।১৭

(৫) আল্লাহকে স্মরণ করা :

আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তান কাছে আসতে পারে না। আল্লাহ্র স্মরণ থেকে মানুষ যখন দূরে চলে যায়, তখন শয়তান তাদের বন্ধু হয়। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ، وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُم مُّهْتَدُوْنَ ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎ পথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎ পথেই রয়েছে’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬-৩৭)

(৬) তাহলীল পাঠ করা :

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلاَّ أَحَدٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ- ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার বলবে ‘লা ইলাহা ইল্ল­াল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল­ী শাইইন কাদীর’। অর্থ: ‘আল্ল­াহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর। সমস্ত প্রসংশা তাঁর, তিনি সমস্ত বস্ত্তর উপর শক্তিশালী’। সে ১০টি গোলাম আযাদ করার সমান ছওয়াব পাবে। তার নামে লেখা হবে ১০০টি নেকী এবং তার নাম থেকে ১০০টি গুনাহ মুছে ফেলা হবে। সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তানের সংশ্রব থেকে সংরক্ষিত থাকবে। আর ক্বিয়ামতের দিন কেউ তার চাইতে ভাল আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার চাইতে বেশী আমল করেছে’।১৮

(৭) জামা‘আতবদ্ধভাবে থাকা :

ইসলাম মুসলিম জাতিকে জামা‘আতবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ একাকী থাকা শয়তানের কাজ। জামা‘আতে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِيْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيْهِمُ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدْ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ، فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ مِنَ الْغَنَمِ الْقَاصِيَةِ- ‘যে গ্রামে বা প্রান্তরে তিনজন লোকও অবস্থান করে অথচ তারা জামা‘আত কায়েম করে ছালাত আদায় করে না, তাদের উপর শয়তান সওয়ার হয়ে যায়। কাজেই জামা‘আতের সাথে ছালাত পড়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ দলত্যাগী বকরীকে বাঘে ধরে খায়’।১৯ সফর অবস্থায় জামা‘আতের সাথে থাকার কথা উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ وَالثَّلَاثَةُ رَكْبٌ- ‘একজন সওয়ার হচ্ছে একটি শয়তান (শয়তানের মত), দু’জন সওয়ার দু’টি শয়তান, আর তিনজন সওয়ার হচ্ছে কাফেলা’।২০

(৮) তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِيْ يَقُوْلُ يَا وَيْلَهُ وَفِيْ رِوَايَةِ أَبِيْ كُرَيْبٍ يَا وَيْلِيْ أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُوْدِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُوْدِ فَأَبَيْتُ فَلِيَ النَّارُ-
‘যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে  সিজদা করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলে যে, হায়! আবূ কুরাইবের বর্ণনায় এসেছে, হায় দুর্ভোগ আমার জন্য। বনী আদমকে সিজদার আদেশ দেয়া হ’লে সে সিজদা করল ও জান্নাতী হ’ল। আর আমাকে সিজদার আদেশ দিলে আমি অবাধ্য হ’লাম ও জাহান্নামী হ’লাম’।২১

(৯) তাশাহ্হুদের সময় ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা : 

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ছালাতে (শেষ বৈঠকে) বসতেন, তখন তিনি তার হাত হাটুর উপরে রাখতেন, আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং চক্ষু সেখানে রাখতেন। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَهِيَ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ يَعْنِي السَّبَّابَةَ- ‘এটি অর্থাৎ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শয়তানের বিরুদ্ধে লোহা অপেক্ষা কঠিন’।২২

(১০) আযান ও ইক্বামত :

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন ছালাতের আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু নিঃসরণ করতে করতে পিছু হটে যায়। আযান শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। তারপর ইক্বামতকালে শয়তান আবার হটে যায়। ইক্বামত শেষে সে এসে মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অবস্থান নেয় এবং বলতে শুরু করে যে, তুমি এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর। শেষ পর্যন্ত লোকটি ভুলেই যায় যে, সে ছালাত তিন রাক‘আত পড়ল, নাকি চার রাক‘আত। তারপর তিন রাক‘আত পড়ল, নাকি চার রাক‘আত পড়ল তা নির্ণয় করতে না পারলে সে যেন দু’টি সিজদা করে নেয়’।২৩

(১১) সিজদায়ে সহো করা :

ছালাতে শয়তান বিভিন্নভাবে মানুষের মনে খটকা সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ ছালাতের মধ্যে কত রাক‘আত পড়েছে তা ভুলে যায়। তাই শয়তান ছালাতে খটকা সৃষ্টি করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সহো সিজদার নির্দেশ দিয়েছেন।২৪

(১২) ছালাতের কাতার সোজা করা ও ফাঁকা না রাখা :

ছালাতে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো যরূরী। আর দু’জনের মাঝখানে ফাঁকা রাখা ঠিক নয়। কারণ ফাঁকা রাখলে শয়তান মাঝখানে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنِّيْ لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ- ‘তোমাদের কাতারগুলোকে মিলাও এবং পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে যাও, আর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলাও। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি শয়তানদেরকে কাতারের মধ্যে এমনভাবে ঢুকতে দেখি, যেমন ছোট ছাগল ঢোকে’।২৫ অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাতের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধ মিলাও, ফাঁকা বন্ধ কর, নিজের ভাইয়ের প্রতি কোমল হও এবং শয়তানের জন্য পথ ছেড়ে দিও না’।২৬

(১৩) ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার সময় বিসমিল্লাহ বলা এবং ডান হাতে আহার করা :

বাড়িতে বা গৃহে প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ বলে প্রবেশ করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لاَ مَبِيْتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أَدْرَكْتُمْ الْمَبِيْتَ وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ أَدْرَكْتُمْ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ- ‘যখন কোন ব্যক্তি তার গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলে, এই ঘরে তোমাদের জন্য রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নেই এবং খাদ্যও নেই। আর যখন সে আল্লাহর নাম ছাড়া প্রবেশ করে তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের জায়গা পেলে। আর যখন সে খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকা ও খাওয়া উভয়টির সুযোগ পেলে’।২৭

খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে খাবার খেতে হবে। বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান সেই খাবারে অংশ নেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لاَ يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ- ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যাতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা হয় না’।২৮

ডান হাতে খাবার খাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, لِيَأْكُلْ أَحَدُكُمْ بِيَمِيْنِهِ وَلِيَشْرِبْ بِيَمِيْنِهِ وَلِيَأْخُذْ بِيَمِيْنِهِ وَلِيَعْطَ بِيَمِيْنِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرِبُ بِشِمَالِهِ وَيُعْطِيْ بِشِمَالِهِ وَيَأْخُذُ بِشِمَالِهِ-  ‘তোমাদের কেউ যেন তার ডান হাত দ্বারা পানাহার করে এবং ডান হাত দ্বারা আদান-প্রদান করে। কেননা শয়তান বাম হাত দ্বারা পানাহার করে এবং বাম হাত দ্বারাই আদান-প্রদান করে’।২৯

(১৪) খাদ্য পরিপূর্ণভাবে খাওয়া, এমনকি পড়ে গেলে সেটা উঠিয়ে নেওয়া :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও খাবারের কোন লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা উঠিয়ে নেয় এবং তার ময়লা পরিস্কার করে খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন রেখে না দেয়। আর আঙ্গুল চেটে না খাওয়ার সময় সে হাযির হয়। কাজেই তোমাদের কারও কোন লোকমা  পড়ে গেলে, তার ময়লা পরিস্কার করে খেয়ে ফেলা উচিৎ এবং শয়তানের জন্য রেখে দেওয়া উচিত নয়’।৩০

(১৫) শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে রামাযানের যাকাত সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করলেন। অতঃপর আমার নিকট এক আগন্তুক আসল। সে তার দু’হাতের অাঁজলা ভরে খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে লাগল। তখন আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সে একটি হাদীছ উল্লেখ করল এবং বলল, যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাহ’লে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হ’তে তোমার জন্য একজন হেফাযতকারী থাকবে এবং সকাল হওয়া অবধি তোমার নিকট শয়তান আসতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যাচারী এবং শয়তান ছিল’।৩১

(১৬) যথাসম্ভব হাই তোলা থেকে বিরত থাকা :

হাই তুললে শয়তান হাসতে থাকে এবং মুখ দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তাই যথাসম্ভব হাই তোলা থেকে বিরত থাকা অথবা হাই আসলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا تَثَاوَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ عَلَى فِيْهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ- ‘তোমাদের কারো হাই আসলে, সে যেন তার হাত মুখের উপরে দেয়। কারণ (এ সময়) শয়তান ভিতরে ঢুকে পড়ে’।৩২

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হ’তে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব তা রোধ করবে। কারণ তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন ‘হা’ বলে তখন শয়তান হাসতে থাকে’।৩৩

(১৭) রাতে ঘরের বাতি নিভিয়ে খাবার পাত্র ঢেকে রাখা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘(রাতে) তোমাদের ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমরা বাসন-কোসন ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সামান্য কিছু হ’লেও তার ওপর দিয়ে দাও’।৩৪

(১৮) কারো প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা না করা :

ঠাট্টা করতে করতে অনেক সময় মানুষ আনাকাঙ্খিত কিছু কাজ করে ফেলে। আর এ কাজ করতে শয়তান সাহায্য করে। তাই কারো প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا يُشِيْرُ أَحَدُكُمْ إِلَى أَخِيْهِ بِالسِّلَاحِ فَإِنَّهُ لَا يَدْرِيْ أَحَدُكُمْ لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِيْ يَدِهِ فَيَقَعُ فِيْ حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ- ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা না করে। কেননা সে জানে না হয়তো শয়তান তার হাতে আঘাত করবে। ফলে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে’।৩৫

(১৯) ঈমান আনা ও আল্লাহ্র ওপর ভরসা করা :

ঈমান আনার সাথে সাথে সৎকাজ করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। তাহ’লে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যাবে। আল্লাহ বলেন,  إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِيْنَ آمَنُواْ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‘তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই তাদের উপর যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে’ (নাহল ১৬/৯৯)

(২০) নির্দিষ্ট কিছু আমল :

জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘রাত যখন আচ্ছন্ন হয় তখন তোমাদের শিশু-কিশোরদের ঘরে আটকে রাখবে। কারণ শয়তান এ সময়ে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর রাতের কিছু সময় পার হয়ে গেলে তাদেরকে ছেড়ে দিবে এবং দরজা বন্ধ করে আল্লাহর নাম নেবে। বাতি নিভিয়ে দিবে ও আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। পানপাত্রের মুখ বেঁধে রাখবে ও আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে এবং পাত্র ঢেকে রাখবে ও আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। তার উপর কিছু একটা ফেলে রেখে হ’লেও তা করবে’।৩৬

পরিশেষে বলব, শয়তান মানুষের আজন্ম শত্রু। তার কবল থেকে মুক্তি লাভের জন্য সকাল-সন্ধ্যা কুরআন তেলওয়াত করতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে উপরোক্ত কাজগুলি নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। তাহ’লে তার ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ লাভের তাওফীক্ব দিন-আমীন!

– মুহাম্মাদ আবদুল ওয়াদূদ


. তিরমিযী হা/২৯১০; মুসতাদরাকে হাকেম হা/২০৯২; মিশকাত হা/২১৩৮,  হাদীছ ছহীহ।  
. বুখারী, মুসলিম, ইবনু মাজাহ হা/২৯৭; মিশকাত হা/৩৩৭।  
. বুখারী হা/২৮২২, ৬৩৬৯; নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ছহীহ তিরমিযী, হা/২৪২৫।  
. আবু দাউদ হা/৪৬৬, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘মানুষ মসজিদে প্রবেশের সময় যা বলবে’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ ছহীহ।  
. মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
. বুখারী হা/৩২৮২ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২৬১০।
. বুখারী ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায় ‘ইবলীস ও তার বাহিনী’ অনুচ্ছেদ হা/৩২৯২।
. আবূদাঊদ হা/৫০৯৫; তিরমিযী হা/৩৪২৬ ‘দো‘আ’ অধ্যায়; ইবনু হিববান হা/২৩৭০; মিশকাত হা/২৪৪৩, হাদীছ ছহীহ।
. আবূদাঊদ হা/৫০৯৫ ‘আদব’ অধ্যায়; হাদীছ ছহীহ, ছহীহ তিরমিযী, হা/৩৬৬৬।
১০. বুখারী হা/১৪১, ৩২৭১ ‘অযূ’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৪৩৪ ‘ত্বালাক’ অধ্যায়; আহমাদ হা/১৯০৮।
১১. বুখারী হা/৩৩৭১ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়।
১২. মুসলিম হা/৭৮০; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০১৮; মিশকাত হা/২১১৯।
১৩. ছহীহ তিরমিযী হা/২৮৮০
১৪. ছহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৮১, ২/৬১ পৃঃ; নাসাঈ, ত্বাবারাণী, ছহীহ তারগীব, হা/৬৬২, ১/৪১৭ পৃঃ, হা/১৪৭০, ২/১৮৮ পৃঃ
১৫. বুখারী হা/৩২৬৯ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়; মুসলিম, মিশকাত হা/১২১৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৫১
১৬. বুখারী হা/৩২৯৫; মুসলিম হা/২৩৮
১৭. বুখারী হা/১১৪৪ ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৭৭৪
১৮. বুখারী হা/৬৪০৩; মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৪১০
১৯. আবূদাঊদ হা/৫৪৭; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০৭০; মিশকাত হা/১০৬৭, হাদীছ হাসান
২০. আবূদাঊদ হা/২৬০৭; তিরমিযী হা/১৬৭৪; মিশকাত হা/৯৫৯; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৩৯১০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪, হাদীছ হাসান
২১. মুসলিম. মিশকাত হা/৮৯৫; ইবনু মাজাহ হা/১০৫২
২২. আহমাদ, মিশকাত হা/৯১৭ ‘তাশাহুদ’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ হাসান।
২৩. বুখারী হা/৩২৮৫ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়
২৪. বুখারী হা/৩২৮৫ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়
২৫. আবূদাউদ হা/৬৬৭ হাদীছ ছহীহ; মিশকাত হা/১০৯৩; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০৯২।
২৬. আবূদাউদ হা/৬৬৬; হাদীছ ছহীহ, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০৯১।
২৭. মুসলিম ‘খাদ্য’ অধ্যায় হা/২০১৮; মিশকাত হা/৪১৬১।
২৮. মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬১ ‘খাদ্য’ অধ্যায়
২৯. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২৩৬।
৩০. মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৬৪।
৩১. বুখারী হা/৩২৭৫ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়।
৩২. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৩৭ ‘হাচি ও হাই তোলা’ অনুচ্ছেদ।
৩৩. বুখারী হা/৩২৮৯ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২৯৯৪।
৩৪. বুখারী হা/৩২৮০ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২০১২; আহমাদ হা/১৪৮৩৫।
৩৫. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫১৮।
৩৬. বুখারী, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, অনুঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৫৭।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button